একাত্তরটা প্রতিদিনই মনে পড়ে : সালেক খোকন
প্রকাশিত:
২৯ মার্চ ২০২১ ২০:০৫
আপডেট:
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৫২
‘আমার ডান ও বাম পায়ে গুলি লাগে। ডান পায়ের ভেতর স্প্লিন্টার এখনও রয়েছে। চাপ পড়লেই অনেক ব্যথা করে। ফলে নামাজ পড়তে হয় চেয়ারে বসেই। কপালের ভেতরের স্প্লিন্টারও বের করা হয়নি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কপাল স্পর্শ করলেই সব স্মৃতি জীবন্ত হয়ে ওঠে। এভাবে একাত্তরটা প্রতিদিনই মনে পড়ে যায়।’
‘মেছড়া গ্রামটি যমুনা নদীর পাড়ে। একসময় ভাঙন লেগেই থাকত। মেট্রিক দিয়েছি মাত্র। সাতদিনের মধ্যে আমগো ৫৩ বিঘা জমি চলে গেল যমুনার পেটে। বাবা তখন বৃদ্ধ। চোখেও কম দেখেন। বড় পোলা আমি। তাই পরিবারের হাল ধরতে কাজে লাগি। ঈশ্বরদীতে গিয়া এক স্কুলে মাস্টারি শুরু করি। বেতন ছিল মাত্র ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা।’’
’’ফাঁকে ফাঁকে লেখাপড়া করতাম। পরে ইন্টারমিডিয়েট দিই সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে। ভালো বল খেলতাম তখন। হায়ারেও খেলতে যেতাম। আমগো ভাষায়, ‘পা বিক্রি’। একেক ম্যাচে মিলত ১০ টাকা করে। মাসে তিন-চারটা ম্যাচ থাকতই। সব মিলিয়ে উপার্জন কম ছিল না। পুরা টাকাটাই পাঠিয়ে দিতাম বাড়িতে।’’
“একবার পাবনা ও দিনাজপুর পুলিশ টিমের মধ্যে ফাইনাল খেলা হয় দিনাজপুরে। লালু আর আমি পাবনা পুলিশ টিমের পক্ষে খেলি। খেলা শেষে ডিআইজি সাহেব ডেকে পাঠালেন। পুলিশের লোক না জেনে সেদিনই রিক্রুটের নির্দেশ দিলেন। এভাবে জয়েন করি পুলিশে, সাব ইন্সেপেক্টর হিসেবে। সারদা পুলিশ একাডেমিতে চলল এক বছরের ট্রেনিং। অতঃপর আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকার রাজারবাগে।’’
পুলিশে যোগদানের কাহিনিটি শুনছিলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সুজাবত আলীর মুখে। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া গ্রামে। এক সকালে আমরা পা রাখি তাঁর বাড়িতে। আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁর শৈশব ও কৈশোরের নানা ঘটনা।
চার ভাই ও দুই বোনের সংসারে সুজাবত ছিলেন সবার বড়। সুজাবতের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি মেছড়া প্রাইমারি স্কুলে। বাবা আবদুর রহমান পাটের ব্যবসা করতেন। সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাট কিনে বিক্রির জন্য তিনি তা নৌকাযোগে নিয়ে যেতেন নারায়ণগঞ্জে। মা সুখিতন নেছা ছিলেন পুরোপুরি গৃহিণী।
সে সময় পুলিশ প্রশাসনের ভেতরের বৈষম্যের কথা উঠতেই তিনি বলেন:
“বাঙালি সৈন্যদের ডিউটি করতে হত ১২ ঘণ্টা। ওরা কম করত। কিন্তু সুবিধা নিত বেশি। লেখাপড়া কম জানলেও পাকিস্তানিরা সুবেদার, ডিআইজিও হয়ে যেত। আমার ওই পর্যন্ত যেতেই পারতাম না।’’
মার্চ, ১৯৭১। পূর্ব পাকিস্তানে অলিখিতভাবেই চলছিল শেখ মুজিবের নির্দেশ। ৭ মার্চ শেখ মুজিব ভাষণ দিবেন রেসকোর্স ময়দানে। খবর পেয়ে ব্যারাক থেকে সুজাবত সাদা পোশাকে চলে যান সেখানে। সঙ্গে ছিলেন সুবেদার আলী আশরাফ ও মতিউর রহমানসহ কয়েকজন। খুব কাছ থেকে শোনেন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। তাঁর ভাষায়:
“বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি…’, এই কথার পরে আমাদের কাছে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। বুঝে যাই সশস্ত্র সংগ্রামই একমাত্র পথ।’’
