সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

আলো-আঁধারের মোহনায় যে জীবন : শরীফ উদ্দীন


প্রকাশিত:
৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:১৬

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৯

 

করোনা ভাইরাসের টানা নয়-দশ দিনের ছুটিতে অনেকেই দেশের বাড়িতে চলে গেছে। সংসারের পিছুটান নেই। আমি যাই নি। সরকারি নির্দেশে পরিবহণ বন্ধ কিন্তু মালিকরা গার্মেন্টস খুলে দিয়েছেন। রাস্তায় পোশাক শ্রমিকের ঢল। বাসা থেকে গার্মেন্টস চার কিলোমিটারের পথ। বাসা না বলে বস্তি বললে ঠিক হয়। মাঝখানে সরু রাস্তা। দুপাশের সারিতে সাতটি করে চৌদ্দটি টিনের ঘর। একাই একটি ঘর নিয়ে থাকি।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড ধরে গার্মেন্টস অভিমুখে হেঁটে চলেছি। পিছন থেকে আবছা চেনা কণ্ঠের কোনও মেয়ে সজোরে ডাক দিল, ‘চেয়ার বাবা।’

এমন সম্বোধন আমারই রসিকতার ফল। কারও কোনো কাজ করে দিলে ধন্যবাদ দিতে এলে বাধা দিয়ে রসিকতা করে বলতাম, ‘ধন্যবাদ দেয়ার দরকার নেই। কাটিং মাস্টার। দিন-রাত দাঁড়িয়ে কাজ করি। ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরে শুয়ে পড়ি। বসার সুযোগ হয় না। আমি মরে গেলে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে কবর দিয়ে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিবি, এটা চেয়ার বাবার কবর। বেঁচে থাকতে বসতে পারলাম না। কবরে গিয়ে কেয়ামত অবধি বসে থাকব।’

অন্যমনস্ক ছিলাম। পাশ কেটে চলে এসেছি। ডাক শুনে পিছনে ঘুরে ভিড়ের মধ্যে দেখি তুরিন। আমার আগের গার্মেন্টসের সুইং শাখার অপারেটর সুপার ভাইজার। তুরিনের চেহারা-পরিচ্ছেদ গার্মেন্টসকর্মীদের সাথে যায় না, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে মানায়। এগিয়ে কাছে পৌঁছাবার আগেই তুরিন দুই হাত দিয়ে তলপেট চেপে ধরে বসে পড়ল।

আমি তুরিনের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ডানা ধরে রাস্তার পাশের দোকানের সামনে দাঁড় করালাম। করোনা ভাইরাসের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দুএকটি ছাড়া বাকি দোকানপাট বন্ধ। তুরিনের দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হল না। সেখানেই বসে পড়ে চোখ বন্ধ করে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, ‘বের হওয়ার সময়ই ব্যথা ব্যথা লাগছিল। মাঝে মাঝেই ভীষণ ব্যথা করে। কেওয়া থেকে হেঁটে আসছি। ব্যথাটা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর পারছি না।’

কেওয়া থেকে হেঁটে আসার কথা শুনে বললাম, ‘সে তো বারো-তেরো কিলোমিটারের রাস্তা! গার্মেন্টসের কাছে-পিঠে ভাড়া থাকবেন।’

তুরিন বন্ধ দোকানের শাটারের সাথে ঠেস দিয়ে এলিয়ে পড়ে যন্ত্রণায় কোঁকাতে কোঁকাতে বলল, ‘বোন-দুলাভাইয়ের বাসায় থেকে চাকরি করি। পারলে দয়া করে আপনি আমাকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে রেখে আসেন।’

তুরিনের বেহাল দশা দেখে ঔৎসুক পথচারিদের কয়েকজন দাঁড়িয়ে পড়েছিল। ওদের মধ্য থেকে একজন বলল, ‘সেটাই ভালো হবে। আপনি এখানেই দাঁড়ান। দেখি, আমরা যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করে দিতে পারি কি-না।’



পাবলিক পরিবহন বন্ধের মধ্যে এভাবে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার জন্য মালিকদেরকে উদ্দেশ্য করে গালি দিতে দিতে ছেলেটি একজনকে সাথে নিয়ে পিছনে ছেড়ে আসা তিন রাস্তার মাথার দিকে গেল।

