সিডনী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

অহনার কিচেন : সোহানা স্বাতী


প্রকাশিত:
৩০ নভেম্বর ২০২০ ২০:৪১

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ১১:২২

ছবিঃ সোহানা স্বাতী

 

খুব দ্বিধা নিয়ে নম্বরটা ডায়াল করলাম। এমনিতেই অফিস টাইমে কাউকে ফোন করতে ভীষণ খারাপ লাগে তারপর আবার নিজের অপারগতার কথা বলতে হবে। পাহাড়ের মত ভারী লাগছে, খুব সংকোচ লাগছে মিলাকে ফেস করতে। মিলা নিজ থেকেই অর্ডারটা জোগাড় করে দিয়েছিল আমার জন্য। রিং হওয়ার সাথে সাথেই ব্যস্ত কন্ঠে মিলা জানায় খুব জরুরী একটা কাজের মধ্যে আছে, একটু পর সে কল ব্যাক করবে।আমারও যে খুব জরুরী কথা বলা দরকার এবং যত তাড়াতাড়ি বলব ততই ভালো। কারণ ওদেরকে তো বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে উদ্ভ্রান্তের মত বসে আছি, ফিরতি কলের অপেক্ষায়। নিজেকে এতো ছোট লাগেনি কখনো। কী ভাবে যে বলব কথাটা ওকে।

 

নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে হঠাৎ রিং হতেই চমকে উঠলাম আমি, অন্যমনস্ক থাকায় মোবাইলটা হাত থেকে পড়েই যাচ্ছিল প্রায়, কোন মতে সামলে নিয়ে বললাম,

- হ্যালো ...

- বল কী অবস্থ? সব রেডি তো? ফিস কাটলেটগুলো গোল করবি না যেন, লম্বাটে সেপ দিবি। কচুরিগুলো হবে গোল, মুখটা পুটলির মত হবে।সব মনে আছে তো ...

সব মনে আছে। সব ইন্সট্রাকশন আমি লিখে নিয়েছিলাম, ৫০ পিস করে দুটো আইটেমের ১০০ পিস এর অর্ডার। জীবনের প্রথম অর্ডার কত আনন্দ নিয়ে করার কথা ছিল আমার। আমি যেন কিছুই বলতে পারছি না মিলাকে। মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার মুখটাতে স্কচটেপ লাগিয়ে দিয়েছে। অনেক কষ্টে শুধু বললাম,

- কবীর চাচ্ছে না আমি কাজটা করি।

- মানে কী ? তুই কথা বলে নিসনি আগে।অফিসে আমি অনেক জোর দিয়ে বলেছিলাম তুই বেটার কিছু দিবি আমাদেরকে। এবারের ট্রেনিং প্রোগ্রামে তোর কাজটাকে আমি শো করতে চেয়েছিলাম। ওহ ! এখন তো দেখছি আমাকেই উল্টো সব ঝামেলা পোহাতে হবে। আসলে না, তোদের মত ননপ্রফেশনালদের নিয়ে এই এক সমস্যা। তুই অবশ্য বুঝবি না এসব।অফিসের সমস্যাগুলো তোকে বোঝানো সম্ভব না। যাই হোক, এরপর কারও সাথে কথা বলার আগে স্বামীর অনুমতি নিয়ে নিস।

চুপ করে মিলার কথাগুলো শুনে গেলাম আমি। আওয়াজটা বড্ড কানে লাগছিল।কথার মাঝে একবার চেক করে নিলাম লাউড স্পিকার কি অন করা ! নাহ , সব ঠিকই আছে। মিলার তো রাগ করারই কথা। আমার জন্য সে তাদের ট্রেনিং প্রোগ্রামের বিকেলের স্ন্যাক্স এর অর্ডারটা জোগাড় করেছিল। মিলা লাইন কেটে দিতেই যেন নিস্তব্ধতা নেমে এলো ঘর জুড়ে, নিজের নিঃশ্বাসের শব্দটাও যেন শুনতে পাচ্ছি আমি। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ছোট বেলার মত। শখের কোন জিনিস অথবা কোন খেলনা ভেঙ্গে গেলে যেমন করে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতাম।

