সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর- রং তুলির নীরব জাদুকর : নবনীতা চট্টোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
৩ নভেম্বর ২০২১ ০১:০২

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১০:১১

ছবিঃ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলো। বিকেলের আলো কমতে কমতে আঁধারের দিকে হাত বাড়ালো। ঠাকুরবাড়ির প্রশস্ত চত্বরে পায়রার দলের বকবকামি ক্রমশ:ক্ষীন হয়ে মিলিয়ে গেল। আশপাশের হিন্দু বাড়ি থেকে সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি ভেসে এল। কাঠের বাহারী ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে ঠাকুরবাড়ির দোতলার দক্ষিণের বারান্দায় নেমে এলেন গৃহকর্ত্রী প্রমোদকুমারী। অন্ধকারে পরিস্কার দেখা যায় না দুই হাত দূরের জিনিষ। অথচ এই অন্ধকারে বসেই একমনে রংতুলি নিয়ে ধ্যানমগ্ন তাঁর স্বামী| কাছে গিয়ে শুধোলেন"এই অন্ধকারে তুমি দেখছ কী করে? "যেন সহসা একটা তার ছিঁড়ে গেল। খানিকটা সময় লাগলো সেই প্রায়ান্ধকার দক্ষিণের বারান্দায় ফিরে আসতে সৃজনশীলতা থেকে। তারপর মাথা তুলে তাকিয়ে সেই আত্মমগ্ন শিল্পী বললেন "কই, কিছু তো দেখতে পাইনি।" তাঁর চারিপাশের সমগ্র জগৎ সরে গেছিল, মুখোমুখি শুধু শিল্পী আর তাঁর শিল্প। বোধহয় এইসময় স্বয়ং ঈশ্বর নেমে আসেন শিল্পের মধ্যে। স্ত্রী প্রমোদকুমারী বিলক্ষণ চিনতেন তাঁর স্বামী গগনেন্দ্রনাথকে। দক্ষিণের এই বারান্দায় ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে রং তুলি ক্যানভাসের জগতে তিনি যখন ঘোরাবিষ্ট থাকেন, সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব সেরে স্ত্রী নীরবে  নি:শব্দে তাঁর স্বামীর পাশে বসেছেন প্রত্যহ যাতে তাঁর আঁকার মনোসংযোগে ব্যাঘাত না ঘটে।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৭-১৯৩৮) চিত্রকলা ও কার্টুন শিল্পের এক জাদুকরী ব্যক্তিত্ব। ১৮৬৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন গুনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সৌদামিনী দেবীর প্রথম সন্তান, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা এবং সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভাইপো। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে সিনিয়র কেম্ব্রিজ অবধি পড়াশোনা করেছিলেন। খুব ছোটবেলায় গুরু হরিনারায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর আঁকা শুরু। বাবা গুনেন্দ্রনাথের মনোবাসনা ছিল ঠাকুরবাড়ির বিলাসিতায় নয়, ছেলে বড় হবে সাধারণ মানুষের মত। গগনকে  তাই তিনি ঠাকুরবাড়ির সবরকম বিলাসিতা থেকে দূরে রেখেছিলেন। মাত্র সতেরো বছর বয়সে খুব অনাড়ম্বর ভাবে প্রমোদকুমারীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁর কিছুদিন আগেই তিনি হারিয়েছিলেন তাঁর বাবাকে। অতএব কিশোর গগনের উপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব ন্যস্ত হলো। জমিদারি সামলানো,  মা, ছোট ভাইবোন স্ত্রীর দেখাশোনার পাশাপাশি সহাবস্থান করতো এক আত্মমগ্ন শিল্পীসত্তা।  সংসারের কাজে হাইকোর্টে জুরির কাজে যোগদান করলেন। যাবতীয় সওয়াল জবাব, উকিলের জেরা, বিচারকার্য ইত্যাদির ফাঁকে ফাঁকে দেখা যেত গগন মাথা নীচু করে নোট নিচ্ছেন। আসলে সেই ফাঁকা সময়গুলিতে তিনি পোটের্ট আঁকতেন। চারপাশের উকিল, বিচারক, আসামী, দর্শক বিভিন্ন চেহারা ফুটে উঠত তাঁর পোর্টেটে।