অটোরিকসা চালক মানবতা দেখাল। অসময় বলে বেশি না নিয়ে ভাড়া ন্যায্যই নিল। তুরিনকে নিয়ে ইমার্জেন্সিতে ঢুকতেই নার্স ইশারায় পর্দা ঘেরা কেবিনটি দেখিয়ে দিয়ে টিকিট কেটে আনতে বললেন।

দুজনের পর লাইন পেলে টিকিট কাটার সময় রুগীর নাম, ঠিকানা, বাবা কিংবা স্বামীর নাম জিজ্ঞাসা করলে ঠেকে গেলাম। তুরিনের নাম ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। সবকিছু জানতে তাড়াতাড়ি ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ফিরে এসে কেবিনে ঢুকতেই বাধা পেলাম। মেডিকেল অফিসার তুরিনকে দেখতে ভিতরে ঢুকেছেন।

পর্দার এপাশ থেকে আমি কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি। ডাক্তার তুরিনকে ভর্ৎসনা করছেন, ‘তিন মাস পার হলে কেউ বাচ্চা নষ্ট করে? সেটাও স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে! চার মাস ধরে কষ্ট পাচ্ছে তবু কোনো গাইনি ডাক্তার দেখায় নি। জরায়ুতে বোধহয় সাংঘাতিক ইনফেকশন আছে। নিশ্চয় কোনো হাতুড়ের হাতে পড়েছিল। জটিল কিছু হওয়া অস্বাভাবিক নয়।’

ডাক্তারের পিছনে পিছনে নার্স বের হয়ে এলে দ্রুত কেবিনে ঢুকে তুরিনকে বললাম, ‘টিকিট কাটতে স্বামী অথবা বাবার নাম ঠিকানা লাগবে। বিয়ে করেছেন জানতাম না। স্বামীর নাম-ঠিকানা বলেন।’

তুরিনের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখটা এক নিমিষে গভীর বিষাদে নীল হয়ে গেল। একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মৃদু স্বরে বলল, ‘হাসপাতালের বেডে শুয়ে উপকারির কাছে মিথ্যে বলতে বাধছে। না, বিয়ে হয় নি। ঠকেছি। স্বামীর নাম কী করে বলব?’

গ্যাঁড়াকলে পড়লাম। অবিবাহিত মেয়ের ভ্রুণ হত্যার ঘটনা জানলে ব্যাপারটা অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। তুরিনের মান-সম্মানের ব্যাপারটাও মাথায় এলো। কথা না বাড়িয়ে টিকিট কাউন্টারে ফিরে গিয়ে উপস্থিত বুদ্ধিতে আমার নাম-ঠিকানা দিয়ে টিকিট কেটে নিয়ে এসে ডাক্তারের টেবিলে দিলাম।

ডাক্তার টিকিটের উপর কয়েক লাইন লিখে স্বাক্ষর করে দিলে নার্স আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভর্তি করাতে হবে। এটা নিয়ে কাউন্টারে যান।’

ট্রলি আছে কিন্তু লোক নেই। ওয়ার্ডে রুগী রেখে কোনো একজন না ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে জেনে তুরিন আপত্তি করল ‘আপনি একটু ধরলে আমি হেঁটে যেতে পারব।’

কাগজপত্র হাতে নিয়ে ওয়ার্ডের দিকে যেতে যেতে বললাম, ‘লোকে কি ভাববে, তাই আগা-মাথা চিন্তা না করে আপনার স্বামীর জায়গাতে আমার নাম-ঠিকানা লিখিয়ে দিয়েছি।’

তুরিন উত্তর দিল, ‘এতে কি লোকের ভাবাভাবির অবসান হবে? বউকে কেউ আপনি বলে না। আমি আপনার থেকে কয়েক বছরের ছোটো হব।’

মুখে তুরিনকে কিছু না বলে মনে মনে আক্ষেপ করলাম, ‘খোদা! তুমি পারও বটে! বিশ্বাসঘাতক প্রেমিকের তৈরি সমস্যার স্বেচ্ছায় নমিনি হতে বাধ্য করলে!’

