সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


একজন করোনা পজিটিভ রোগীর জীবন যুদ্ধ : নিগার সুলতানা সাথী


প্রকাশিত:
৭ আগস্ট ২০২০ ০০:২৫

আপডেট:
৭ আগস্ট ২০২০ ০০:৩৪

ছবিঃ নিগার সুলতানা সাথী

 

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমি করোনার যুদ্ধ দেখলাম। এটা একটা যুদ্ধ সমগ্র দেশ বাসী একসাথে এই যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছি। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। আল্লাহ আমাদের সাথে আছে। ইনশাআল্লাহ। ১৯৭১ সালের মতো আমরা আবার বিজয় করবো দেশ টাকে সেই সুন্দর একটা পৃথিবী দেখার অপেক্ষাই থাকলাম।

দীর্ঘ ৩ মাস ঘর থেকে বের হয়নি, ওয়ার্ক ফরম হোম অফিস করেছি। কিন্তু আার কতো দিন? ঈদ র ছুটির আগে কিছুদিন অফিস করতে হয়েছে আর ঈদের ছুটির শেষে অফিস শুরু করতে হয় রেগুলারলি। মাত্র ৩ দিন অফিস করেই আমি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেলাম অনেক বেশি সতক থাকার পরেও।

কিভাবে আমি আক্রান্ত হলাম?

জুন মাসের  ২ তারিখ রাতে আমার কঠিন ডাইরিয়া বমি। তাই ৩ তারিখ অফিস যেতে পারিনি। ভাবলাম রোজা ছিলাম হয়তো এসিরিটি প্রব্লেম হইছে। সকাল এ খবর এলো আমার পাশের কলিগ পজেটিভ কিন্তু আমরা কেউ জানতাম না। তখন থেকেই তো বাসাই ফুল আইসোলেশন হয়ে যাই। আমার ছেলে যে মিনিটে মিনিটে আামাকে পাপ্পা না দিলে হয় না সেই ছেলে ও সময়ের কঠিন নিরমম পরিস্থিতি মেনে নিতে বাধ্য হয়। অনেক কষ্ট হয় কিন্তু আপনজনের ভালোর জন্য মেনে নিতে হয়।

আামার অফিস থেকে নিজ উদ্দোগে সব ইমপ্লয়িদের করোনা টেস্টের ব্যবস্থা নেয়া হয়। সেদিন ছিল ৭ ই জুন। গেলাম টেস্ট করতে তখন তেমন কোন উপসর্গ আমার ছিল না। সাথে মৃদুলের ও টেস্ট করায়।

৩ দিন পর রিপোর্ট দিবে এ যেন ছিল এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের মতো এক টেনশন। সবাই বলে কিছু হবে না টেনশন করো না। আমি জানতাম কি হবে। এই ৩ দিনে আমার কিছু নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে যেমন প্রচন্ড শরীর ব্যাথা, হালকা জ্বর, গলা ব্যাথা। তারপর ৩ দিন পর রিপোর্ট আসলো আমার পজিটিভ, আর আমার স্বামী মৃদুলের আলহামদুলিল্লাহ নেগেটিভ।

রিপোর্ট পেয়ে কিছু সময়ের জন্য ভেঙে পরি কিন্তু কাউকে বুঝতে দেই না, তারপর নিজেকে সামলে নিই, আল্লাহ যখন আমাকে এই যুদ্ধে নামিয়েছেন তখন আমাকে লড়তেই হবে। যদি না পারি সেটা আল্লাহর হাতে। যেদিন থেকে আইসোলেশন এ আছি সেদিন থেকেই যা যা করার করোনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা আদা চা, গরম পানি গারগেল, ভাব, ভিটামিন সি আরও কতো কি সবই করছিলাম।

 চিকিৎসা ঔষধ পত্র

এবার পালা শুরু হলো আক্রান্ত হলে কি চিকিৎসা ঔষধ পত্র। ডাক্তার ফামিলির মেয়ে এবং বোউ হওয়ায় আামার আর বাইরের কোন ডাক্তার আর পরামর্শ নিতে হয় না। আমার চাচা, চাচী, চাচাতো বোন এবং ভাসুর ডাঃ হওয়ায় আমি তাদের কাছে অনেক হেল্প পাই। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

