সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

নীলাঞ্জনার নীল নয়নে : শাহান আরা জাকির পারুল 


প্রকাশিত:
১৩ মে ২০২১ ০০:১৫

আপডেট:
১৩ মে ২০২১ ০৬:৪৮

ছবিঃ শাহান আরা জাকির পারুল 

 

জীবজগতের কারো কাছেই সুখকর নয় বন্দী জীবন! জীবনটা যত ছোটই হোক, পৃথিবীটা অনেক বড়! কত কোটি কোটি বছর পৃথিবী থাকবে, কিন্তু আমরা থাকবো না! ভাবতেই কেমন গা'টা ছমছম করে শিউরে ওঠে নীলাঞ্জনার!

নীলাঞ্জনা!

জন্মের পর নাকি খুব শখ করে বাবা এই নামটি তার রেখেছিলেন! নীল রঙের প্রতি বাবার দারুন দুর্বলতা ছিল মায়ের মুখে শুনেছে নীলাঞ্জনা! তারপর আবার নীলাঞ্জনার চোখ দুটিও অদ্ভুত সুন্দর নীল নীল আভায় রাঙানো!

আদর করে একটু কেটেছেঁটে অঞ্জনা বলেও ডাকে কেউ কেউ! বাবা, মা, দাদিমা, নানিমা আর কাছের মানুষটিও অঞ্জনা বলেই ডাকতেন!

ভালোবাসার এই মানুষগুলো কেউই নেই আজ এই পৃথিবীতে! কষ্ট গুলো চেপে চেপে মরে যাওয়া বৈরী মনটাতে শুধু বিভ্রান্তিগুলো যেন দানা বেঁধে বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন!

এ সময়টায় কেমন যেন বিদ্ধস্ত অবস্থা চলছে সবার মনের গভীরে ! মানুষের সমস্ত স্বপ্নগুলো ভেঙে চুড়ে চুড়মার করে চলেছে পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়া কি এক করোনা মহামারীর তান্ডব! বন্দি ঘরে শুধু দুঃস্বপ্নগুলো আরশোলার মতো তিড়িং বিড়িং লুটোপুটি খায় দিনরাত!

এইতো একসময় আমাদের জীবন ছিল কত স্বাভাবিক, সবার সাথে সপ্তাহে একবার হলেও দেখা হতো, গল্প আড্ডা, সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব সবার মাঝেই ছিল! 

এখন করোনা কালিন সময়ে কেউ কাউকে দেখা তো দূরের কথা, ফোনে কথাও হয় না, সবাই নিজের পরিবার নিয়ে সুবিধা অসুবিধার মধ্য হাসপাতালে, বাসায়, যার যার মত জীবন যাপন করছে, কারও পাশে কেউ দাঁড়াতে পারছে না। কাছে যাওয়া, ধরা নিষেধ।

আমরা হয়ত আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারব না। প্রকৃতিও আমাদের সেই সুযোগ হয়তো দেবে না! অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মরে যাচ্ছে অথচ গাছ বিহীন শহর হতে চলেছে, দুদিন আগেই পেপারে দেখলাম, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কেটে হোটেল বানানোর পায়তারা চলছে। তবে কি আমরা অসামাজিক জীবে পরিণত হতে চলেছি!

রাত পোহালেই ঈদ!

ঈদ মানেই আনন্দ! অথচ কোথায় সেই আনন্দ !

কাছে কেউ থাকুক আর নাইবা থাকুক, ঈদ শব্দটাই যেন মনটাকে নাড়া দেয় নানা ভাবে!

কত স্মৃতিই না এসে ভর করে এ সময় নীলাঞ্জনার মনে! সুন্দর একটা আগামীর জন্য সেইসব মন খারাপকে, মরে যাওয়া মনকে, বিষণ্ণ ভারাক্রান্ত হৃদয়কে, বিষিয়ে যাওয়া ক্ষোভ কিংবা যন্ত্রণাকে দূরে ঠেলে, সব ছাপিয়ে অন্তরকে ধীরে ধীরে শান্ত আর স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে নীলাঞ্জনা!