করোনার কারণে সারাবিশ্বে সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হলেও বাংলাদেশের হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডগুলি বোধহয় সেই আওতার বাইরে। মেঝেতেও রুগী রাখার জায়গা নেই। তুরিনের জায়গা হল ওয়ার্ডের বারান্দায়।

তুরিনের সমস্যা জেনে প্রেসক্রিপশন লেখার আগে ডাক্তার-নার্স এমনভাবে আমার দিকে তাকালেন যেন আমি কোনো খুনের আসামি।

দুপুর পার হতে চলেছে। আমি তুরিনকে বললাম, ‘তুরিন, আমাকে একবারের জন্য হলেও গার্মেন্টসে যেতে হবে। আজ বেতন দেয়ার কথা। ডাক্তার আবার ঔষধপত্র কিনতে বলতে পারেন। তুমি খরচের জন্য এ সময় ভেব না। পরে দেখা যাবে। আমি সন্ধ্যার পর আসব। যাবার সময় হাসপাতাল থেকে পাস নিয়ে নিব।’

তুরিন মৃদু হেসে উত্তর দিল, ‘আপনি আমার জন্য অনেক করলেন। বেঁচে থাকলে আপনার কবরে আমি সত্যি সত্যিই চেয়ার বাবার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিব। রাস্তায় গাড়ি চলছে না। কষ্ট করে আজ আর আসার দরকার নেই।’

সন্ধ্যার আগেই আবার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিলাম। কিছুপথ পায়ে হেঁটে, কিছুটা অটোরিকসা চড়ে আমি যখন হাসপাতালে পৌঁছালাম তখন রাত হয়ে গেছে। আমাকে দেখে তুরিনের মুখটা যে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তা আমার নজর এড়ালো না। তুরিন বিস্মিত হয়ে বলল, ‘আপনি এত কষ্ট করে আবার এলেন?’

আমি হালকা হাসি দিয়ে বললাম, ‘নিজের গরজেই আসতে হল। তা নাহলে রটে যেতে পারে, স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে স্বামীর পলায়ন।’

তুরিন বালিশের নিচ থেকে ছোটো একটি প্রেসক্রিপশন বের করে দিয়ে জানাল, ‘বড় ডাক্তার আপা রাউন্ডে এসে এটা লিখে দিয়ে গেছেন।’

ঔষধ কিনে নিয়ে এসে তুরিনের পাশে বসে আছি। তুরিন নিজের থেকেই বলল, ‘মোবাইল করে বোনকে বলেছি, কয়েকদিন বান্ধবীদের কাছে রাতে থাকব। খবর দিলে সবাই ব্যাপারটা জেনে যাবে।’

আরও কিছুক্ষণ বসতাম কিন্তু একজন নার্স এসে তাড়া দিলেন, ‘রাত বেড়ে গেছে। পুরুষ মানুষরা আর এখানে থাকবেন না।’

আসার সময় থালা-গ্লাস-জগ-চাদর-বালিশ নিয়ে এসেছি। মনে করে মশা মারার কয়েলও নিয়েছিলাম। লাভ হল না। রাত বাড়লে করিডোরে চাদর পেতে ঘুমাতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, গাজীপুর শহরের অর্ধেক মশা এই হাসপাতাল চত্বরে থাকে। এরা কয়েলের ধোঁয়াকে ভয় করে না।

আমার থেকে কয়েক হাত দূরে শুয়ে থাকা লোকটি মশা মারতে মারতে রসিকতা করল, ‘করোনা ভাইরাসের রুগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তার-নার্সররা নিজেরাই আক্রান্ত হয়ে যেভাবে কোয়ারেন্টাইনে চলে যাচ্ছেন তাতে সাধারণ রুগীরা যেটুকু চিকিৎসা পাচ্ছে সেটাই বড় সৌভাগ্য। মশাদের বোধহয় এই সৌভাগ্য সহ্য হচ্ছে না।’

গার্মেন্টস আবার বন্ধ করে দেওয়ায় সুবিধা হয়েছে। দিনেও হাসপাতালে থাকতে পারি। তিন দিনের মাথায় তুরিন বলল, ‘আমার জন্য আপনাকেও অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। ডাক্তারকে ছুটির কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ডাক্তাররা প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছেন। আবার যদি সেই দিনের মতো অবস্থা হয়, সেজন্য আরও কয়েকটা দিন এখানে থেকেই চিকিৎসা নিতে বললেন।’

ডাক্তারকে নিজের থেকে ছুটির কথা বলাতে বকা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুরিন, ছেলেটিকে কি তুমি এখনও ভালোবাসো?’

