সিডনী সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


বিশ্ব জুড়ে যেভাবে বেচাকেনা হয় কোরবানির পশু


প্রকাশিত:
১৪ আগস্ট ২০১৮ ০২:০৯

আপডেট:
২০ মে ২০২৪ ১৮:৪৯

বিশ্ব জুড়ে যেভাবে বেচাকেনা হয় কোরবানির পশু

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম ঈদুল আজহা। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত ‘কোরবানি’। তারই আমল থেকে আজ পৃথিবীজুড়ে কোরবানি ওয়াজিব হিসেবে আদায় করা হয়। অন্য সব কিছুর মতো স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে কোরবানিতেও বেশ বৈচিত্র্য দেখা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর রয়েছে বিভিন্ন নাম। 



<iframe frameborder="0" height="250" id="924" name="738e1ae42c1c5cf608a884732dea182a" scrolling="no" width="300"></iframe>



যেমন বাংলাদেশে এটি কোরবানির ঈদ, অনেক জায়গায় এটা বকরি ঈদ নামেও পরিচিত। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানেও ঈদুল আজহাকে বলা হয় বকরি ঈদ। মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মিসর ও লিবিয়ায় কোরবানির ঈদকে বলা হয় ঈদুল কিবির।



বাংলাদেশ



পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ঈদুল আজহা পালন করে থাকে। এ সময় মুসলমানরা নতুন পোশাক পরে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যায় এবং কুশল বিনিময় করে। প্রত্যেক বাড়িতেই উন্নত মানের খাবার প্রস্তুত হয়। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও কোথাও কোথাও নিমন্ত্রিত হয়ে এ উৎসবে যোগদান করে।



ভারত 



বিশ্বের তৃতীয় সর্ববৃহৎ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ ‘ভারতীয় প্রজাতন্ত্র’। মুসলমানদের মোট সংখ্যা অনেক বেশি হলেও তা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। দেশটির মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় খুব সাধারণভাবেই ঈদুল আজহা পালিত হয়। এতদিন কোরবানির জন্য গরুই প্রধান প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হতো। তাই এ দেশে এ ঈদটি ‘বকরি ঈদ’ নামে বেশি পরিচিত। তবে সম্প্রতি দেশটিতে শুরু হওয়া গো-রক্ষা আন্দোলনের কারণে ঈদের গরু কোরবানি কমে গেছে। এ ছাড়া ভারতে ছাগল ও দুম্বাও কোরবানি দেওয়া হয়।



পাকিস্তান



এ দেশে ঈদুল আজহা পালিত হয় চার দিন ধরে। উট ও দুম্বা এ দেশে কোরবানির জন্য প্রাধান্য পায়। সকালে ঈদগাহে ঈদের নামাজ ও খুতবার পর আল্লাহতাআলার উদ্দেশে পশু কোরবানির পর গোশত আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও দরিদ্রদের মধ্যে বিলি করা হয়।



এ উপলক্ষে কয়েক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন মসজিদ-ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রেডিও-টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়। বাংলাদেশেও কোররবানীর পশু ক্রয়ে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এখানে স্থায়ী অস্থায়ী হাট বাজারের সঙ্গে যোগ হয়েছে অনলাইন মার্কেট প্লেস। পছন্দের কোরবানির পশু এখন ঘরে বসে কেনা যাচ্ছে। নেয়া যাচ্ছে হোম ডেলিভারি।



ইন্দোনেশিয়া 



প্রায় পাঁচ হাজার দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এ দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। ঈদুল ফিতর খুব আনন্দের সঙ্গে পালন করলেও কোরবানিটা এরা কোনো রকমে কাটিয়ে দেয়। ইন্দোনেশিয়ায় সাধারণত যারা হজ করেছেন কেবল তারাই কোরবানি দেন এবং শুধু তাদের ওপর নাকি কোরবানি ফরজ। এ দেশে কোরবানি আদায় করা হয় সামাজিকভাবে। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা হাটবাজার থেকে কোরবানির পশু কিনে মসজিদে দিয়ে আসেন।



