সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও পারিবারিক জীবন : শাহান আরা জাকির পারুল 


প্রকাশিত:
২৫ জুন ২০২০ ০০:১৮

আপডেট:
২৫ জুন ২০২০ ০৫:৩৩

 

শিক্ষা জীবন

বোনদের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের বাল্য শিক্ষা বাড়িতেই শুরু হয়। তার গৃহশিক্ষক ছিলেন পন্ডিত সাখাওয়াতুল্লাহ্।
১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুকে স্থানীয় গিমাভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয়া হয়। এই বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে লেখাপড়ার সুবিধার জন্য তিনি গোপালগঞ্জ শহরে পিতার চাকরিস্থলে চলে আসেন। এখানে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে এ স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর চোখে বেরিবেরি রোগ দেখা যায়। চোখের চিকিৎসার জন্য তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। এতে তাঁর দুই বছর সময় শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়।
১৯৩৬ সালে তাঁর পিতা মাদারীপুর মহকুমার সেরেস্তাদার হয়ে বদলি হয়ে আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। তাঁকে মাদারীপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সে বছর বঙ্গবন্ধুর আবারো চক্ষু রোগ হয়। এবার তিনি গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে আবার কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বিখ্যাত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ড.টি. আহমেদকে দেখানো হয়। ড. টি. আহমেদ বঙ্গবন্ধুর চোখ অপারেশন করেন। বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভ করেন। তবে তাঁকে সব সময় চশমা পরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। এ সময় থেকেই তিনি চশমা পরা শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ১৯৩৭ সালে আবার বদলি হয়ে গোপালগঞ্জ শহরে চলে যান। যথারীতি বঙ্গবন্ধুও পিতার সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহরে যান। এবার তাকে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। চোখের রোগের কারণে তাঁর মোট চার বছর পড়ালেখায় বিঘœ ঘটে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু ওই স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ২২ বছর বয়সে এন্ট্রান্স (এসএসসি) পাস করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় চলে যান। ভর্তি হন ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ)। ওই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে আইএ পাস করে একই কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ পাস করেন। সে বছর ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলে তিনি কলকাতা থেকে জন্মভূমি পূর্ববঙ্গে চলে আসেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরু হয় তাঁর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অধ্যায়।
চোখের অসুখের জন্য শেখ মুজিবের লেখাপড়া প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকে। এ সময় তাঁর গৃহশিক্ষক ছিলেন হামিদ মাস্টর। তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং অনেক বছর বন্দী ছিলেন। শেখ মুজিব হামিদ মাস্টারের নিকট বিপ্লবীদের কথা শুনেছেন; ইংরেজবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কাহিনী শুনে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত হন। চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও মাস্টারদার ঘটনা তখন যুব সমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছে। শেখ মুজিব ত্রিশের দশকে তাঁর গৃহশিক্ষক আব্দুল হামিদ মাস্টার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাঁর নিকট শেখ মুজিব রাজনীতির প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তী জীবনে শেখ মুজিব রাজনৈতিক কারণে যখনই গ্রেফতার হয়েছেন তখনই তাঁর মা হামিদ মাস্টারের নাম উচ্চারণ করে কাঁদতেন। তাহলে বুঝা যায় যে, শেখ মুজিব হামিদ মাস্টারের প্রভাবে রাজনীতিতে অংশ নিয়েছেন। সমাজ সেবায়ও তিনি শিক্ষকের নিকট অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তাঁর শিক্ষক একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তার মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি থেকে চাল, ধান সংগ্রহ করে ধর্মগোলা