সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

বাংলার গ্রামীন মেলা: শাহান আরা জাকির পারুল


প্রকাশিত:
৯ মে ২০২০ ২১:৪৮

আপডেট:
৯ মে ২০২০ ২১:৫৩

 

মেলা মানেই মহামিলন।

মানুষের উচ্ছাস-উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মেলার মধ্য দিয়ে। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের উর্ধে উঠে, মেলা মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে দেয়। গ্রাম বাংলার মেলা তাই হাজার বছরের ঐতিহ্যের এক মহাসম্মিলন।

কবে, কোথায়, কখন প্রথম মেলার প্রচলন হয়েছিল তা জানা না গেলেও এটি যে আবহমান এক প্রাচীণ ঐতিহ্য এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। ধারণা করা হয়, গ্রামীণ হাট থেকেই আসে মেলার ধারণা। অতীতে রাজা-জমিদারেরা মেলার আয়োজন বা পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ধর্মীয় কোনো উপলক্ষে মেলা বসত। তাই বাংলার বারো মাসের তেরো পার্বণের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মেলা। বৈশাখ থেকে চৈত্র প্রতি মাসেই মেলা অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। এক সময় পীর-ফকির বা সাধু-সন্যাসীদের আস্তানাগুলোও মেলার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ধর্মীয় চেতনার বাইরে অন্যান্য সামাজিক বা লৌকিক আচারগুলোও যুক্ত হতে থাকে মেলার সঙ্গে।

বাংলাদেশের এমন কোন জেলা বা উপজেলা নেই যেখানে মেলার আয়োজন করা হয় না। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) গ্রামীণ মেলার ওপর দেশজুড়ে এক কার্যক্রম পরিচালনা করে ১৯৮৩ সালে। ১ হাজার ৫টি মেলার সন্ধান পাওয়া যায় ওই জরিপে। জরিপ কার্যক্রমটি আরও পঞ্চাশ-একশ বছর আগে পরিচালিত হলে মেলার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হতো। বিসিকের প্রাপ্ত সংখ্যার নব্বইভাগ মেলাই গ্রামীণ। সারা বছরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে এসব মেলা বসে। কখনও বট-পাঁকুড়ের ছায়ায়, নদীর পাড়ে, আবার কখনও মন্দির, মঠ-তীর্থস্থানে বা সাধু-সন্যাসী, পীর-ফকিরদের আস্তানায় এবং গ্রামের খোলা মাঠে বসে এসব গ্রামীণ মেলা।

এখনও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব মেলার আয়োজন হয় এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলে, ধামরাইয়ে রথের মেলা, মজমপুরের মেলা, নবাবগঞ্জের ধাইনগার মেলা, চরখাই কাটলা মেলা, চট্রগ্রামের চন্দ্রনাথ মন্দিরের মেলা, মাইজভান্ডারির মেলা, পটিয়ার ঠেগড়মুনির মেলা, জব্বারের বলি খেলার মেলা, বগুড়ায় মহাস্থান গড়ের মেলা, পোড়াদহের সন্ন্যাস মেলা, গোপালগঞ্জের কাওড়াকান্দির মেলা, পাবনার বোঁথরের চড়ক মেলা, হবিগঞ্জের মুডাবন্দ দরবার শরীফের মেলা, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ির মেলা, ফাইলা পাগলার মাজারের মেলা, রাঙ্গামাটির পানছড়ি বৌদ্ধ মেলা, দিনাজপুরের নেকমর্দন মেলা, কুমিল্লার শীতলার পিরাজ রায়গঞ্জের বারুনী মেলা, নরসিংদীর শাহরানীর মেলা, শরীয়তপুরের সুরেশ্বর মেলা, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সাতমোড়ার মেলা, যশোরের মধুমেলা, পঞ্চগড়ের নিরাশির মেলা, বরিশালের বিপিনচাঁদ ঠাকুরের মেলা, তাড়াইলের মাঘী পূর্নিমার মেলা, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসার মেলা, মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকুল মেলা, বিক্রমপুরের রামপালের মেলা, রংপুরের সিন্দুরমতি মেলা, নেত্রকোনার চন্ডীগড় মেলা, পিরোজপুরের খারবাক মেলা, খুলনায় মোল্লার হাট মেলা, বাগেরহাটের খানজাহান আলীর মেলা, কুষ্টিয়ার মহরম মেলা, ছেঁউড়িয়ার লালন মেলা, নড়াইলের সুলতান মেলা ইত্যাদি।

