সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

তপনহীন ঘন তমসায়: কেতন শেখ


প্রকাশিত:
২৭ মার্চ ২০১৯ ১৪:৩১

আপডেট:
৪ মে ২০২০ ১৩:২৪

 

বেকার স্ট্রীট টিউব স্টেশনে টিকেট ফটক পার হওয়ার সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে সানজিদার বুকের ভেতরে হঠাত করে একটা ধাক্কা লাগলো।

এই মানুষটাকে সানজিদা চেনে। তাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। মানুষটার পরনের ইউনিফর্ম দেখে মনে হচ্ছে সে ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডনের টিকেট বা নিরাপত্তা কর্মী। গাঢ় নীল রঙের জোব্বা ধরণের জ্যাকেট, মাথায় টুপি, হাতে ওয়াকিটকি। ইউনিফর্মের ওপর বুকের ডানপাশে লাগানো দুই ইন্চি নামের প্লেটে বড় করে “হাসান” লেখা। সানজিদার যতোদূর মনে পড়ে মানুষটার নাম আবেদ। তার নামের এইটুকুই ওর জানা।

উনিশ বছরে মানুষটার চেহারার কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু জুলপির কাছে কাঁচাপাকা কিছু চুল, যা তখন ছিলো না। অতো যুবক বয়সে কারই বা পাকা চুল থাকে। তার তামাটে বর্ণের শক্ত পুরুষালী চেহারাটা একই রকম আছে, আর ঠিক আগের মতোই আছে সেই চেহারায় বসানো মেয়েদের মতো বড় বড় চোখ। সেই একই দাঁড়ানোর ভঙ্গি, সুঠাম পৌরুষে ভরপুর গড়ন। অভিব্যক্তিতে সেই একই নির্লিপ্ত, নিরাসক্ত অথচ সতেজ ভাব। মানুষটা তখনও তাকাতো স্বচ্ছ, নির্ভয় আর দৃঢ় দৃষ্টিতে। এখানে ডিউটিতেও সেরকমই লাগছে। সানজিদার ভুল হয়নি। এই মানুষটাই উনিশ বছর আগে দেখা আবেদ।

সকালের ব্যস্ততায় বেকার স্ট্রীট টিউব স্টেশনে কুম্ভমেলার ভিড়। টিকেট ফটক পার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার উপায় নেই। পেছন থেকে ধাক্কাসহ একের পর এক “এক্সকিউজ মি” শোনা যাচ্ছে। এদের অনেকের কণ্ঠস্বরে স্পষ্ট বিরক্তি। সানজিদার বয়স আটচল্লিশ। এই বয়সে অপরিচিত মানুষের ধাক্কাধাক্কি বা বিরক্তি সহ্য হয় না। উনিশ বছর আগে এসব কোনো ব্যাপার ছিলো না। তখন অনেককিছুই সহ্য হতো।

এক্সকিউজ মি বা ধাক্কা উপেক্ষা করার জন্য সানজিদা টিকেট ফটক থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। দেয়ালের কাছেও ভিড়। হাতে সেলফি স্টিক আর কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে পর্যটকরা মনযোগ দিয়ে টিউব ম্যাপ দেখছে। স্হূলকায়া একজন কৃষ্ণাঙ্গ নিরাপত্তা কর্মী সেখানে দাঁড়ানো। তার পরনেও গাঢ় নীল জোব্বা জ্যাকেট। নামের প্লেটে “এ্যালেক্স” লেখা। সানজিদা এক মুহূর্ত কিছু একটা ভেবে এ্যালেক্সের দিকে এগিয়ে গেলো। ওকে আসতে দেখে এ্যালেক্স গম্ভীর স্বরে বললো, ক্যান আই হেল্প ইউ ম্যাম ?