প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মগোলা থেকে চাল ও অর্থ দিয়ে তিনি গরিবকে সাহায্য করতেন। মানুষের সেবা করার প্রশিক্ষণ তিনি শৈশবে পেয়েছেন। ১৯৩৭ সালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। জাতিভেদ প্রথার জন্য তখন মিশন স্কুলে ভর্তি ও সামনের বেঞ্চে বসা মুসলমান ছাত্রদের জন্য কঠিন ব্যাপার ছিল। শেখ মুজিব ছোটবেলা থেকে ভীষণ জেদী ও সাম্প্রদাযিকতা-বিরোধী ছিলেন। তিনি জেদ করে মিশন স্কুলে ভর্তি হন ও সামনের বেঞ্চে বসেন। মাস্টার ছিলেন শ্রী গিরিশ বাবু। হেডমাস্টার তাঁকে খুব ভালবাসতেন। ইতিহাস ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। তাঁর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল ও ভলিবল। তিনি ছিলেন ডানপিটে। ভয় তাঁর ছিল না। স্কুলে পড়া অবস্থায় তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটতে থাকে।
গিরিশবাবু শেখ মুজিবের স্পষ্টবাদিতা আর সাহস দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সদাহাস্য মুখ, খেলোয়ার সুলভ মনোভাব ও মধুর-অমায়িক ব্যবহারের জন্য পরবর্তীতে তিনি অতি অল্প দিনের মধ্যেই সকলের মুজিব ভাইও হতে পেরেছিলেন। স্কুলে এমন কোন উৎসব-অনুষ্ঠান বা সামাজিক কাজ ছিলনা, যাতে শেখ মুজিব উদ্যোক্তার ভূমিকায় ছিলেন না।
এদেশের আর দশটা ছাত্রের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর কোনোদিন ছিল না। সেকালে উচ্চশিক্ষার তীর্থক্ষেত্র কলকাতাকেই তিনি এজন্য বেছে নিয়েছিলেন। শিক্ষা শেষে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হওযার যথেষ্ট সুযোগ ছিল তাঁর। তখন সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা, প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বন্দর, রেল স্টেশন, হাসপাতাল, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল-থিয়েটার, ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সবই ছিল কলকাতা কেন্দ্রিক। তখন ভারতের মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের আন্দোলন হচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু বাংলা ভাগ হয়ে কলকাতা হাতছাড়া হবে একথা কেউ ভাবতে পারেনি। ভারত ভাগ হওয়ার পরই কেবল উচ্চশ্রেণির মুসলমান পরিবারের ছাত্রদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ বাড়ে।
বঙ্গবন্ধু যে বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন, সে বছরই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামের রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের জন্য আন্দোলনকারী ও সমর্থনদানকারী বাঙালি পরিবারের তরুণÑযারা উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় অবস্থান করছিলেন, স্বাভাবিক কারণে তারা পূর্ববঙ্গে ফিরে এসে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন। একইভাবে ঢাকা থেকে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ শিক্ষিত ও পেশাজীবী লোক পরিবার-পরিজন নিয়ে কলকাতা পাড়ি জমাচ্ছিলেন। উভয় দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর দেশান্তরী হওয়ার প্রক্রিয়াটা ছিল খুবই দুঃখজনক ও কলংকময়। ইংরেজ শাসকরা দেশ বদলের কোনো সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেনি ইচ্ছাকৃতভাবেই। সাম্প্রদায়িক শক্তি ও সমাজ বিরোধীরা এর সুযোগ নিয়েছিল। ফলে উভয় সম্প্রদাযের মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়।
শেখ মুজিব ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতা থেকে সরাসরি গোপালগঞ্জ যান তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে। কিছু দিন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থেকে নভেম্বর মাসেই তিনি ঢাকা চলে আসেন। তখন লঞ্চে চড়ে ঢাকা আসতে সময় লাগত পুরো দু'দিন। তিনি ঢাকা এসে ওঠেন ১৫০ মোগলটুলীর শওকত ইসলামের বাড়িতে। ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলকাতা ফেরত ছাত্রদের ভর্তি করে নেওয়ার জন্য সময় শিথিল করেছিলÑযাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত না হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে (বিএল-এলএলবি) প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। তাঁর পিতার ইচ্ছা ছিল ছেলে আইনজীবী হবে। প্রয়োজনে রাজনীতিও করবে। তিনি মনে করতেন আইনজীবী হলে রাজনীতি করাটা সহজ হয়। তখনকার দিনের বিখ্যাত রাজনীতিকরা প্রথম জীবনে আইনকে পেশা হিসেবে নিতেন। পরে তাঁরা রাজনীতিক হিসেবে সফল হয়েছিলেন। মহাÍা গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ বিখ্যাত সব রাজনীতিক প্রথম জীবনে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেছিলেন। সোহরাওয়ার্দী তো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাজনীতির পাশাপাশি আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ে আসার জন্য বলেছিলেন। এজন্য তিনি সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পিতার সম্পত্তি বিক্রির অর্থে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডন যেতে রাজি হননি। তবে লন্ডন গিয়েছিলেন তিনি ঠিকই। কিন্তু তিনি লন্ডন গিয়েছিরেন বাংলাদেশের একজন অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি আবার নতুন করে ছাত্র-জীবন শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রাখেন। কলকাতা থাকার সময় তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি মুসলিম লীগের উদারপন্থি ও প্রগতিশীল ধারার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ঢাকায় এসে তিনি রাজনীতি করার বিষয় পেয়ে যান এবং সেটাকে অবলম্বন করে এগিয়ে যেতে থাকেন। অবশ্য এজন্য তাঁকে জেলেও থাকতে হয়েছিল জীবনের বারটি বছর। নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল নিরন্তর।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রতিটি দিন প্রতিটি ঘন্টা ব্যয় করেছেন কোনো না কোনো সাংগঠনিক কাজে। ক্লাস শেষ হওয়ার পর তিনি আড্ডা দিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যেতেন সাংগঠনিক কিংবা জনসংযোগ করার কাজে। তখন ঢাকা শহর এত বড় ছিল না। বাস কোস্টার ছিল না। রিকশা ও ঘোড়ার গাড়ি ছিল পথচলার একমাত্র ভরসা। তাও ছিল সংখ্যায় কম। একটি সাইকেলে চেপে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে আর শহরের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে সাংগঠনিক কাজ করতেন। নেতা-সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তখনকার দিনে কোনো ছাত্রের সাইকেল থাকাটা বিশাল ব্যাপার ছিল। বিষয়টা ছিল আজকের যুগের একজন ছাত্রের কাছে মোটরসাইকেল থাকার মতো। এছাড়া তখনকার দিনে আজকের মতো যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন কিংবা অন্যকিছু ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে সাইকেলে চেপেই তাঁকে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হতো।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের অনাবাসিক ছাত্র। তবে তিনি মাঝে মধ্যে সলিমুল্লাহ হলের ১৫২ নং কক্ষে রাত কাটাতেন। তখন সলিমুল্লাহ হলের অবস্থান ছিল তৎকালীন কলাভবন থেকে কিছুটা দূরে। তখন কলাভবন ছিল আজকের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকের পুরনো তৃতীয়তলা ভবনটি। কলাভবনের সবচেয়ে কাছে ছিল ঢাকা হল (বর্তমানে শহীদুল্লা হল) এবং ফজলুল হক মুসলিম হল। তখনো ছাত্রীদের থাকার জন্য কোনো আবাসিক হল গড়ে ওঠেনি। ছাত্র হলের সঙ্গে তখন ছাত্রীদের সংযুক্ত থাকতো হতো। প্রথম দিকে ভাষা আন্দোলনের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো ফজলুল হক হল। পরবর্তীকালে ভাষা আন্দোলনের ঘাঁটি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মধুর ক্যান্টিন।
ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধু প্রায় প্রতিদিনই ফজলুল হক হলে যেতেন। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং ভাষা আন্দোলন নিয়ে তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে কখনো হল মিলনায়তনে আবার কখনো হলের সামনে থাকা পুকুরের প্রশস্ত ঘাটে বসে আলোচনা করতেন। তারপর সাইকেল চালিয়ে তিনি চলে যেতেন সাংগঠনিক কাজে কিংবা নতুন কোনো আলোচনা সভায়। বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন খুব সকালে উপস্থিত হতেন তাঁর প্রিয় ক্যাম্পাসে। সে সময় আইন বিভাগের ক্লাস হতো সকালে। তখন স্থান সংকট ছিল। একই কক্ষে পালা করে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস হতো। তাই খুব সকাল থেকেই ক্লাস শুরু হতো এবং ধারাবাহিকভাবে তা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত। পাকিস্তান হওযার পর ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ক্লাস রুমের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি। বর্তমান কলা ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সতের বছর পর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। তাঁর ছাত্রজীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কাটে কলকাতায়। তিনি সেখানে একাধারে ছয় বছর (১৯৪২-৪৭) ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন। এ সময়টা ছিল তরুণ মুজিবের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কলকাতায় তাঁর মাথার ওপর ছায়া হয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। বঙ্গবন্ধু ছাত্র জীবনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পুরো বাংলা চষে বেড়িয়েছেন মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে। তিনি মুসলিম লীগকে শক্তিশালী করার জন্য সাংগঠনিক কাজ করতেন। শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তিনি এভাবে বিপুল রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেনÑ যা পরবর্তী জীবনে বেশ কাজে লাগে। এছাড়া তিনি কলকাতায় থাকার সময় ভারতের বহু বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভ করেন। এরা হচ্ছেন মহাÍা গান্ধী, জওহর লাল নেহেরু, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, শরৎ বসু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংরা একে ফজলুল হক, আবুল হাশিম প্রমুখ।
কলকাতায় ছাত্র থাকাকালে বঙ্গবন্ধু বই পড়তে ও গান শুনতে পছন্দ করতেন। তাঁর প্রিয় কবি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ও জীবনানন্দ দাশ। তিনি কলকাতায় বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন জসীম উদ্দীন ও জয়নুল আবেদীনকে। তাঁর প্রিয় বিদেশি লেখক ছিল কার্ল-মার্কস, বার্ট্র্যান্ড রাসেল, বার্নাড শ প্রমুখ। তিনি কলকাতা থাকার সময় বহু দুঃখজনক ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদাযিক দাঙ্গা এবং রক্তাক্ত দেশ বিভাগ তাঁকে আলোড়িত করে। '৪৭-র শেষে ঢাকায় এসে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওযাতে তাঁকে একাই লড়াই করতে হয়েছে। এ লড়াই ছিল বঞ্চিত পাকিস্তানি হয়ে প্রবঞ্চক পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ছাত্র জীবনের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র পনেরো মাস।
১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিুবেতনভুক্ত কর্মচারীরা কতকগুলো দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন এই আন্দোলনে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সরকার এই ধর্মঘট ও আন্দোলনের ব্যাপারে অনমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করায় সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। উপরন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সর্বমোট ২৭ জন ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। যেসব ছাত্রনেতার নাম এতে ছিল তাঁদের মধ্যে দবিরুল ইসলাম, অলি আহাদ, আবদুল মতিন, উমাপতি মিত্র, আবদুল রহমান চৌধুরী, দেওয়ান মাহবুব আলী, অরবিন্দু বসু, নইমুদ্দিন আহমদ, নাদেরা বেগম এবং শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অন্যতম। এঁদের মধ্যে ৬ জনকে ৪ বছরের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, ১৫ জনকে ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার, ৫ জনকে ১৫ টাকা এবং ১ জনকে ১০ টাকা জরিমানা করা হয়।
যাঁরা বহিষ্কৃত হয়েছিল তাদের জন্যে অন্তত চার বছর পর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার সুযোগ ছিল। যাঁদের জরিমানা করা হয়েছিল তাঁদের কেউ কেউ জরিমানা দিল, কেউ কেউ ক্ষমা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার পড়াশুনা শুরু করেছিল। কিন্তু জরিমানা দিতে অস্বীকার করলেন শুধু একজন, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার তাঁর জন্যে চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে গেল। সাধারণ কর্মচারীদের জন্যে আন্দোলন করার ‘অপরাধে' ক্ষমা চাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। জরিমানা দেয়াও সেদিনের তরুণ শেখ মুজিবের ব্যক্তিত্বের পক্ষে ছিল অসম্ভব। আÍমর্যাদার প্রশ্নে তিনি ছিলেন অবিচল। একজন ছাত্রের সবচেয়ে বড় আকাক্সক্ষা নিজ পড়াশোনা শেষ করা। সেই আকাক্সক্ষার পাশে সেদিনের ছাত্র শেখ মুজিব তাঁর নিজ সম্মানকে বিক্রি করতে পারেননি। এভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কের ছেদ ঘটে।