মেলা সামনে রেখে চারু, কারু ও অন্যান্য কুটির শিল্পীরা দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রস্তুতি নেয়। কামার, কুমার ও বাঁশ-বেতের শিল্পীরা নিপুন হাতে তৈরি করে বিভিন্ন সামগ্রী। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের আকর্ষণ থাকে মেলার। গ্রাম-বাংলার অনেকে মেলা থেকেই পুরো বছরের ঘর গেরস্থালির তৈজসপত্র কিনে থাকেন। ফলে মেলা উপলক্ষে গ্রাহকদেরও প্রস্তুতি থাকে। অভাব-অনটন যতই থাকুক, মেলার জন্য সকলেরই ছোটখাটো বাজেট থাকে।

মেলায় আগে বড়রা শিশুদের নগদ টাকা বকশিশ দেন। অঞ্চল বিশেষে এ ধরণের উপহারকে বলা হয় ‘মেলার পড়বি’। বাহারি পণ্যেও পসরা বসে মেলায়। শিশুদের আনন্দ-বিনোদনের জন্য মেলায় পাওয়া যায় মাটির পুতুল, পালকি, ঘোড়া, ষাঁড়, হরিণ, হরেক রকমের ঘুড়ি, টমটম, লাটিম, গাড়ি, বল, বেলুন, বাঁশিসহ নানান খেলনা। গাঁয়ের বধূ ও কিশোরীরা মেলা থেকে কিনে নেন আলতা, স্নো, পাউডার, কাঁচের চুড়ি, নাকের নোলক, কানের দুল, চুলের ফিতা, ক্লিপসহ দেহাবরণের জিনিসপত্র।

হিন্দু রমণীরা মেলা থেকে ফিরে একে অপরকে জলেভাসা সাবান ও সিঁদুর উপহার দিয়ে শুভ কামনা জানান। এ ছাড়া গেরস্থালির জিনিসপত্র যেমন দা, কাচি, কুড়াল, খুন্তি, রান্না-বান্নার সরঞ্জাম, পাখা, চালনি, জলচৌকি, পিঁড়ি থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের ছড়ি পাওয়া যায় মেলায়। থাকে রসনা তৃপ্তির জিনিসপত্রও। বিশেষ করে মেলা থেকে কেনা জিলাপি, গজা, রসগোল্লা, কদমা, বাতাসা, বিন্নি ধানের খৈ ও দই-চিড়ার স্বাদই যেন আলাদা। কাপড়, মনোহারি, প্লাস্টিক পণ্য, পূজার জিনিসপত্র, ধর্মীয় পোস্টার, ছবি, বাঁশ-বেতের সামগ্রী, তামা-কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র প্রভতির দোকানও বসে মেলায়।

মেলায় দর্শকদের তাৎক্ষণিক মনোরঞ্জনের জন্যও থাকে নানান আয়োজন। নাগরদোলা, লাঠিখেলা, কুস্তিখেলা, পুতুলনাচ, যাত্রাগান, কবিগান, বাউলগান, ঘেটুগান, জারিগান, পীরফকিরদের গান, বায়াস্কোপ, সং, সার্কাস, লটারি, কীত্তণ, নৌকা বাইচ, ষাঁড়ের লড়াই প্রভূতি আয়োজন দর্শকদের বাড়তি আনন্দের খোরাক যোগায়। অষ্টমী, বারুনী, বা বিভিন্ন পূণ্যস্থাপনের মেলাকে বাংলার মানুষ ধর্মীয় উৎসব বলেই মনে করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মেলার নামে অনেক জায়গায় জুয়া-হাউজি-অশ্লীল নৃত্যসহ কিছু অপ-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হয়। এগুলো মেলার মূল সংস্কৃতি নয়। মূলত এর পেছনে থাকে অর্থলিপ্না। মেলায় পরিবেশ শ্রীহীন হয়। তবে সর্বসাধারণ কখনও এ বিষয়গুলোকে মেলার আঙ্গিক হিসাবে মনে করেন না। তারা মেলাকে ধর্মীয় উৎসব, লোকাচার, আনন্দ-বিনোদন বা বছরের কোনো একটি বিশেষ দিন হিসেবেই বিবেচনা করে।

