সিডনী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

দিন শেষে : সোহানা স্বাতী


প্রকাশিত:
২২ মার্চ ২০২২ ২২:২৯

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ২০:০৮

ছবিঃ সোহানা স্বাতী

 

রেস্তোরাঁয় বসে আছি। শহরের নামী রেস্তোরাঁ। ১৪ তলা থেকে সবকিছু যেমন ছোট দেখা যায় তেমন নির্ঝঞ্ঝাটও লাগে। ঝামেলা এড়াতে আমি প্রায় এখানে আসি। এসে বসে থাকি কাচের দেয়াল ঘেঁষে। গোল টেবিলটার দুদিকে দুটো চেয়ার, যদিও আমার সামনের চেয়ারটা প্রায় সময়ই খালি পড়ে থাকে, আজও তাই।
আমি কিছু মোমো আর একটা ক্রিস্টাল স্যুপ নিয়ে বসেছি। এরা বেশ ভালো মোমো বানায়। সাথে নিয়েছি বাঁধাকপির একটা সালাদ, বাদাম কুঁচি এবং মধু দিয়ে বানানো।বেশ ধীরে ধীরে খাবারের স্বাদ নিচ্ছি কারণ আমার হাতে এখন অনেকটা সময়, উঠে যাবার কোনও তাড়া নেই।১৪ তলার এই রেস্তোরাঁ থেকে পুরো এলাকাটা দেখা যায়। নিচ মেইন রোড, চলে গেছে মূল শহরের দিকে। একদিকে এয়ারপোর্ট আরেকদিকে রাস্তা চলে গেছে শহরের শেষ সীমানায়।
শহরটা কেমন বদলে গেছে গত দু'বছরে। একটা ভাইরাস মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে গেছে। গেছে বললে ভুল হবে, এখনও পাল্টে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আগে শহরের সর্বত্র মানুষ গিজগিজ করত, এখন আগের মত ভিড় করে না কোথাও।সবাই কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেছে। ঘরে ঘরে অসুস্থতা, কোভিড পরবর্তী শারীরিক-মানসিক জটিলতা মানুষকে বিষণ্ণ করেছে দারুণভাবে। ঘন ঘন লক ডাউনে, শাট ডাউনে জীবনযাত্রা থমকে গেছে যেন।একদিকে অর্থের টানাটানি অন্যদিকে ভাইরাস আতঙ্কে মানুষ যেন প্রাণ খুলে হাসতে ভুলে গেছে।একের পর এক ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জীবনের গতি, কেউ বা তলিয়েও যাচ্ছে সে ঢেউয়ে।
গরম স্যুপ মুখে দিতে দিতে অলস হাতে লগ ইন করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই একটা জায়গা, যেখানে মানুষকে বেশ সুখী দেখা যায়। শো অফ এর দারুণ এক প্ল্যাটফর্ম ! এখানে এলে মনে হয় না কারও কোন সমস্যা আছে, কেবল সুখ আর সুখ। রান্না-বান্না, ঘর-কন্যা, সাজ-সজ্জা, অনলাইন শপিং কী নেই এখানে। লাইভে এসে কেউ বা শাড়ি মেলে ধরছে গায়ে। চুড়ি-মালা পরে দেখাচ্ছে অবলিলায়।এসব দেখে ছেলেবেলার ফেরিওয়ালার কথা মনে পড়ে যায়।তখন শাড়িওয়ালা আসত বাড়ি বাড়ি। মার্কিন কাপড়ে জড়িয়ে গাঁইট ভরে শাড়ি আনত তারা, ঢাকাই বিটি, টাঙ্গাইল শাড়ি, পাবনার তাঁত। বাড়ির কর্তা ব্যক্তিরা কাজে বেরিয়ে গেলে, ওরা আসত পাড়া-মহল্লায়। বাড়ির বারান্দায় বসে খুলত পসরা। একটা একটা করে শাড়ি মেলে ধরত, প্রয়োজনে নিজের গায়ে মেলে ধরে দেখিয়ে দিত। হেঁটে হেঁটে ফেরি করত তারা।