৮-১০টি পশু এসে যায় কোনো কোনো মসজিদে। মসজিদ এলাকায় কতগুলো পরিবার আছে, তার হিসাব ইমামের কাছে থাকে। সবাই মিলে কোরবানির পর যতগুলো ঘর আছে, গোশত তত ভাগে ভাগ করে ছোট প্যাকেটে সবার ঘরে দিয়ে আসা হয়।



মালয়েশিয়া 



মালয়েশিয়ায়ও প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ার মতো সমাজবদ্ধভাবেই কোরবানি করা পছন্দ। স্থানীয় মসজিদে কোরবানি করে গোশতও একসঙ্গেই বণ্টন করা হয়। ইদানীং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ‘বিলাসী’ কোরবানির হাট গড়ে উঠেছে। ল্যাপটপ ও ট্যাব হাতে সেলসম্যানের উপস্থিতিতে হাটগুলোয় দেখা যায় ভিন্নমাত্রা। এগুলো হাট না বলে কোরবানির পশুর শোরুমই বলা হয়। দামি দামি গাড়িতে করে ধনী ক্রেতারা ওই সব শোরুমে ভিড় জমান। চড়া দামে কেনেন পশু। মালয়েশিয়ায় কোরবানিতে ভেড়াই প্রধান পশু। তবে গরু, ছাগলেরও বিপুল উপস্থিতি দেখা যায়।



সিঙ্গাপুর 



সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ মুসলমান। প্রত্যেক এলাকায়ই কিছু কিছু মুসলমানের বাস রয়েছে। মুসলমানদের আলাদা এলাকাও রয়েছে। সেখানে কোরবানির প্রায় তিন মাস আগে কোরবানির পশুর জন্য নিকটতম কোনো মসজিদের মাধ্যমে দরখাস্ত করতে হয়। সরকার অস্ট্রেলিয়া থেকে পশু এনে সেই মসজিদে হস্তান্তর করে। কোরবানিদাতা মসজিদের কাছে কোরবানি করে এর গোশতের কিছু অংশ নিজের জন্য নিয়ে আসেন আর বাকিটা অন্যান্য মুসলমানের জন্য মসজিদে রেখে আসেন।



সৌদি আরব 



যেহেতু হজের শেষ দিনে কোরবানি করা হয়, তাই সৌদি আরবের এই ঈদ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়। দেশটির জনগণ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজের উদ্দেশ্যে আসা মুসল্লিরা একসঙ্গে এখানে পশু কোরবানি করেন। এখানে কোরবানির জন্য উটই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। এর পর রয়েছে দুম্বা।



মধ্যপ্রাচ্য 



মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, কাতার, ইয়েমেন, সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন, লেবানন, ওমান, কুয়েত, বাহরাইন ইত্যাদি দেশে কোরবানির জন্য পশুর মধ্যে উট ও দুম্বাই বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে।



আফ্রিকা মহাদেশ 



প্রায় ৪০ কোটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীর বসবাস আফ্রিকা মহাদেশে। মরুভূমি অঞ্চলের দেশ হওয়ায় আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলমান অধ্যুষিত দেশ যেমনÑ মরক্কো, লিবিয়া, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, সুদান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, মালি, সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনি, গিনি বিসাউ, সিয়েরা লিওন, নাইজেরিয়া ইত্যাদি দেশে কোরবানি দেওয়ার জন্য ‘মরুভূমির জাহাজ’ হিসেবে খ্যাত উটই প্রধান প্রাণী। পাশাপাশি গরু, দুম্বা, ছাগল ইত্যাদি কোরবানি করা হয়।



যুক্তরাজ্য 



যুক্তরাজ্যে মুসলমান আছে প্রায় ৩০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় পাঁচ শতাংশ। অধিকাংশ মুসলমানই ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বসবাস করে। যুক্তরাজ্যে প্রকাশ্যে পশু জবাই করা নিষিদ্ধ। তাই ঈদে নির্ধারিত এলাকায় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান থেকে কোরবানি দেওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে অনেক এশিয়ান গ্রোসারি ঈদের সময় কোরবানির জন্য আগ্রহীদের নাম সংগ্রহ করে থাকে।