উনিশ বছর বাংলাদেশে কাটানোর পরেও বৃটিশদের ইংরেজি বুঝতে অসুবিধা হয় না সানজিদার। মাস্টার্স করে দেশে ফেরত যাওয়ার পর এবারই প্রথম ইংল্যান্ডে আসা। এই উনিশ বছরে জীবনের অনেককিছুই বদলে গেছে। মাস্টার্স ডিগ্রিটা কাগজে আর নিজের দিকের আত্মীয়স্বজনের গল্পে এখন, জীবনের পালাবদলের খেলায় সেটা কোনো ভূমিকা রাখেনি। এখন জীবন কাটে নাসিরাবাদ হিল ভিউ রোডের তিনতলা বাড়িতে ... শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করে, সবার জন্য রান্না আর বাড়ির কাজের লোক দেখাশোনা করে, শরীফের ব্যবসার খারাপ সময়ে তার মেজাজ সামলে, আর ওর একমাত্র ছেলে আদনানের সাথে সময় কাটিয়ে।

এখনকার এই জীবনে উনিশ বছর আগের বৃটিশ ইংরেজি বা জীবনযাপনের কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিংস্টোন ইউনিভার্সিটি থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাস অনার্সের প্রতিভাগুলো এখন আদনানের পড়াশোনা দেখে আর সংসারের খুঁটিনাটি হিসেবে ব্যয় হচ্ছে। সানজিদার শ্বশুরবাড়িতে ঘরের বউ বা মেয়েদের চাকরি করার অনুমতি নেই। একা একা বিদেশে গিয়ে পড়াশোনাও নিষিদ্ধ এজেন্ডা। শরীফ নিজেই বি কম পাশ করে আর পড়াশোনা করেনি। এমন পরিবারে স্ত্রীকে মাস্টার্স করতে সে বাইরে পাঠাবে কেন ?

শিভনিং স্কলারশিপ পাওয়ায় আর ফুপুশাশুড়ি লন্ডনে থাকেন বলে মাস্টার্স করতে এখানে আসার সম্ভাবনাটা জোরালো হয়েছিলো। কিন্তু সেটাতে যোগ করা হয়েছিলো অনেকগুলো শর্ত। একা একা পড়তে হবে, গ্রুপ স্টাডি করা যাবে না, বিদেশী কারও সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না, শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে বাইরে যেতে হবে, ক্লাস শেষ হওয়ার সাথেসাথে ফুপুর বাড়িতে চলে আসতে হবে, ইত্যাদি। সেই এক বছরে শরীফ ইংল্যান্ডে আসেনি। কিন্তু সে সকাল সন্ধ্যা ফোন করতো। কথোপকথনে জমাট থাকতো তার উত্কট সব প্রশ্ন, অর্থহীন উদ্বেগ আর শাসন। পড়াশোনা কেমন হচ্ছে, বা সানজিদাকে ছেড়ে থাকতে শরীফের কতো মন খারাপ লাগছে, এসব কোনো কথাবার্তা সেখানে ছিলো না।

শরীফ বরাবর এরকমই। বিয়ের পর থেকে সানজিদার সাথে তার একান্ত কোনো কথাবার্তা নেই। শুধু প্রয়োজনের কথা আছে। সাংসারিক কারণে বা জীবন নিয়েও সানজিদার সাথে তার কোনো আলাপ আলোচনা থাকে না। হিল ভিউ রোডের তিনতলা বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য তার এবং তার বাবার অনুমতি নিতে হয়। নিজের ইচ্ছেমতো সেই বাড়িতে কোনো কেনাকাটা করা যায় না। যে কোনো কিছু কেনার জন্য শরীফের অনুমতি নিতে হয়। সেই বাড়িতে নিজের মতো করে কারও সাথে ফোনে আলাপ করারও উপায় নেই। টিভি আর গল্প উপন্যাসের বই ছাড়া অন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্হাও রাখা হয়নি ওর জন্য। এমন পরিবেশ থেকে একা বিদেশে পড়তে যাওয়া রীতিমতো অসম্ভব ছিলো। স্কলারশিপ, ফুপুর বাসায় থাকা, আর শর্ত গুলোর কারণে হয় তো সেটা সম্ভব হয়েছিলো।