কয়েক মুহূর্ত আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তুরিন মাথা নিচু করে মন্তব্য করল, ‘আমি বোধহয় আর কোনোদিন কাউকে ঘৃণা করতে পারব না। বুকের সবটুকু ঘৃণা ওকে ছুঁড়ে দিয়েছি।’

তুরিনকে কষ্টের কথা জিজ্ঞাসা না করলেই ভালো হতো। কৌতূহল দেখানোর কারণে নিজের উপরে রাগ হল। মাথা নিচু রেখেই তুরিন অনুচ্চস্বরে কথা শুরু করল, ‘নাম নিতেও ঘৃণা হয়। আপনি চলে আসার কয়েকদিন পর আমাদের গার্মেন্টসে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে যোগ দিয়েছিল। পঞ্চগড়ের ছেলে। কপালে দুঃখ ছিল বলেই হয়তবা প্রস্তাব এড়িয়ে যেতে পারলাম না। জড়িয়ে গেলাম। জর্ডানে যাবার জন্য টাকা জমা দিয়েছিল। বিদেশ যাবার আগে গ্রামের বাড়িতে জমিজমা সংক্রান্ত কাজ আছে বলে চাকরিটা ছেড়ে দিল। মেসে থাকত। বিদেশ যওয়ার আগে বিয়ের কথা ছিল। বাড়ি যাবার আগে দুতিন দিন ওর মেসে নিয়ে গেল। সেই সময় ভুলটা করে ফেলি। আমি যখন বুঝতে পারলাম বিপাকে পড়ে গেছি, ওকে ফোন করে বার বার ঢাকায় আসার অনুরোধ করি। গ্রামের জমিজমার কাজ শেষ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে এসে কোনো ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে সমস্যার সমাধান করে দেয়ার কথা দিয়েছিল কিন্তু আসব আসব করেও আসত না। লজ্জায় কাউকে এই সমস্যার কথা জানাতেও পারতাম না। আশায় থাকতে থাকতে এদিকের তিন মাস পার হয়ে গেল। হঠাৎ করে ওর নম্বর বন্ধ। জর্ডানে চলে গেছে। বিয়ে না করলে মামলা-মোকদ্দমা করতে পারি বলে জানোয়ারটা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সময় পার করত। ও যে বিবাহিত এটা আমার কল্পনারও অতীত ছিল। জর্ডানে চলে যাবার কিছুদিন পরে কানে আসে।’

আমি সহানুভূতি জানিয়ে বললাম, ‘তাহলে অনেক মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে এক সময় তোমাকে যেতে হয়েছে।’

তুরিন উঠে গিয়ে থুতু ফেলে এসে বাকিটা বলল, ‘নিরুপায় হয়ে আমার এক বিবাহিত বান্ধবীকে বললাম। আমাকে ওর দেশের বাড়ির এক মহিলা কবিরাজের কাছে নিয়ে গেল। কবিরাজটি না-কি এ ব্যাপারে ডাক্তারের বাপ। ডাক্তারের মহিলা বাপ শিকড়-বাকড় দিয়ে আমার বারোটা বাজিয়ে দিল কিন্তু কোনো লাভ হল না। অবস্থা বেগতিক দেখে সেই কবিরাজ এক নার্সের খোঁজ দিল। উদ্ধার পেলাম কিন্তু শরীরের বারোটা বেজে গেল। মাঝে মাঝে ব্যথা হলে মোবাইলে সেই নার্স যে ঔষধ খেতে বলতেন সেটাই খেতাম।’

সেদিনের পর থেকে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ হয়ে পড়ল। আমার কাছে তুরিনের ভিতর-বাহিরের প্রভেদ নেই । তুরিনের কষ্ট অনুভব করে মায়া লাগে।

কয়েকদিন পর তুরিনকে বলে নিজ ঘাঁটিতে ফিরলাম। ফেরার পথে কাঁচা বাজারে গেলাম। করোনার কারণে বাইরের সব হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ। হাসপাতালের ক্যান্টিনের খাবারে স্বস্তি পাই না। করোনার মধ্যে সবকিছু যখন স্তব্ধ তখনও বাজারে শিং মাছ উঠেছে। অনেকদিন খাই নি। তুরিনের কথাও মনে হল। লোভ সামলাতে পারলাম না। দাম সাধ্যের বেশি হওয়ার পরও কিনলাম।

তুরিনের জন্য নিয়ে যাব। খুব যত্ন করে রাঁধলাম। রান্না করার সময় ভুলেই গিয়েছিলাম, তুরিন আমার ঘরের মানুষ নয়।

রাতে হাসপাতালের খাবার দিতে এলে ইশারায় তুরিনকে নিতে মানা করলাম। আমি ভাত বেড়ে দিচ্ছি এমন সময় তুরিন বলল, ‘আমার জন্য নিয়ে আসার কী দরকার ছিল?’