বাংলাদেশ ‘মেলার দেশ’ হলেও গ্রামীণ মেলার সেই জৌলুস দিন দিন কমে আসছে। কমছে মেলার সংখ্যাও। আগে গ্রামাঞ্চলে বা বিভিন্ন তীর্থস্থানে আয়োজন কমিটির ব্যবস্থাপনায় যেভাবে মেলার আয়োজন হতো এখন তা অনেক ক্ষেত্রেই আর দেখা যায় না। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দায়িত্ব পালন ছাড়া সরকারিভাবে গ্রামীণ মেলায় তেমন কোনো পৃষ্ঠপোষকতাও করা হয় না বললেই চলে। তবে কিছুটা সুখবর হচ্ছে গ্রামীন মেলার কনসেপ্টকে ধারণ করে এখন অনেক আধুনিক জিনিসপত্রেরও মেলা বলে।

বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতার এ ধরণের আয়োজনগুলো হয় সাধারণত শহরাঞ্চলে। যেমন মোবাইল মেলা, কম্পিউটার মেলা, আইটি মেলা, আবাসন মেলা ইত্যাদি। আবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিজ্ঞান মেলা, বাণিজ্য মেলা, শিল্প মেলা বই মেলা, কৃষি মেলা, স্বাধীনতা মেলা প্রভূতি মেলার আয়োজন করা হয়। আয়োজন যারাই করুক আর যেভাবেই হোক, মেলা যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে মেলাবন্ধণ তৈরি করে। নানান ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের মধ্যে রচনা করে সেতুবন্ধন। তাই মেলা বেঁচে থাকুক চিরদিন।

 

সাঁইজির দোল পূর্ণিমা : তাৎপর্য পরস্পরা

বাংলা বর্ষচক্রের সমাপনী মাস চৈত্র। লোকজ ও লোকায়তিক দর্শণ ও কৃত্যাদিদ্ধ-অধিষ্ঠানের জন্য বঙ্গাব্দপঞ্জির অন্তিম এই মাস গুরুত্বপূর্ণ। ফকির লালন সাঁইজির সাধনধাম কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় এই সময়টায় জীবনপিপাসু সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীর জমায়েত হয় দোল উৎসব উপলক্ষ্য করে। এই উৎসবে দেশের এবং বহির্দেশের বোধিসন্ধিৎসু লালনানুরাগীরা সাধুসঙ্গ করার জন্য সমবেত হন। ফকির লালন শাহের সুরের স্রোতধারায় অবগাহন করেন, সাঁইজির অনিবর্চনীয় দর্শনের সহজে প্রেমসাহচর্য ঘটে। দেশ-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের।

দোল পূর্ণিমা লালনস্মারক উৎসবই শুধু নয়, কেবল সুরে আর কথায় উদযাপনই নয় এর মোক্ষ, সাধক ও সাধারণ নির্বিশেষে লালনদের অনুগামী/ অনুরাগীদের কাছে এই তিনদিনব্যাপী দোল উৎসবের তাৎপর্য অনেক ব্যাপকতর ও গভিরাতিসারী। নিছক আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে এর বিচার হবার নয়। বাউল ধারার সব-কয়টি রীতি ও পথ জড়িত সরাসরি জীবনচর্যার সঙ্গে। এর মধ্যে ফকির লালনপথের পথিকদের জীবনচর্যা সাধারণ্যে একইসঙ্গে সবচেয়ে বেশি একেবারে না-জানা অপেক্ষাকৃত শ্রেয়।