আমার মন খারাপে সঙ্গ দেয় বাসার চারটা দেয়াল। যখন একা থাকি বাসাটা আরও বড় লাগে। কবীর যখন বাসায় থাকে তখন অবশ্য এমনটা লাগে না যদিও তার সাথে আমার ততোটা বন্ধুত্ব না। আমার চেয়ে বয়সে বেশ খানিকটা বড় হওয়ায় তার মাঝে একটা অভিভাবকসুলভ ভাব আছে। আমাকে যেন একটু বেশি ছোট ভাবে সে।আমার ব্যক্তিত্ব, আমার ইচ্ছে অনিচ্ছে যেন থমকে যায় তার সামনে গেলে।একসাথে থাকলেও মনখুলে কথা বলতে পারিনা। সে বলে আমি শুনি অথবা আমি বলে যাই সে নীরবে শোনে। একসাথে কথার পিঠে কথায় মুখরিত হয়নি কখনো আমাদের অবসর।প্রয়োজনের কথাগুলো বলে যাই দুজন, বাকি সময় নীরবতা। গতকাল রাতে বলেছিলাম, মিলার কর্পোরেট হাউজের স্ন্যাক্স বানিয়ে দেবার কথাটা।গম্ভীর মুখে কবীর জানায়,

- তুমি বন্ধুদের জন্মদিনে কেক বানিয়ে বাসায় পাঠাও এতে আমি কোনদিন আপত্তি করিনি কিন্তু এটাকে প্রফেশোনালি নেওয়াটা আমার পছন্দ না। রান্না-বান্না একটা আর্ট আমি মানি। আমি চাই এটাকে তুমি হবি হিসেবেই নাও, নট অ্যা প্রফেশন।

- এখন তো অনেকেই করছে ঘরে বসে।

- অনেকের সাথে তুলনা নেই । প্রতিটা মানুষ তার আলাদা জীবন যাপন করে।

এরপর আর কথা চলে না। আমি জানি লাভ নেই কথা বলে। তার কথাই শেষ কথা।

খুব সন্তর্পণে দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে একসময় ঘুমিয়ে যাই।

সকালে প্রতিদিনের মত তার জন্য নাস্তা বানাই, যত্ন করে লাঞ্চবক্স গোছাই। তার পরার জন্য কাপড় রেডি রাখি বিছানায়। রুটিন মাফিক সে চলে যায় অফিসে। একাকীত্বকে সাথী করে আমি মন দেই ঘরে, সংসারে। আমার সার্টিফিকেটগুলো দমবন্ধ হয়ে পড়ে থাকে আলমারিতে, আমি শ্বাস নেই বদ্ধ ঘরের মুক্ত বাতাসে। বন্ধুরা ব্যস্ত থাকে চাকরি-বাকরি নিয়ে। সময় বের করতে পারলে মাঝে মাঝে গেট টুগেদারে ডাকে, সবার সাথে দেখা হয় ঠিকই কিন্তু আমার ভালো লাগে না তেমন।কেমন জানি একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ফিল করি। সব চেয়ে খারাপ লাগে যখন কাউকে কিছু উপহার দিতে চাই । টাকার সমস্যা নেই, কবীর বহুজাতিক কোম্পানিতে উচ্চপদে কাজ করে। কোন অভাব নেই আমার কিন্তু কবীরকে যখন কোন বিশেষ দিনে ভালো কোন উপহার দিতে চাই, কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা কাজ করে। মনে হয় নিজের টাকায় হলে আনন্দটা যেন পরিপূর্ণ হত।

