সিডনী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

গে-কাপলের সংসার : বেগম জাহান আরা


প্রকাশিত:
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০১:৩৬

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ১৭:০০


শীতের দেশে গরম কালটা বাস্তবিক অর্থে মহা উদযাপনের সময়। তিন মাসের মতো সময়। নিয়মিত কাজ কর্ম তো করতেই হয়। তাই সপ্তাহান্তের দিনগুলোকে ভরিয়ে তোলে হৈ হুল্লোড় আর বিনোদনে। গায়ে ভারি কোট নেই। শীতের মোটকা উঁচু জুতো নেই। মোজা মাফলার টুপি নেই। মুখ গোমরা আবহাওয়ার ভ্রুকুটি নেই। কি আনন্দের সময়। হালকা শরীর। হালকা মন। সারাদিনের জন্য কেউ যায় সমুদ্রের ধারে। সামান্য স্ন্যাক্স বেঁধে নিয়ে কেউ যায় পার্কে। কেউ যায় কোনোও লেকের সুইমিং স্পটে। মোট কথা ঘরে থাকতে চায়না কেউ।
তবে ঘরের বিনোদনের মধ্যে বার-বি-কিউ এদের খুব প্রিয় উদযাপন। বহু বছর থেকেই জার্মানিতে আসে সালমা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। শীত কালেও আসা হয়েছে কখনও। তবে শীত কাতুরে মানুষ সে। গরম কালেই বেশি আসে। আর গরম কালে আসে বলে বার-বি-কিউ পার্টিতে বেশ যাওয়া হয়। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ঘুরে ফিরে পার্টি করে। সেদিন সারা সন্ধে জুড়েই গ্রিল, আর থেমে থেমে খাওয়া। ধোঁয়া ধোঁয়া পরিবেশে মাংস পোড়া গন্ধ মানুষদেরকে খাদক বানিয়ে দেয়। নাহলে এতোগুলো মাংস খায় কি করে? সাথে থাকে পর্যাপ্ত সালাদ। একদিকে থাকে নানা রকম ক্যান আর নানা রঙের বোতল। জীবনগুলো টগবগ করে।
রায়হানের বাড়িতে বার-বি-কিউ। বেশি বড়ো পার্টি নয়। পনরো জনের মতো হবে। এই অঞ্চলের পার্টিতে গেলেই দেখা হয় আলমের সাথে। ওর সাথে খুব ভাব রায়হানের। আলম আবার কথার বাগিচা। কোন কথা নেই তার বাক-বাগানে! মানুষের মন গলানো কথা, মানুষকে রাগানোর কথা, নানাবিধ তামাশার কথা, প্রয়োজনে অশ্লীল শব্দগুচ্ছ উচ্চারণ করা, মানুষকে হাসানোর কথা, কাঁদানোর কথা, উতসব অনুষ্ঠান জমানোর কথা, আরও কতো কি! অনেকেই তাকে পছন্দ করে তার বাক পটুতার কারনে। বিদূষক হিসেবেই তাকে চেনে রাজীব। পছন্দও করে। প্রবাস জীবনের মরুদ্যান। সালমার ভালোই লাগে বার-বি-কিউ পার্টি।
এই মহা চারুবাক ছেলে আলমের বাক দুর্বলতার কথা বলে একদিন রাজীব। মাত্র আটাশ বছরের তরুন মহীন যেদিন আকস্মিক হার্ট এটাকে মারা গেলো, সেদিন শোকের বাড়িতে গেলোই না আলম। বললো, সান্ত্বনার ভাষা আমি জানিনা রে। খুব অবাক হয়েছিল রাজীব। ওর বাক-বাগিচায় সান্ত্বনার শব্দ নেই? একটা ফোনও করেনি ছেলেটার মাকে। বলেছে, কি বলবো? তোরা তো নানা কিছু বলছিস। বলে হাউ মাউ করে কান্না। অবিশ্বাস্য!
সেদিন রায়হানের বার-বি-কিউ পার্টিতে নতুন ঘটনা হলো, আলমের আলাপ হলো গে-কাপল মিশাইল আর গ্রেগরির সাথে। প্রথম প্রথম গে-কাপল দেখলে আলম কেমন অস্বস্তি বোধ করতো। দেশে তো দেখেনি। শুনেছে ভাসা ভাসা যে, গে-কাপলও হয়। লেসবিয়ান কাপলও হয়। তবে প্রকাশ্যে দেখা যায় না তাদের। খুব সতর্কতার সাথে লুকিয়ে থাকে তারা। জার্মানিতে এসে প্রথম এই রকম কাপল দেখলো সামনা সামনি।
আলমের বিস্ময় একটা জায়গায়। এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে এরা ছেলে পার্টনার পছন্দ করে কেনো? শুধু তাই নয়, রেজিস্ট্রি করে বিয়েও করে এরা। সেই বিয়েতে জবর ধুমধামও হয়। সারারাত ধরে পানাহার এবং নাচ গান চলে। এক সময় সমকামিতা জার্মানিতে ছিলো বেআইনি। মাত্র কয়বছর আগে আইনি ছাড়পত্র পেয়েছে তারা। আইন পাশের পর প্রকাশ্যে রাতহাউসে একদিনে অনেকগুলো বিয়ে হয়েছে গে এবং লেসবিয়ন কাপলদের।
সবই জানে আলম। তবু কোথায় যেনো সংস্কারে লাগে তার। সাত বছর হলো সে জার্মানিতে আছে। গতো বছর বিয়ে করেছে দেশে। বৌ আনতে পারেনি এখনও। ছোট্ট একটা একঘরের এপার্টমেন্টে থাকে। বৌয়ের ভয়, আলম একা থাকতে থাকতে ছেলে পার্টনার না জুটিয়ে ফেলে। ঠাট্টা করে আলম বলে, মেয়ে পার্টনার জোটানোর ভয় নেই?
- খবরদার, খবরদার, ওসব ধান্দায় যেও না ভাই।
- তোমার ভয় তো ছেলে পার্টনার নিয়ে। তাই না?
- বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। ওটা হারাম কাজ।
- হা হা হা, তাহলে মেয়ে পার্টনার নিই?
- হোস্টেলেই ভালো ছিলে তুমি।
- ওগো বউ, এখানে হোস্টেলে ছেলেমেয়ে এক সাথেই থাকে।
- তবে আর কি? বাসায় যেনো কাউকে তুলো না প্লিজ, জান।
- তুমি আসার আগে বিদায় করে দেবো। তাহলেই তো হলো?
- এমন ঠাট্টা ভাল লাগে না কিন্তু। কেঁদে ফেলে তুলি।
আহারে, বেচারা বউটা জানে না, আলমের এক বান্ধবি আছে। রীতমতো লিভটুগেদার করে তারা। অনেক চেষ্টা করেও এই ফ্রি সোসাইটিতে একা থাকা সম্ভব হয়নি আলমের। সামারে সমুদ্রের ধারে গিয়েই হলো বিপত্তি। বিকিনি পরা মেয়েগুলো আউলে দিলো তার মাথাটা। দায় দেবে না, ভার দেবে না, দাবি তুলবে না, বাঁধতে চাইবে না, শুধু শোবে একসাথে। এই রকম বন্ধুত্ব প্রায় সব বাঙলাদেশি ছেলেদেরই আছে। অনেক মেয়েদেরও আছে। চুক্তি বিয়ে ছিলো এক সময়। প্রেম হয়ে গেলে সেটা অন্য কথা। এখানকার জীবনের ধরন ধারনই আলাদা। আদর্শ দর্শন, সবই জীবন কেন্দ্রিক। আদর্শ দর্শন কেন্দ্রিক নয় জীবন।
