সিডনী সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফেরত নয়


প্রকাশিত:
৪ আগস্ট ২০১৮ ১২:০৫

আপডেট:
২০ মে ২০২৪ ২৩:৫৫

নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফেরত নয়

ভারতের অাসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি’র খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া নাগরিকদের এখনই বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে না ভারত। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এমনটাই খবর। বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে। বাদ পড়াদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, নাগরিক পঞ্জি সম্পর্কিত সবর্শেষ বা চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত বাদ পড়া নাগরিকদের প্রতিবেশি দেশটিতে ফেরত পাঠানো হবে না।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই অাসামে প্রকাশিত হয় জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া তালিকা। এনআরসি’এর কাছে জমা পড়া ৩.২৯ কোটি আবেদনকারির মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২.৮৯ কোটির কিছু মানুষের নাম। তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা। এরপর থেকেই গত কয়েকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে দেশটিতে।

এই ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধিতার সুর চড়িয়ে মমতা অভিযোগ করেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই বিজেপি সরকার এই কাজ করছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের নামে অাসাম থেকে বাঙালি বিতাড়নের যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত বদল না করে তবে গৃহযুদ্ধ লেগে রক্তগঙ্গার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন মমতা। আর এটাই মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের।

তাছাড়া ভারতের প্রচার মাধ্যম ও দেশটির সুশীল সমাজের একটা অংশের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রতিনিয়ত আওয়াজ উঠেছে, তা বাংলাদেশে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও উদ্বেগ তৈরি করেছে ভারত সরকারের কাছে।

বিষয়টি নিয়ে সরকার যথেষ্ট সংবেদনশীল, তাদের অভিমত মমতার মতো একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদের এরকম বিবৃতি এবং প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশকে বিপর্যস্ত করতে পারে। বিষয়টিকে হাতিয়ার করে সেদেশের বিরোধী দল বিএনপিও প্রচারণায় ঝড় তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা।

যদিও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বা অাসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল-উভয়েই কোন বিতাড়ন নয়-বলেই বাংলাদেশ নেতৃত্বকে আশ্বাস দিয়েছেন।

সূত্রে খবর, খসড়া তালিকা প্রকাশের আগেই ভারতের তরফে অনানুষ্ঠানিক ভাবেই বাংলাদেশ সরকারের সাথে এবিষয়ে আলোচনা হয় এবং বাংলাদেশির ফেরত পাঠানো হবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয়। গত ১৩ জুলাই ঢাকা সফরকালেই রাজনাথ সিং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। রাজনাথ সেসময় আশ্বস্ত করেন যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির খসড়া তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে। এখানে বিতাড়নের কোন প্রশ্ন নেই।

বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও সম্প্রতি জানিয়েছেন ‘এতে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে কোন প্রভাব ফেলবে না’। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি এবং সড়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথেও সাক্ষাত করেন ভারতীয় হাইকমিশনার। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও ফোনে ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ‘নাগরিক পঞ্জির সাথে ঢাকার কোন সম্পর্ক নেই’। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিতব্য আশিয়ান ভুক্ত দেশগুলির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি.কে.সিং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এইচ.মাহমুদ আলির সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারেন বলে খবর।

উদ্বাস্তু ইস্যুতে ভারত যে সহানুভূতিশীল তার উদাহরণ হিসাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে ভারত। আগামীতে দ্বিতীয়বারের জন্য সেদেশে ত্রাণ পাঠাতে চলেছে ভারত। ঠিক একইভাবে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার। উদ্বাস্তু ইস্যুতে ভারত যে সবসময় বাংলাদেশের পাশেই রয়েছে মূলত সেই লক্ষ্যেই ভারতের এই উদ্যোগ। কিন্তু তার পরেও আশঙ্কা কাটছে না।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top