২৫ মার্চ, ১৯৭১। রাত তখন ১১টা। সুজাবত আলী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। খবর আসে পাকিস্তানি সেনারা কিছু একটা করবে। কিন্তু কী ঘটবে, কেউ জানে না। সে রাতের কালো অধ্যায়ের বর্ণনা শুনি সুজাবতের মুখে।
তিনি বলেন:
“খবর আসে আর্মি আসার। ফলে শান্তিনগরের রাস্তার মাঝ বরাবর কেটে রাখা হয়। নানা জিনিস দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেডও ফেলা হয়। আশেপাশে বিদ্যুৎ তখন বন্ধ। আমি সিগারেট কিনে বাইরে ট্রাফিক বি-তে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ খট খট শব্দ। ভাবলাম ইপিআর ক্যাম্প থেকে ওরা আসছে। অন্ধকারে বোঝাও যায় না। তখনই কানে আসে এক সৈন্যের কণ্ঠ: ‘ইয়ার, জলদি করে।’ ওদের উর্দু উচ্চারণ শুনেই বুঝে যাই এরা পাকিস্তানি সেনা।’’
“ভেতরের একটি বিল্ডিংয়ের ছাদে আমরা প্রথমে আশ্রয় নেই। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় গোলাগুলি। কয়েকটি ছাদ থেকে পুলিশ সদস্যরাও সেনাদের উপর গুলি চালায়। কিন্তু বেশিক্ষণ নয়। খানিক পরেই সেনারা শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। ওদের এইটি ফাইভ ও সেভেটি ফাইভ মিলিমিটার গানের মুখে আমরা টিকতে পারি না।’’
“আমাদের ব্যাটালিয়ান অফিস ছিল পূর্বদিকে। নিচে পাকা। উপরে টিন। ওরা ঢুকে ওই ব্যারাকেই আগুন ধরিয়ে দেয়। সবাই তখন মেইন বিল্ডিংয়ের দিকে আসতে থাকে। সে সময় সেনাদের গুলিতে মারা পড়ে শত শত পুলিশ সদস্য।’’
“আমার সঙ্গে ছিল শহীদ নামে এক হাবিলদার। আমাদের পজিশন তখন ভেতরে, পুকুরপাড়ে। অন্ধকারেই আগাচ্ছি। হঠাৎ ব্রাশফায়ারের গুলি এসে লাগে শহীদের বুকে। যন্ত্রণায় সে ছটফট করতে থাকে। খানিক পরেই নিথর হয়ে যায় তার দেহটি। মনের ভেতর তখন মৃত্যুভয়। পরে ক্রলিং করে এক সিভিলিয়ান কোয়াটারে আত্মগোপন করলাম। ভোরে খুঁজে পেলাম একটি লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি। পুলিশের পোশাক ছেড়ে বহুকষ্টে পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেলাম সদরঘাটে। এভাবে জীবন নিয়ে ফিরে আসি গ্রামে।’’
তখনও সিরাজগঞ্জে আর্মি ঢুকেনি। সুজাবত বাঁশের লাঠি দিয়ে ছাত্রদের ট্রেনিং দিতে শুরু করেন। এ সময় তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করেন শাহজাহান, বিএনসি ফজলু, মকবুল হোসেন, সোহরাব হোসেন প্রমুখ। পরে এয়ারফোর্স ও আর্মির কিছু বাঙালি সদস্য একত্রিত হয়। তাদের নিয়ে তিনি ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ হয়ে চলে আসেন তুরা ট্রেনিং ক্যাম্পে। আমিন আহম্মেদ চৌধুরি তখন ক্যাপ্টেন। ট্রেন্ড সোলজার পেয়ে তিনি তাদের পাঠিয়ে দেন ১১ নং সেক্টরের জামালপুর-সরিষাবাড়ি সাব-সেক্টরে।
একটি কোম্পানির কমান্ডের দায়িত্ব ছিল সুজাবতের। টোয়াইসি ছিলেন লুৎফর রহমান। সরিষাবাড়ি অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিতে ‘দারোগা কোম্পানি’ এখনও জীবন্ত হয়ে আছে। নেভাল ফোর্সের সহযোগিতায় জগনাথগঞ্জ ঘাটের ফেরি ডুবানো, বাউশি ব্রিজ উড়ানো, দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনের আংশিক ধবংস করা প্রভৃতি দুর্ধষ অপারেশন পরিচালিত হয় মুক্তিযোদ্ধা সুজাবতের নেতৃত্বে।
সরিষাবাড়ির বাউশি রেলব্রিজ অপারেশনের সময় মারাত্মকভাবে আহত হন এই বীর যোদ্ধা। পাকিস্তানি সেনাদের ব্রাশফায়ারের গুলি ও স্প্লিন্টারে বিদ্ধ হয় তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ। নিজে রক্তাক্ত হলেও দেশ স্বাধীনের লড়াই থেকে কখনও পিছু হটেননি।
কী ঘটেছিল রক্তাক্ত ওই দিনটিতে?