এমন হাজারো মন খারাপে চোখ ঝাপসা হওয়া সামলে নিয়ে আমি আবার নিজের মত দিন যাপন শুরু করি। মিলার সাথে কথা হয়নি আর। অন্য বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ কম, কবীরও ভীষণ ব্যস্ত।বিভিন্ন দেশ থেকে ওদের টিম এসেছে , মিটিং-কনফারেন্স চলছে দিনভর, ফিরছে দেরি করে ।প্রায়দিন ডিনার থাকছে অফিসে। একা একা খেতে হবে জন্য তেমন কিছু রান্না করিনা। অথচ কবীরের জন্য আমি খুব মন দিয়ে রান্না করি। প্রতিদিন রান্নার সময় সেই অনুভূতিটা কাজ করে যেদিন প্রথম রান্না করেছিলাম ওর জন্য বিয়ের পর। এখনও তেমন মনোযোগ দিয়েই করি।সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করি, সামান্য আলু ভর্তা হলেও সেটার প্রেজেন্টেশন থাকে ব্যতিক্রমী।হয়ত বা আলু ম্যাস করে একটা সুন্দর সেপ দেই, আজও দিয়েছিলাম । আলু দিয়ে একটা হার্ট বানিয়েছিলাম, সেটাতে লাল মরিচ দিয়ে সাজিয়েছিলাম সুন্দর করে।

অনেক রাতে ফিরল সে। ফ্রেস হয়েই চলছে ফোনে দরকারি কথাবার্তা। আজ তাদের ইভেন্ট শেষ হল। কাল বাইরের সব গেস্ট ফেরত যাবে দুপুরের পরে। ওর ফোনের টুকরো টুকরো কথা কানে আসছিল আমার।ওদের প্রোগ্রাম খুব সাক্সেসফুল হয়েছে। সে বার বার ফোন করছে বিভিন্ন জায়গায়। মনে হয় কোন একটা প্রডাক্ট ডিমান্ড করেছিল কিন্তু সেটা হাতে পায়নি এখনও। আমি খাওয়া সেরে, সিঙ্কে প্লেট ধুয়ে, ফ্রিজে বাকি খাবার তুলে, টেবিলটা মুছে ঘরে এলাম, তখনও কথা চলছে। রাতের প্রাত্যহিক প্রসাধন সেরে শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কবীর ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে ' সামান্য একটা আচার সেটা জোগাড় করতে পারলে না। এখন তো অনলাইন শপিং এ কত রেয়ার খাবার নাকি ঘরের দরজায় এসে হাজির হয়। তবুও একটা আচার জোগাড় করতে পারলে না।'

ওপার থেকে হয়ত কিছু বলেছে 'সময় সাপেক্ষ' এমন কিছু একটা ...

কবীর আবারও রেগে বলল, 'এতো সময় কোথায় পাবো ? আমার গেস্ট কি বসে থাকবে ?'

এক সময় ফোন পর্ব শেষ হল। আমি শুয়ে পড়েছি ততক্ষণে, সে অভ্যেস বসত আমার দিকে সরে আসল, জড়িয়ে ধরে ঘুমানো তার রোজকার অভ্যেস। ক্লান্তি জড়ানো কণ্ঠে বলল, 'কাল সকালে ডেকে দিও, কাল অফিসে বেশ কিছু ঝামেলা আছে তারপর ওদেরকে আবার সি অফ করতে যেতে হবে এয়ারপোর্টে। সব কিছুই ঠিকঠাক হল শুধু ফিনিসিংটায় একটা আক্ষেপ থাকল।'

তারপর নিজে থেকেই যা বলল তার সারমর্ম হল, ওদের মাদার কোম্পানির কর্মকর্তা অরুন্ধতী চৌহান ভারতীয়। তাদের আদি বাড়ি ছিল এ দেশে, বিক্রমপুরে।অরুন্ধতীর ঠাকুমা এ দেশের মেয়ে, পরে পশ্চিমবঙ্গে ওরা চলে যায় পাকাপাকিভাবে। ঠাকুমা এখনও বেঁচে আছেন, ফেলে যাওয়া দেশকে খুব মিস করেন। একটা আচারের কথা বলেছেন ভদ্রমহিলা। অরুন্ধতী বলেছে অফিসকে, যদি সম্ভব হয় জোগাড় করে দিতে। এ কদিনে অরুন্ধতী কবীরকে সাথে নিয়ে এখানকার বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করেছে । ঢাকাই জামদানি, বাখরখানি কিন্তু এটা পাওয়া যায়নি কোথাও। অফিসের মেয়ে কলিগ যারা আছে, তারাও খোঁজ করেছে অনলাইনে, ই-কমার্সের বিকিকিনির পেইজগুলোতে। যারা আচার নিয়ে কাজ করে তারা বলেছে, করে দেওয়া যাবে তবে সময় লাগবে। এগুলো সৌখিন আচার, বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি করা হয়না তেমন।

খুব নির্লিপ্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলাম,

- কিসের আচার ?

- মরিচের আচার।

- মরিচের আচার তো পাওয়া যায়।

আরে সেসব কাঁচামরিচের আচার।এটা শুকনামরিচের, ভেতরে নাকি আমচুর দেওয়া। কি জানি, এসব তো কখনো খেয়াল করিনি। এখন দেখি এটাই অনেক বড় ফ্যাক্টর হয়ে গেল। আচার জোগাড় করা বড় কথা না, আসল কথা হল কাজটা ইনকমপ্লিট হয়ে থাকল। ইম্প্রেশনটা নড়বড়ে হয়ে গেল। সিলেটেও খোঁজ করতে বলেছিলাম। সেখানকার অফিসার খোঁজ করে জানিয়েছে, নিকোবিনার একটা আচার আছে তবে সেটাও শুকনামরিচের না, লাল কাঁচামরিচের আচার।

আমি বুঝতে পারছিলাম কবীরের গলা ধীরে ধীরে ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে। ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমানো আমার অভ্যেস। আমার কোমরের ভাঁজে হাত রেখে ঘুমিয়ে গেল সে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। আমার পিঠ ওর বুক স্পর্শ করে আছে। ঠিক এভাবেই সে আমাকে আগলে রাখে, বুক দিয়ে। তার বুকের ওমে আমিও ঘুমানোর চেষ্টা করছি। জানালার পর্দাটা একটু সরে গেছে, পর্দার ফাঁক দিয়ে দক্ষিণ আকাশে শরতের রূপসী চাঁদ ছড়াচ্ছে তার রূপের ছটা। না চাইলেও সেদিকে চোখ যায় বার বার।

একটু আগে কবীর যে আচারের কথা বলল, এটা এক বিশেষ ধরনের আচার। বড় সাইজের শুকনা মরিচ লাগে, বগুড়ার মরিচ হলে ভালো হয়।খুব ভালো করে শুকিয়ে নিতে হয়, যেন ঝাঁকা দিলে বিচিগুলি ঝনঝন করে বাজে। এক মাপের মরিচ বেছে নিতে হয়, মরিচের বোঁটাটা খুলে, মুখে কাঠি ঢুুকিয়ে বিচিগুলি খুব সাবধানে বের করে নিতে হয়।তখন শুধু মরিচের খোলসটা থাকে ভেতরে আর কিছু থাকে না। আমচুর গুঁড়ো করে সাথে তেঁতুল এবং রকমারি মসলা দিয়ে পুর বানিয়ে নিয়ে সেটা মরিচের খোলসে ঢুকাতে হয় কাঠি দিয়ে অতি সাবধানে।কোন মরিচের খোলস ছিঁড়ে গেলে ওটা বাতিল।এমনিভাবে একটা একটা করে সব মরিচে আচারের পুর ঢুকিয়ে তারপর কাঁচের বয়ামে তুলে খাঁটি সরিষার তেলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর বয়ামের মুখ খোলা যাবে না বেশ কয়েক মাস। তেলে যত ডুবে থাকবে তত মজে যাবে। আমার দাদী নিয়ম করে এটা তৈরি করত আমাদের বাড়িতে। তিন মাস মুখ বন্ধ রাখত বয়ামের, কাঁচের বয়ামে লাল লাল মরিচগুলো তেল চুষে টসটসে হয়ে থাকত।বর্ষার দিনে খিচুড়ির সাথে পাতে পড়ত একটা করে তেল চকচকে লাল মরিচ । মরিচে চাপ দিতেই বেরিয়ে আসত ভেতরের আচার ! আহ কী স্বাদ ! মনে হলেই জিভে জল আসে। দাদীর মত করেই দু'তিন মাস আগে বানিয়েছি, কিন্তু মুখটা খোলা হয়নি, জানিনা স্বাদ দাদীর মত হয়েছে কিনা।

ভোরে ঘড়ির অ্যালার্ম ডেকে দিল আমাকে, বয়ামটা খুব ভালো করে প্যাক করে লাঞ্চবক্সের সাথে দিয়ে দিলাম।প্রতিদিনের মতই ব্যস্ততায় মোবাইল কানে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে, আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় দিলাম।মনে মনে একটা চিন্তা রয়েই গেল, ওকে তো কিছু বলে দিলাম না, ও দেখবে তো সময়মত। ফরেন টিমকে সি অফই বা কখন করবে। তার আগে তো আচারের বয়ামটা দেখা দরকার। তাহলে কি ফোনে বলে দিব , নাহ থাক।

ডুবে গেলাম প্রতিদিনের কাজের মাঝে, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে, সন্ধ্যে শেষে রাত। অন্যদিনের মত আজ কোন ফোন করে খবর নিল না সে। অনেক দেরীতেই ফিরল, ক্লান্ত-অবসন্ন রোজকার মত। ফ্রেস হওয়ার পর সামান্য লেবু চা সামনে এগিয়ে দিতেই বলল, 'এখন আর চা খাবো না, একবারে ডিনার রেডি কর।' গম্ভীর মুখে খাওয়া শেষ করে যখন শুতে এলাম, কবীর তখন বারান্দায়। সিগেরেট হাতে মোবাইলে কথা বলছে, কোন অফিসারকে হয়ত আগামী কালের ওয়ার্ক প্ল্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে।টানটান সাদা বিছানায় কিছু একটা রাখা, ছো্ট একটা প্যাকেট। এমন উপহার আমি পাই মাঝে মাঝে কিন্তু আজ তো কোন স্পেশাল ডে না। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দেখছিলাম আমি এর মাঝেই কবীর রুমে ঢুকল ...

- কী হল? খোল প্যাকেটটা।

আমি উৎসাহ চেপে রাখার চেষ্টা করলাম খুব যত্ন করে, গম্ভীর হাতে খুললাম প্যাকেটটা। বেরিয়ে এল একটা খাম।সেখানে দুটো প্রাইজ বন্ড, সাথে একটা থ্যাঙ্কস গিভিং কার্ড। কবীর হাসি মুখে বলল,

- আমাদের কোম্পানি তোমার কাজকে সম্মান করেছে।

- এমা তা কেন ? এটা তো আমি উপহার দিয়েছি ...

- তোমার কাছে এটা উপহার কিন্তু কোম্পানির কাছে এটা একটা গুড সেলস। আর এটা আমার তরফ থেকে ।

- কী এটা ?

- খুলে দেখো ...

প্যাকটা খুলতেই মুগ্ধ হলাম আমি। কী সুন্দর একটা কিচেন অ্যাপ্রন, স্কাই-ব্লু কালার, বুকে এমব্রয়ডারি করা দারুণ এক লোগো "অহনার কিচেন"...

- এমা এসব কীভাবে !

- নিউমার্কেট থেকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করিয়ে এনেছি। এজন্য দেরি হল আসতে। ভালো কথা, কাল বিকেলে কফি খেতে যাচ্ছি আমরা এবং কফিটা খাওয়াবে তুমি।কাজ কিন্তু শুরু হয়ে গেল তোমার ... সেলস এর প্রধান শর্তই হল কাস্টমারকে সাটিস্ফাই করা। তুমি তা পেরেছ।ভালো সেলস করতে হলে চাই ডেডিকেসন, অবশ্য সেটা তোমার আছে।

আজও ঘুম উধাও চোখ থেকে, সামনে কত কাজ , কত স্বপ্ন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন, পারব তো ? গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কবীরের নিঃশ্বাস পড়ছে আমার পিঠে। আজ ইচ্ছে করেই জানালার পর্দা খানিকটা সরিয়ে দিয়েছি। আজকের চাঁদ যেন আরও বেশি রূপবতী। শরতের চাঁদের আলোয় যেন ভেসে যাচ্ছে ঘরটা। আজ কেন জানি বাম কাতে ঘুমোতে ইচ্ছে করছে আমার।

সমাপ্ত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top