লক্ষণীয় যে এই বিশষে উৎসব তথা দোল পূর্ণিমার তাৎপর্য সম্পর্কে ভাত লোকের সংখ্যা আমাদের আপন গরিমা প্রায়-ভুলতে-বসা শাহরিক/আধাশাহরিক অস্ফরদর্শিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে একেবারেই অল্প। গুরুত্ব ও লঘুত্ব নিয়ে বাহাস করা লালনদর্শনের অনুগামীদের মূল কাজ নয় জেনেও দোল পূর্ণিমা সামনে রেখে এর কয়েকটি দিকের তাৎপর্য সংক্ষেপে এই নিবন্ধে পেশ করার কোশেশ চালাতে চাই। বিস্তারিত বয়ানের সুযোগ ও পরিসর তৈরি করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। সাধুসঙ্গ শুরু হয়ে গিয়েছে এ-বছর, খ্রিস্টাব্দ ২০১৬, মার্চের ২২ থেকে উৎসবের প্রবর্তন হয়েছে, বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৪২২, বোধনের দিন ৮ চৈত্র। কয়েকটা আঁচড়ে কেবল পরিধিরেখায় সাঁইজির দোল উৎসবের তাৎপর্যসংক্ষেপ দেখার চেষ্টা করি নিবন্ধের গুটিকয় প্যারাগ্রাফের মধ্যে।

একেবারেই সিধাসাপ্টা অর্থে ‘দোল’ শব্দটি চিরপ্রবাহিত প্রকৃতির সমুদয় গাম্ভীর্য ও গভীরতা নিয়ে লীলায়িত নবজৈবনিকতার বার্তাধারক। ধরিত্রীর নবোদ্যম ও সর্বমানবিকতার জয়গাথাবাহী এই শব্দনিহিত মর্ম এবং শব্দনুরণিত আলোচ্য দোল উৎসব। প্রকৃতিপরমা আড়মোড়া ভেঙ্গে নবছন্দে জেগে উঠছেন, শীতনিদ্রোখিত প্রকৃতি নিজেকে সুশোভিত করে পুস্পে-পল্লবে শস্যে-শৌর্যে মেলাস্ফুর্ত হয়ে উঠছেন আমাদের জৈবনিক চৌহদ্দিতে, দোল পূর্ণিমায় এই নিদর্শনবীস্কা আমরা লাভ করি। নির্দেশ করে ব্রক্ষচক্রিকার থেকে নবতর আরেক ব্রক্ষচক্রে মহাজাগতিক প্রবেশ। পুরনো জগৎচক্র ছেড়ে নতুন জগচক্রের পানে ধাবন। বঙ্গাব্দপঞ্জিকায় এইটাই হচ্ছে একটা আস্ত বছরের সমাপ্তি প্রাপ্তের শুরু। চৈত্র মানেই হচ্ছে প্রকৃতিচাকার পূর্ণতা বৈশাখ অপেক্ষমান অদূরেই।

দোল উৎসব যুক্ত বছরান্তিমের পূর্ণিমার সঙ্গে। আরও বড়  অর্থে এই উৎসবের ব্যুৎপত্তিসংযোগ সরাসরি শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে, এই নির্দেশ মহাভারত অনুসরণ করে গেলে পাওয়া যায় যেখানে শ্রীকৃঞ্চ দোলযাত্রা করছেন দেখা যাবে ঠিক এই তিথিতেই। এই তিথি বাংলা সংস্কৃতির আরও অনেক শেকড়-শাখাপল্লবের সঙ্গেই যুক্ত। চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম চৈত্রলগ্নেই (১৪৮৫-১৫৩৩) যিনি নদীয়া অঞ্চলজাত বৈঞ্চব ভাবধারায় প্রবর্তক ও দীক্ষাগুরু। লোকচিহেৃর বহু অনুষঙ্গ ও প্রসঙ্গেও বিচার এই চৈত্রমুহৃর্ত মহার্ষ ও তাৎপর্যবহ।