মিশাইল-গ্রেগরি দম্পতিকে সেদিন গায়ে গায়ে লেগে থাকতে দেখা গেলো না। গ্রেগরির লম্বা চুলে নীলচে রঙ করেছে। মাথায় চাপা ক্যাপ। ঘড়ের দুপাশ দিয়ে চুলগুল সামনে এনেছে। দাড়িও আছে সামান্য। যথেষ্ট ধুমপান করে। মিশাইলেরও দাড়ি আছে। ধুমপান নয়, পানে পটু সে। গ্লাসে হয় না। বোতল তুলে নেয় হাতে। বেশ সুন্দর দেখতে দুজনেই। মিশাইল খুব ম্যানলি। বরাবরই সে গে-ম্যান। বৌ বা বান্ধবি বদলের মতো পার্টনার বদল করেছে কয়েকবার। গ্রেগরি একটু মেয়েদের মতো ল্যাকোপ্যাকো ভাব করে।
দুজনের মধ্যে প্রিয়নামে ডাকাডাকি আছে। মিশাইল গ্রেগরিকে ডাকে, গ্রিক বলে। আর গ্রেগরি ডাকে, মিশা বলে। সেদিন ডাকাডাকিও তেমন শোনা গেলো না। গ্রেগরিকে দেখা গেলো , ফুটফুটে তিনটে কিশোরের তত্বাবধান করছে। ওরা খেলো কিনা, কোথায় গেলো, কোথায় বসলো, ইত্যাদি। মিশাইলও বেশ বন্ধুভাবাপন্ন ওদের সাথে।
আলমের কৌতুহল হয়। পার্টির হোস্ট মিলারকে জিজ্ঞেস করে বাচ্চাগুলোর পরিচয়।
- ও তোমার সাথে পরিচয় নেই? ওরা গ্রেগরির ছেলে।
- মানে?
- বলবো পরে। আজ অনেক কাজ আলম। তুমি বরং ছেলেগুলোর দিকে একটু খেয়াল রাখো। ওরা যেনো খাবার দাবার নেয়।
পার্টি তখন মাথায় উঠেছে আলমের। গ্রেগরির ছেলে মানে কি? ও তাহলে বাইসেকসুয়াল? বৌ বাচ্চা সংসার সবই ছিলো? তারপরও মিশাইলকে পার্টনার হিসেবে নিয়েছে? ছেলেগুলো দিব্যি 'পাপা' বলে ডাকছেও। আর মিশাইলকে ডাকছে নাম ধরে। এইদেশে এটাই রীতি। প্রতিবেশির বাচ্চারা আলমকে ডাকে 'হের আলম' বলে। মানে আমাদের ভাষায় 'জনাব আলম'।
বাচ্চাদের কাছে মিশাইলের স্টেটাস তো 'বাবা'। কিন্তু বাবা তো বলবে না। নাম ধরেই ডাকে। মিশাইল খুবই স্বচ্ছন্দ ওদের সাথে। মাঝে মাঝে ছেলেরা মিশাইল আর গ্রেগরির কাছে সারাদিন থাকে। কেমন যে লাগে আলমের! পাঁচটা পুরুষের সংসার। বাচ্চাদের একদার বাবা এখন অন্যের লাইফ পার্টনার। সোজা কথায়, আইনি স্বীকৃতিতে এবং মর্যাদায় অন্যের বৌ।
মিলারের কাছে শুনেছে, গ্রেগরির বৌ ভায়েলা আবার পার্টনার নিয়েছে। একটা ছেলেও হয়েছে তাদের। গ্রেগরি ভায়েলার ছেলেকে নাকি খুব আদর করে। তার মানে, ভায়েলার সাথে দেখা সাক্ষাত হয়। কথাবার্তাও নিশ্চয় হয়। ভায়েলার পার্টনারের একটা মেয়ে আছে। সেও থাকে ভায়েলার সাথে। আলম ভাবে, এরা বংশ লতিকার গাছ আঁকবে কেমন করে? অতীত কিছুই না এঁদের কাছে? ভবিষ্যতের কাছে রেখে যাওয়ারও কিছু নেই। কি আজব ভারহীন জীবন!
শুধু এইই নয়। গ্রেগরির মা বাবা আসে জামাই, মানে মিশাইলের বাড়ি বেড়াতে। মিশাইলের মা বাবাও আসে ছেলের সংসারে বেড়াতে। কোথাও কোনও বাধা নেই। অসন্তোষ নেই। মাথা গরম নেই। মাথা ব্যাথা নেই। সংস্কার নেই। নেই শাসন বারন। এরাও যায় মা বাবার সাথে দেখা করতে। পরম সহিষ্ণুতায় সব কিছু মানিয়ে নিচ্ছে এরা। ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে প্রকৃতিবিরুদ্ধ মানবিক সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা দিয়ে যাচ্ছে। এর পর কি? ভাবতেই পারে না আলম। নৃতত্ববিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান সব আউলে যায় তার। থিওরি পড়ে মানুষের কি হবে আর?
কোতুহল থেকেই আলম লেসবিয়ন কাপলদের সম্বন্ধে জানতে চেষ্টা করে। তাদের স্বাধীনতাও চরম। ইচ্ছে হলে সমঝোতার মাধ্যমে পার্টনারের যে কেউ একজন ইচ্ছাপুত্র নিতে পারে। মহাভারতের ক্ষেত্রজ পুত্রের মতো। দুই মহিলা, থুককু, স্বামীস্ত্রী মিলে মানুষ করবে বাচ্চাটাকে। দুই পার্টনারের মা বাবা আসে নাতি বা নাতনি দেখতে। খেলনা খাবার উপহারে ভরিয়ে দেয় বাচ্চাটার ঘর। ভালো থাকা এবং আনন্দে থাকার কি দিলখোলা ফর্মূলা বানিয়ে নিয়েছে এরা!
বাঙলাদেশে এমন জীবনাচার কল্পনাও করা যায় না। আলমের বেশ মনে আছে, এলজিবিটিদের (LGBT) একটা পত্রিকা প্রকাশনাকে উপলক্ষ করে কয়েক বছর আগে খোদ রাজধানী ঢাকায় খুন খারাপি হয়ে গেলো। মানে, সমাজে যা বিদ্যমান, যদিও গোপনেই থাকে তারা, সেই সত্যটা কেউ শুনতে চায় না। কাউকে বলতে দেয় না। কথাগুলো গোপনে থাকলেই যেনো সমাজ ঝকঝকে হয়ে উঠবে। বেইজিং-এর এক চিনা বন্ধুর কাছে আলম শুনেছিলো, ছেলে মেয়ে হাত ধরে হাঁটা নিষিদ্ধ ছিলো মাও-র আমলেও। মাত্র চল্লিশ পঞ্চাশ বছরের মধ্যে কোথায় উড়ে গেছে সেগুলো। মনে মনে ভাবে, মানুষের স্বাধীনতা চাই আমরা। অথচ স্বাধীনতা শব্দটার পুর অর্থ বুঝতে চাইনা। এলজিবিটি পত্রিকা কেন্দ্রিক খুনের জন্য প্রতিবাদ কিছু হয়েছিলো। কিন্তু তাতে জোর ছিলো না। বয়স কম থাকার জন্যে বিষয়টা সম্বন্ধে তেমন কিছু জানতো না। কিন্তু এখন তো বোঝে।
তবু কথা বলার যো নেই। কারন, নিষিদ্ধ আলোচনা।
নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সব সময় বেশি। হিজড়া সমাজের কথাই ধরা যাক। আগে তারা প্রায় লুকিয়ে থাকতো। এখন তারা দাপটের সাথে চলে। লেখাপড়া করে কেউ কেউ। চাকরির সুবিধেও পেয়েছে কেউ। মানে, সমাজে হিজড়াদের জন্য সামান্য হলেও কিছু গ্রহনযোগ্যতা আসছে। এখন তারা নিয়মিত চাঁদাবাজি করে জীবিকার জন্য। চাঁদা দিচ্ছেও মানুষ। তাদের সমাজ তৈরি হয়েছে। সংগঠন হয়েছে। চিকিতসা বিজ্ঞানের সাহায্যে অপারেশন করিয়ে ছেলেরা মেয়ে হচ্ছে। মেয়েরা ছেলে হচ্ছে। বাইলিঙ্গুয়ালরা অপারেশনের সাহায্যে নিজের পছন্দমতো বেছে নিচ্ছে একটা লিঙ্গ। ঢাকাতেই আছে এমন চিকিতসা কেন্দ্র।