করোনা আক্রান্ত হলে কেউ কাছে আসতে পারবেনা, কেউ কাছে যেতে পারবেনা ইচ্ছে হলেই। নানারকম বিধিনিষেধ মানতে হবে। ইচ্ছে হলেই ঈদ শপিং এ যাওয়া যাবেনা! তো কি হয়েছে। কি হয় কেউ কাছে না থাকলে। এক সময়তো অনেকেই ছিলেন কাছে।

জীবনেতো অনেক শপিং করেছি, এখন না হয় নাইবা করলাম শপিং। ঈদ এলেই কত্তরকম রান্না করেছি একে ওকে জিজ্ঞেস করে। এখনতো ইউ টিউবে নিত্যনতুন কতরকম রেসিপি পাওয়া যায় কত সহজে। টিভিতেই উপভোগ করা যায় ঈদ অনুষ্ঠান। বন্ধুদের সাথে জমিয়ে চ্যাটিং করে আড্ডা দেয়া যায়। সেজন্য করোনার ভয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ও কোন চিন্তা নেই। বন্দী থেকেও আগের মত স্বাভাবিক এক পৃথিবীর আশায় বেঁচে থাকাটাও যে জরুরি।

নানা কথার পাঁচালির মধ্যে দিয়ে রাত টুকু পাড়ি দিয়ে আজ ঈদের ভোরে একাকী বাসায় প্রিয় মানুষটির খুউব পছন্দের ঘন দুধের সেমাই আর চটপটি রান্না করে নীলাঞ্জনা। সাজিয়ে রাখে ডাইনিং টেবিলে। যদি কেউ ভালোবেসে আসেন কুশল বিনিময় করে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে। আপনজনদের নিয়ে আশা এখনো বুকে জড়িয়ে থাকে। এরপর টুকটাক কাজগুলি সেড়ে নীলাঞ্জনা খুব আয়েস করেই আজ টিভি দেখতে বসে বিছানায় গা এলিয়ে। বিশাল ফ্লাটে একাকি বাস করে সে। রাজাবিহিন এক রাজ্য। পুরো রাজ্যটাই তার। রাজকুমারিটাও নেই তার কাছে। নেই তেমন কোন  দলবল। যে যার কাজ ও কর্মক্ষেত্র নিয়ে ব্যাস্ত। একসময় পুরো বাড়িটা তার জমজমাট থাকতো। যেন চাঁদেরহাট বসতো তার বাড়িতে। জন্মদিন, বিয়ে বার্ষিকী, এ অনুষ্ঠান, ও অনুষ্ঠান যে কোন ছলছুতোয় লেগেই থাকতো। আর ঈদ এলেতো কথাই নেই। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো।

খুব তাড়াতাড়িই সে এমন একা হয়ে যাবে ভাবতেই কান্না পায় নীলাঞ্জনার!

কাছের মানুষটাও আচমকা ঘর বাধল রাব্বুল এর কাছে। কি এমন ক্ষতি ছিল আর কয়টা দিন হাসি আনন্দে একসাথে থাকতে। এখন নিলাঞ্জনা একেবারেই একা! মুক্ত বিহঙ্গ যেন। 

আপনমনে টি ভি দেখতে দেখতে রিমোট নিয়ে এ চ্যানেল ও চ্যানেল ঘোরায়। আগের মত আর রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি কিংবা চ্যানেল বদল নিয়ে কোন ঝক্কি ঝামেলা নেই। তাই ইচ্ছেমত চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে টিভি দেখতে থাকে নীলাঞ্জনা। যে মানুষটির সাথে সবচে' বেশি খুনসুটি বাঁধত চ্যানেল বদলানো নিয়ে, সে আজ অনেক দূরে। দূর থেকে সে কি কিছু দেখতে পাচ্ছে।

আজ ঈদ।

সে কি বুঝতে পারছে, এই যুগের কত নতুন নতুন কত কিছু রান্না করতে পারে তার প্রিয় অঞ্জনা। কিন্তু খাবার মানুষ কেউ আজ কাছে নেই তার। ঘরে ঘরে বইছে ঈদের আনন্দ ধারা। যত মহামারিই আসুকনা কেন, ইদের আনন্দ সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের জন্য অমৃতের মতই সুখকর ও আনন্দের। চারপাশ খোলা থাকে সবার জন্য। সবাই সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। 

নীলাঞ্জনাওতো তাই চেয়েছে। আছে কত নিকটজন। পাড়া প্রতিবেশি। কাছে কিংবা দূরে। 

এখনতো পৃথিবী কত ছোট। ইচ্ছে করলেই যোগাযোগ করা যায় ঘরে বসেই। প্রযুক্তি কত কাছে নিয়ে গেছে মানুষকে। কিন্তু এত এত কিছুর পর ও নীলাঞ্জনার কাছে মনে হয়, পৃথিবীটা অনেক অনেক বড়। মোটেই ছোট নয়। ঘর থেকে দু পা ফেললেই এই একটি আনন্দের দিনে একটু কুশল বিনিময় করাই যায়।