বাড়ির মেয়ে-বউরা তখনও শপিং এ যাওয়া শেখেনি। দোকানে যেত বাড়ির পুরুষরা। দরকার হলে ১৫/২০ খানা শাড়ি বাড়িতে নিয়ে আসা যেত। পছন্দ করে বাকিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া, শুধু ভাঁজ না ভাঙলেই হল।এরপর ধীরে ধীরে মেয়ে-বউরা দোকানে যাওয়া শিখে গেল। দীর্ঘ সময় পর আবার যুগের হাওয়া পিছনে বইছে যেন। এখন ফেরিওয়ালা ঘরে বসেই ফেরি করে, যখন তখন শাড়ি-জামা মেলে ধরে গায়ে।কেনাকাটাও হয় ঘরে বসেই।
সে যার যা ভালো লাগে করুক। কিন্তু বন্ধু-বান্ধব যখন অনলাইন ব্যবসায় নামে, বড্ড বিরক্ত করে । জোর করে ক্রেতা বানাতে চায় সবাইকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে বন্ধুরা এখন আচার বানানো আর শাড়ি-জামা-চাদর বেচা-বিক্রিতে ব্যস্ত।আমি ভেবে পাই না এসব কাজই যখন করবে তাহলে কষ্ট করে এত পড়াশুনা করার দরকার কী ছিল।
আরেক দল তো শুধু গেট টুগেদার করে বেড়ায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনমেলা চলে বছর জুড়ে। আরও আছে সন্তানদের স্কুলের বন্ধুদের মায়েদের সাথে, পার্কে হাঁটার বান্ধবীদের সাথে, সারা বাংলার এস এস সি... ইত্যাদি ইত্যাদি।একটু আনন্দের জন্য, একটু ভালো সময় কাটাবার জন্য, একটু সাজগোজ করবার জন্য মানুষ সুযোগ খোঁজে সারাবছর।
আজকাল ভীষণ বিরক্ত লাগে মানুষের পোস্টগুলো দেখতে, অমুক রেস্টুরেন্টে , তমুক রিসোর্টে ! আহা, রেস্টুরেন্টে খেতে গেছো ভালো কথা, খাও... কিন্তু ছবি দেওয়ার কী আছে বুঝিনা। সবাই আজকাল বাইরে খেতে যায়, ছুটিতে ঘুরতে যায়, এটা নতুন কিছু না। আরেক দল আছে ঘরে যা রান্না হবে তারই ছবি পোস্ট দেবে। পটোলের ছাল দিয়ে ভর্তা, পান্তাভাত, শুঁটকী, সিদল,প্যালকা কিছুই বাদ যায় না। ওহ, এসব দেখতে দেখতে বড্ড ক্লান্ত লাগে আজকাল। আরে বাবা রোজকার রান্না-বান্না তো সবাই করে খায়, সবকিছুই আপলোড করতে হবে !
প্রাইভেসি বলে কিছু নেই আর।এত ব্যক্তিগত ছবি আপলোড করার ফলে মানুষের বেডরুমে অনায়াসে ঢুুকে যাওয়া যায়। কেমন বেডশিট, কত ইঞ্চি টিভি, ঘরের ডেকোরেশন কেমন, দেয়ালের রং কেমন, বাসায় না গিয়েও জানা হয়ে যায়। আসলে হয়ত তারাই অন্যকে দেখাতে চায়, জানাতে চায়। সেদিন একজন দেখলাম আলমারি খুলে সব শাড়ি রোদে দেবার আগে ছবি আপলোড করেছে। মানুষকে দেখাতেই যেন ব্যস্ত সবাই, নিজের একান্ত নিজস্ব বলে আর কিছু রইল না।
আমার কাছের এক বান্ধবী দেশে এলো কদিন আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবী। বাসায় আসতে চায়, দেখা করতে। সেই বিষয়ে ফোনে কথা বলে দিন-ক্ষণ ঠিক করতে করতে কথা প্রসঙ্গে বলল,
'জানিস গতকাল রিভুর বাসায় গিয়েছিলাম, ঐ যে মনে নেই রিভু, আমার রুমমেট।'
'হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে। তারপর? কেমন আছে রিভু ? প্রেম ছিল ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলের সাথে। বিয়ে হয়েছে ওদের? কেমন সংসার করছে?'