আমি হাসি দিয়ে কানের কাছে মুখ লাগিয়ে ফিস ফিস করে বললাম, ‘নকল হলেও স্বামী তো।’

তুরিন লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিল। আমি তাড়া দিলাম, ‘খেয়ে নাও।’

তুরিন খেতে খেতে বলল, ‘আপনার ঋণ আমি কোনোদিনও শোধ করতে পারব না।’

আমি স্বাভাবিক কণ্ঠে উত্তর দিলাম, ইচ্ছা থাকলে ঋণ অন্যভাবেও শোধ করতে পারবে। সাইনবোর্ড তো টাঙিয়ে দিতে চেয়েছো। এখন কবরে একটা চেয়ার দিলেই শোধ হয়ে যাবে।’

তুরিন হঠাৎ খাওয়া থামিয়ে দিল। কয়েক মুহূর্ত নিরব থেকে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে অনুরোধ করল, ‘আপনি কথায় কথায় নিজের মৃত্যু নিয়ে রসিকতা করবেন না। আমার ভালো লাগে না।’



তুরিনের খাওয়া শেষ হলে সেখানে বসেই আমি খেয়ে নিয়ে তুরিনের সাথে আরও কিছুক্ষণ গল্প করে করিডোরে ঘুমাতে চলে গেলাম।

আমাদের অভিনয়ের পালা শেষ। আট দিনের মাথায় তুরিনকে ছুটি দিয়ে দিল। তুরিনকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিলেই আমার দায়িত্বের ইতি। তুরিন অনুরোধের স্বরে বলল, ‘কেওয়াতে বোন-দুলাভাইয়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে না। আপনি আমাকে ভালুকায় আমার বাড়ি পৌঁছে দিতে পারবেন?’

কারোনার কারণে স্টেশন ত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, তবুও অভয় দিয়ে বললাম, ‘হাতে হাসপাতালের ছাড়পত্র আছে। আগে তাহলে আমার ওখানে চল। পরিচিত কোনো সিএনজি চালককে যদি রাজি করাতে পারি।’

অগোছালো মানুষ আমি। বিছানাটা কোনো রকমে ঠিক করে তুরিনকে বিশ্রামের জায়গা করে দিলাম। অনেকদিন ভালো মতো গোসল হয় নি। পাশের দোকানে গিয়ে সাবান কিনে নিয়ে এসে দেখি তুরিন খাটের পায়ের দিকে আড়াআড়িভাবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

গোসল শেষ এমন সময় উত্তর দিকের ঘর থেকে বের হয়ে এসে কাশেম ট্যাপতলাতে দাঁড়াল। গলির মুখে তুরিনকে নিয়ে আমাকে ঢুকতে দেখেছিল। কাশেম ইয়াবা আসক্ত হওয়ায় এড়িয়ে চলি। কথাবার্তার ধরন ভালো না। ঘর মালিকের ভাতিজাও বন্ধু-বান্ধব সাথে নিয়ে এসে কাশেমের ঘরে নেশা করে। কুৎসিত হাসি দিয়ে বলল, ‘ভাইজানকে মেয়ে মানুষ নিয়ে ঢুকতে দেখলাম।’

কাশেমের কথা বলার ভঙ্গি দেখে ভিতরে ভিতরে রাগ হলেও শান্ত কণ্ঠে বললাম, ‘আমার আত্মীয়। হাসপাতালে ভর্তি ছিল।’

কাশেম এবারে নোংরা মন্তব্য করল, ‘সবই বুঝি, ভাই। এ কাজ আমি হরদমই করি। ফাঁকা পেয়ে মেয়ে মানুষ এনে তুলেছেন। মালটা কিন্তু খারাপ না। আপনার পছন্দের তারিফ করতে হয়।’

প্রতি উত্তর করতেও ঘৃণা হল। পাশ কেটে চলে আসছি এমন সময় পিছন থেকে ডাক দিয়ে কাশেম বলল, ‘চাইলে আপনার হয়ে গেলে আমার কথা ভাবতে পারেন। ভাগে বাজেট কম পড়বে।’

সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। রাগে কাশেমের গলার কাছে হাত নিয়ে গিয়ে শাসিয়ে দিলাম, ‘নিজের আয়নায় অন্যের মুখ দেখা? আর একটা বাজে কথা বললে টুটি ছিঁড়ে ফেলব।’

আমাদের কথা তুরিনের কান পর্যন্ত গেল কি-না বুঝতে পারলাম না। মনে মনে বললাম, যেন না যায়।

আমার ঘরে ঢোকার সাড়া পেয়ে তুরিন বলল, ‘চার্জ নেই। মোবাইলটা বন্ধ হয়ে গেছে।’

তুরিনকে ওর মাথার কাছে দেয়ালের সাথে চার্জ দেয়ার জায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে সিএনজির খোঁজে মোড়ে যাবার কথা বলে সাবধান করলাম, ‘আমি বের হলে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিবে। কেউ ডাকলে খুলবে না।’

আসার সময় বৃদ্ধ রহমত চাচাকে আমার ঘরের দিকে একটু খেয়াল রাখতে বলে এসেছি। অন্য সময় ফুটপাতে চা বিক্রি করে। ভালো মানুষ। আমার তিন ঘর পরে থাকে। মোড়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একজনকে পেলাম। ভালুকা আপ-ডাউনের কথা বলায় রাজি হল কিন্তু দেরি হবে বলে আমাকে তার মোবাইল নম্বর দিল। দুপুরে ছাড়া পারবে না।

ঘরে ফিরে দেখি, মোবাইল চার্জে না দিয়ে হাতে ধরেই তুরিন ঘুমিয়ে গেছে। সময় আছে। ভর্তা-ভাত খেয়ে রওনা দেয়া যাবে। ভাত চড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষা করছি।



কাশেম গিয়ে কি বুঝিয়েছিল আল্লাহ জানেন! হঠাৎ ঘর মালিকের ভাতিজার নেতৃত্বে কাশেমসহ কয়েকজন হুড়মুড় করে ঢুকে আমাকে টানতে টানতে দক্ষিণ গলির বাইরের ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো। আসার সময় দেখলাম, শোরগোলে তুরিনের ঘুম ভেঙে গেছে।

আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ঘর মালিকের ভাতিজা ধাক্কা দিয়ে কষে লাথি মেরে খিঁচিয়ে উঠল, ‘মেয়ে মানুষ নিয়ে এসে ফুর্তি করবি আর মানা করলেই টুটি চেপে মেরে ফেলার হুমকি দিবি? মাস্তান এসে গেছিস, তাই না? তোর এত বড় সাহস! পরিবেশ নষ্ট করিস?’

আকস্মিক লাথিতে টাল সামলাতে পারলাম না। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়ে উঠার আগেই আরেকজন কিল-ঘুষি শুরু করে দিল। আমি মার খেতে খেতে ঘর মালিকের ভাতিজার উদ্দেশে বললাম, ‘ভাই, আমি কাশেমকে সত্য কথা বলেছিলাম। মেয়েটি আমার আাত্মীয়। হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আজ সকালে ছাড়া পেয়েছে। এখনই ভালুকায় রেখে আসতে যাব। হাসপাতালের ছাড়পত্র আছে। আমার সাথে ঘরে চলুন, আমি দেখাচ্ছি।’

ঘর মালিকের ভাতিজা থামতে বললে কিল-ঘুষি বন্ধ হল। একটু দূরে গিয়ে ফোনে কোথায় যেন অনেকক্ষণ কথা বলে আমাকে বলল, ‘চল, ঘরে চল।’

ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলাম। তুরিন নেই। কাশেম বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে উঠল, ‘যা! পাখি ফুরুৎ! কি রে, তোর আত্মীয় তোকে রেখে পালিয়েছে? ভাড়া করা আত্মীয় কি-না। নিশ্চয় উত্তর দিকের পিছনের গলি দিয়ে কেটে পড়েছে। একজনের এখানে থাকা দরকার ছিল।’

