সিডনী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক বাংলার রূপকার ডক্টর বিধান চন্দ্রের জীবনে নেতাজি সুভাষের প্রভাব : বটু কৃষ্ণ হালদার


প্রকাশিত:
২০ জুন ২০২০ ২২:৫০

আপডেট:
২০ জুন ২০২০ ২৩:০৫

ছবি : ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়

 

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বিধানচন্দ্র আই সি এস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার লাভ করেন, তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর । সে সময় গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছিল। ১৯২১ সালের মে মাসে বঙ্গবীর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আই.সি.এস থেকে পদত্যাগ করেন। বিধানচন্দ্র সেই বছরে মে মাসে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি .এ (অনার্স সহ ) ডিগ্রী লাভ করে জুলাই মাসে দেশে ফিরে আসেন। ইতিমধ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আইসিএস ত্যাগ করে দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করে সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে দেয় ওবিপুল উদ্দীপনার সঞ্চার হয় । তিনি দেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের শরণাপন্ন হন । বাংলাদেশ থেকে দেশবন্ধু আপ্লুত হয়ে তাকে কাছে টেনে নেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে। অবশেষে তার রাজনৈতিক শিক্ষা গুরুর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন । শুরু হয় অন্যতম মহান বীর নেতাজির রাজনৈতিক জীবন। অতি অল্প সময়ে তার আদর্শ নিষ্ঠ কর্মদক্ষতা চরিত্রবল বিনয়-নম্র ব্যবহার গুণাবলীর জন্য অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন সবার কাছে। তিনি দেশবাসীর নয়নের মণি হয়ে ওঠেন। আত্মহারা হয়ে ব্রতী হন দেশের কাজে । চোখে মুখে একটাই স্বপ্ন যে কোনো মূল্যে দেশবাসীকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে হবে। প্রাচুর্য ঐশ্বর্য তাকে আটকে রাখতে পারেনি ,নেমে এসেছিলেন পথের ধুলায় । তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন বা তার মধ্যে এমন এক অদ্ভুত শক্তি ছিল তাকে দেখলেই যে কোন ব্যক্তি শান্ত, স্থির হয়ে যেত। তার কার্যতে জেগে উঠেছিল হাজার হাজার ওষ্ঠাগত প্রাণ তার উদ্দীপনা সমস্ত কর্মী আত্মাহারা হয়ে যেতেন কাজ করবার জন্য ।উৎসাহ বোধ করতেন । ওই সময় তিনি মহানগরীতে স্থাপিত জাতীয় শিক্ষায়তনের অধ্যক্ষের পদে আসীন হন। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক।  ১৯২৩ সালের শেষভাগে স্বরাজ্য দলের নেতৃত্বে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য পদের জন্য নির্বাচন অভিযান সূচি ঠিক করা হয়।তৎকালীন ওই দলের সমর্থিত প্রার্থী ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের পক্ষে কয়টি নির্বাচনী সভায় সুভাষচন্দ্র বোস বক্তৃতা দেন এবং সহকর্মীগণ কে নিয়ে স্বরাজ্য দল কে জয়ী করার জন্য দিনরাত প্রচার অভিযান চালাতে থাকেন। এই নির্বাচনকে ঘিরে ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ওবঙ্গময়ীর অহংকার সুভাষ চন্দ্র বোস এর মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুইজন দুজনার অত্যন্ত পরিচিত হতে থাকেন। সুভাষ চন্দ্রের একাগ্রতা ও দৃঢ়তা গুণাবলী ডঃ বিধান চন্দ্র কে আকর্ষিত করতে লাগলেন।এ কথা অনস্বীকার্য সুভাষ চন্দ্র বোস রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার প্রাপ্য আসন অধিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে সাহায্য সমর্থন পেয়েছেন তা তিনি কোনদিনই ভুলে যাননি । সুভাষ চন্দ্রের প্রতি ড: রায়ের স্নেহ যে কতটা গভীর তা নেতাজি মনেপ্রাণে অনুধাবন করতে পারতেন।ডক্টর রায় কে তিনি জ্যৈষ্ঠ সহদরের মতো শ্রদ্ধা করতেন । ডঃ বিধান চন্দ্র রায় নিঃসন্দেহে নেতাজী সুভাষ এর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। বলেছিলেন "ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জীবনে এমন উচ্চাসনে স্থান পাবে যাতে বাংলা তথা সমগ্র দেশের গৌরব অক্ষুন্ন থাকবে এবং এই মহান বাঙালির আত্মত্যাগ অবদান দুঃখ বরণের মহিমা এক অন্য ইতিহাস সৃষ্টি হবে ,ভারতীয় ঐতিহ্য রক্ষা পাবে"।