পৃথিবীটা এক আজব গ্রহ। সব অবস্থায় চলমান।
হিজড়াদের জীবন নিয়ে এখন গল্প সাহিত্য রচিত হচ্ছে। সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, তারাও মানুষ। তাদেরও সুখ দুঃখ, চাওয়া পাওয়া, পছন্দ অপছন্দ, ইচ্ছে অনিচ্ছে, দাবি দাওয়া আছে। পৃথবীটা শুধু স্বাভাবিক মানুষের জন্য নয়। সাধারনের দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক মানুষেরাও এই জগতের বাসিন্দা। তারাও বাঁচবে, তারাও জীবন যাপন করবে তাদের মতো করে।
বিদেশে না এলে আলম জানতেই পারতো না গে-কাপল জীবন সম্পর্কে। এমন জীবনের প্রশংসা করবে না নিন্দে করবে, বুঝতে পারেনা সে। ব্যক্তি জীবনের স্বাধীনতা, ভালো লাগা, পছন্দ, ইত্যাদি উপভোগ করতে গিয়ে আধুনিক মানুষ গায়ের ন্যূনতমো কাপড় তো অনেক আগেই ছুঁড়ে ফেলেছে সুর্যস্নানের অছিলায়। বিশেষ বিশেষ পর্যটন এলাকায় সবাই জন্ম পোশাকে ঘুরে বেড়াতে পারে। টিভিতে সেগুলো দেখায়। যেনো কিছুই না এইসব। কিন্তু গে-কাপলটা কি? শুধু ভোগ? প্রজন্মের মাঝে নিজেকে রেখে যেতে ইচ্ছে হয় না? পৃথিবীতে এলাম, খেলাম, ভোগ করলাম, মরে গেলাম, ব্যাস? বংশের জিনও তো হারিয়ে যাবে। শেকড়ের কথা মুছে যাবে? ব্যক্তি স্বাধীনতা মেনে নিতে নিতে চরম বস্তুবাদী সমাজে এরপর কি হবে? তবুও জীবন চলবে?
আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, এরা সুখেই আছে। জীবনের ভরা জলসায় বিচরন করেও গায়ে পানি লাগেনা। হাঁসের পালকের মতো ঝরঝরে শুকনো থাকে। এই সব পাওয়ার পরেও মাঝে মাঝে একঘেয়ে হয়ে ওঠে জীবন। হতাশায় ডুবে যায় সামনে কিছু দেখতে না পেয়ে। অতীত নেই, বর্তমান একঘেয়ে, ভবিষ্যত শূন্য। জীবন ভার হয়ে যায়। হতাশার ভারি নিশ্বাস বইতে পারেনা কেউ কেউ। তখন নিজের জীবনদীপ নিভিয়ে দেয় নিজের হাতেই। শেষ হয়ে যায় সব চিহ্ন। সেটা বড্ড করুণ।
এমন জীবন চায় না আলম। পাশে শুয়ে আছে বউ। বলে, এই ঘুমিয়ে গেলে?
- না। ভাবছি।
- কি ভাবছো এতো?
- আমরা চারটে সন্তান নেবো।
- মানে?
মুহূর্তে পাশ ফিরে বুকে জড়িয়ে ধরে বউকে। আবেগে বলে ওঠে, পৃথিবীতে একদা এসেছিলাম, তার চিহ্ন রেখে যেতে হবে না?
- তাই বলে চারটা?
- পুষিয়ে দেয়ার ব্যাপার আছে বউ।
তুলি প্রতিবাদ করতে চায়। কিন্তু কথা বলতে পারেনা। ঠোঁট দুটো আটকে আছে আলমের মুখে।


ড. বেগম জাহান আরা
সাবেক প্রফেসর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সক্রিয় ভাষাবিজ্ঞানী এবং কথা সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top