বিদেশে পড়তে যাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা ভূমিকা হয় তো সানজিদার বাবারও ছিলো। তিনি ইতিহাসের প্রফেসর ... সবসময় চাইতেন সানজিদা পড়বে, ক্যারিয়ার গড়বে। বিয়ের সময় শরীফদের পরিবার থেকে বলার জন্যে হলেও সেরকমই কিছু বলা হয়েছিলো। শখানেক লোকজনের সামনে হাতে হাত রেখে বলা হয়েছিলো, আপনি কিছ্ছু ভাববেন না। আপনার মেয়ে এখন থেকে আমাদের মেয়ে। তার পড়াশোনা আর ক্যারিয়ারের দায়িত্ব এখন থেকে আমাদের। মেয়েকে নিয়ে আপনার সব স্বপ্ন আমরা অবশ্যই পরণ করবো। শিভনিং স্কলারশিপ, ফুপশুাশুড়ির বাড়িতে থাকা, আর শরীফের শর্ত গুলো মেনে সানজিদার মাস্টার্স হয়েছে, কিন্তু ক্যারিয়ার আর হয়নি। শরীফের ব্যবসা কার্গো, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং, রিয়েল এস্টেট, ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট। বৃটেন থেকে সংসারে ফেরত যাওয়ার পর দুই-তিন বছর সানজিদা সেসব ব্যবসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলো। ব্যবসার ব্যাপারে সানজিদার মতামত শুনে শরীফ বা তার বাবা অবলীলায় হাসতো। কথা প্রসঙ্গে সানজিদার সামনেই বাইরের লোকজনকে হেসে বলতো, বিদেশ থেকে মাস্টার্স করলে যদি বাংলাদেশের ব্যবসা বুঝা যেতো, তাহলে তো সুশীল সমাজের লোকজন এই দেশে ব্যবসা বাণিজ্য করতো। আজকাল আবার নতুন ফ্যাশন, উচ্চশিক্ষিত নারীরা ব্যবসা বুঝবে ... বিদেশী শিক্ষা নিয়ে তারা ঘর সংসার করা ভুলে যায়, কারণ তারা নাকি দুনিয়াদারী বুঝা শুরু করে ...

এসব এখন সানজিদার গা সওয়া হয়ে গেছে। শরীফের ব্যবসা নিয়ে ও এখন আর কোনো আগ্রহ দেখায় না। সংসারে বেশী কথা বললে বেশী ঝামেলা। এখন আর ঝামেলা ভালো লাগে না। আদনান লন্ডন  স্কুল অফ ইকোনমিক্সে এডমিশন পেয়েছে। এই এডমিশনের জন ̈ অনেক বছর তাকে নিয়ে পরিশ্রম করতে হয়েছে। তার পড়াশোনা দেখা, মানসিকভাবে তাকে প্রস্তুত করা, আর তাকে জীবনের যুদ্ধগুলো চিনিয়ে দেয়া তো ছিলোই ... আদনানকে ঘিরে সানজিদার পরিশ্রমের সবটা জুড়ে ছিলো তাকে স্বপ্ন দেখানো, নিজেকে চেনানো, আর হয় তো সানজিদার নিজের না পাওয়া ̧লোর ধূসর দাগকে আপন করে তার মনের ক্যানভাসে রঙীন কোনো জলরঙের ছোপ করার ইচ্ছেটা বুনে দেয়া।