 

বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পারিবারিক জীবন ছিল গৌরবময় ও আনন্দঘন। বাংলাদেশে টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবার সংস্কৃতিবান ও রাজনৈতিক সচেতন পরিবার। সমাজসেবায় পরিবারের রয়েছে ঐতিহ্য। শেখ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে এসে পরবর্তীতে ব্যবসা করে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। একদিকে শেখ পরিবার বাংলাদেশের ইতিহাসে শীর্ষে আরোহণ করেছে। অন্যদিকে পরিবারটি ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে।
শেখ পরিবারের আÍীয়স্বজনের মধ্যে বিবাহপ্রথা প্রচলিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান চাচাত বোন সায়েরা খাতুনকে বিয়ে করেন। দশ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমানকে ৩ বছরের চাচাত বোন শেখ ফজিলাতুন্নেছা রেণুর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। শেখ ফজিলাতুন্নেসা রেণু ১৯২৮ সালে ৮ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ জহিরুল হক এবং মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। তাঁরা ছিলেন দু'বোন। বড় বোন জিন্নাতুন্নেসা। তাঁরও বাল্যকালে চাচাত ভাই শেখ মুসার সাথে বিয়ে হয়। তিন বছর বয়সে ফজিলাতুন্নেসা পিতা এবং পাঁচ বছর বয়সে মাতাকে হারান। ফজিলাতুন্নেসার দাদা শেখ কাশেম বাল্যকালে তাঁর নাতনিকে শেখ মুজিবের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। পিতৃ-মাতৃহারা রেণুকে শেখ মুজিবের পিতামাতা কোলে তুলে নেন। শেখ মুজিব ও তাঁর ভাইবোনদের সাথে একই পরিবারে ফজিলাতুন্নেসা বড় হতে থাকেন। শিশুকালে খেলার সাথী থেকে তিনি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবন সাথী। বঙ্গবন্ধুর ১৯ বছর বয়সে ১০ বছরের ফজিলাতুন্নেসার আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়েছিল। ফজিলাতুন্নেসা গৃহে বাল্যশিক্ষা ও গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। উচ্চ শিক্ষা তিনি গ্রহণ করতে পারেন নাই।
১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা থেকে এসে পুরনো ঢাকায় থাকতেন। ঢাকা কোর্টের পিছনে একটি বাড়িতে খন্দকার আবদুল হামিদ ও মোল্লা জালালউদ্দিনকে নিয়ে তিনি একটি ভাড়া বাড়িতে বাস করতেন। শেখ মুজিবের মেজ ফুফুর পুত্র মমিনুল হক খোকা থাকতেন ৮/৩ রজনী বোস লেনের দোতলা বাসায়। ১৯৫৩ সালে শেখ মুজিব মমিনুল হক খোকার রজনী বোস লেনের বাসায় ওঠেন। ১৯৫৩ সালে শেখ মুজিব তাঁর পরিবারের সদস্যদের টুঙ্গিপাড়া থেকে রজনী বোসের বাসায় নিয়ে আসেন। তৎকালীন সময় রজনী বোসের বাসভবন বিরোধী রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্র ছিল। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক মন্ত্রী নিযুক্ত হলে তিনি মিন্টু রোডের বাসায় চলে আসেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৪ সালে ৯২-ক ধারা জারি করে হকÑমন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেয় এবং শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। তার পরিবার নাজিরা বাজারের মুহাম্মদ হানিফ (মেয়র)-এর বাসায় ওঠেন। ১৯৫৪ সালে বন্যায় নাজিরা বাজার প্লাবিত হলে আওয়ামী লীগ নেতা হাফেজ মোহাম্মদ মুসার আরমানিটোলার বাড়িতে বেগম মুজিব ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ওঠেন। শেখ রেহানা এ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে শেখ মুজিব পুনরায প্রাদেশিক শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে আবদুল গণি রোডে সরকারী বাসভবনে ওঠেন। ১৯৫৭ সালে শেখ মুজিবুর রহমান দলের নির্দেশে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন। তাঁকে টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হলে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেগুনবাগিচায় টি বোর্ডের বাসায় ওঠেন। তাঁর ফুফাত ভাই মমিনুল হক খোকা শেখ মুজিবের সাথে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সুখে-দুঃখে মমিনুল হক সাথে ছিলেন। এ মহান হৃদয়ের মানুষটি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নিবেদিত আপনজন ছিলেন।
১৯৫৮ সালে অক্টোবর মাসে সামরিকআইন জারি এবং শেখ মুজিবের গ্রেফতারের পরে তাঁর পরিবারকে সেগুনবাগিচার বাসা ছেড়ে দিতে হয়। বেগম মুজিব ছেলে-মেয়েদের নিয়ে শান্তিনগরে একটি নির্মাণাধীন বাসভবনে আশ্রয় নেন। কিন্তু বাসাটি বাসযোগ্য ছিল না। কেএসপি নেতা সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়ার সহযোগিতায় তারা সেগুনবাগিচায় এক জজ সাহেবের বাসা ভাড়া করেন এবং ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সে বাসায় ছিলেন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর বেগম মুজিব সন্তানদের নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে নতুন বাসভবনে ওঠেন।
বঙ্গবন্ধুর দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। ছেলে মেয়েদের প্রতি ছিল তাঁর অপার øেহ। শেখ মুজিব পাঁচ সন্তানের জনকÑ (১) শেখ হাসিনা, (২) শেখ কামাল, (৩) শেখ জামাল, (৪) শেখ রেহানা ও (৫) শেখ রাসেল।
শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেসার প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তখন বঙ্গবন্ধু কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বিএ পরক্ষিা দেন। জন্মের এক মাস পরে পিতা শেখ মুজিব বাড়ি এসে কন্যাকে কোলে তুলে নেন। শেখ হাসিনার ডাক নাম হাসু। পিতা তাঁকে হাসু বলে ডাকতেন। তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান শেখ কামাল ১৯৪৯৮ সালের ৫ আগস্ট এবং দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। চতুর্থ সন্তান শেখ রেহানা ১৯৫৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এবং পঞ্চম সন্তান শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করে। দুকন্যা ও তিন পুত্র পিতা-মাতার অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। পুত্র শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীর এডিসি ছিলেন। লেঃ কামাল স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি একজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন। তিনি আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং লন্ডনে সেন্ট হার্স্টে সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন। কন্যা শেখ হাসিনার প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডঃ মোহাম্মদ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বিয়ে হয়। শেখ হাসিনা ইডেন গার্লস কলেজের ভিপি এবং ডঃ ওয়াজেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ভিপি ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই শেখ কামালের সাথে বিশিষ্ট মহিলা ক্রীড়াবিদ সুলতানা খুকুর বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই বঙ্গবন্ধুর ছোট ভগ্নিপতি সাঈদ হোসেনের মেয়ে পারভীন রোজির সাথে শেখ জামালের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
শেখ মুজিব ১২ বছর কারাবাসকালে ছেলেমেয়ে পিতার øেহ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তিনি যখন মুক্ত ছিলেন তখন দলীয় নেতা-কর্মীও সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে প্রধান অবলম্বন ছিল তাঁর স্ত্রী এবং আÍবিশ্বাস। স্ত্রীকে তিনি গভীরভাবে ভালবাসতেন। “আকৈশোর গৃহিণী” বেগম মুজিব সংসারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করতেন। সর্বগুণে গুণানি¦তা ফজিলাতুন্নেসার সাহায্য ও সহযোগিতা না পেলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব হতো না। বেগম মুজিব সারা জীবন অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে স্বামীকে বাঙালীদের মুক্তি আন্দোলনে উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি নিয়ে নিমগ্ন থাকলেও পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি কয়েক বছর আলফা বীমা কোম্পানী এবং ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। বীমা ও গ্রামের বাড়ির আয় থেকে পরিবারের ভরণ-পোষণ নির্বাহ করতেন। ১৯৬১ সালে বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে ভবন নির্মাণ করেন। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সাফল্যের অন্তরালে বেগম মুজিব ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবদান সবচেয়ে বেশি। শেখ মুজিব দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। কিন্তু বেগম মুজিব কোনদিন ভেঙ্গে পড়েননি। তিনি ছিলেন সাহসী ও স্বাধীনচেতা। ১৯৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে লাহোর বৈঠকে যোগদানের অনুমতি দেন, তখন বেগম মুজিব বলেছিলেন তাঁর স্বামী মুক্ত মানুষ হিসেবে বৈঠকে যোগ দেবেন, প্যারোলে নয়।
শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর গার্লস স্কুল হতে এসএসসি এবং ইডেন গার্লস কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালের এইচএসসি পাস করেন। তিনি ইডেন কলেজের ভিপি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় বিএ অনার্সে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে তাঁর বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ ওয়াজদে মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। তখন বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দী ছিলেন। শেখ হাসিনা ১৯৬৬ সালে ৬ দফা ও ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি তাঁর মা, বোন ও ছোট ভাই রাসেল ও স্বামীসহ গৃহবন্দী ছিলেন। বন্দী অবস্থায় তাঁর প্রথম পুত্র জয়ের জন্ম হয়। ১৭ ডিসেম্বর তিনি ও পরিবারের সদস্যগণ মুক্তি পান। ধানমন্ডির ৩২ বছর বাড়িটি বাংলার সকল আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়েও ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে বাস করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ বাড়িতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ভবনটি তালাবদ্ধ ছিল। ১৯৮১ সালের ১২ জুন শেখ হাসিনা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নিকট থেকে ভবনটি বুঝে নেন। বঙ্গবন্ধু-পরিবার ছিল একটি আদর্শ বাঙালী পরিবার। জীবনযাপন ছিল খুব সাধারণ। সুনেতৃত্ব, নীতিবান, মিতব্যয়ী এবং সদ্ব্যবহারের জন্য তাঁদের একটা বংশগত মর্যাদা ছিল। এতবড় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হয়েও বত্রিশ নম্বর বাড়িতে কোনো এসি, কার্পেট ও দামি আসবাবপত্রের বাহুল্য ছিল না। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ ছিল উন্নত, জীবনাচরণ ছিল রুচিসম্মত।