সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ ফারসি কবিদের কাব্যরস প্রাসঙ্গিক ও বাঙলায়ন : মীম মিজান


প্রকাশিত:
৫ জুলাই ২০২০ ২২:৪৫

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:১৩

মীম মিজান

 

পৃথিবীর আবহমান কালথেকে কাব্যিক মননকে নাড়িয়েছে যে বিষয়, সংবেদে ব্যথিত করেছে যে নির্মমতা, ঘুমোতে দেইনি যে পাশবিকতা সেই বিবেক নাড়ানো, সংবেদ ও নির্ঘুমতার যে ফসল কোবিদের অসির কালিতে খাতায় বুনিত হয়েছে তাই তো কবিতা। আর সেই কবিতা ও কবিত্বের চর্চা ইরানিদের মাঝে খ্রিস্টপূর্বকাল থেকে চলে আসলেও তার চরম পর্যায়টি সামানীয় শাসনকাল(৮১৯-৯৯৯ খৃষ্টাব্দ) থেকে শুরু হয়েছে বলে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। আর এই শাসকদের রাজত্বকালে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। ইত্যবসরে সামারকান্দের রুদাক পার্বত্য এলাকার একটি গ্রামে অর্থাৎ বর্তমান তাজিকিস্তানে  জন্মলাভ করেন ফারসি কবিতার জনক আবু আব্দুল্লাহ জাফর ইবনে মুহাম্মাদ রুদাকি(৮৫৮-৯৪১)। অন্ধ এই কবিকে বলা হয় ফারসি কবিতার জনক। রুদাকির হাতে জন্মনেয়া ফারসি সাহিত্য ঋদ্ধ সাহিত্যের তালিকায় অন্যতম। বিশ্বসাহিত্যাঙ্গনে এক উজ্জ্বল আসনের অধিকারী এই সাহিত্য। গোটাবিশ্বের শিল্পমনা লোকদের প্রায় সকলের মুখেই রয়েছে এই সাহিত্যের কালজয়ী কাব্যের মিষ্টতা। এ ভাষায় রয়েছেন বিশ্ববিশ্রুত পাঁচ পাঁচজন বিশ্বকবি। শ্লাঘাময় মহাকবিও উৎকর্ষ সাধন করে হয়েছেন চিরস্মরণীয়। 

প্রাচীন পারস্যে বা আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার পূর্ব পর্যন্ত ফারসি কবিতার ধারা ছিল আধ্যাত্মিকা, স্রষ্টাতত্ত্ব, বাদশাহগণের স্তুতি, মর্সিয়া, সুরা-সাকীর মাধ্যমে প্রেম-প্রেমাষ্পদ, ইতিহাস ইত্যাদি ধারার। এ ধারার প্রখ্যাত কবিগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন মহাকবি ফেরদৌসি (৯৪০-১০২০), ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১৩১), ফরিদ উদ্দিন আত্তার (১১১০-১২২১), খাকানি (১১২০-১১৯৯), নিজামি গাঞ্জুবি (১১৪১-১২০৯), মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (১২০৭-১২৭৩), শেখ সাদি (১২২০-১২৯১/৯২), হাফিজ শিরাজি (আনুমানিক চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ- ১৩৮৯), আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল(১৮৭৭-১৯৩৮) প্রমুখগণ। যদিও আল্লামা ইকবাল পারস্যের বাইরের কবি। ইরানি সাংবিধানিক আন্দোলন ও শাহ বিরোধী আন্দোলন ইরানি ফারসি কবিতার ধারাকে একটা মোচড় দেয়। আর এ সময়ই তথা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে নিমা ইউশিজ (১৮৯৭-১৯৬০) এসে ফারসি কবিতায় এক নতুন ধারার নীরিক্ষা চালান এবং সফল হন। তখন থেকে সেই ধারার কবিতা শেরে নু বা আধুনিক কবিতা নামে প্রচলিত হয়। এ ধারার কয়েকজন কবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন আহমাদ শামলু (১৯২৫-২০০০), মেহদি এখওয়ান ছ'লেছ (১৯২৯-১৯৯০), নাদের নাদেরপুর (১৯২৯-২০০০) প্রমুখগণ।

এই নতুন নিরীক্ষাধর্মী বা আধুনিক যুগের কাব্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ছন্দবদ্ধতা, অন্ত্যমিল, গাম্ভীর্যতা, কঠিন শব্দের চয়ন ইত্যাদি থেকে বেরিয়ে আসা। ঋতু, প্রকৃতি, সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে দ্রোহ, প্রেম-ভালোবাসা, মুক্তিকামিতা ও জাতীয় চেতনাবোধের বিকাশ ইত্যাদি হচ্ছে আলোচ্য বিষয়। আঙ্গিকতার দিক থেকে একশব্দে একলাইন অতঃপর পরের লাইন বিশাল বড় এ ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষিত হয়। আধুনিক যুগের ধারার যে কবিতার নিয়ম রীতি সেটাকেও ভেঙ্গে দিয়ে নবরূপে সরল ও সাবলীল ভাষার দিকে ঝুকে পড়েছেন একবিংশ শতাব্দীর তরুণ কবিগণ। উপর্যুক্ত পরিবর্তনসমূহ মূলত পশ্চিমা বিশ্বের সাথে যোগাযোগের কারণে ঘটছে। তবে আধুনিক ও উত্তরাধুনিক যুগে ছন্দবদ্ধ ও বিষয়াঙ্গিক ক্ষেত্রে কিছু কবিকে পূর্বের সনাতনী কবিগণের ন্যায় কাব্যচর্চায় ব্রতী হতে দেখা যাচ্ছে। বক্ষমাণ বাঙলায়নে যে দশজন উত্তরাধুনিক কবির কবিতা চয়িত হয়েছে তাদের মধ্যে প্রথম কবি নেদা গাফফার ঝাদেহ। যিনি ইরানে ফারসি সাল ১৩৫৯ এর অজার মাসের ১ তারিখ রোজ শনিবার মোতাবেক ২২ নভেম্বর ১৯৮০ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইরানি বিখ্যাত আধুনিক কবি সোহরাব সেপেহরির একনিষ্ঠা একজন ভক্ত। তাকে অনুসরণ করে কাব্য করেন। ৩৮ বছর বয়স্কা নেদা গাফফার ঝাদেহ এর ডাক নাম হচ্ছে 'হাদিয়েহ' বা উপহার। প্রেম, প্রেমাষ্পদ, মিলন-বিরহগাথা ইত্যাদি বিষয়ক কবিতা লিখেন এই কবি। তালিকার দ্বিতীয় কবি তরুণ কাব্যকোবিদ ইউসুফ জামালি(মীম ইস্ফান্দ)। ইউসুফ জামালি ইরানের বুশহরে ফারসি সাল ১৩৭০ এর ইস্ফান্দ মাসের ১ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার জন্মগ্রহণ করেন। ২৭ বছর বয়সী ইউসুফ জামালি কবিতা লিখার পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের নানা শাখার অনুবাদে পারদর্শী। জীবনঘণিষ্ট বিষয়ে কবিতা লিখেন এই টগবগে তরুণ কবি। ক্রমপর্যায়ে তৃতীয় নম্বরে এসেছে সাদিক্বে আকব'রি (সওগান্দ) এর কবিতা। সাদিক্বে ইরানের রাজধানী তেহরানে ফারসি সাল ১৩৬৩ সালের খোরদ'দ মাসের পনের তারিখ রোজ মঙ্গলবার জন্মগ্রহণ করেন। ৩৪ বছর বয়স্কা এই তরুণী কবির চারটি কাব্যগ্রন্থ আছে। তিনি গজল, বিরহ ও বেদনার্ত কাব্য লিখেন।
আমরা এরপর যার কবিতার বাঙলায়ন পড়ছি তিনি হচ্ছেন তরুণ কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি
নিকা মনছুরি। নিকা ইরানের খোজেস্তান শহরে ফারসি সাল ১৩৬২ এর উরদিবেহেশ্ত মাসের ২১ তারিখ রোজ বুধবার জন্মগ্রহণ করেন। ৩৫ বছর বয়স্কা এই তরুণী কবির ১০০ টি কবিতার সমন্বয়ে ''স'হেরেইয়ে এশক" বা প্রেমের সাহারা নামক একটি কাব্যগ্রন্থ আছে। মূলত তাকে প্রেমের কবি হিশেবে সামসময়িক লেখক ও পাঠকগণ অভিহিত করেছেন। তবে তিনি ঋতু ও প্রকৃতি নিয়ে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছেন। পাঁচ ক্রমিকে 