অনেক বছর আগে বাবার বুনে দেয়া সেরকম কোনো ইচ্ছেরাই হয় তো সানজিদাকে ইংল্যান্ডে পডার আর অন ̈রকম কোনো জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলো। সেজন্যই হয় তো সাহস করে এই দেশে এসেছিলো সেই জীবনের খোঁজে। জীবনের কথা এখন আর মনে নেই, কিন্তু সেই এক বছরের সাথে মিশে থাকা ভাষাটা মনের কোনো এক কোণে রয়ে গেছে। এখনও টিভিতে সেই ইংরেজি শুনলে মনের সেই কোণ থেকে স্বপ্নটা উঁকিঝুঁকি দেয়। খুনসুটিকরে। কে জানে, সেটাও হয় তো জীবনেরই কোনো পরিহাস। সানজিদা এ্যালেক্সের দিকে তাকিয়ে যথেষ্ট ইংরেজিতে বললো, তুমি কি আবেদ, হাসানকে চেনো ? ঐ যে ওখানে ডিউটি করছে ?

এ্যালেক্সের কোনো ভাবান্তর হলো না। বোরকা পরা কেউ যথেষ্ট ইংরেজিতে কথা বলছে, এই অভিজ্ঞতা লন্ডনের লোকজনের জন ̈ একেবারেই নতুন না। সে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো, চিনি ম্যাম। কিন্তু ওর নাম হাসান আবেদ, আবেদ হাসান

না। সে কি তোমার পরিচিত ?
-হ্যা পরিচিত। আমি তার সাথে একটু কথা বলতে চাই। তুমি কি সেটার ব্যবস্থা করতে পারবে ?
-তুমি যদি তাকে চেনো, তাহলে তার সাথে নিজে গিয়ে কথা বলো।
-আমার চেহারা বোরকায় ঢাকা। সে আমাকে চিনবে কিভাবে ? আর তার আশেপাশে ভিড়। আমি লোকজনকে ঠেলে সেখানে যেতে পারবো না। বোরকার নেকাব খুলে তাকে ডাকতেও পারবো না। তুমি তাকে গিয়ে বলো আমি কথা বলতে চাই। তাকে আমার কাছে আসতে বলো।

-আমার পক্ষে সেটা সম্ভব না, সরি।

সানজিদা ঘড়ি দেখলো। এগারোটা পাঁচ। ওর হাতে খুব বেশী হলে দশ মিনিট সময় আছে। আদনান তার ইউনিভার্সিটিতে। আজকে তার নবীন বরণ। শরীফ ইংল্যান্ডে আসেনি। তাকে অনেক অনুরোধ করে শুধু আজকের দিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া গেছে। বেকার স্ট্রীট স্টেশনে সোয়া এগারোটায় সানজিদাকে নিতে আসবে শরীফের ফুপাতো বোন রেশমা। একমাত্র রেশমার কারণে শরীফ বেড়ানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। সেই সম্মতিতে জুড়ে দেয়া হয়েছে তিনটা কঠিন শর্ত। এক, এই বেড়ানোর কথা যেন আর কেউ না জানে (বিশেষ করে শরীফের মা বাবা এবং ফুপু)। দুই, বেড়ানোর সময় বোরকা পরে থাকতে হবে, এবং বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বোরকার নেকাব তোলা যাবে না। এবং তিন, এমন কোথাও যাওয়া যাবে না যেখানে মদ খাওয়া হয়, আর লোকজন খোলামেলা পোশাকে থাকে।