খাটের উপর তুরিনের ব্যাগ দেখে ছুটে গিয়ে হাতড়াতে লাগলাম। তুরিনের হাসপাতালের সব কাগজপত্র আমি নিজ হাতে এই ব্যাগে ঢুকিয়েছিলাম। সবকিছু আছে শুধু কাগজপত্র নেই। নিমিষের মধ্যে মাথাটা শূন্য হয়ে গেল। কিছু ভাবতে পারছি না। আমার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না তা প্রমাণের আর কোনো উপায় নেই। আমি খাট থেকে উঠে দরজা পর্যন্ত এসে আর পারলাম না। ধপ করে বসে পড়ে দরজায় হেলান দিয়ে বললাম, ‘হয়ত ভয় পেয়ে চলে গেছে। আপনাদের যা ইচ্ছে করেন কিন্তু তুরিনকে খারাপ ভাববেন না।’

আমার কথা শুনে দলের একজন তুরিনকে উদ্দেশ্য করে নোংরা খিস্তি করল। আমার দিকে তাকিয়ে কাশেম বিজয়ীর ভঙ্গিতে মুচকি মুচকি হাসছে। করোনার কারণে লাখ লাখ পরিবার দুমুঠো খাবার পাচ্ছে না। তাতে এদের কিছু আসে যায় না। ঘর মালিকের ভাতিজা একজনের হাতে টাকা দিয়ে বলল, ‘তুই গিয়ে মাল নিয়ে আয়। আমরা কাশেমের ঘরে বসছি।’

কাশেমের ঘরে যাবার আগে আমাকে বলল, ‘তোকে ঘর ছাড়তে হবে। চাচাকে যা বলার আমি বলে দেব।’

ঘর মালিককে বুঝিয়ে আমার সমস্যার হয়তবা সমাধান করতে পারব কিন্তু তুরিন! তুরিনের চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। কতক্ষণ আচ্ছন্ন ছিলাম, জানিনা। কারও দৌড়ে আসার পায়ের শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেতেই দেখলাম, ঘর মালিকের ভাতিজা যাকে বাইরে পাঠিয়েছিল সেই ছেলেটি আমার ঘরের সামনে দিয়ে দৌড়ে গেল। কাশেমের ঘরের কাছে গিয়ে উচ্চ কণ্ঠে সংবাদ দিল, ‘মেয়েটি পুলিশ নিয়ে আসছে।’

আমাকে মারধোর করার কারণে না-কি মাদকাসক্ত হওয়ার জন্য পুলিশের কথা শুনে ভয় পেল, বলতে পারব না। দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, সবাই উত্তরের ট্যাপতলার পাশের গলিটি দিয়ে পালাল। উল্টোদিকে তাকাতেই চোখে পড়ল, একজন মহিলা পুলিশ অফিসারের পাশে তুরিন। পিছনে দুজন কনস্টেবল।



আমার কাছে এসেই তুরিন ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘এ ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না।’

এখান থেকে কিছুদূর গিয়ে বড় রাস্তায় উঠে যাত্রী ছাউনি পার হলেই পুলিশ বক্স। তুরিনের মাথায় পুলিশের কাছে যাবার চিন্তা আসতে পারে সেটা কল্পনাও করি নি।

পুলিশ অফিসারটি তুরিনকে দেখিয়ে দিয়ে বলল, ‘ও আমাকে হাসপাতালের কাগজপত্র দেখিয়ে সব বলেছে। তুমি ওর অনেক বড় উপকার করেছো।’

তুরিন আমাকে বিপদের মধ্যে ফেলে না দিয়ে উদ্ধারের জন্য চলে গিয়েছিল জেনে চোখ ভিজতে শুরু করল। নিজেকে সামলে নিয়ে কাতর স্বরে বললাম, ‘আপা, আমি ওকে ভালুকায় পৌঁছে দিয়ে এখানে না ফিরে গ্রামের বাড়ি গফরগাঁও চলে যাব। রাস্তায় পুলিশ আটকালে যেন আপনাদের কথা বলতে পারি দয়া করে সেই ব্যবস্থা করে দিবেন?’