আমার বেশ কিছু কমপ্লিসিটি তৈরি হয় এরই মাঝে বমি, জ্বর, গলা ব্যাথা, শ্বাস কষ্ট। নিজের সব কাজ তো নিজেরই করতে হয় এই রোগে এটাই তো বড় পরীক্ষা।

আমার জামাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আমাকে নিয়ে এবং পুরা সংসাররের দায়িত্বটাই তার উপর। অবশ্য আমরা দুই বোন এক বিল্ডিং এ থাকায় অনেক সাপোর্ট করে আপা রান্নাবান্না করতে দেইনি মৃদুল কে এবং আমার ছোট ভাই ও ভাইয়ের বৌ তো রান্না করে নিজেই আমার বাসাই হাজির হয়ে যেতো প্রায় হাজার মানা করা সত্বেও ওর অনেক সাহস আল্লাহ ভালো রাখুক তোমাদেরকে। আমার বান্ধবী লাকী সেও রান্না করে নিয়ে হাজির হয় মাঝে মাঝেই। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

আমার তো মা নেই আমার বড় বোন নার্গিস সুলতানাই তো আামার মায়ের মতো। অনেক খোজখবর রাখে আমাদের আমার কি খেতে ইচ্ছে করে সারাদিন জিজ্ঞেস করতেই থাকে। আমার তো কিছুই তখন খেতে ইচ্ছে করতো না আমার জামাই আমাকে জোর করে করে একটু পর পর খাওয়াতো।

**এই রোগ টা কেমন?

হয়তো একেক জনের সিম্পটম একেক রকম। আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। খুব ভয়ংকর একটা রোগ আমার কাছে। অনেক কষ্ট অনেক আল্লাহ যেন আর কাউকে এমন কষ্ট আর না দেই এটাই আমার প্রার্থনা।প্রথমত মানুষিক সমস্যা। দ্বিতীয়ত শারীরিক সমস্যা।

মানসিক সমস্যা কেন?

 আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি যেই সামাজিকতাই সেটা হলো যদি জ্বর আসে মা মাথায় পানি ঢালছে সবাই ঘিরে বসে থাকে আত্মীয় স্বজন দেখতে আসে এতেই আমরা অনেকটা ভালো হয়ে যাই। এই ধাক্কাটাই আমরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে খাই। কিন্তু আমি মন কে পজিটিভ ভাবে ভাবতে শিখায়।

এমন একটা রোগ নিজের সংসার, সন্তান সব কিছু চোখের সামনে থেকে ও আমি কোন কিছু ছুতে পরবো না আমাকে কেউ পারবে না। এটা একটা কঠিন বিষয়। মনের মধ্যে একটাই ভয় আল্লাহ আমার থেকে ওদের যেন কিছু না হয়। ওদের কে তুমি হেফাজত করো।

শারীরিক সমস্যা

আস্তে আস্তে আমার শরীর অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যাই, খুব বমি, জ্বর, শ্বাসকষ্টে আমি উঠে দাড়াতে পারিনা। কিন্তু উঠতে তো হবেই। মনে সাহস রাখি। কোন একটা সময় মেজাজ ও খুব খিটখিটে হয়ে যাই।

একদিন রাত ৯ টার দিকে আমার খুব শ্বাস কষ্ট বুকে পিঠে ব্যাথায় আমি অস্থির হয়ে যাই। আমি অসহ্য কষ্টে আমি কুকরে যাচ্ছি অনেক শ্বাস কষ্ট হচ্ছে কাদতে থাকি খুব আমার রুম বন্দ্ধ থাকায় কেউ শুনতে পায় না আমার কান্না র আমি কাউকে জানাতেও চাই না কারন সবাই টেনশন করবে আর আমি ছোট থেকেই অনেক বেশি চাপা স্বভাবের। প্রায় এক ঘন্টা কান্নার পর এক সময় আামার জামাই দরজা খুলে আমাকে দেখে তো হতবাক, কি করবে দিশেহারা। আমাকে বলে কি হচ্ছে বলো কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার? আমাকে ডাকবা না এই বলে আমার রুমে ঢুকে আসে, শ্বাস কষ্ট হচ্ছে তোমার? আমি বলি হু।

ও বলে আমি তোমার একটু ম্যাসেজ করে দিই ভালো লাগবে এই বলে আমার পিঠ এ একটা হাত দিয়ে দেই আমি তো সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই। আমাকে টাচ করতে না করি সে বলে আমি গ্লাভস পরে দেই কিছু হবে না। আমি দেই না। এক সময় আমি নিস্তব্দ হয়ে পরে থাকি তখন ও আমার প্রেসার টা চেক করে মানা করা সত্বেও। ততক্ষনে আমার ভাই বোনের কানে খবর পৌঁছে গেছে। একদিকে ওরা আমাকে নিয়ে টেনশন করছে আবার র একদিকে আমার জামাই র ছেলে কে নিয়ে টেনশন করছে ওরা আামার কাছে এসছে।

কেউ হসপিটাল এ নেবার কথা বলছে কেউ এম্বুল্যান্স ডাকার চিন্তা করছে, আমি সব শুনছি দেখলাম ভাব তো ভালো না, নিজেকে নিজেই বললাম সাথী তোমাকে উঠে দাড়াতে হবে, ওদেরকে শান্ত করতে হবে, আমি কোনভাবেই হসপিটাল যাবো না এটা আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বসে আছি। মরলে নিজের ঘরেই মরবো। আমি কোন রকমে কষ্ট করে উঠে দাড়ালাম ওয়াশরুম গেলাম ফ্রেশ হলাম, রাতের মেডিসিন খেলাম সাথে ঘুমের মেডিসিন খেলাম। তারপর বললাম আমি এখন ঘুমাবো তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর রুম এর লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম ওরা একটু শান্তি পেল।আমি চুপ করে শুয়ে থাকলাম তখনও খুব কষ্ট হচ্ছিলো আমি শুয়ে শুয়ে দোয়া দরূদ পরতে থাকি।

আর সব চেয়ে বড় বিষয় আমার সব টিটমেন্ট ই আমার ঘরেই হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমার ডাঃ চাচারা টেক কেয়ার করছে রাত নাই দিন নাই যখনই দরকার হচ্ছে। বিশেষকরে সাইফুল আলম চাচাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। আমার ডাঃ বোন শারমিন আহমেদ অনেক খেয়াল রেখেছেন। আর আমার জামাই আামার যেই টেক কেয়ার করছে তা কি হসপিটাল গেলে আমার হবে?

যাইহোক নিজেকে অনেক শক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, সব নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেছি। তারপর ও আামার শ্বাস কষ্ট বেড়েই চলেছে কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না অক্সিজেন লেভেল ও কমে যাওয়াই শেষ মেষ আমাকে অক্সিজেন দিতে হয়, বাসায়ই দিলাম। অক্সিজেন টা বাসায় দিতে না পারলে হয়তো বিপদ হয়ে যেত। তারপর দিন কষ্টে কাটছে এভাবেই আস্তে আস্তে ১৪ দিন চলে এলো।

১৫ তম দিন টেস্ট করলাম ফুল ফ্যামেলি। আল্লাহর কাছে প্রতি ওয়াক্ত নামাযে একটায় জিনিস চাইছি আমার স্বামী সন্তানের যেন কিছু না হয়। যা আমার হয়ছে আমাতেই ইতি টানো। সেই রাতে আমার এক ফোটা ঘুমও হয় না। পরেরদিন সন্ধ্যায় রিপোর্ট আসে সবার নেগেটিভ আলহামদুলিল্লাহ। এক মুহুর্তে আমরা সবাই খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠি। নফল নামায পরে আমরা সবাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।

তারপর নেগেটিভ হবার পরও ১৪ দিন আমাকে সেপারেট থাকতে হবে এবং আর ও বেশী নিয়ম মেনে চলতে হবে ডাঃ চাচার আদেশ নিয়ম না মানলে নাকি আরও ভয়ংকর রুপ নেই অনেকের। আমি সব নিয়ম মেনেই চলছি তবু অনেক সমস্যাই রয়ে গেছে আর অনেক বেশি দূবল হয়ে পরি। শরীরে কোন শক্তিই নাই।

নেগেটিভ হবার ২ দিন পর সন্ধার আগে মাথা ঘুরে পরে যাই মেঝেতে ২/৩ মিনিট পর তাকাই দেখি আমি পরে আছি তারপর অনেক কষ্টে উঠে দেখি আমার কপাল কেটে গেছে মাথায় সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা পাই। ঐ অবস্থায় একা একা ওয়াশরুম গিয়ে মাথায় পানি দেই আবার একা একাই কপালে পট্টি বাধি। তারপর শুয়ে থাকি। কিছুক্ষণ পর মৃদুল এসে দেখে তো চিৎকার কি হয়ছে? আমাকে ডাকোনি কেন? অস্থির হয়ে গেল। আমি বললাম তেমন কিছু হয়নি তো টেনশন করো না। তারপর আাবার ৭ দিন অতিক্রম হবার পর টেস্ট দিলাম।