প্রথম জীবনে তাঁর ছবি আঁকা ছিল বিক্ষিপ্ত এবং খেয়ালখুশীমত। জীবনের একটি বাঁকে এক শোকের ঘটনায় খুলে গেল তাঁর সৃজনশীল ভুবন। টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর সতেরো বছরের সন্তান গেহেন্দ্রনাথের অকালমৃত্যু তাঁকে শোকে পাথর করে দিল| শোকবিহ্বল, মানসিকভাবে অস্থির গগনেন্দ্রনাথ তাঁর পরিচিত দীনেশ্চন্দ্র সেনের কাছে এই শোক কাটিয়ে ওঠার উপায় জানতে চাইলেন। দীনেশচন্দ্র  ক্ষেত্র চূড়ামনি নামে একজন কথক ঠাকুরকে  নিয়ে এলেন। উদ্দেশ্য ছিল কথকতার মাধ্যমে গগনের মনে স্থিরতা ও শান্তি এনে দেওয়া।  রবীন্দ্রনাথ ভাইপোর শোকবিহ্বলতা কাটাতে কুষ্টিয়া থেকে পাঠালেন শিবু কীর্তনীয়াকে। কথকতা  ও কীর্তন শোনার সাথে সাথে রামায়ন, মহাভারত, ভাগবত কাহিনীর চরিত্রেরা, কথক ঠাকুর, শিবু কীর্তনীয়া, দীনেশচন্দ্র সেন, ঠাকুরবাড়ির  আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, আশ্রিতজনেরা, কর্মচারী চারিপাশের কেউ বাদ পড়লেন না গগনেন্দ্রনাথের রংতুলিতে।
প্রশস্ত দক্ষিণের বারান্দায় পাশাপাশি বসে ছবি আঁকতেন গগনেন্দ্রনাথ ও তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা অবনীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ বহুবার  তাঁদের অনুরোধ  করেছেন বিলাতে গিয়ে পশ্চিমী অঙ্কন শিল্পরীতি প্রশিক্ষণ নেওয়ার। কিন্তু দুজনেই ছিলেন অত্যন্ত ঘরকুণো। ঠাকুরবাড়ির চৌহদ্দি পেরোনো তাঁদের ইচ্ছা ছিল না। কুড়ির দশকের প্রথম দিকে জাপানী শিল্পী ইওকোহামা (ওকাকুরু) এবং তাইকোয়ান এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গগনেন্দ্রনাথ জ্যামিতিক চিত্রাঙ্কণ শুরু করলেন। তাঁর যত ফ্যান্টাসি চিত্রাঙ্কন আছে তার উৎস এই কিউবিজম। নিজস্ব পদ্ধতি ও কল্পনার সাথে ত্রিভুজ, বৃত্ত, অর্ধবৃত্ত, কোণ অবলম্বন করে শুরু করলেন জ্যামিতিক চিত্রাঙ্কন। আলোছায়ার রহস্যে ঢাকা রঙের খেলায় তাঁর ছবি অন্য এক মাত্রা পেল। সেইসময় সারা বিশ্ব জুড়ে শিল্পীদের মধ্যে চলছে কিউবিজম নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট। ইওরোপিয়ান শিল্পকলার উপর নানান ধরনের বই কিনে প্রচুর পড়াশোনা করে গগনেন্দ্রনাথ তাঁর সৃজনশক্তিকে নিয়ে গেলেন অন্য এক ধারায়। ভিনদেশীয় কিউবিক রীতির নির্মানশৈলীতে ভারতীয় চিত্রশিল্পে তিনি এক বিশ্বজনীন তা এনে দিলেন। তাঁর "রহস্যলোক" সিরিজে অবগুন্ঠিত রহস্যময়ী নারীরা প্রধান চরিত্র হয়েছেন এই পদ্ধতিতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রক্তকরবী'র প্রচ্ছদেও তিনি এই নির্মাণশৈলী ব্যবহার করেছেন।
চারিপাশের লোকজন, নিসর্গ, পশুপাখি নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে তাঁর অঙ্কনশৈলীতে। দক্ষিণের বারান্দায় চা খেতে বসে বিস্কিটের টুকরো নিয়ে কাকের দলের হুড়োহুড়ি, তাদের খুঁটে খাওয়ার ভঙ্গি., বাড়ির ছাদে, কার্নিশে, রেলিং এ তাদের বসার ভঙ্গিমা  এইসব নিয়ে কাকেদের উপর তাঁর আঁকা 'দ্য ইন্ডিয়ান স্টাডিস'সঙ্কলনটি ১৯১১ খৃ: প্রকাশিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থচিত্রণে চব্বিশটি ব্রাশ ড্রয়িং এ তিনি জোড়াসাঁকোর বাহির ও অন্দরমহলকে এঁকেছিলেন। মা সৌদামিনী দেবীর জগন্নাথ দর্শনের ইচ্ছাপূরণ করতে মাঝেমাঝেই সপরিবারে পুরীতে আসতেন গগনেন্দ্রনাথ। সেখানকার মন্দির, তীর্থযাত্রীদের হাঁটাচলার ভঙ্গি, মৎস্যজীবিদের জীবন তাঁর অসাধারণ পর্যবেক্ষতায় নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে তাঁর তুলিতে 'পুরী সিরিজ' ছবিগুলিতে। তাঁর 'চৈতন্য'সিরিজের ছবিগুলি জাপানী ঐতিহ্য, পাশ্চাত্ত্য আধুনিকতা এবং বাংলার শিল্পকলা মিশিয়ে সারা  বিশ্বের চিত্রপ্রেমিক ও চিত্র সমঝদার ব্যক্তিদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষনীয়।
কার্টুন শিল্প বা ব্যঙ্গ চিত্রে গগন ঠাকুর এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিলেন। সেইসময় কালীঘাটের কিছু শিল্পীরা  মূলত: ধর্মীয় আচার আচরণের উপর কিছু ব্যঙ্গ চিত্র তৈরী করেছিলেন। কিন্তু সেইসব বিক্ষিপ্ত চিত্রে ব্যঙ্গ কথাটি যথার্থ ভাবে প্রাণ পায়নি। ব্যঙ্গ চিত্রে প্রথম তীক্ষ্ণ অথচ পরিশীলিত রূপ নিয়ে এলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর প্রতিভার যথাযথ প্রকাশ হয়েছিল ব্যঙ্গ চিত্র বা কার্টুনে।  তিনি পেশাদার ব্যঙ্গ চিত্রশিল্পী ছিলেন না কিন্তু তাঁর ব্যঙ্গচিত্র তখনকার বিখ্যাত পত্রিকাগুলিতে প্রবাসী, ভারতী, আগমনী, মডার্ন রিভিউতে নিয়মিত প্রকাশ হত। তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলিতে তিনি পাশ্চাত্ত্য সভ্যতার অন্ধ অনুসরনকারী, দেশীয় সভ্যতার অবমাননাকারী ভারতীয় উচ্চবিত্তদের সমালোচনা করেছেন। তদানীন্তন রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ ও হিন্দু ধর্মের ভন্ডামি, আচার আচরণ সর্বস্বতাকে তিনি তীক্ষ্ণভাবে বিদ্ধ করে ব্যঙ্গচিত্র রচনা করেছেন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসহায়তা, পুরুষের উদাসীনতা, বহুবিবাহ, বধূহত্যার নির্মম চিত্রকে তুলে ধরে কশাঘাত করেছেন। শুধু তাই নয়, তৎকালীন বহু বিখ্যাত মানুষকেও তিনি তাঁর ব্যঙ্গ চিত্রের বিষয় করেছেন। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে যখন সমগ্র ভারত উত্তাল, রবীন্দ্রনাথ ত্যাগ করেছেন তাঁর নাইট উপাধি, সেইসময় বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব গদগদ চিত্তে ইংরেজদের কাছ থেকে সি-আই-ই উপাধি গ্রহণ করেন। গগনেন্দ্রনাথ তাঁর ব্যঙ্গচিত্রে দেখিয়েছেন ইংরেজ সরকার আতস কাঁচ দিয়ে খুঁজছেন জাতীয়তাবাদে উত্তাল সমগ্র দেশবাসীর মাঝে অজাতীয় ছোট হয়ে যাওয়া ইংরেজদের পা-চাটা স্ফীতোদর বর্ধমানের মহারাজাকে। আরো একটি ব্যঙ্গচিত্রে তিনি তুলে ধরেছিলেন বাংলার অত্যাচারী গভর্নর  র‍্যামফিল্ড ফুলারকে| বিদেশী শাসনে যখন সমগ্র দেশবাসী নিস্পেষিত, গগনেন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন শিল্পী হিসাবে তাঁর দায়িত্ব দেশবাসীর প্রতিবাদী সত্তাকে জাগ্রত করে তোলা। ইংরেজ সরকারের আশীর্বাদধন্য উচ্চশিক্ষিত বাঙালী বাবুদের নিয়ে রচিত ব্যঙ্গচিত্র সংকলনের ভূমিকায় গগনেন্দ্রনাথ বলেছেন "বিকৃতি যখন লাগামহীন ভাবে বেড়ে যায়, অন্ধ অভ্যাসের দ্বারা লালিত হয়, তখন এইসব বিকৃতি যে কুৎসিত, কুরুচিপূর্ণ এবং অস্বাভাবিক, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া শিল্পীর কর্তব্য হয়ে পড়ে।" এইসব ব্যঙ্গ চিত্রগুলি ছিল তদানীন্তন সমাজের উপর তাঁর নিজস্ব অভিমত প্রকাশ। সমসাময়িক বহুত বিখ্যাত মানুষ ও তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের বিষয়বস্তু হয়েছেন|গান্ধীজি, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেউই বাদ পড়েননি। রবীন্দ্রনাথ একবার বিমানে কলকাতা থেকে পারস্য অভিমুখে যাত্রা করেন। সেই বিষয়টিকে গগনেন্দ্রনাথ খানিকটা কৌতুকের সাথে চিত্রিত করে নাম দেন 'বাবুমশাই উড়িতেছেন'। বেঙ্গল কেমিকেলের আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এমন এক কালি আবিস্কার করলেন যা কিছুতেই উঠবে না।  