আমার অনুরোধ শুনে পুলিশ অফিসারটি কনস্টেবল দুজনের উদ্দেশে বললেন, ‘আপনারা দুজনকে থানায় নিয়ে আসেন। স্টেশন ত্যাগের ব্যাপার। আমি গিয়ে ওসি স্যারকে ওদের দুই থানায় কথা বলতে বলি।’

আমাদের দুজনের নাম, ঠিকানা নিয়ে পুলিশ অফিসারটি চলে গেলে যত দ্রুত সম্ভব ব্যাগপত্র গোছাতে শুরু করলাম। বয়স্ক কনস্টেবলটি রসিকতা করে আমার কানে কানে বললেন, ‘করোনার কারণে নিষেধ তাতে কি! মনে অন্যকিছু নেই তো? আপাতত দুজন স্বাক্ষী আর একটি মৌলভী হলেই চলবে। আমরা জেনেও জানব না।’

কিছুক্ষণ আগে মার খেয়েছি। তবুও কথা শুনে না হেসে পারলাম না। আমাদের দুজনের জীবনের রাস্তা দুদিকে। তুরিনের সাথে আজকের পর আবার কবে দেখা হবে সেটাই জানি না!

করোনা ভাইরাস সমস্যা শুরু হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা যে অনেক মানবিক হয়ে উঠেছে তা থানায় পৌঁছে আবারও টের পেলাম। আমরা পৌঁছানোর আগেই সিএনজির ব্যবস্থা পর্যন্ত করে রেখেছেন।

সিএনজিতে উঠার সময় আমাদেরকে বারবার সাবধান করে দেয়া হল, আমরা যেন বাড়ি গিয়ে চৌদ্দ দিনের কোয়ারেন্টাইন মেনে চলি।

ভালুকা বাস স্ট্যান্ডের পাঁচ-ছয় কিলেমিটার আগে তুরিন বামের ফাঁকা মাঠটি দেখিয়ে বলল, ‘চলে এসেছি। ড্রাইভারকে থামতে বলেন। মাঠের ভিতর দিয়ে হেঁটে গেলে বাড়ি কাছে হয়। আপনাকে সাথে নিলে লোকে প্রশ্ন করতে পারে।’

ড্রাইভার সিএনজি থামালে আকস্মিক তুরিন আমার বাম হাত আঁকড়ে ধরল। মনে হল, আমাকে কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না। আমি জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলাম না। হয়তবা আমি যা ভাবছি সেটা ভুল। আমি তুরিনের হাতের উপর সাহস করে আমার ডান হাত রাখতে পারলাম না। তুরিনকে স্মরণ করিয়ে দিতে বললাম, ‘চৌদ্দ দিন ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না সেটা মনে আছে? গার্মেন্টস খুললে আবার দেখা হবে।’

আমার কথা শেষ হতে না হতেই তুরিনের আঙুলগুলি ঢিলা হয়ে গেল। তুরিনের সাথে সাথে আমিও নামলাম। অন্য সময় এ জায়গায় কত লোকের ভীড় থাকে! করোনার কারণে লোক নেই বললেই চলে। ফাঁকা।

তুরিন মলিন মুখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে বিদায় নিয়ে মাঠের রাস্তা ধরল। সিএনজি ড্রাইভার নেমে বলল, ‘আপনি একটু অপেক্ষা করেন, আমি রাস্তার ওপাশ থেকে হালকা হয়ে আসি।’

তুরিন যতই দূরে চলে যাচ্ছে আমার অন্তর ততবেশি হাহাকার করছে। টের পেলাম, তুরিনের সান্নিধ্যে আমার বুকটা ভরা ছিল। নিঃশ্বাস ভারি ঠেকছে। বুঝতে পারছি, ক্ষণিকের মোহ নয়। ভিতরটা দুমড়ে যেতে লাগল।



আমার জীবনও দুধে ধোয়া না। দাগ আছে। আমার সাথে সান্নিধ্যের আগে তুরিনের জীবনে ঘটে যাওয়া ভুলকে বাধা ভেবে নিজের মনকে ফাঁকি দিতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে, গত সাত দিনে একটু একটু করে আমার নিয়তি লেখা হয়ে গেছে। জানি, মা আমার সিদ্ধান্তে অমত করবে না।

পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল বের করতে গিয়ে মনে পড়ল, তুরিনের মোবাইল বন্ধ। আমি উর্ধশ্বাসে দৌড় লাগালাম।

কয়েক ধাপ গেলেই তুরিন সামনের বিল্ডিংয়ের আড়ালে চলে যাবে। দাঁড়িয়ে পড়ে বুকের সবটুকু মমতা দিয়ে দীর্ঘ স্বরে চিৎকার দিলাম, ‘তুরিন।’



শরীফ উদ্দীন
সহকারি অধ্যাপক, অর্থনীতি, অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়, রাজশাহী।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top