রেশমার সাথে সানজিদার উনিশ বছর আগের বন্ধুত্ব। কিংস্টোন ইউনিভার্সিটিতে সে-ও পড়তো সানজিদার সাথে। ননদ হলেও রেশমা শরীফদের পরিবারের কারও মতো না। বরং পরিবারের কড়াকড়িতে সে অতিষ্ঠ। মেয়েটার অনেক সাহস আর বুদ্ধি। সুযোগ পেলেই সে লুকিয়ে দুঃসাহসিক সব কাজকর্ম করে। শরীফদের পরিবারের কেউ সেসব টের পায় না। শরীফকে বলা হয়েছে যে রেশমা ওকে মাদাম তুসো মিউজিয়ামে নিয়ে যাবে। শরীফের দেয়া তিন শর্তের সাথে এই বেড়ানো মানানসই। কিন্তু সানজিদা ভালো করেই জানে রেশমা মাদাম তুসোর ধারেকাছেও যাবে না। রেশমার মাথায় উদ্ভট আর আউলা বাউলা সব পরিকল্পনা। সে হয় তো প্রথমেই সানজিদাকে নিয়ে ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট শো রুমে যাবে। নতুন ডিজাইনের সব অন্তর্বাস আর নাইটি তুলে শরীরের সাথে লাগিয়ে আয়নায় দেখবে। এসব অন্তর্বাস ইংরেজি সিনেমায় বা ফ্যাশন ম্যাগাজিনে মডেলদের পরনে দেখা যায়। সেখানে গিয়ে রেশমা একটু পরপর বলবে, আরে ভাবী লজ্জা পাচ্ছো কেন ? আমাদের ঘরের পুরুষরা এসব জায়গায় আসে না। দেখি তো তোমাকে নীল স্যাটিনের এই নাইটিটায় কেমন লাগে !

এরপর সে সানজিদাকে নিয়ে ম্যাক বা লরিয়েলের শো রুমে গিয়ে বোরকা ফেলে খুব করে সাজবে। পরে হয় তো সিনেমায় যাবে, বা কোনো বেজমেন্ট ক্যাফে বা পাবে গিয়ে চুটিয়ে আড্ডা দেবে। দিনের বেলা বলে এইটুকুই। তার সাথে সন্ধ্যায় বের হলে নির্ঘাত নাইট ক্লাবে নিয়ে যেতো। উনিশ বছর আগেও রেশমা ঠিক এরকমই ছিলো। তখন সে নিজেও বিবাহিতা। কয়েক বছরের মধ্যে তাকেও বোরকা ধরতে হয়েছে। এখন সে চাকরি করে স্বামীর ওকালতি ব্যাবসায়। বাংলাদেশের বেআইনী ইমিগ্রান্টদের কাগজপত্র ঠিকঠাক করে, আর তাদের ঘরের নারীদের দুঃখ দুর্দশা হলে দেখাশোনা করে। অদ্ভুত  ব্যাপার হচ্ছে রেশমার এসব এ্যাডভেন্চারের কথা তার স্বামীও জানে না। আর দশ মিনিটের মধ্যে রেশমা আসবে। তার আগেই আবেদের সাথে কথা বলা দরকার। হয় তো দুই মিনিটই লাগবে। এর বেশী তার সাথে কি আর কথা থাকবে ! সানজিদা এ্যালেক্সের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বললো, দেখো, আমি অনেক দূর থেকে শুধু হাসানের সাথে দেখা করতেই এসেছি। তার সাথে দুই মিনিট কথা বলেই আমাকে চলে যেতে হবে। প্লিজ , আমাকে একটুহেল্প করো।

-তুমি তোমার নেকাব তুলে তার সামনে গিয়ে হ্যালো বলো, তাহলেই হবে। আমি ডিউটিতে আছি, তাই তোমাকে এই হেল্প করতে পারবো না। সরি।

সানজিদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কোনো একটা ছুতায় একবার সরি বলে ফেললে এই দেশের লোকজন আর কিছু করবে না। এদের হেল্প করার তালিকা ছোট এবং সীমিত। হেল্প কতোটুকু করা যাবে সেটাও এমপ্লয়মেন্ট ম্যানুয়ালে লেখা থাকে। এর বাইরে কিছু করতে বললে এরা সরিই বলবে। সানজিদা এ্যালেক্সের কথামতো কাজ করলো। বোরকার নেকাব তুলে আবেদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শুদ্ধ বাংলায় বললো, কেমন আছো আবেদ ? আবেদের চারপাশে অনেক ভিড়... টিকেট সমস্যায় থাকা ব্যস্ত লোকজন, ওয়াকিটকিতে ঘসঘস শব্দে ভেসে আসা নির্দেশনা বা তথ্য। এসবের মাঝে সে একবার চট করে তাকিয়ে বাংলায় বললো, আমি ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন আপা ?

