হে বীর তোমাকে স্যালুট : জোবাইদুল ইসলাম
প্রকাশিত:
৩ জানুয়ারী ২০২১ ২১:৪০
আপডেট:
৩ জানুয়ারী ২০২১ ২২:৪২
দেশের জন্য রক্ত দিয়ে স্বাধীন দেশে দু পায়ে ভড় করে দাঁড়াতে না পারলেও লাল সবুজ পতাকার দিকে তাকিয়ে স্বস্তি পেতো বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন। বাবা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে খেলার মাঠ ছেড়ে বই খাতা পেন্সিল ফেলে পালিয়ে যুদ্ধে যায় দুরন্ত চন্দন। পাকিস্তানি হায়নাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়ে গর্জে উঠা থেকে কোনো শক্তিই নিবৃত করতে পারেনি অসীম সাহসী, তেজোদৃপ্ত, সংস্কৃতির উজ্জ্বল নক্ষত্র কাজী জাকির হাসান চন্দনকে।
কুড়িগ্রাম জেলার সদর থানার ভোগডাংগা গ্রামের বুনিয়াদী কাজী বাড়ির বড় ছেলে চন্দনের বাবা অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্টাফ কণ্ঠশিল্পী ও ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেতা, এবং পল্লীগীতি আর ভাওয়াইয়ার বরেণ্য শিল্পী শুদ্ধ মানুষ কাজী মকবুল হোসেন।
কাজী জাকির হাসান চন্দন ৭১ এর জুনে ভারতের শিলিগুড়ি ভারতীয় আর্মি ক্যম্পে ট্রেনিং শেষে লালমিনিরট জেলার তুষভাণ্ডারের মহিষখাঁচার গৌরাম্ভ ব্রীজ উড়াতে গিয়ে মাইনের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আহত চন্দনকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রথমে দিনহাটা ক্যাম্প হাসপাতাল নেয়া হয় সেখান থেকে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগীতায় কুচবিহার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জ্ঞান ফিরে তিনি দেখেন তাঁর একটি পা নেই। রনাঙ্গনে পা হারানো বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন স্বাধীন দেশের মাটিতে দু পা দিয়ে দাঁড়াতে না পাড়লেও কখনো মাথা নত করেননি। আমৃত্যু ছিলেন আপোষহীন, লড়াকু, নীতিতে অটল এক বীর যোদ্ধা।
যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ বেতারে স্ক্রীপ্ট রাইটার হিসেবে কাজী জাকির হাসান চন্দন যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশের এক অনন্যসাধারণ নাট্যকার ও নাট্য প্রযোজক। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বেতারের চীফ স্ক্রীপ্ট রাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব ঘটনা নিয়ে তাঁর লেখা নাটকের একেকটি সংলাপে রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি ছিলেন এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণের পথিকৃৎ। মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেক বই তিনি লিখে গ্যাছেন। যা মুক্তিযুদ্ধের অনন্য সম্পদে আমাদের সমৃদ্ধ করেছে।
আজ চন্দন ভাইয়ের মৃত্যুদিন। আজ এই দিনে অকুতোভয় বীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। আমি ছিলাম তাঁর স্নেহধন্য অনুজ। তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়াতে আমরা হারিয়েছি একজন দক্ষ সংগঠক, শিল্প সাহিত্য আর সংস্কৃতি অঙ্গনের এক সূর্যসন্তানকে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: