সিডনী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

এক মুক্তিযোদ্ধার ফ্যাশন বিষয়ক গল্প : ইসহাক খান


প্রকাশিত:
৩১ আগস্ট ২০২০ ২০:২০

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ০২:০৩

 

আমাদের তখন উচ্চতর প্রশিক্ষণ চলছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে তুরা পাহাড়ে। পাহাড়ের ভেতর অনেকখানি জায়গা জুড়ে মাটি কেটে সমতল ভূমি তৈরি করে সেখানে তাবু খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়েছে। এর আগে এখানে এক ব্যাচ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারাই মূলত জায়গড়াটা সমতল ভূমিতে পরিনত করেছে। চারপাশে পাহাড় ঘেরা দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কলকল করে ঝর্ণা বয়ে যাচ্ছে। আমরা ব্যস্ত প্রশিক্ষণে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো সময় তখন আমাদের অনুকূলে ছিল না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ। কখনও অস্ত্র চালানো, কখনও যুদ্ধের কৌশল, কখনও শত্রুর গতিবিধি ফলো করা আবার কখনও আত্মরক্ষার কৌশল। পুরো দস্তুর সামরিক বাহিনীর কায়দায় আমাদের প্রশিক্ষণ চলছে। অত্যন্ত নিপুন এবং দক্ষতার সঙ্গে আমাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ভারতীয় জোয়ানরা।

আমার তখন কিশোর পেরুনো বয়স। সবে এসএসসি পাস করে কলেজে ঢুকেছি। তখনই এলো যুদ্ধের ডাক। বেরিয়ে পড়লাম ঘর থেকে। অনিশ্চিত সে যাত্রায় আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল যুদ্ধ, মাতৃভূমির স্বাধীনতা।

অনেক পথ ঘুরে আমরা এসে প্যেছলাম ভারতের আসাম রাজ্যের মাইনকারচর নামক ছোট শহরে। সেখান থেকে তিন মাইল হেঁটে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের একটি থানা রৌমারি গিয়ে উপস্থিত হলাম। তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে।
রৌমারি একটি অস্থায়ী ক্যাম্প। প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সেখানে। সোজা কথায় বললে বলা যায় সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের লাঠি হাতে লেফ্ট রাইটÑলেফ্ট রাইট ট্রেনিং হতো। আমরা মজা করে বলতাম ‘লাঠি ট্রেনিং’। সকাল বিকেল লাঠি হাতে লেফ্ট রাইট আর দুবেলা পাতলা খিচুড়ি নামক অদ্ভুত খাদ্য খেয়ে আমাদের দিন কাটতো।

একদিন পড়ন্ত বিকেলে পাকআর্মী রৌমারী ক্যাম্প আক্রমণ করলে আমরা কোন প্রতিরোধ গড়তে পারলাম না। প্রতিরোধ গড়ার মতো সামরিক সরঞ্জাম আমাদের ছিল না। আমরা যে যা পারি তাই নিয়ে পালিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে ‘নতুন বাজার’ নামক স্থানে নতুন করে ক্যাম্প স্থাপন করি। সেখান থেকেই বিভিন্ন জনকে বাছাই করে বিভিন্ন স্থানে উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। আমরা উচ্ছতর ট্রেরিংয়ের জন্য এলাম মেঘালয় রাজ্যে তুরা পাহাড়ে।
অসংখ্য ছোটবড় টুকরো টুকরো ঘটনা এবং সেইসব ঘটনার স্মৃতিতে ভরপুর তখনকার সময়। সে সব স্মৃতি আমার অমূল্য সম্পদ। কখনও কখনও সে সব ঘটনা মনে মনে জাবর কাটি, স্মরণ করি, উপভোগ করি, আবার পুলকবোধ করি একা একা।
এমন কিছু ঘটনা আছে যা অব্যক্ত। বলা যাবে না। বলতে পারবো না। সে গুলো আমার একান্ত নিজস্ব। আবার এমন কিছু ছোটখাটো ঘটনা আছে যা বড় বড় ঘটনার মধ্যে দূর নক্ষত্রের মতো জ¦ল জ¦ল করছে। যার কোনটা সুক্ষ্ম রসে পূর্ণ। মনে হলে এখনো একাই একাই হেসে ফেলি।
ঘটনা গুলো সাধারণ। সাদামাটা। কিন্তু জীবনের গল্প। তাই গেঁথে আছে মনে। ভুলতে পারি না।

না ভোলা, না বলা এরকম একটি সাধারণ টুকরো গল্প আপনাদের শোনাতে চাই।
আমরা তখন সবে তুরা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ভর্তি হয়েছি। আগেই বলেছি এখানে আমাদের প্রশিক্ষণ হতো পুরোদস্তুর সামরিক কায়দায়। আমাদের কোম্পানিতে আমরা ছিলাম একশো ছাব্বিশজন মুক্তিযোদ্ধা। অধিকাংশ ছাত্র। হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিক-কৃষক। আমরা কেউ নিয়মিত বাহিনীর সদস্য নই। সেনাবাহিনীর নিয়ম কানুন আমাদের জানার কথাও নয়। আমরা এসেছি দেশমাতৃকার ডাকে। দেশকে শত্রু মুক্ত করতে। আমাদের সামরিক নিয়মে ঢেলে সাজানো সহজ কথা নয়। তবু চেষ্টা ছিল কড়াকড়ি। আমাদের উচ্চতর ট্রেনিং শুরুর পর পরই নির্দেশ দেওয়া হলো সবার লম্বা লম্বা চুল ছেঁটে ফেলতে হবে।
আমার এই টুকরো গল্পটি চুল বিষয়ক ঘটনা থেকে নেওয়া। আমরা গ্রাম থেকে বেরিয়েছিলাম ন’জন তরুণ। নানা পথ পরিক্রমায় নানা জায়গায় ছিটকে যেতে যেতে নয় জনের দুজন আমরা রয়ে গেছি একসঙ্গে। এক প্লাটুনে, এক তাবুতে, এক বিছানায়। যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত আমরা মানিকজোড় হয়ে ছিলাম।
আমার সেই বন্ধু ভীষণ ফ্যাশনদুরস্ত। ছোটবেলা থেকে আমরা তাকে নায়ক বলে সম্বোধন করতাম। সুদর্শন। চমৎকার শারীরিক গঠন। চেহারাটা বাংলা সিনেমার নায়কের মতো আলু মার্কা। মেয়েরা তার চেহারা দেখে সহজে পটে যায়। আমরা তাকে ঈর্ষা করতাম। নানা কটুক্তি করে খেপাতাম। তাতে আমার বন্ধুটি মোটেও রাগ করতো না। মিটি মিটি হেসে উদাস তাকিয়ে থাকতো ডাগর চোখজোড়া মেলে। একসময় আমরা নিজেরাই থেমে যেতাম।

ট্রেনিংয়ের সময় আমার সেই বন্ধুর চুল ছেঁেট ফেলার নির্দেশ এলে সে শঙ্কিত হয়ে দুদিন চুপচাপ বসে থাকে। তারপর একদিন ঠিকই যেতে হলো ক্যাম্পের ভেতরে সেনাবাহিনীর নাপিতের তাবুতে। তাবুর ভিতরে বাঁশের মাচা দিয়ে তৈরি বেঞ্চে লাইন ধরে বসিয়ে একাধিক নরসুন্দর কাঁচি চালিয়ে বাটি ছাঁট দিয়ে যেত। সে দৃশ্য দেখার মতো। তারা কাঁচি চালাতো না চামড়া ছিলতো বোঝার উপায় ছিল না। তাদের কাঁচি চালানো দেখলে বুক কেঁপে উঠতো। যেন তারা চুল কাটছে না, কাস্তে দিয়ে পাট কাটছে।
আমার সেদিন ডিউটি পড়েছিল ঝর্ণা থেকে পানি আনার। বালতির হাতলের মধ্যে বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে দু’প্রান্তে দু’জন কাধে নিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ঝর্ণা থেকে পানি আনতে হতো। আমাদের কোম্পানির ১২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার খাওয়া এবং রান্নার জন্য এই পানি। কাজটি ভীষণ পরিশ্রমের এবং কষ্টের। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ওঠা-নামা করতে-করতে পাথরের ঘষা লেগে অনেকেরই পা ছুলে গেছে। ঘা হয়েছে। দগ-দগে ঘা।

তারপরও এইভাবে পানি না এনে উপায় নেই। সেনাবাহিনীতে নিজেদের কাজ নিজেদেরই করতে হয়। আমাদেরও তাই করতে হতো। বাই রোটেশন ডিওটি পড়তো আমাদের। আমারও পড়েছিল সেদিন। আমি পানি আনা শেষ করে ক্লান্ত শরীরে তাবুতে আসি বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। কিন্তু তাবুতে এসে আমি চমকে উঠি। আমার বন্ধুটি বিছানায় বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমি আতঙ্কিত মুখে এগিয়ে যাই। নিশ্চয়ই ভয়ংকর কিছু ঘটেছে। ওর কান্না দেখে আমারও কান্না পাচ্ছিল। ভয়ে আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতে পারছিলাম না। যদি ভয়ংকর কিছু ঘটে থাকে।
হঠাৎ খেয়াল হলো বন্ধুটির হাতে ছোট্ট একটি আয়না। ক’দিন আগে ক্যাম্পের ভেতর সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত স্টোর থেকে আয়নাটি আমি কিনেছি। লাল রেক্সিনে মোড়া। ভাঁজ করে পকেটে রাখা যায়। দেখতে খুবই সুন্দর। আমার বন্ধু সেই আয়নায় মাঝে মাঝে নিজেকে দেখছে আর শব্দ করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে।