ঈদের এক মাস আগে থেকে কোরবানির মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ‘এখানে কোরবানির অর্ডার নেওয়া হয়’ লিখিত সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। কোরবানিদাতারা এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে নাম লিখিয়ে কোরবানির পশুর দাম দিয়ে আসেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোরবানির পর গরু বা ভেড়ার গোশত ঈদের পরের দিন গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করে তারা।



যুক্তরাষ্ট্র 



যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ অথবা কোরবানির তেমন গুরুত্ব ছিল না। কিন্তু মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র ভিন্ন। ঈদের জামাতের পর শুরু হয় কোরবানি। নির্দিষ্ট গ্রোসারিতে অথবা পশুর খামারেই সাধারণত কোরবানি করেন সেখানকার মুসলমানরা। গ্রোসারিতে কোরবানি করলে কোরবানিদাতার নাম, পিতার নাম আর অর্থ দিয়ে আসতে হয়। তারাই কোরবানি করে গোশত প্যাকেটে করে রেখে দেয়।



গ্রোসারিতে খোলা ময়দানে নিজ হাতে কোরবানির আমেজ পাওয়া যায় না বলে অনেকে ঈদ জামাত শেষে কোরবানি করার জন্য পশুর খামারে চলে যান। সেখান থেকে পছন্দমতো পশু কিনে নিজ হাতে কোরবানি দেন। খামারে ইসলামি পদ্ধতিতে জবাই করে দেওয়ার জন্যও লোক থাকে।



কানাডা 



অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মতো কানাডার মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা পালন করে। কানাডায় কোরবানি দেওয়ার জন্য সরাসরি পশুর খামারে গিয়ে কোরবানির পশু পছন্দ করা হয়। তারপর তা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বা নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করা হয়।



রাশিয়া 



আয়তনে পৃথিবীর বৃহত্তম এ দেশের মোট জনসংখ্যা কম হলেও ব্যাপকভাবে বাড়ছে মুসলমানের সংখ্যা। কোরবানির জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে আগেই বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। ঈদের জামাতের পর রাশিয়ার মুসলমানরা কোরবানির জন্য নগরের বাইরের নির্দিষ্ট স্থান অথবা খামারে গিয়ে কোরবানি করে।



চীন 



চীনের মুসলমানদের কাছে ঈদুল আজহা ‘ঈদ আল গুরবান’ বা ‘ঈদ আল কুরবান’ নামে পরিচিত। এখানে বাস করে সাড়ে ১৬ কোটি মুসলমান। ঈদের জামাত শেষে বাড়িতে বাড়িতে ভেড়া, উট বা গরু কোরবানি করে চীনা মুসলমানরা। ঈদুল আজহায় তারা সাধারণত কয়েকজন মিলে একটি পশু কোরবানি করে।



জার্মানি 



ষাট ও সত্তরের দশকের পর জার্মানিতে ইসলাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে কোনো বাড়িতে কোরবানির সুযোগ নেই। কোরবানির জন্য বিশেষ জায়গা রয়েছে। সেখানে আগে থেকেই অর্ডার নেওয়া হয়।



আলবেনিয়া 



ঈদুল আজহায় রাস্তাঘাটে কোরবানির পশু জবাই করা হয় না। সরকারি কসাইখানাগুলোয় পশু জবাই করতে হয়। অধিকাংশ মানুষই ভেড়া ও দুম্বা কোরবানি করে। এ ছাড়া মুসলিম এনজিওগুলোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দুম্বা নিয়ে গিয়ে জবাই করে।



অস্ট্রেলিয়া 



এখানে আলাদা কোরবানির পশু কিনে লালন-পালন করার সুযোগ না থাকায় কয়েকটি পরিবার মিলে একজনকে পশু কেনার এবং যতœ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঈদের দিন নামাজ আদায় করে তারা কোরবাণী করে থাকে।



তুরস্ক 



তুরস্কে যথানিয়মে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিনটি শুরু হয়। পশু জবাইয়ের আগেও প্রার্থনা করা হয়। অনেকে কোরবানির পশুকে মেহেদি, ফিতা দিয়ে সাজিয়ে থাকে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top