'তোমার সাথে' শিরোনামের যে কবিতাটি এসেছে তার কবি হচ্ছেন মির ছ'লেহ মিরঝাদেহ। মিরজগাদেহ ইরানের রাজধানী তেহরানে ফারসি সাল ১৩৭০ এর অজার মাসের সাত তারিখ রোজ শনিবার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেদনার্ত কবিতা লিখিয়ে হিশেবে খ্যাত। ২৭ বছর বয়সের এই তরুণ কবির ২৫ টি কবিতার সমন্বয়ে "দেলতাংগি" বা বিষণ্ণ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ আছে। তার কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম শুনে অনুমেয় যে তিনি কেমন কবিতা লিখেন। ষষ্ঠ নম্বরে জীবনকে মূর্তকরে যে কবিতাটি চয়িত হয়েছে তার কবি হচ্ছেন উমাদে বা'হরি। বা'হরি ইরানের সবচেয়ে সুন্দর শহর ইসফাহানে ফারসি সাল ১৩৬৯ এর তির মাসের ১৮ তারিখ রোজ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। তিরিশ বছর বয়সের এই কবির ২৪টি কবিতার সমন্বয়ে "ভ'জেহ'য়ি খামুশ" বা নিস্তব্ধ ধ্বনিমালা নামক একটি কাব্যগ্রন্থ আছে। আশা-আকাঙ্ক্ষার কবি হিশেবে বা'হরি সমধিক খ্যাত। ফারসি উত্তরাধুনিক কাব্যজগতের এক প্রোজ্জ্বল নাম পারভিন সাইয়াদি। তার কবিতা ক্রমপর্যায়ে সপ্তমে স্থান পেয়েছে। পারভিন ইরানের রাজধানী তেহরানে ফারসি সাল ১৩৭১ এ জন্মগ্রহণ করেন। ২৬ বছর বয়স্কা এ তরুণী কবি স্মৃতিকথামূলক কাব্য বুননে পারদর্শী। এই বাঙলায়নে অষ্টম নম্বরে স্থান পেয়েছে প্রতিশ্রুতিশীল কবি ফ'য়েজেহ কিক্ববাদি এর হাসব শীর্ষক কবিতা। ফ'য়েজেহ ফারসি সাল ১৩৭১ এর ফারভারদিন মাসে তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন। ২৬ বছর বয়স্কা এই তরুণী কবি জীববিদ্যার শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে উক্ত বিষয়ের একজন শিক্ষক। তার কবিতার বক্ষজুড়ে রয়েছে প্রেম, বিরহ, সামাজিক অনাচার ইত্যাদি। সিয়ামাক অরমান্দ নামক এক উদীয়মান কবির কবিতা স্থানপেয়েছে নবম নম্বরে। অরমান্দ ফারসি সাল  ১৩৬৮ এর ইস্ফান্দ মাসের পনের তারিখ রোজ মঙ্গলবার ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন কবি ও গীতিকার। ২৯ বছর বয়সের এ তরুণ কবির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর। তার অনেকগুলো গান এখন ইরানের তরুণ সমাজের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। বক্ষ্যমাণ বাঙলায়নের সর্বশেষ যে চমৎকার কবিতাটি উপস্থাপিত হয়েছে তার কবি জনাব মোহাম্মেদ স'লেহ শারিবি। শারিবি ইরানের খারমশাহরে ফারসি সাল ১৩৬৩ এর ইসফান্দ মাসের ২ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন মৃত্তিকা প্রকৌশলী। তবে কবিতার বোহেমিয়ান প্রেমিক হিশেবে নিজেকে দাবি করেন। ৩৪ বছর বয়স্ক এই কবির কয়েকটি বহুলবিক্রিত কাব্যগ্রন্থ আছে। উপর্যুক্ত আলোচনা ও পরিচিতি পর্বে যে দশজন কবিকে তুলে ধরেছি তাদের প্রত্যেকের বয়স ষাটের কোটা পেরুই নি। উপর্যুক্ত কবিগণের কাব্য এখন ইরানে বেশ জনপ্রিয়। কবিতা, তথ্য ও ছবি সংগৃহিত হয়েছে শেরে নু ডটকম থেকে।


১. 
তোমাকে ভালোবাসি
নেদা গাফফার ঝাদেহ

তোমাকে ভালোবাসি
তোমাকেই
যার উন্মেষ হয় তোমার থেকে
উদগত হয় এক গীতের
অভ্যন্তরে
এক সুর মূর্ছনার অস্ত হয়

সর্বোতকৃষ্ট প্রসূন
ফুল কাননের বাঁধে
জুঁই ও মারিয়াম পুষ্পের বরণ ও সুগন্ধি

তোমার দৃষ্টি রেশমের দিকে
হ'সের সমতটে চিন্তাগ্রস্ত 
পরিশ্রম ও অনুরূপ হতে
প্রকৃষ্ট প্রশস্তি 

সৌভাগ্যের স্তুতি গাও
তোমার বাখানের প্রদীপ
দেখো, কী রকম প্রতিষেধক....!
যা প্রত্যেক স্পন্দনে
আমাকে
আলোকিত চোখগুলোর দিকে নিয়ে যায়...

তোমাকে ভালোবাসি
তোমাকেই
সরল ও নিষ্কলুষ 
নিরাপদ আশ্রয়ের সত্যবাদিনী
হৃদ্যতার গীত ও পরম বন্ধুত্ব
অন্তরে সর্বদা প্রতিশ্রুতি।
(ভালোবাসি কবিতাটি নেদা গাফফার ঝাদেহ'র ''তু র দোস্ত দ'রাম'' কবিতার বাঙলায়ন)


২. 
জাগরণ
ইউসুফ জামালি(মীম ইস্ফান্দ)

অলসতার মুহূর্তে একটু কবিতা, কিছু চা, শুধু এতটুকুই! 
হামেশা লাইটার শুন্য, দেখো না এধরনের সিগারেট খোরকে
আমার ধ্যানের লোভী হয়ো না, আমি কম ধৌত করি, কিন্তু প্রকৃষ্ট
আমার প্রতি তোমার চিন্তাকে নিবিষ্ট করো না, এ উন্মাদনায়, পাগলামো 
তোমার বক্ষকে আমার সালাম জানাও, ঊর্মি প্রত্যাহার
খেয়াল করলাম, স্নায়ু তার নিস্তব্ধতায় কেঁপে উঠছে
রাত যাতে লাখো কল্যাণ তার অবস্থানে ছিল
খিয়ানত করে চলে গেলে, আমি ও একটি হিল্লোল অসন্তুষ্ট 

যখন তোমার দমকে মুক্ত না করলাম, তুমি জেদি হলে, কেননা 
আমার গন্ধও শুকলে না, কিছুক্ষণের জন্য ফিরে আসলে
আমার মাঝে সারমেয়ের মতো হলে, তোমার থেকে শিশিরকণা ক্রয় করলাম
আমাকে মুক্ত করো, গোঙানি দিও না, বন্ধ করো, দেখো! লালা তোমার উপর জাগরিত।
( জাগরণ কবিতাটি কবি ও অনুবাদক ইউসুফ জামালি(মীম ইস্ফান্দ)'র ''বিদা'রি'' নামক কবিতার বাঙলায়ন)


৩. 
আমার উপর অভিশাপ
সাদিক্বে আকব'রি (সওগান্দ)

ভরপেটে,

কী কঠিন অতিবাহিত করা!

এই পার্শ্বথেকে,
ঐ চার রাস্তার দিকে,

আমার উপর অভিশাপ!
এই জন্য যে পথের মধ্যে তোমার অপেক্ষায় আছি,
মোটকা ধরনের শপথ করো না, মজা করব

তা ছাড়া উপলব্ধি করব,

তুমি,

রাতের রূটির খেয়ালে,
উষ্ণ হাতের অপেক্ষায় বসে আছি।

(আমার উপর অভিশাপ কবিতাটি তরুণী কবি সাদিক্বে আকব'রি (সওগান্দ)'র ''লা'নত বেহ মান'' কবিতার বাঙলায়ন)


৪. 
শরৎকাল
নিকা মনছুরি

তোমাকে...
তোমাকেই খুঁজি
শরৎঋতুর প্রারম্ভে
ছোট্টপথ, গলি ও ওয়ার্ডে
বাবলাগাছের অনাবৃত শাখাগুলোতে
পথচারীর ফিরতি পরিশ্রান্ত পদে
যা প্রত্যেক পাতার উপর নির্দয়
পদের রঙ রেখে যাচ্ছে...
তোমাকেই খুঁজি
হলুদাভ পল্লবের আহাজারিতে...
অনুরক্ত প্রেমিকদের দৃষ্টিতে
আর স্মৃতিতে পরিপূর্ণ মস্তিষ্কগুলো...
বর্ষণের উপলব্ধির হৃদগুলো
হাঁ! তোমাকেই খুঁজি
সমীরণে, লতাগুল্মে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের প্রফুল্লতায়
কতো ভালো হবে তোমাকে পাব!
ওহে ঋতুদের রাজা!
শরৎকাল!

(শরৎকাল কবিতাটি নিকা মনছুরির "প'য়িঝ" নামক কবিতার বাঙলায়ন)


৫. 
তোমার সাথে
মির ছ'লেহ মিরঝাদেহ

হায়! এক লহমা আমার পাশে ছিলে
প্রেমের বড় নদীর তটে বসেছিলাম 
তুমি আমার জন্য প্রভুকে বলছিলে
আর আমাদের পক্ষ থেকে
আর সকল ভালো অনুভূতি পরায়ণ জিনিষের পক্ষ থেকে...
হায়! এখনো আমার পাশে আছো 
সবকিছুর প্রারম্ভে আমার ঊর্ধ্বগতি হবে
এখনো তোমার হাতে হাতে পাহাড়চূড়া 
প্রেমকে পাহাড়ের জন্য গুজব করব 
আর অহংকার করে চলে যাওয়া মোহরের ছায়া
কী এসকল জাঁকালো জিনিষ!
রাতের খাবার শশীর জন্য
বাদকের পেশার সাথে পানির ফোঁটা
কুঁড়েঘরের পাশে সদর দরজার উপরে
কাছে ও দূরে সমস্ত মারইয়াম ও জুঁই 
তোমার নিকট সকল পেয়াদাই প্রেমের বাহক
হাতে হাত রেখে তুমি সুখে ঘুমাও
আর কী উত্তম হতে পারে এই সুন্দর অনুভূতির থেকে?
তোমার সাথে যেদিকে তাকাই আবাদ হয়
আমার অন্তরাত্নার গহীনে থাকো
এটাই তোমার অস্তিত্ব
ছোট-বড় সকল স্থানে সবাই খুশি।
(তোমার সাথে কবিতাটি কবি মির ছ'লেহ মিরঝাদেহ'র "ব তু" নামক কবিতার বাঙলায়ন)

৬. 
উমাদে বা'হরি
আমার জগৎ ভালো নয়

আমার জগৎ ভালো নয়
প্রত্যেক রাতেই এই দুঃস্বপ্ন দেখি
এক মুহূর্তকে গুম করেছি আমার পথে
কেননা তোমার বয়স আমার শীতকালীন থাবা...

আমার জগত ভালো নয়
যখন প্রত্যেক প্রারম্ভে সন্দেহ রাখি
আমার শরৎকালে প্রত্যেক মুহূর্তে বর্ষণ করি
মেঘের সাথে যাতনার ভাগিদার আমি...

আমার সাথে পূর্বপুরুষ ছিল যা বৃথা নয়
এই কুঠিরের প্রত্যেক মুহূর্তে জ্বর আছে
আমার ভাস্করকে ধীরে দৃশ্যমান করো
এই প্লেগের পুরোজমিনে জ্বর আছে

এখানে তোমার স্বপ্ন বিনষ্ট হবে
আমার সাথে পূর্বপুরুষদের এই যাতনা সংক্রামক
তোমার এক দুনিয়ার বয়স ভিত্তি করলে
একজন তোমার সমস্ত পৃথিবীকে গ্রহণ করেছে

তুমি নিজের সংগে আগামীকে ভাগ করে নাও
যখন তুমি ভাস্কর তখন অস্ত নেই
আমার সাথে পূর্বপুরুষ একথা বিশ্বাস করো
আমার দুনিয়া ভালো নয়!

আমার সাথে পূর্বপুরুষ ছিল যা বৃথা নয়
এই কুঠিরের প্রত্যেক মুহূর্তে জ্বর আছে
আমার ভাস্করকে ধীরে দৃশ্যমান করো
এই প্লেগের পুরোজমিনে জ্বর আছে...
(আমার জগৎ ভালো নয় কবিতাটি উমাদে বা'হরি'র "দুনিয়ায়ে মান দুনিয়ায়ে খুবি নিস্ত" কবিতার বাঙলায়ন)

৭. 
সেই দিন
পারভিন সাইয়াদি

শীতকাল ছিল
বাতায়নের কাছে সেই দিকে তোমার কাছে ছিলাম
আমি...
তুমি...
লোচনগুলো সিক্ত রাজপথ
তুমি ঐদিকে পরিশ্রান্ত গাড়ির চেয়ারে
আমি চেয়ারের উপর বারংবার
আমাদের হাতগুলোকে প্রলম্বিত করলাম
আমার হাতকে চুম্বন করলে, শীতল হলাম
সেই দিনের পর
আমার কুঠিরের বাতায়নের পিছন
সূর্য নিজেই তার ভিতর
তোমার আঁখিদুটিকে স্থান করে দিয়েছে
আর যখন 
চেয়ারগুলো স্থানান্তর হলো
আমি ব্যাপকভাবে কেঁপে উঠলাম
পথে তোমার সমান্তরালে পা বাড়ালাম
আমি আকস্মিক তীব্র বেদনাকে আমার কণ্ঠে বাঁক নেয়ার সময় বন্ধ করলাম
আমার একটি ভগ্ন স্বপ্ন ছিল...
(সেই দিন কবিতাটি পারভিন সাইয়াদি'র 'অন রুঝ' নামক কবিতার বাঙলায়ন)

৮. 
হাসব
ফ'য়েজেহ কিক্ববাদি

হাসব
এ জন্য নয় যে আনন্দিত ছিলাম
কি করব?
আদিকালে
সাধারণেরা পলায়ন করেছে
আমার মৃত্তিকাকে প্রসূন করল

হাতুড়ির শব্দ 
আমার পাপকারীর আত্না
বিচারকের টেবিলে চুরি হয়।
আমি
অপরাধী 
অন্যের দিকে তাকাও
বিচারক
ও তুমি
সাধারণের দাবিদার...

আমি হাসব
যাতে নেত্রগুলো
ইঙ্গিত না করে পাপকারীর দিকে
যাতে অন্যরা
বুঝতে না পারে যে আমি প্রেমাসক্ত

বিচারক রায় পড়ছে:
তুমি প্রেমাসক্তে অভিযুক্ত
মুক্তি শর্তযুক্ত...

আর আমি আমার হাসিকে আরো রসবোধপূর্ণ করলাম
এ জন্য নয় যে আনন্দিত ছিলাম
একাকী
আমি মহিলা আদালতে আরজি দিব...
(হাসব কবিতাটি ফ'য়েজেহ কিক্ববাদি'র 'মি খানদাম' কবিতার বাঙলায়ন)

৯. 
শুভ বসন্ত
সিয়ামাক অরমান্দ

বসন্ত এলো, হৃদগুলো পূত হলো
সহস্র দুঃখ, বছর বিনষ্ট হলো
সাবুয়ির সুবাস আজকের প্রেম
আকাশের শীর্ষবিন্দুর উপর, আবারো আলোকিত হলো
হৃদ গনিমত, প্রীতি নেয়ামত
ধরার মাঝে মাঝে, যদি হয় সাহস
হবে আনন্দময় দিন, অভিনন্দনসহও
সৌভাগ্যের দিকে, যাত্রা করব।
(শুভ বসন্ত কবিতাটি সিয়ামাক অরমান্দ'র 'বাহ'র মুবারাক' শীর্ষক কবিতার বাঙলায়ন)


১০. 
একাকীত্ব
মোহাম্মেদ স'লেহ শারিবি

আমি, বৃষ্টি আর একাকীত্বের কী করুণ অবস্থা!
তুমি তোমার এই নিজের মধ্যে মরেছ, তুমি জ্ঞাত যে আমি অসন্তুষ্ট

না আগামীর প্রত্যাশা, না আমার আজকের উপলব্ধি 
কেননা ক্রোধের সাথে সাজাবো, কেননা অনুরাগের সাথে দগ্ধিত হব

শীতল সমীরণ আকাঙ্ক্ষা করো, পূর্ণ হৃদ যাতনা আকাঙ্ক্ষা করো
তুমি কী অনিন্দ্য সুন্দর এক বসন্ত আকাঙ্ক্ষা করো

প্রভু আমার অন্তরে যাবে আমার কাব্য ও দিওয়ানার জন্য
আজ নিশিতে আমার সকল সন্ধিগ্ধতা ও বিশ্বাসকে আগুনে ছুড়ে দিব

আমার ধ্বংস রঙ খুলবে, অন্তর শীলাথেকে গঠিত হবে
দিবারাত্র আমাকে বলতে যে সে একই বর্ণ হবে
(একাকীত্ব কবিতাটি মোহাম্মেদ স'লেহ শারিবি'র 'তানহায়ি' কবিতার বাঙলায়ন)

 

মীম মিজান
লেখক ও সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top