-হ্যা ভালো আছি। তুমি আমাকে চিনতে পারোনি, তাই না ?
-না, সরি আপা। আপনি কি দুলালের বোন ? বাংলাদেশী তো, নাকি কোলকাতার ?

সানজিদা হতভম্ব হয়ে গেলো। আবেদ সতি ̈ই ওকে চিনতে পারেনি। চিনতে পারলে আপনি করে বলতো না, বা দুলালের বোন কি না জিজ্ঞেস করতো না। ওর চেহারা তাহলে আবেদের মনে নেই। নাম মনে আসার প্রশ্নই আসে না। সেই রাতে আবেদের নাম জানা হলেও আবেদ ওর নাম জিজ্ঞেস করেনি। সানজিদা কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই ব্যাস্ততার মাঝে সেই রাতের বিষদ স্মৃতিচারণ করে নিজেকে চেনানোর এখন আর কোনো মানে হয় না। এক রাতের কয়েক ঘন্টার ঘটনা ... আবেদের জীবনে হয় তো এমন আরো ঘটনা ঘটেছে। সবগুলোর স্মৃতি নিশ্চই তার মনে নেই। হয় তো সে এখন ঘর সংসার করা মানুষ। পরুষরা ঘর সংসার শুরু করলে খেলোয়াড়ি জীবনের সব স্মৃতি ছুড়ে ফেলে দেয়। সানজিদার নিজেকে একটা ইডিয়ট মনে হচ্ছে। উনিশ বছর আগে আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার স্মৃতি নিয়ে হঠাত করে আবেদের সাথে কথা বলতে আসা একেবারেই উচিত হয়নি। এসব ভাবনার মাঝে অভিব্যক্তি কি হয়েছিলো সেটা সানজিদা জানে না। হয় তো ওকে দেখতে অপ্রস্তুত লাগছিলো। আবেদ সহজ স্বরে বললো, আপনার টিকেটের কোনো সমস্যা হয়েছে ? টিকেট দেখান, আমি হেল্প করছি। সানজিদা ক্লান্ত ভঙ্গিতে টিকেট বের করে দিলো। আবেদ এক নিমিষে সেটা দেখে বললো, আপনার অল জোন ডে-ট্রাভেল কার্ড। সারাদিনের জন ভ্যালিড। আপনি এই টিকেটে পুরো লন্ডন ঘুরতে পারবেন। শুধু টিউবে না, টধান্সপোর্ট ফর লন্ডনের বাসেও এই টিকেট ব্যবহার করতে পারবেন।

-আমি দুলালের বোন না। আমি বাংলাদেশের মেয়ে। তোমার সাথে আমার উনিশ বছর আগে দেখা হয়েছিলো। বারনেটে। ওশেনিক ক্লাবে। জুলাই মাসের এগারো তারিখে, রাত নয়টায়।

আবেদ হকচকিয়ে গেছে। সানজিদা বোরকার নেকাব নামিয়ে দিলো। কারণ আবেদ এখন বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সেই দৃষ্টিতে বিস্ময়ের সাথে ভয়ও আছে। সেই ভয় সানজিদার দৃষ্টি এড়ায়নি। ভয়টা হয় তো বলছে আবেদ এখন ওকে চিনতে পেরেছে। চিনতে না পারলেও হয় তো দিন তারিখের হিসেবে তার কিছু একটা মনে পড়েছে। আবেদের দৃষ্টিতে এই ভয় সানজিদার ভালো লাগছে না। ভীরু পুরুষ দেখলে এখন ক্লান্তিবোধ হয়। সানজিদা হালকা স্মরে বললো,