আমার এই যুদ্ধে আমি একটাই জিনিস উপলদ্ধি করেছি আল্লাহকে ডাকতে হবে আার নিজের মনোবল রাখতে হবে শক্ত ভাবে।আমাকে জয়ী হতেই হবে। ইনশাআল্লাহ। আর ফ্যামেলির সাপোর্টটা অনেক বেশি জরুরী। আামি কৃতজ্ঞ আামার বাবা, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাই, বোন (কাজিন) সকল আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, বান্ধব যে যেখানে আছে সকলে আমার অনেক অনেক বেশি খোজ খবর নিয়েছে অনেক বেশি দোয়া করেছে। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

আমার সব ভাই বোন কাজিন রা আামার জন্য দোয়া দরুদ সূরা ইয়াসীন খতম দেই, আমার শাশুড়ী আমার জন্য সাদকা দেই (অফুরন্ত ভালোবাসা)যা খুব কম বৌ পাই, আমার ননাস সে তো প্রতি বেলায় খবর নেই দূর থেকে কিছু করতে পারে না বলে দুঃখ করে।আাবার কোন ভাই, বোন (নাম নাই বা উল্লেখ করলাম) আমার সুস্থতার জন্য রোজা করছে এতো এতো ভালোবাসা আমার জন্য তা হয়তো অসুস্থ না হলে জানতেই পারতাম না আমি ধন্য সবার ভালোবাসায়। সকলের দোয়ায় এবং আল্লাহর রহমতে আজ আমি আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ।

রক্তের সম্পর্ক ছাড়া ও আরেকটা সম্পর্ক হয়ে যাই ফ্যামিলির মতো যাদের সাথে দিনের আট টা ঘন্টা পার করি আমরা সেটা হলো অফিস। আমার অফিসের স্যার মহোদ্বয় থেকে (কলিগবৃন্দ, ভাই বোনের মতো) সকলের কাছে আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ সবাই আমার অনেক বেশি খোজ খবর নিয়েছেন অনেক সাপোর্ট করেছেন, অনেক দোয়া করেছেন আমি সবার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।

আমি এখনো আইশোলেসনে আছি আার মাত্র দুই দিন পর আমার কষ্টের দিন শেষ হবে, অনেক কষ্ট সন্তান টাকে বুকের মধ্যে না নেবার, ছেলেটারও অনেক কষ্ট হয়েছে আমাকে ছেড়ে থাকতে আমি জানি বাবা। আর আমার জামাই সে তো ‘সুপারম্যান’ সে সবই পারে বিবাহিত ১৯ বছরেও এতোটা বুঝতে পারিনি করোনা না হলে বুঝতেই পারতাম না। সুপারম্যানকে স্যালুট।

আজ আমার ২য় টেস্টের রিপোর্ট এসেছে আলহামদুলিল্লাহ নেগেটিভ। আমি অনেকটাই সুস্থ আল্লাহর রহমতে। কিছু সমস্যাতো আছে শ্বাস কষ্ট, অনেক বড় ধকল গেছে তাই শরীর অনেক দুর্বল লাগে। ইনশাআল্লাহ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবো খুব তাড়াতাড়ি। আর ২ টা দিন আামাকে পরিবার থেকে সেপারেট থাকতে হবে তারপর আমার আইশোলেসন শেষ হবে।

একটা বিশেষ দিনে আমার আইশোলেসন শেষ হবে। সেই দিনটা একটা বিশেষ দিন সেটা না হয় সারপ্রাইজ থাকলো। সবশেষে আমি একটা কথায় বলতে চাই আমি যদি কারো উপকারে লাগতে পারি আমার অনেক ভালো লাগবে। আমার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ আমি যদি কারো বিপদে প্লাজমা দিতে পারি, দেশের জন্য কিছু করতে পারি নিজেকে ধন্য মনে করবো।

করোনার এই কঠিন সময়ে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। নিজে নিরাপদ থাকুন অন্যকেও নিরাপদ রাখুন। ধন্যবাদ।

 

নিগার সুলতানা সাথী



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top