ডঃ বিধান চন্দ্র রায় রাজনৈতিক জীবনের "বিগ  ফাইভ" অর্থাৎ বৃহৎ পঞ্চকের একজন ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস । দেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জন এর তিরোধানের পর  ( ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে)বিগ ফাইভ নেতাজির পূর্ণ সমর্থন না পেলে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত এর সহিত প্রতিযোগিতায় কখনো জয়ী হতে পারতেন না। তবে দুজনেই নিজেকে নিয়োজিত করেছেন দেশের সেবায় । এই সেবায় দুজনের যে ভাব ছিল মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা কখনোই ছিন্ন হয়নি। ত্রিপুরী কংগ্রেসের পরে (১৯৩৯ সালে) সুভাষ চন্দ্র বোস কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হলেন মতবিরোধ এর ফলে, এবং ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করে, আপন মনোনীত পথ ধরে দেশের সেবা করার প্রস্তুতি নেন এতে তার সঙ্গে ডক্টর রায় একমত হতে পারেননি তাদের মতান্তর হলেও আন্তরিকতার কমতি হয়নি কখনোই। ডক্টর রায় এর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হননি তিনি।ডক্টর রায়ের পক্ষে দুটি পথিকৃত সযত্নে রক্ষিত ছিল একটি দেশবন্ধুরও অন্যটি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস এর। থেকে বুঝতে পারা যায় ,সুভাষ চন্দ্র ডক্টর রায় এর কতটা স্নেহভাজন ছিলেন। ডক্টর রায় মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন ১৯৪৮ সালের ২৩ শে জানুয়ারি, আর ওই দিনটি ভারতের জাতীয় ইতিহাসে স্মরণীয় দিন কারণ, ঐ দিন বঙ্গ মায়ের অহংকার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের জন্মদিন এবং যিনি উত্তরকালে "নেতাজি" নামে সম্বোধিত হয়েছিলেন। তার দ্বি -পঞ্চ শক্তির জন্মদিনে ১৯৪৮ সালের ২৩ শে জানুয়ারি ডক্টর রায় কলকাতা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা আনন্দবাজার পত্রিকায় পরবর্তী দিবসের সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। তার মূল কথা ছিল "নেতাজি সুভাষ নিজেই একখানি পূর্ণ ইতিহাস "সকল ধর্মের মিলন মন্ত্র সুভাষ চন্দ্রের জয় হিন্দ।

ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের ভাষণ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় সুভাষচন্দ্র কে কতটা আপন মানতেন তার বেতারের ভাষণটি নিম্নে বর্ণনা করা হলো_"আজ সুভাষ এর জন্মদিন ৫১ বছর পূর্বে বাংলা মায়ের প্রিয় সন্তান সুভাষ জন্মেছিলেন; আজ মনে পড়ে তাদের কথা যারা এসেছিলেন সুভাষের সাথে। ঋষি বঙ্কিম হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত ধ্বনিত করে বললেন সুজলাং সুফলাং মলয়জ শীতলাং বন্দে মাতরম। আজ মনে পড়ে ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের সেই কথা ,অগ্নি মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে তা ছাড়া উপায় নেই। আজ বাংলা কে আর ও একবার স্মরণ করিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় স্বামী বিবেকানন্দের সেই অপূর্ব অভিনব আহ্বান ব্রাহ্মণ আমার ভাই"

বটু কৃষ্ণ হালদার
কবর ডাঙ্গা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top