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালে তিনি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের ঢাকার রজনী রোডের বোস লেনে ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। ১৯৫৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রী নিযুক্ত হলে তিনি ঢাকার ৩ নম্বর মিন্টু রোডে সরকারী ভবনে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে দলের নির্দেশে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন এবং ১৫ নম্বর আব্দুল গণি রোডের বাসভবনে ওঠেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনাকে টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির স্কুলে ভর্তি করে দেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইনে বন্দী হলে তাঁর পরিবার সেগুনবাগিচায় ওঠে। ১৯৬০ সালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বাসভবনের এক তলা নির্মিত হয় এবং ১৯৬১ সারের ১ অক্টোবর নতুন ভবনে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে দোতলা নির্মিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান একজন সফল বীমা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানির উপদেষ্টা ছিলেন। জীবন বীমার আয় ও ঋণের টাকা দিয়ে ভবন নির্মিত হয়। ১৯৭৫ সালের পর দেনার দায়ে ভবনটি নিলামে উঠেছিল।
১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়ি নির্মাণের জন্য বেগম ফজিলাতুন্নেসা গৃহনির্মাণ সংস্থা থেকে ৩২ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এবং ঋণের গ্রান্টের হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বেগম মুজিব নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেন। ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকা-ের পর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি। গৃহনির্মাণ সংস্থা যথানিয়মে দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ১৯৮৩ সালের জুন মাসে অন্যান্য অনেকের বাড়ির সাথে বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি নিলামে বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি ছিলÑ “ফজিলাতুন্নেসা, স্বামী শেখ মুজিবুর রহমান, রোড নম্বর ৩২, বাড়ি নম্বর ৬৭৭, ধানমন্ডি, ঋণ কেসঃ ঢাকা-২১০৪।” বিজ্ঞপ্তিটি দেখে খবর পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান হাউজ বিল্ডিং করপোরেশনের জেনালের ম্যানেজার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানকে জানন। সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজান ও নিজামউদ্দিন আহমেদ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে পুনরুজ্জীবিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। গৃহনির্মাণ সংস্থা থেকে বলা হলো, কর্মকর্তাদের অজান্তে বাড়িটি নিলামের তালিকায় উঠেছে। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
গৃহনির্মাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন ঢাকার সাবেক ডেপুটি কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা কামালউদ্দিন আহমেদ। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর øেহাসিক্ত। ১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বোর্ডের সভায় কামালউদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নিকট পাওনা ২৪,৪৯৯.৫৮ (চব্বিশ হাজার, চারশত, নিরানব্বই টাকা আটান্ন পয়সা) মওকুফ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ কামালউদ্দিন আহমেদ অবসর গ্রহণ করেন। তিনি যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এ জন্য জাতি তাকে স্মরণ করবে। পরবর্তী এমডি খাজা জহুরুল হক ১৯৮৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দলিল তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার নিকট অর্পণ করেন। শেখ হাসিনা নিজে গৃহনির্মাণ সংস্থার অফিসে দলিল গ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালে শেখ রেহানা এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৪ জুলাই ড. শফিক সিদ্দিকীর সাথে শেখ রেহানার লন্ডনে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শেখ রেহানা লন্ডনে বাস করতে থাকেন। তিনি একটি লাইব্রেরিতে চাকরি করে সংসার চালাতেন। শেখ হাসিনা ও পুত্র ও কন্যাকে দিল্লীর স্কুলে ভর্তি করে দেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পিতামাতার হত্যার বিচারের দাবিতে তিনি লন্ডনে কয়েকটি সভায় যোগ দেন। ১৯৮১ সারের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি আওযামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয় এবং আব্দুল মালেক উকিল দলের সভাপতি হন। কিন্তু দলের মধ্যে ঐক্য ফিরে আসেনি। তাই দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপস্থিতি একান্তভাবে কামনা করে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ভারতে ছ'বছর নির্বাসিত জীবন যাপনের পর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। প্রায় ১০ লক্ষ জনতা তাঁকে স্বাগত জানায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৬-৮৭ সাল এবং ১৯৯১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংসদে বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন। গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামে তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে এবং শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৫ আগস্ট হত্যার তদন্ত শুরু হয়। খুনীদের অনেকে গ্রেফতার হয়েছে এবং কযেকজন বিদেশে পালিয়ে আছে। বিচারে ১৫ জন খুনীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে।
বর্তমানেও শেখ হাসিনা তৃতীয় বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে পিতার সুপ্ত ইচ্ছা পূরণ করে চলেছেন।