গগনেন্দ্রনাথ তাঁর ব্যঙ্গচিত্রে দেখালেন আচার্য্য  হাজার চেষ্টা করেও দেশ থেকে অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদের কালি আবিস্কার করতে পারছেন না। জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁকে নিয়ে আঁকা কার্টুনটি দেখে মতপ্রকাশ করেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ কার্টুনগুলি শুধুমাত্র ব্যঙ্গচিত্রনয়, শিল্পীর সংক্ষুব্ধ আত্মার প্রতিচ্ছবি। তাঁর এই বিপুল ব্যঙ্গচিত্র সম্ভার অবধূত লোক, বিরূপ বস্ত্র এবং নয়া হুল্লোড় নামে প্রকাশিত হয়েছিল যা আজো বিশ্বের শিল্প সমালোচকদের কাছে  দক্ষতায় ও মৌলিকতায় অতুলনীয় বলে বিবেচিত।
তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। বিলাতি দ্রব্য ও আসবাব পরিহার করে ঠাকুরবাড়িকে তিনি সাজিয়েছিলেন নিজের ডিজাইনের দেশীয় শিল্প স্থাপত্যে। বাংলার কুটীর শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত এবং জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে 'বেঙ্গল হোম ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন'এর অন্যতম সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দক্ষ অভিনেতা ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুরের  ফাল্গুনী নাটকে রাজার ভূমিকায় তাঁর অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। মঞ্চসজ্জা, দৃশ্য পটভূমিকা রচনা, পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যে জোব্বা পরতেন তাঁর নকশা গগনেন্দ্রনাথেরই করা ছিল। তিনি সুলেখক ও ছিলেন। তাঁর রচিত 'ভোঁদড় বাহাদুর'  বাংলা শিশু সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ| রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং লিখেছিলেন "গগন নহিলে তোমায় ধরিবে কেবা।"  স্বদেশী আন্দোলনের বিপ্লবীদের, উদীয়মান চিত্রশিল্পীদের তিনি নিয়মিত ভাবে অর্থ সাহায্য করতেন।
মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়ে বেশ কিছুদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত থাকার পর ১৯৩৮ সালে  শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন গগন ঠাকুর| চিত্রকলার ইতিহাসে যেখানে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ও জনপ্রিয়তা অসীম, গগন ঠাকুরের নাম সেইভাবে আর কয়জন ই বা জানে। অথচ তিনি ছিলেন এক প্রতিভাবান মৌলিক ও আধুনিক চিত্রশিল্পী। মানচিত্রের গন্ডী ছাড়িয়ে তাঁর শৈল্পিক সত্তা বিশ্বজনীনতাকে স্পর্শ করেছিল| স্বভাবে অন্তর্মুখী, প্রচার বিমুখ আত্মমগ্ন এই মহান শিল্পী তাঁর জাগ্রত সত্তা, শৈল্পিক অনন্যতা দিয়ে চিত্রকলার ইতিহাসে এক নতুন যুগের পথিকৃৎ হয়েই অক্ষয় হয়ে থাকবেন।

 

নবনীতা চট্টোপাধ্যায়
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top