আমি আন্তরিক ভাবে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কাঁদছিস কেন? বাড়ি থেকে কোন খারাপ খবর এসেছে?’ আমার বন্ধু কান্না থামিয়ে তার মাথার দিকে ঈশারা করলো। আমি তার মাথা দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। দেখে মনে হচ্ছে জেলের কয়েদী। সোজা কথায় বাটি ছাঁটের চেয়েও এক ডিগ্্ির বেশি। মাথার চান্দি ঘিরে সামান্য কিছু চুল। চারপাশে চেঁছে পরিস্কার করে দিয়েছে। আমি তার এই অদ্ভূত দৃশ্য দেখে কিছুতেই হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে আমার বন্ধু রেগে আগুন হয়ে গেল। চোখ রক্তবর্ণ করে আমার দিকে তাকাতে আমি হাসি থামিয়ে পাশে গিয়ে বসলাম। বললাম, ‘ভাবছিস কেন, কদিনের মধ্যে চুল আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু আমার এই সান্ত্বনা কোন কাজে আসছিল না। বার বার আয়নায় নিজের চেহারা দেখছিল। আর আফসোস করছিল, ‘এই অবস্থায় আমি বাইরে যাব কিভাবে? বন্ধুরা দেখলে হাসাহাসি করবে না?’
বললাম, ‘না। হাসাহাসি করবে না। আমরা যে ঝর্ণার ধারে উদোম হয়ে সবার সামনে হাগতে বসি তা নিয়ে কেউ কি হাসাহাসি করে?’ জোর দিয়ে বললাম, ‘এখানে কেউ কারো চেহারা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে না। সে অবস্থাও নেই। তুই খামখা কেন মন খারাপ করছিস? এখানে কি কোন মেয়ে মানুষ আছে যে তোকে এই অবস্থায় দেখে ব্যঙ্গ করে হাসবে?’
আমার খোঁচা গায়ে না মেখে বার বার শুধু আয়নায় নিজের চেহারা দেখছিল মাথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। আগেই বলেছি আমার বন্ধুটি রূপ সচেতন। ছোটবেলা থেকে ধোপদুরস্ত পোশাক এবং সেজেগুজে থাকতে অভ্যস্ত। যে কারণে আমরা তাকে নায়ক বলে ডাকতাম। চুল কাটা নিয়ে তার ছিল ভীষণ রকম খুঁতখুঁতি। সেলুনে গিয়ে বার বার আয়নায় নিজেকে দেখে নরসুন্দরকে নির্দেশ দিত, এইভাবে না সেইভাবে। নরসুন্দর বিরক্ত হলেও তার করার ছিল না। তার পছন্দেই চুল কেটে দিতো। এখানে এই ট্রেনিং সেন্টারে নরসুন্দরের তাবুতে কোন আয়না নেই। আমার বন্ধু আয়না ছাড়াই বার বার সেনাবাহিনীর নরসুন্দরকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিল। হয়তো আমার বন্ধুর বার বার নির্দেশে সেই নরসুন্দরের মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল। আর তাতেই কড়া ছাঁট। তার মেজাজ বিগড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। সেতো শীল পাড়ার নরেন শীল নয়। সে হলো সেনাবাহিনীর শীল। তাদেরও সেনাবাহিনীর মর্যাদা। তাইতো মেজাজ খারাপ করে এমন বাটি ছাঁট দিয়েছে যে এটাকে তরকারি বাটি বলা যাচ্ছে না। এটা হয়ে গেছে লবণের বাটি।

আমার বন্ধুর করুণ অবস্থা দেখে আমার খুব মায়া লাগছিল। হাসি পাচ্ছিল ভীষণ। কিন্তু বন্ধুর এই অবস্থায় হাসাহাসি ঠিক হবে না ভেবে কপট গাম্ভীর্যে বললাম, ‘এই অবস্থায় একটা ছবি তুলে রাখতে পারলে ভাল হতো। ভবিষ্যতে দর্শনীয় বস্তু হতো।’
বন্ধু কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। আমি রাগমুখে বললাম, ‘এমন ভাব করছিস, মনে হচ্ছে এখনই কোন সিনেমার শূটিং করতে হবে। চুল কাটার কারণে শূটিং করতে পারছিস না। ওঠ, ঝর্নায় চল। গোসল করবি। তোর গা ভর্তি শুধু চুল। ওঠ।’
তবু ওর নড়ন-চড়ন না দেখে মেজাজ আমার সত্যি খারাপ হয়ে গেল। বললাম, ‘যুদ্ধ করতে এসেছিস নাকি সিনেমার শূটিং করতে এসেছিস? এমন ভাব করছিস যেন চুল আর কোনদিন গজাবে না।’

আমার বন্ধু ভীষণ মনোকষ্টে থমথমে মুখে ঝর্ণার দিকে রওনা হলো। আমিও সঙ্গে সঙ্গে চললাম। পথে চেনা যেই দেখছে সেই মুচকি হাসছে।

রাতে তাবুতে যেই ওকে দেখছিল সেই হেসে গড়িয়ে পড়ছিল। তাতে বন্ধুর দশা আরো চল্লিশা হয়ে গেল। কিন্তু সেসব ওই পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধে যখন ঝাপিয়ে পড়তে হলো, যখন কাদায় গড়াগড়ি করতে-করতে আমার সেই বন্ধুকে এলএমজি নিয়ে অসীম সাহসে শত্রুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখলাম তখন তাকে কেতাদুরস্ত চেহারা নিয়ে এতটুকু ভাবতে দেখিনি। সেইসময় তার মুখ ভর্তি দাড়ি, চুল এলোমেলো, তেল সাবানের খবর নেই, অথচ এসব নিয়ে রূপ সচেতন বন্ধুকে আর কখনও ভাবতে দেখিনি। তার ডাগর চোখজোড়ায় পাথর কয়লার মতো লাল গনগনে আগুন দেখেছি। সে আগুন ছিল স্থির কিন্তু ভীষণ উত্তপ্ত। তার সাহসী ভূমিকা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। সহজ করে বলা যায়, সে ছিল আমার সাহসের প্রেরণা। মূলস্তম্ভ। আমি কখনও হতাশ হয়ে পড়লে বন্ধু আমাকে সাহস যুগিয়ে বলতো, ‘ভাবিস না, জয় আমাদের হবেই।’

হ্যা, জয় আমাদের হয়েছে। আমরা স্বাধীন। স্বাধীন মাতৃভূমি হিসেবে বিশে^র মানচিত্রে সদম্ভে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। সাড়ম্বরে পালিত হতে যাচ্ছে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর, সুবর্ণ জয়ন্তী। সেই বিশেষক্ষণের প্রাক্কালে বেশি বেশি মনে পড়ছে সেইসব সাথীদের কথা, যাদের সঙ্গে এক তাবুতে থেকেছি, এক সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছি, একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। বিশেষভাবে মনে পড়ছে সেইসব সাথীদের কথা যাদের আমরা হারিয়েছি, যাদের রক্তে ভেজা এই দেশ, যাদের রক্তে কেনা এই স্বাধীন মাতৃভূমি। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা অন্তত এইটুকু সৌভাগ্যের দাবিদার যে আমরা দেখে যেতে পারছি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।

আমার সেই প্রিয়তম বন্ধু, যার চুল ছাঁটার গল্প এতক্ষণ আপনাদের শোনালাম, সেই বীরযোদ্ধা এখনও আগের মতো রূপ সচেতন, স্টাইলিস্ট, প্রাণবন্ত এবং পরিপূর্ণ মানুষ। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় যাকে প্রতিদিন শাহবাগে দেখা যেত। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেমন লাগছে এখন?’
উত্তরে বলিষ্ঠ কন্ঠে বলেছে, ‘খুব ভাল। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখে যেতে পারছি এর চেয়ে বড় সুখÑবড়আনন্দ আর কি হতে পারে।

উদার, বন্ধবৎসল, অমায়িক মানুষটি আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন। আজও সে আমার সাহসের প্রেরণা। অতি কাছের মানুষ। নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে কে সেই মানুষ, কে সেই মুক্তিযোদ্ধা? এখন কি তার পরিচয় লুকানো ঠিক হবে? না। তাহলে আমার এই জীবন্ত গল্পটি আপনাদের কাছে মিথ্যে হয়ে যাবে। আমার গল্পের নায়ক এখনও জীবিত। এখনও সে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিজ কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত। নাম সরকার আলী আসগর। বিবাহিত। এক পুত্রের জনক। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নিয়েছে। বড় অভিমানি, বড় আবেগি। এই লেখা পড়ে প্রচন্ড আবেগে কেঁদে ফেলতে পারে। তবে, কানে কানে তাকে বলতে চাই, ‘দোস্ত, আমি কি অসত্য কিছু লিখেছি?’

 

ইসহাক খান
লেখক ও সংগঠক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top