- তোমার হয় তো এসব মনে নেই। কিন্তু আমার আছে। তোমাকে দেখে তাই কথা বলতে এলাম। এর বেশী কিছু না।
-সরি .... আমার সত্যিই আপনাকে মনে পড়ছে না। আর এতো আগের কথা আমার মনে নেই। আমি বারনেটে ক্লাবিং করতাম, কিন্তু এতো ডিটেইলস মনে রাখা সম্ভব না ... সানজিদা একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো, ভালো থেকো। আসি।

-শুনেন, প্লিজ ... এক মিনিট। একটু দাড়ান।

সানজিদা ঘুরে হাঁটা শুরু করলো। রেশমার আসার সময় হয়ে গেছে। তার সামনে আবেদের সাথে কথা বলায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে আবেদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আবেদের সাথে কথা বলতে যাওয়াটা একটা ফালতু কাজ হয়েছে। এই বয়সে এরকম কাজ করার কোনো মানে হয় না। বৃষ্টি শুরু হওয়াটা সময়ের ব্যাপার ছিলো। আজকে সকাল থেকেই আকাশে সূর্যের দেখা নেই। চারদিকে কালো মেঘের ছায়ায় লন্ডনের অতি পরিচিত দৃশ্য̈। এমন দিনে আকাশের ইচ্ছেমতো বৃষ্টি হয়। টিউব স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়ানোর সাথেসাথে বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি শুরু হলো। সকাল এগারোটায় বাইরে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়েছে। সানজিদার মনের ভেতরেও তেমনই তমসা এখন।

আক্ষেপ আর অপমানের জীবনে আমণ্ত্রণ দিয়ে আরেকটা খেদ আনা হয়েছে। একটুআগে এই কাজটা না করলে নতুন কোনো খেদ মনকে অন্ধকার করতো না। যেই জীবনে সূর্যের আশা নেই, সেখানে আমণত্রণ দিয়ে নতুন তমসা বোকারাই আনে। হয় তো সানজিদা তেমনই কেউ। সাথে ছাতা নেই। বৃষ্টির কারণে হয় তো রেশমার আসতেও দেরী হবে। সানজিদা বেকার স্ট্রীট টিউব স্টেশনের শেড দিয়ে উঠে সেখানেই দাঁড়ালো। বোরকার নেকাব সরিয়ে দিলো। সাথে ফোন নেই। রেশমা এসে ওর চেহারা না দেখলে চিনবে কিভাবে ? বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে। এখানে এখন ভিড়। ছাতার অভাবে অনেকেই আটকা পড়েছে। বৃষ্টি না ধরা পর্যন্ত ভিড়টা এরকমই থাকবে মনে হচ্ছে।

-আমি খুব সরি ... একটা মিনিট আমার সাথে কথা বলো প্লিজ ...

সানজিদা চমকে ঘুরে তাকালো। আবেদ এসে দাঁড়িয়ে আছে। সহজ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মাস্টার্সের কনভোকেশনের সন্ধ ̈ায় রেশমার বন্ধুদের সাথে ওরা গিয়েছিলো ওশেনিক ক্লাবে। সব ভুলে উদ্দাম কোনো আনন্দে ভেসে ওরা নাচছিলো। এরপর জীবনে কি হবে সেটা ওরা হয় তো সবাই-ই জানতো। তাই যে যার মতো আনন্দ করছিলো সেই মুক্ত স্বাধীন আর আপন জীবনের স্রোতে। কোনো কারণে হয় তো ওদের মনের মাঝে গেঁথে ছিলো একটা অস্থিরতা ... এটাই মুক্ত স্বাধীন আর আপন জীবনের শেষ রাত। এরপর থেকে হয় তো এই আনন্দ আর ধরা দেবে না। ক্লাবের বারের কাছে এসে বরফ শীতল ডায়েট কোকে গলা ভিজিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলো সানজিদা। সেখানে একুশ-বাইশ বছরের একজন যুবক এসে ঠিক এভাবেই তাকিয়েছিলো ওর দিকে। তামাটে বর্ণের শক্ত পুরুষালী চেহারা, মেয়েদের মতো বড় বড় চোখ। সুঠাম পৌরুষে ভরপুর গড়ন। অভিব্যাক্তিতে নির্লিপ্ত, নিরাসক্ত অথচ সতেজ ভাব। সেই যুবক তাকিয়ে ছিলো ঠিক এখনকার আবেদের মতো ...  ̄স্বচ্ছ, নির্ভয় আর দৃঢ় দৃষ্টিতে। সেরকম দৃষ্টিতে তাকিয়েই আবেদ বললো,