আন্তরিকতা ভুলে গিয়ে কেন এত অনর্থক আবোল তাবোল সময় কাটানোর ঘাঁটাঘাঁটি।

কেনই বা এত কৃপণতা। না, এতকিছু ভাববার সময় কারো নেই। 

আন্তরিকতা এখন যান্ত্রিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। এমনই মনে হয় নীলাঞ্জনার। বিছানায় গা এলিয়ে রিমোট টিপতে টিপতেই চোখ ফেরায় বিভিন্ন চ্যানেল থেকে! প্রায় এগারোটা বাজে। খুব খিদে পেয়েছে। টিভি অফ করে ডাইনিং টেবিলে চলে আসে। ডায়াবেটিক ! তাই সুগার ফ্রি দিয়ে ঘন দুধের সেমাই আর চটপটি রান্না করেছে। একটু বেশি করেই রেঁধেছে নীলাঞ্জনা। বলা যায়না যদি হুট করে কেউ এসে পরে এই দুঃসময়েও। ঈদ বলে কথা। টেবিলে ঢাকা আছে সব। 

চেয়ারে বসে পরে ধপাস করে নীলাঞ্জনা। এই ডাইনিং টেবিলে একদিন নানান পদের ঈদের খাবার সাজানো থাকতো থরে থরে। ঈদের দিন কাক ডাকা ভোরে, মিষ্টি আদরে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিতেন প্রিয় মানুষটি। পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে আতর মেখে, একটু সেমাই মুখে দিয়ে আমার ও তার আদরের বুড়ি মায়ের (মেয়ে) মাথায় হাত বুলিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে যেতেন। নামাজ সেরে একদল বন্ধু নিয়ে ঘরে ঢুকতেন। হৈ হুল্লোড়ে সাবাড় হয়ে যেত সব খাবার । পাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজনদের রাত অব্দি এর ওর বাড়িতে আসা যাওয়া চলতো। কি মধুরই না ছিল দিনগুলো ! 

একটু চটপটি বাটিতে নিয়ে আবার টিভির সামনে এসে বসে নীলাঞ্জনা। সব চ্যানেলেই খবর শুরু হয়ে গেছে। নাড়ির টানে ঈদে বাড়ি যাওয়ার গতকালকের একটা দৃশ্যের টিভি রিপোরটিং এর ফলোআপ দেখাচ্ছে। 

এই মহামারির মধ্যেও মানুষের বাড়ি যাওয়ার কমতি নেই। যে যেভাবে পারছে, ছুটছে বাড়ির দিকে। এইসব মানুষের মধ্যে মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজনের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য যে কি আবেগ, কি যে আকুতি তা বোঝাবার নয়। টিভিতে দৃশ্যগুলো দেখে আপনজনদের কাছে পাওয়ার জন্য নীলাঞ্জনার মনটা ব্যাকুল কান্নায় ভরে ওঠে। এইসব দৃশ্যগুলো এক নিবিড় আবেগে নীলাঞ্জনাকে তার সেইসব শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলোতে  যেন হাত ধরে নিয়ে যায় সবুজ ফসলের মাঠে, নদীনালা বনবনানির ঝোপঝাড়ে। 

এ মুহূর্তে নিলাঞ্জনা তার ভাবাবেগের এক রেল গাড়িতে চড়ে বসেছে। বাবা তখন সিলেট চাবাগানের ডাক্তার। ঈদের ছুটিতে সবাই মিলে চলছে দাদু বাড়ি ও নানু বাড়ি ঈদ করতে! চলন্ত ট্রেনের জানালায় বসে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেয় নিলাঞ্জনা। চোখ জুড়িয়ে যায় সবুজের সজীব রঙ্গে। ট্রেন চলে শব্দ করে। ছোট ভাইবোন সেই শব্দের সাথে ছড়া কাটে ...'চল যাই, চল যাই, মামা বাড়ি যাই ..।

নীলাঞ্জনা ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যায় স্বার্থপরতার র‍্যাপিং এ মোড়া লাগামবিহিন এক টাট্টু ঘোড়ার পায়ে কঠিন শেকলে বাঁধা জীবন সংসারের কথা।

একসময় তার কল্পনার রেলগাড়িটা এসে থামে ঈশ্বরদী জংশান এ । মামারা মাইক্রো ভাড়া করে অপেক্ষা করছে। এখান থেকে মামাবাড়ি যেতে বেশ খানিকটা পথ অন্য কোন বাহনে যেতে হয়।

কিছুদূর যেতেই গৌরিগ্রাম নানু বাড়ির কাছাকাছি খোলা মাঠের ওপারে দৃষ্টি পড়তেই চোখে পড়ে সাতানি ঘাটের সেই বর্ষীয়ান বট গাছটার দিকে। বিশাল কাণ্ড শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে আছে  ইচ্ছে মত। চারদিকে গোল হয়ে প্রকৃতিকে ছায়া দিচ্ছে অবিরাম।

গাছটি এই পুরো এলাকাকে বিখ্যাত করে রেখেছে। শতবর্ষী এ গাছটির সঠিক বয়স বলতে পারেনা কেউই। বাপদাদার কাছ থেকে নানাজন নানাভাবে শুনেছেন। এ গাছটি দেখে যে কোন মানুষ দূর থেকেই তার গ্রামের অবস্থান জানতে পারেন অনায়াসে।