ফকির লালণ শাহের সাধণক্ষেত্র কুষ্টিয়া আগের কালে ছিল কুমারখালি নামে চিহিৃত এবং ব্রিটিশ জামানায় ভৌগোলিকভাবে এটি ছিল বৃহত্তম নদীয়া জেলার অন্তর্গত অংশ। বৈঞ্চবধারা আমাদের এলাকায়, বাংলাদেশে, এই কারণেই বৃহত্তর ও গভীরকেন্দ্রী ভাববলয়ের একটি প্রধান ধারা।

তা যাই হোক, সংক্ষেপে কথা এই যে, আলোচ্য দোল পূর্ণিমার উৎসবের নেপথ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে এটি ফকির লালন সাঁইজির জীবৎকালে (আনুমানিক গণনায় সাঁইজির জন্মসাল ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দ এবং জীবনাবসান ১৭ অক্টোবর ১৮৯০) প্রর্বতনা লাভ করেছে সাঁইজির সঙ্গী সাধুদের সুবাদে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফকির লালন সাঁই ছাড়াও অনেকানেক সাধুচরণের দর্শনমর্ম সম্যক অনুধাবন ও অনুবোধণের ব্যাপার। সুস্পষ্টভাবে এইটা আমরা জানতে পারি যে দোল উৎসব সাঁইজির হাজিরায় উদযাপন ও পালনের পরস্পরা হাজার সমাজপ্রাতিষ্ঠানিক বিঘ্ন-বৈরিতা সত্বেও অব্যাহিতভাবে নিয়মিত রয়েছে। বছরান্তে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে নাই। দুইশ বছরেরও বেশি হয়ে গেল উৎসবের পরম্পরাকাল।

যদিও ফকির লালণ শাহের জন্ম তারিখ সঠিক জানা নেই, এক্ষেত্রে নতুন গবেষণায় লালনপন্থের নিষ্ঠাবান গবেষকদের বরাতে বেশকিছু তথ্য ও তত্ব উঠে এসেছে গেল কযেক দশকে। ব্যাপারটা আরও গভীর ব্যাপকতা নিয়ে এখন অনুসন্ধিৎসুদের জানা বোঝার নাগালে এসেছে। লালনতীর্থের সর্বজনশ্রদ্ধেয় সাধক ফকির মোহাম্মদ শাহ অনুমোদন করছেন এই মর্মে যে, সাঁইজির জন্মদিনটি সুনির্দিষ্টভাবে চৈত্রমাসের এই তিনটি দিনের মধ্যে কোনো একটি হওয়ার ব্যাপারে ও জোরালো যুক্তি রাখা যায় এবং এই তিনটি দিনের মধ্যে কোনো একটি দিনেই সাঁইজি গুটি বসন্ত সংক্রামনের হাত থেকে জেগে উঠেছিলেন এবং কুষ্টিয়ার কালীগঙ্গাঘাটে তাঁকে পেয়েছিল লোকালয়ের মানুষেরা।

কাজেই দিনত্রয়ী, দোলের উৎসবের তিনটে দিনের মুহৃর্তবালি, ফকির লালনের ‘আবির্ভাব’ তথা নবজন্মের সঙ্গে ওভপ্রোতভাবে জড়িত। দোল উৎসব তাই সাঁইজির জন্মদিনেরই স্মৃতিবিজড়িত। উৎসবটা সাঁইজির সঙ্গে ওভাপ্রোতভাবে জড়িত।

দোল উৎসব তাই সাঁইজির জন্মদিনেরই স্মৃতিবিজরিত। অবাক হবার কিছু নেই যে, বৈষবপন্থী বাউল সাধকদের মধ্যে ফকির লালন শাহ শ্রীচৈতণ্য মহাপ্রভুরই পুনরাবির্ভাব ও নবজন্মলদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন।

 

শাহান আরা জাকির পারুল
নাট্যকারলেখক  গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top