জানতে চাই আমরা। উত্তরে খানিকটা নিরবতা। অতঃপর বলতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধা সুজাবত:
“১০ অক্টোবর, ১৯৭১। একদিন আগেই আমরা দখল করে নেই সাপনেজা ব্রিজটি। সেদিনই পরিকল্পনা হয় বাউশি রেলব্রিজটি ধ্বংস করার। এটি উড়িয়ে দিতে পারলেই জগনাথগঞ্জ থেকে জামালপুর ডিটাস্ট হয়ে যাবে। কিন্তু কাজটা খুব সহজ ছিল না। কারণ ব্রিজের পশ্চিমপাশে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী ঘাঁটি।’’
“৩০ জন করে তিনটি দল করে নিলাম প্রথমেই। একটি দল রেললাইনের উপরে অবস্থান নিল। যেন জামালপুর থেকে কোনো ট্রেন এদিকে আসতে না পারে। আরেকটা দল অবস্থান নিল একটু দূরে, বিরালাকুঠি নামক জায়গায়। আমি ব্রিজের পূর্বদিকের একটি বাড়িতে পজিশনে গেলাম আরেকটি দল নিয়ে।’’
“সকাল তখন ৯টা। প্রথমে আমরাই ফায়ার ওপেন করি। আমাদের আক্রমণে ব্রিজের ওপরে ওদের বাঙ্কারগুলো ভেঙে যায়। ওরা ব্রিজের অবস্থান ছেড়ে দেয়। এ সুযোগে কয়েক জনকে নিয়ে ব্রিজের দিকে এগিয়ে যান ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের আবুল কালাম আজাদ। ওরা ব্রিজে মাইন সেট করছিল। ডেটোনেটর লাগাচ্ছে। এমন সময় ট্রেনের আওয়াজ। জামালপুর থেকে সেনাবাহিনীর ট্রেন আসছে। রেললাইনের ওখানে থাকা আমাদের দলটি ওদের ঠেকাতে পারে না। ট্রেনটি কাছাকাছি এসে থেমে যায়। সেখান থেকে নেমে আসে সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনারা। ওদের গুলিতে সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হন আমাদের ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা। সিরিয়াস উইনডেড হন আরও ১১ জন।’’
“বাড়ির ভেতরের পজিশনে থেকে আমরা তখনও গুলি চালাচ্ছি। দুপাশে দুই মুক্তিযোদ্ধা। শহীদ আর সামাদ। এরা মূলত ছিলেন এয়ারফোর্স পার্সন। একজনের বাড়ি নোয়াখালী। আরেক জনের কুমিল্লা। হঠাৎ সামাদের পেটে সেল এসে পড়ে। ব্রাশফায়ারের গুলিতে শহীদের মাথার খুলি যায় উড়ে। ওদের দিকে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম। রণক্ষেত্রে বহু বীর এভাবেই দেশের জন্য জীবন দিয়েছিলেন অকাতরে। তখনও গুলি চালাচ্ছি। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্টেনগানের গুলি ও স্প্লিন্টার এসে লাগে আমার হাত, পা ও কপালে। রক্তাক্ত হয় সারা শরীর। যুদ্ধ করতে করতেই জ্ঞান হারাই। যখন চোখ খুলি তখন গৌহাটি হাসপাতালে।’’
“আমার ডান ও বাম পায়ে গুলি লাগে। ডান পায়ের ভেতর স্প্লিন্টার এখনও রয়েছে। চাপ পড়লেই অনেক ব্যথা করে। ফলে নামাজ পড়তে হয় চেয়ারে বসেই। কপালের ভেতরের স্প্লিন্টারও বের করা হয়নি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কপাল স্পর্শ করলেই সব স্মৃতি জীবন্ত হয়ে ওঠে। এভাবে একাত্তরটা প্রতিদিনই মনে পড়ে যায়।’’
১৩ দিন চিকিৎসার পর আবারও রণাঙ্গনে ফিরে আসনে মুক্তিযোদ্ধা সুজাবত। অংশ নেন বিভিন্ন অপারেশনে। যুদ্ধে আহত হয়েও তিনি গ্রহণ করেননি কোনো সরকারি ভাতা। যুদ্ধাহত হিসেবে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন পাঁচশত টাকা। ওটুকুই। নেননি সরকারের অন্য কোনো সুবিধাও।
কেন?