কন্যা শেখ হাসিনার কর্ম ও আদর্শের মধ্যেই যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ছায়া প্রদীপ্তমান।

বঙ্গবন্ধুর ঈদ


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের ৪ হাজার ৬৮২ দিন জেলে কাটিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো জীবন কাটাতে পারেননি তিনি। অন্য সবার মতো ঈদ উদযাপনও করা হয়নি তাঁর। কারণ পরিণত জীবনের অধিকাংশ ঈদেই তিনি ছিলেন জেলহাজতে নইলে পাক শোসকদের নজরদারিতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করার সুযোগ তিনি কমই পেয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর আ—কথা ‘কারাগারের রোজনামচা' থেকে তাঁর ঈদের দিনগুলো সম্পর্কে কিছুটা জানা যায়। জাতির পিতা কারাগারে বসে বসে ভাবতেন পূর্ব বাঙলার লোক সেইদিনই ঈদের আনন্দ ভোগ করতে পারবে, যেদিন তারা দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে এবং দেশের সত্যিকার নাগরিক হতে পারবে। কারণ তিনি ঠিকই জানতেন, পরাধীন জাতি কখনও ঈদের আনন্দ করতে পারে না।

একটা ঈদের কথা জাতির পিতা লিখেছেন এভাবে, ‘আজ কোরবানির ঈদ। গত ঈদেও জেলে ছিলাম। এবার জেলে। বন্দি জীবনে ঈদ উদযাপন করা একটি মর্মান্তিক ঘটনা বলা চলে। বারবার আপনজন বন্ধু-বান্ধব, ছেলেমেয়ে, পিতামাতার কথা মনে পড়ে। আমি তো একলা থাকি। আমার সাথে কোনো রাজনৈতিক বন্দিকে থাকতে দেয় না। একাকী কি ঈদ উদযাপন করা যায়?
যদিও এমন বেদনার মধ্যে দিয়েও বঙ্গবন্ধুকে ঈদের দিন পালন করতে হয়েছে'।

১৯৬৭ সালের দু বছর পর ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু ঈদ পালন করতে তাঁর গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন। সেসময় তাঁর মা সায়েরা খাতুন অসুস্থ ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম সারির কবি ও লেখক নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘২৭ ফেব্র“য়ারি রাতে তিনি গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত তাঁর অসুস্থ মায়ের সঙ্গে ঈদ পালন করার জন্য স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যান। তেত্রিশ মাস একনাগাড়ে কারাবন্দী থাকার কারণে বিগত ছয়-ছয়টি ঈদ ঈৎসবের আনন্দ থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বঞ্চিত থেকেছে। অনেকদিন পর বঙ্গবন্ধু পরিবারে ফিরে এসেছে ঈদের আনন্দ। ঐ পরিবারের ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের মানুষের মনে'।

রাজনীতি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বেশিভাগ সময় কেটেছে জনতার সাথে। সেজন্য পরিবারকে তিনি ভালোভাবে সময় দিতে পারেননি। তাই যেবার তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করতেন সেবার তার পরিবারে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত।

১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ঈদ। সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রতিবেশীদের সাথে ঈদ-আনন্দ ভাগ করে নিতেই বঙ্গবন্ধু ভালোবাসতেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ঈদ-উল আজহা উদযাপন নিঃসন্দেহে ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। বাংলাদেশে তখন স্বাধীনতার পতাকা উড়ছে। বাঙালিরা ভেঙে ফেলেছে শত বছরের বন্দীত্বের শেকল। যেহেতু সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে, দেশ গড়ার কাজ চলছে তাই পুরোদমে। তাই ১৯৭২ সালের ঈদ ভিন্ন মাত্রা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে হাজির হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে বাণী দিয়েছিলেন তাতে লিখেছিলেন, ‘ঈদুল আজহা আমাদের আত্মত্যাগ আদর্শ শিক্ষা দেয়'। বাংলাদেশের সাহসী মানুষ দেশকে স্বাধীন করার জন্য সম্পদ ও রক্ত দিয়ে চরম আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি চরম আত্মত্যাগ মনোভাব নিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন সে সময়।
বঙ্গবন্ধু কেবল জনগণকে আত্মত্যাগ করতে বলেননি, তিনি নিজেও সারাজীবন আত্মত্যাগ করে গেছেন। সেই শৈশব থেকে আমৃত্যু সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। তাইতো তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

 

শাহান আরা জাকির পারুল 
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top