'হ্যাঁ হ্যাঁ বিয়ে করেছে। দুজনেই চাকরী করে। সংসার কেমন করে সেটা জানিনা তবে ওর বাসায় ফ্যানে যে ময়লা জমেছে তাতে মনে হল মেইল ট্রেনে যে ফ্যান ঝুলানো থাকে ঠিক সে রকম।'
ওর কথা শুনেই সাথে সাথে আমি আমার মাথার উপরের ফ্যানের দিকে তাকালাম। দেখলাম কয়েক মাস পরিষ্কার করা হয়নি।পাখার কোনাগুলোতে ঝুল-কালির কাজল আঁকা।
'শোন, বিকেলের দিকে আসি তাহলে...'
আমি আঁতকে উঠলাম , কী বলব বুঝতে পারছি না। ইতস্তত করে বললাম,
' শোন না, চল বাইরে কোথাও বসি। বাসায় গেস্ট আছে রে।গল্প করে মজা পাবো না। বরং বাইরে বসে দুজনে আড্ডা দেই।'
'এতদিন পর দেশে এলাম ।ভাবলাম তোর হাতের মজার রান্না খাবো।'
'সে হবে। যাবার আগে আরেকবার আসবি, অসুবিধা কী।'
সে রাজি হলো। যাক বাবা, হাতে কিছু সময় তো পাওয়া গেল ফ্যান পরিষ্কারের।
চাকরিবাকরি করে, টিন এজ ছেলে-মেয়ের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে , এসব সামলাতে আজকাল বড্ড ক্লান্ত লাগে। ছেলে-মেয়ের আলাদা জগৎ, তারপরও একা ছাড়া যায় না সন্তানদের। কাজেই তাদের সাথেও যেতে হয় এখানে সেখানে। জন্মদিন, সিক্সটিন ইয়ার্স সেলিব্রেশন, নিউ ইয়ার পার্টি, বছর জুড়ে কত কী। মায়েদের আড্ডায় বসে তখন বোরিং সময় কাটাতে হয়।
আজকাল পার্টিতে প্রায়ই ড্রেস কোড থাকে। কখনো লাল, কখনো লেমন, কখনো বা ইন্ডিগো। নিজের ইচ্ছেমত রঙের পোশাকও পরতে পারব না। অন্য কেউ সেই রং ঠিক করে দেবে।আমার হয়ত সাদা জামদানি পরতে ইচ্ছে করছে খোঁপায় দুটো দোলনচাঁপা। নাহ, তা হবে না পরতে হবে নীল রাজশাহী সিল্ক, নীল এর আবার নানান ধরণ আছে। ময়ূরকণ্ঠী নীল হতে হবে, শাড়ির রঙের সাথে মাস্কটাও ম্যাচ করতে হবে।জামদানির সাথে মাস্কটাও জামদানির হওয়া চাই। আঃ ! সবাই সিক হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। সিক অফ হার্ট।
কাঁটাচামচ দিয়ে মোমো গেঁথে মুখে পুরে দিতে দিতে মোবাইল এ নিউজ ফিড স্ক্রল করতে থাকি। এক সিনিয়র সিটিজেনের লাইভে সুইসাইডের একটা নিউজ গত কদিন ধরেই ঘুরছে নিউজ ফিডে। অর্থনৈতিক অস্থিতি, ব্যবসায় লস, সেই সাথে কাছের মানুষদের উপর নির্ভর করতে না পারা, এসবকে দায়ী করছে মানুষ। একাকীত্ব তো আছেই।দিন শেষে মানুষ কাছের মানুষের সান্নিধ্য চাইবে এটাই তো স্বাভাবিক।
একাকীত্বের লড়াইটা বেড়েছে ইদানীং। এক বাড়িতে থেকেও সবাই কেমন যেন একা থাকা শিখছে দিন দিন। অফিস ফ্রম হোম এর নামে স্বামী সারা দিন ভিডিও চ্যাট করে চলেছে দরজা বন্ধ করে। ছেলে-মেয়েদেরও অনলাইন ক্লাস, কাজেই খোলা নেই তাদের দরজাও। আমিই শুধু কর্মহীন মানুষ, ডাইনিং-রান্নাঘর-বারান্দা বাগান নিয়ে সময় কাটাই। ছেলে-মেয়েরা যার যার ঘরে অনলাইন আড্ডায় রাত জাগে, বেলা করে ঘুমায়। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় তাদের সকালে উঠবারও তেমন কোন তাড়া থাকে না।দরজায় নক করলে বিরক্ত হয় তারা, স্বামী তো রুমই আলাদা করে নিয়েছে কাজের সুবিধার্থে।