প্রশ্নের উত্তরে একটি ঘটনার কথা জানান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
“পরিচিত একজন তখন সচিব। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি জমির ব্যবস্থা করে দিবেন তিনি। ডিসি অফিসও ডাকল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াল আমার একমাত্র মেয়ে সমিচা সুলতানা। সে বলল, ‘বাবা তুমি যুদ্ধ করেছ কেন? দাদা বলেছে, নাকি মা বলেছিল? আমি অবাক হয়ে উত্তর দেই, ‘৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর ঢাকার পরিস্থিতি দেখে কোনো যোদ্ধা বসে থাকতে পারে মা।’ সে তখন বলল, ‘কোনো চুক্তি করেছিলে তোমরা? তাহলে, এখন কেন তোমাদেরকে একটি করে বাড়ি দিতে হবে, জমি দিতে হবে?’
“সেদিন মেয়ের কথার উত্তর আমি দিতে পারিনি। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যোদ্ধা হিসেবে কোনো সরকারি সুবিধা না নেওয়ার। আমার কোনো আফসোস নেই, বাবা। সময়ের প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আজ যখন দেখি যুদ্ধ না করেও অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার আর যুদ্ধাহতের ভাতা নিচ্ছে তখন সত্যি খুব খারাপ লাগে, কষ্ট পাই।’
স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকাররা হয়েছেন মন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তখন এক ধরনের রক্তক্ষরণ হয়েছিল সুজাবতের মনে। সে সময়কার কষ্টের কথা জানালেন তিনি।
“যারা দেশ মানে না, পতাকা মানে না, আমাদের জাতীয় সংগীত মানে না, তারা হয়েছিল মন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতি! এ কষ্টের কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, বাবা। আমি তো ওগো দিয়া জুতাও কালি করাতাম না। অথচ জিয়াউর রহমান হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের দিয়া রাজাকারগো সিলোট দেওয়াইছে। লজ্জাজনক। ইতিহাস তো এদের কাউকেই ক্ষমা করবে না।’
১৯৭১ সালে রাজাকারদের কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধা একটি ঘটনার কথা জানালেন:
“ওদের একটা দল মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু-খাসি নিয়ে আসেত, লুটপাট করত। আরেকটি দল বাঙালি যুবতীদের তুলি দিত পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। জগন্নাথগঞ্জের ঘাটে আর্মি ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করেছিলাম ১১ জন নারীকে। কামালপুরে ৩৩ জন। সরিষাবাড়ি-জামালপুর অঞ্চলে নামকরা রাজাকার ছিল পিগনা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। নাম রুস্তম আলী। আমি তাকে জগন্না থগঞ্জের ঘাট থেকে ধরে আনি। পরে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ময়মনসিংহ জেলে। তার বিচার হয়েছিল কিনা আজও জানি না।’’
দেশের উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তরুণ প্রজন্মের জেগে ওঠা দেখলে ভালো লাগে মুক্তিযোদ্ধা সুজাবতের। কিন্তু খারাপ লাগে কখন?
উত্তরে তিনি বলেন: “যখন দেখি, নেতা ও দুর্নীতিবাজ আমলারা ব্যবসা-বাণিজ্য আর টাকা-পয়সা কামাতে ব্যস্ত– যখন দেখি, মসজিদে বসে ইমাম সাহেবরা নির্ভয়ে ধর্মের নামে মানুষকে উসকে দিচ্ছেন– তখন সত্যি খারাপ লাগে। এমন দেশের স্বপ্ন তো আমরা দেখিনি।’’
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস আর দুর্নীতির প্রতিবন্ধকতা ভেঙে এদেশ মাথা উঁচু করে দাড়াবেই। বাংলাদেশ জেগে উঠবে। তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই। এদেশ সোনার বাংলা হবে। এমনটাই বিশ্বাস এ বীর মুক্তিযোদ্ধার।
অবসরে সুজাবত মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান নাতি-নাতনিদের। সে গল্প তাদের মন ছুঁয়ে যায়। গল্পের মতো করে মাঝে মধ্যে তারা মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তিযোদ্ধা খেলা খেলে। দলবেঁধে কণ্ঠ ছেড়ে তারা স্লোগান দেয়, ‘জয় বাংলা’। সুজাবতের মন তখন ভরে ওঠে। মুচকি হেসে দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি তখন ভাবেন, ‘জয় বাংলার শক্তিতেই এদেশ থেকে একদিন জঙ্গিবাদ বিলীন হয়ে যাবে।’
ছবি: সালেক খোকন
সালেক খোকন
লেখক ও গবেষক
বিষয়: সালেক খোকন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: