সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

দ্যা প্রফেট (দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ) : কাহলীল জীবরান


প্রকাশিত:
২ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:২৫

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:২৭

ছবিঃ কাহলীল জীবরান এবং অনুবাদক রোজীনা পারভীন বনানী 

 

মূল: কাহলীল জীবরান 
অনুবাদ: রোজীনা পারভীন বনানী 

 

পর্ব দুইঃ
তারপর আলমিট্রা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, প্রভু, বিবাহ কি?

তিনি উত্তরে বললেন: তোমারা দুজন একসংগে জন্মেছ এবং সর্বদা একসংগে থাকবে। যখন মৃত্যুর সাদা ডানা তোমাদের দিনগুলোকে বিচ্ছিন্ন করবে তখনও তোমরা একসংগে থাকবে। হ্যাঁ, এমনকি ঈশ্বরের নিঃশব্দ স্বরণেও তোমরা একসংগে থাকবে। কিন্তু তোমাদের একাত্মতার মাঝখানে কিছু শূণ্যতা থাকতে দাও। এবং স্বর্গীয় বাতাস তোমাদের এই শূণ্যতার মাঝে খেলা করবে। একে অপরকে ভালোবাসবে কিন্তু, কিন্তু ভালোবাসায় কোন বাধ্যবাধকতা তৈরি করবে না। বরং ভালোবাসা সাগরের মতো তোমাদের হৃদয়ের তীর ছুঁয়ে প্রবাহিত হবে। একে অন্যের পেয়ালা পূর্ণ করে দিও কিন্তু একই পেয়ালা থেকে পান করো না। তোমাদের রুটি একে অন্যকে দিও কিন্তু একই টুকরা থেকে খেয়ো না। এক সংগে নাচবে, গাইবে এবং আনন্দিত হবে, কিন্তু পরস্পরকে একা থাকতে দিও; যেমন বীণার প্রত্যেকটি তার একা, যদিও এক সুরে তারা সমতালে কম্পিত হয়।

তোমাদের হৃদয় দাও, কিন্তু পরস্পরের অভ্যন্তরে রাখার জন্য নয়। শুধুমাত্র জীবনের হাত তোমাদের হৃদয়কে ধারণ করতে পারে এবং দুজনে একসংগে দাঁড়াও তথাপি পরস্পরের খুব কাছাকাছি নয়, যেমন মন্দিরের স্তম্ভগুলো আলাদাভাবে দণ্ডায়মান এবং বিশাল ওক এবং সাইপ্রেস বৃক্ষ পরস্পরের ছায়ায় জন্মায় না।

 

পর্ব তিনঃ

এই সময় একজন স্ত্রীলোক যিনি একজন শিশুকে বক্ষে ধারণ করে ছিলেন, বললেন, আমাদের বংশধর সম্বন্ধে বলুন।

তিনি বললেন: তোমাদের সন্তান তোমাদের নয়। তারা জীবনের নিজস্ব আকাঙ্খার পুত্র এবং কন্যা। তারা তোমাদের মাধ্যমে এসেছে কিন্তু তোমাদের থেকে নয় এবং যদিও তারা তোমাদের সাথে আছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোমাদের সাথে বাস করবে না ।

তোমরা তোমাদের ভালবাসা তাদেরকে দিতে পার কিন্তু তোমাদের চিন্তা নয়, তাদের নিজস্ব চিন্তা আছে ।

তোমরা তাদের দেহকে আচ্ছাদিত করতে পার কিন্তু তাদের আত্মাকে নয়, তাদের আত্মা বাস করে আগামীকালের বাড়িতে, যা তোমরা কখনও পরিদর্শন করতে পারবে না, এমনকি তোমাদের স্বপ্নেও নয় ।

হয়তবা প্রবল প্রচেষ্টায় তোমরা তোমাদের সন্তানদের মত হতে পারবে কিন্তু কখনও তাদেরকে তোমাদের মত করে তেরী করার পথ খুঁজো না। কারন জীবন কখনও গতকালের সাথে অবস্থান করার জন্য পিছন পানে ধেয়ে যায় না। তোমরা সেই ধনুক যা থেকে তোমাদের সন্তানরা জীবন্ত তীরের মত সন্মুখ বরাবর নিক্ষিপ্ত হয়।

 

অসীম পথের উপর তীরন্দাজ তার চিহ্ন দেখতে এবং তার প্রবল ইচ্ছার কাছে তোমাকে নত করে, যাতে তার তীর দ্রুত সুদূরে পৌঁছাতে পারে। তোমরা আনন্দের সাথে তীরন্দাজের কাছে বশ্যতা স্বীকার কর, একই সময়ে তীরন্দাজ নিক্ষিপ্ত তীরকে যেমন ভালোবাসে, তেমনিভাবে দৃঢ়বদ্ধ ধনুককেও।।

 

পর্ব চারঃ

তারপর একজন ধনী ব্যক্তি বললেন, আমাদের দান করা সম্পর্কে বলুন।

তিনি উত্তর দিলেন: যখন তুমি তোমার যা আধিকারে আছে তার থেকে দিবে তখন সামান্য পরিমাণে দাও।

যখন নিজেকে দিবে তখন সত্যিকার ভাবে দাও। যা তুমি ভয়ে এবং চিন্তায় আগামীকালের প্রোয়োজনের জন্য রেখে দাও তাই কি তোমার অধিকার নয়?

এবং আগামীকাল, সেই অতি সতর্ক কুকুরের জন্য কি বয়ে আনবে যে পবিত্র শহর অভিমুখে যাত্রাকারী তীর্থযাত্রীদের অনুসরণ করতে করতে পথচিহ্নহীন বালিতে হাড় লুকিয়ে রাখে?

এবং প্রয়োজনের ভয় কি প্রয়োজন নিজেই নয়? সম্পদ যখন পরিপূর্ণ হয়ে যায়, তখন যে পিপাসা কখনও পরিতৃপ্ত হয় না, সেই পিপাসার জন্যই কি তোমার ভয় নেই?

এমন লোকও আছে যাদের আছে প্রচুর কিন্তু দান করে স্বল্প এবং যা দেয় তা স্বীকৃতির জন্য এবং এই গোপন আকাঙ্ক্ষা তাদের উপহারকে অস্বস্তিকর করে তোলে।

 

এমন লোকও আছে যাদের আছে অল্প এবং দেওয়ার সময় সম্পূর্ণই দেয়। তারা জীবন এবং জীবনের উদারতায় বিশ্বাসী এবং এদের সিন্দুক কখন ও শূন্য হয় না।

এমন লোকও আছে যারা আনন্দের সাথে দান করে এবং সেই আনন্দই তাদের পুরস্কার।

এমন লোকও আছে যারা অতিকষ্টে দান করে এবং সেই কষ্টই তাদের শরীরে জলসিঞ্চনের মত।

এমন লোকও আছে যারা দান করে এবং জানে দানের ভিতর কোন কষ্ট নেই, না তারা কোন আনন্দ খোঁজে, না ভবিষ্যতের জন্য মনোযোগী হয়ে দান করে।

ওই অদূরবর্তী উপত্যকার চিরসবুজ গুল্ম তার পুষ্পের দ্বারা যেমন নিঃশ্বাসের সাথে বাতাসে সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয় তাদের দানও তেমনি। স্বয়ং ইশ্বর তাদের হাতের মাধ্যমে কথা বলে এবং তাদের চোখ দিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে হাসে।

কেউ চাইলে দান করা ভাল, কিন্তু আরো ভাল না চাইতেই দান করা, শুধু বোঝাবুঝির মাধ্যমে; এবং মুক্ত হস্তে তাকে অনুসন্ধান কর যে কিছু দেওয়ার চেয়ে গ্রহণ করে বেশি আনন্দিত হয়।

এবং সেখানে তুমিও কি সামাণ্য কিছু দিতে অরাজী হবে? একদিন তোমাকে সমস্ত কিছুই দিয়ে দিতে হবে। 

সুতরাং এখনই সমর্পণের সময়, সমর্পিত ঋতু তোমারই, তোমার বংশধরদের নয়।

 

 

তোমরা মাঝেমাঝে বল, “আমি দান করতে পারি, কিন্তু একমাত্র যোগ্য লোককেই”।

তোমাদের বাগানের ফলবান বৃক্ষ অথবা চারণভূমির পশুরা সে কথা বলে না। তারা দান করে বেঁচে থাকার জন্য, ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। প্রকৃতপক্ষে সেই দান করার উপযোগী যে তার দিনকে যথার্থ বলে স্বীকার করে এবং যার রাত তোমার সব কিছু থেকে মূল্যবান।

এবং যে তোমার ছোট্ট ঝর্ণা থেকে তার পেয়ালা পূর্ণ করছে, সে জীবন সমুদ্র থেকেও পান করার যোগ্য ।

সেখানে কোন পুরস্কার অধিক যোগ্য, যা সাহস এবং আত্মবিশ্বাসের মাঝে অবস্থান করে তাই, নাকি বদান্যতা, গ্রহন করার জন্য?

তুমিই কি সেই সমস্ত মানুষদের বক্ষ বিদীর্ণ করে তাদের গর্বকে প্রকাশ করছ, যাতে তুমি তাদের মূল্যকে নগ্ন এবং গর্বকে অলজ্জিত দেখতে পার?

প্রথমে নিজেকে দেখ দাতা হিসেবে তুমি যোগ্য কিনা, এবং সমর্পণের যন্ত্র হিসেবেও ।

সত্যিকার ভাবে এই জীবন যা জীবনের জন্য দেয়, তুমি যে নিজেকে একজন দাতা মনে কর, আসলে এর সাক্ষী ছাড়া কিছুই নও?

তুমি গ্রহণকারী—এবং তোমরা সকল গ্রহণকারী—কৃতজ্ঞতা দেখিয়ো না, তাহলে তুমি তোমার নিজের কাঁধে এবং যে দান করে তার কাঁধে যেন জোয়াল চাপিয়ে দিলে! বরং দাতার সাংগে একসাথে তার উপহারের ডানায় ভর করে সমৃদ্ধ হও; কারন ঋণের প্রতি অতি মনোযোগী হওয়া মানে তার মহত্ত্বে সংশয় দেখানো, যার মা মুক্ত হৃদয়ের পৃথিবী, এবং পিতা স্বয়ং ঈশ্বর।।

চলবে

 

রোজীনা পারভীন বনানী 
ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top