কাউকে কিছু বললে যেন শুনতেই পায় না আজকাল ! শুনবে কী করে, কানে তো ইয়ার ফোন গোঁজা। সবাই কেমন মাথা নিচু করে থাকা শিখে গেছে ইদানীং। না, না, বিনয়ে মাথা নিচু করা না, মোবাইল স্ক্রিনে মাথা নিচু করে থাকে সবাই। আশেপাশে কী হচ্ছে, কে কেমন আছে এসব নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই। সবাই শুধু মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে নিজ নিজ মোবাইল স্ক্রিনে।
হাতে এখনও অনেকটা সময়। কফি দিতে বললাম, কফি লাতে।কফি আসতে আসতে বাঁধাকপির সালাদটা শেষ করলাম। ধীরে ধীরে চুমুক দিচ্ছি গরম কফির কাপে ।আশেপাশে বেশ ফাঁকা। একটা কাপল বসে আছে কোনার টেবিলে। দুজনের হাতেই মোবাইল, অন্যহাতে কাঁটাচামচ। তবে টেবিলের নিচে দুজনের পা এক হয়ে আছে।মেয়েটারা পায়ে, পা দিয়ে আদর বুলাচ্ছে ছেলেটা। ভালোই ! চোখে চোখ না থাকুক, পায়ে পায়ে তো আদর আছে ! মনে পড়ে গেল সেই সময়ের স্মৃতি। ক্লাস বাদ দিয়ে ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ায় কতদিন এমন মুখোমুখি আমরাও বসেছি। তখন মোবাইল ছিল না, চোখে চোখ রেখেই বসতাম আমরা। বিয়ের পরও কতবার বসেছি হাতে হাত রেখে। দুজনে অফিস শেষ করে সন্ধ্যায় একসাথে কফি খেয়ে, প্রয়োজনীয় বাজার সেরে ঘরে ফিরতাম। ধীরে ধীরে সব কেমন যেন বদলে গেল। তখন অবশ্য ভাইরাসের দাপট ছিল না, তবে ঘুণপোকা হয়ত ছিল ভিতরে-ভিতরে।
রিসিপসনে লাল টাই পরা ভদ্রলোক চাপাস্বরে কথা বলে চলেছে ফোনে। কিছু কিছু কথা না শুনতে চাইলেও কানে আসে। আগামী মাসে সম্ভবত ওদের এই উটলেট উঠে যাচ্ছে।কত শত ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে মানুষ। মুনাফা না থাকায় দামি প্রোডাক্ট এর লাভের খাতায় বসছে শূন্য। সহজলভ্য সস্তা অনলাইন প্রোডাক্টে ঘরভর্তি করছে মানুষ।পন্যের গুনগত মান নিম্নমুখী।বিশ্বব্যাপী ব্যবসা হচ্ছে মাস্কের, স্যানিটাইজারের, ভ্যাক্সিনের।
কিছু ভালো লাগে না, মনে হয় কটা দিন কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারলে বেশ ভালো হত। একঘেয়েমি থেকে অনেক দূরে কোথাও কিন্তু সে পথও খোলা নেই। এখনও কোভিডের প্রভাব কাটেনি। অনেক দেশ এখনও লক ডাউনে আছে। কাজেই এই বোরিং গোলকধাঁধায় পড়ে ঘুরপাক খেতে হচ্ছে।
ইদানীং মনে হয় একটা রুবিক'স কিউব হাতে নিয়ে বসে আছি, প্রায় সব মিলিয়েও একটা রং যেন কিছুতেই মিলে না। সেটা মিলাতে গিয়ে আবার আগের সাজানো ঘরগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। যতদিন চাকরি করতাম এসব নিয়ে ভাবার সময় ছিল না। কিন্তু বার বার লক ডাউনে লাভের মুখ না দেখায় কোম্পানিটা বন্ধ হয়ে গেল। আমি যে এখন জবলেস, আমার বন্ধু-বান্ধব সে কথা জানে না কেউ। তাই তো রোজ রোজ অফিস টাইমটা কোন না কোন রেস্টুরেন্টে বসে কাটাই, কখনো পার্লার, কখনো বা বুক ক্যাফে। রেস্টুরেন্ট এর একটা সুবিধা আছে, পরিচিত কারও সাথে দেখা হয়ে গেলেও সমস্যা নেই, ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং এ আসতেই পারি !
এ মুহূর্তে নতুন চাকরী জোগাড় সহজ না কারণ কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই তাদের বাড়তি মেদ ঝরিয়েছে কর্মী ছাঁটাই করে।চাকরি না থাকায় ইকনমিক্যালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা তেমন বিষয় না, কারণ আমার স্বামী ভালো রোজগার করে। কিন্তু সামাজিক পজিশনে জবলেস আমি যেন তলিয়ে যাই হাজার হাজার ফ্যাদম।
চিন্তা ভাবনায় ছেদ ফেলে রিং বেজে উঠে মোবাইলে। মিষ্টি মেয়েকণ্ঠ পেশাদারিত্বের সাথে বলে, " হ্যাপি লাইফ থেকে বলছি। ম্যাম, আজ বিকেলে আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা আছে ডাঃ সুষমা শাহীর সাথে। আশা করি আপনার মনে আছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে মনোযোগ দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।"
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো অজান্তেই। স্বামী, ছেলে-মেয়ে সবাই কেমন একজোট হয়েছে। তারা জোর করেই আমাকে ডাক্তারের কাছে পাঠাবার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। কাউন্সিলিং এর জন্য চাপ দিয়ে চলেছে অনবরত। ওরা জানে না আমাকে একা কাউন্সিলিং করিয়ে কোন কাজ হবে না। পুরো সোসাইটির কাউন্সিলিং প্রয়োজন। মনে মনে হাসি আমি, যাই ঘুরে আসি, কিছুটা সময় তো কাটবে। আরেক কাপ কফির অর্ডার করলাম। খুব দ্রুত শেষ করলাম দ্বিতীয় কফিটা ।
যেতে হবে। যাওয়ার আগে ওয়েটারকে ডাকলাম বিলটা আনবার জন্য। ওয়েটার চেঞ্জ আনতে গেলে দ্রুত একটা স্ন্যাপ নিলাম পড়ে থাকা কফির কাপ দুটোর। টিস্যু পেপারটা সন্তর্পণে কাপের পাশে রাখলাম যেখানে লেখা ‘মেইন ল্যান্ড চায়না’। টিস্যু পেপারটাই সাক্ষী অভিজাত রেস্তোরাঁর। যেতে যেতে ছবি আপলোড করলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।ক্যাপশন “সেদিন দুজনে …”

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top