একের পর এক স্মৃতির ভাণ্ডার এসে সমুখে দাঁড়ায় নীলাঞ্জনার। মনে পড়ে দাদিমা, নানিমার হাতের কত্তরকম পিঠাপুলির কথা। আজ তারা কেউই আর নেই এই পার্থিব জগতে। ইতোমধ্যে টিভি তে খবর শেষ হয়েছে।

নীলাঞ্জনা স্মৃতির পর্দা থেকে ফিরে আসে আর এক অবস্থানে।

বিয়ের পর মা বাবার সাথে কখনোই ঈদ করা হয়নি তার। কতবারই মনে মনে ভেবেছে, এবার বাড়িতে মা বাবা ভাই বোনদের নিয়ে ঈদ করবো। নানারকম ছলচাতুরীর আকুতিতে কাছের মানুষটি কাছেই রেখে দিতেন। বলতেন অন্যসময় যেও। সে যাওয়াও খুব কমই হয়েছে। প্রেম করে বিয়ে করে বহু বছর খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। তাই সবসময় নাকি তার কাছের মানুষটির ছিল নিলাঞ্জনাকে হারাই হারাই ভয়। অথচ বিধির কি নির্মম লিলাখেলা। সেই মানুষটিইতো হারিয়ে গেল তার জীবন থেকে আগেভাগে আচমকা।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎই তপ্ত এক লোনাজলের অশ্রুধারায় দুচোখের কোন ভরে ওঠে নীলাঞ্জনার।

মহানন্দের দিন ছিল তার একসময়। আজ করোনা মহামারি পৃথিবীর সব ওলটপালট করলেও, নিলাঞ্জনার জীবন থেকে আরও বেশ কিছু বছর আগেই  মহাপ্রলয়ঙ্করে ভালবাসার একান্ত  কাছের মানুষটি ও একে একে অতিপ্রিয় আপনজনেরা হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে। তবুও শত কষ্টের পরেও চিরন্তন নিয়মে প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। আবার আসবে ঈদ। 

নীলাঞ্জনা এভাবেই ভাবের সাগরে ডুবে ডুবে পাড়ি দেবে এই অনন্ত পৃথিবীর পথ। এ সময় ডোরবেল বেজে ওঠে হঠাৎ। নীলাঞ্জনার ভাবনার সুতো ছিড়ে যায়। দৌড়ে যায় দরজা খুলতে। নিশ্চয়ই কেউ এসেছেন ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করতে। দরজা খুলে থমকে দাঁড়ায় নীলাঞ্জনা।

ফ্ল্যাটের দারোয়ান কাশেম দেখা করতে এসেছে।

- আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।
- ওয়ালাইকুম সালাম।

নীলাঞ্জনার চোখটা ঝাপসা হয়ে ওঠে আশাহতের একটা সূক্ষ্ম যন্ত্রণায়। নীলাঞ্জনা ওড়নায় চোখ মুছে কাশেমকে বসতে দিয়ে কিছু টাকা ও ডাইনিং টেবিলে রাখা সবটুকু সেমাই ও চটপটি বক্সে ভরে কাশেমকে দিয়ে দেয়।

এত খাবার !

ঝপ করে কাশেম নিলাঞ্জনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে।

- তোমরা আরও কয়জন আছোনা? সবাই মিলে খেও।
- ম্যাডাম, করোনার জন্য দেশে যাইতে পারি নাই কেউ। ছুটিও পাই নাই। ঈদের নামাজ পইড়া আপনার বাসায়ই পেরথম আইলাম ম্যাডাম। অহন ও কিছু খাই নাই। আপনারে ক্যান জানি আমাগো খুব আপনা মানুষ মনে অয়। কিছু মনে করেন নাইতো।
- না, না, খুব খুশি হয়েছি কাশেম।
- সেলাম ম্যাম।

কাশেম চলে যাওয়ার পর হঠাৎ এক অন্যরকম আত্মতৃপ্তিতে নীলাঞ্জনার বৈরী মনের সকল কষ্ট যেন উড়ে যায় ফুড়ুৎ করে। নীলাঞ্জনার নীল নয়ন দুটি আকাশের সকল নীল নিয়ে আর ও বর্ণিল হয়ে ওঠে। তার উথাল পাথাল মনের আকাশটায় পাগলা হাওয়ার বিষাদ ভরা সকল রাগ রাগিণী ঈদ আনন্দের সঞ্জীবনী রসনায় বাজতে থাকে গুনগুনিয়ে -----

'আমার সকল চাওয়ার মাঝে তুমি দাঁড়িয়ে আছো যে ......।'

সমাপ্ত

 

শাহান আরা জাকির পারুল 
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top