- তুমি কিংস্টোন ইউনিভার্সিটিতে পড়তে। ওশেনিক ক্লাবে আমাদের পরিচয় হয়েছিলো, উনিশ বছর আগে।
-পরিচয় হয়নি। আমি তোমার নাম জেনেছিলাম, তুমি আমার নাম জানতে চাওনি। আমরা দুজন দুজনের নামও জানি না ... এটাকে পরিচয় হওয়া বলে না।

আবেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, আমি সরি। আমি তখন খুব বাচ্চা ছিলাম। আমার মধ্যে অতো ভদ্রতাবোধ ছিলো না। তোমার নাম কি ?

সানজিদা নাম বললো না। অল্প হেসে বললো, তুমি এখনও বাচ্চাই আছো। তুমি আমাকে মনে করতে পেরেছো, সেটাতেই আমি আনন্দিত। থ্যাংকস।

- এখন সবই মনে পড়ছে। তুমি আমি অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম। এরপর আমরা ডান্সফ্লোরে অনেকক্ষণ ছিলাম। তোমার সাথে কিছু ফ্রেন্ডস এসেছিলো। তাদের একজন খুব সম্ভবত তোমার ননদ। আমরা একসাথে ড্রিংকসও করেছিলাম

... এরপর ওদেরকে রেখে আমরা দুজন আলাদা হয়ে গেলাম .... ক্লাব থেকে

বের হয়ে গেলাম ... আবেদ হঠাত করেই নিভে গেলো। হয় তো সে ভাবছে সানজিদার বোরকা পরা অবয়বের সাথে এই কথা ̧লো একেবারেই যাচ্ছে না। তার দৃষ্টিতে ভয় জমা হয়েছে। সানজিদা মনে মনে বললো, ভয় পেও না আবেদ, প্লিজ। জীবনে অন্তত। একজন পুরুষ দেখি, যে ভয় পায় না।

-সরি ... আমার মনে হয় এখন তোমাকে এসব বলা উচিত না। তুমি তখনই বিবাহিত ছিলে। আর এখন তোমার পরনে বোরকা ...
-তাতে কি হয়েছে ? তুমি তখন জানতে আমি বিবাহিত। তারপরও তুমি আমার সাথে ছিলে ... তখন যে ভয় পাওনি, এখন হঠাত সেই ভয় পাচ্ছো কেন ?
-ভয় না ... আমি তখন এতো ভাবতাম না। হয় তো এখন তুমি শুধু ঘর সংসার করছো। তোমার জীবন আর তখনকার মতো ফ্রি না। তাই এখন সেসব ঘটনার আলাপ করা মনে হয় উচিত না ...
-ইটস ওকে। ঘর সংসার হয় তো তুমিও করছো।

আবেদ অল্প হেসে তরল কণ্ঠে বললো, না, আমি বিয়ে করিনি। ঘর সংসার হয়নি আমার। আগের মতোই আছি। এখনও সুযোগ পেলে বারনেটে ওশেনিক ক্লাবে যাই। সানজিদার মন ভালো লাগছে। বাইরে বৃষ্টি একটু কমে এসেছে। চারদিকের ঘন অন্ধকারও এখন একটু কম। অল্প আলোতে আবেদকে দেখতে সুন্দর লাগছে। আবেদের সাথে ওর আগের দেখাও খুব অল্প আলোতেই হয়েছিলো। সানজিদা হালকা স্মরে বললো

-ওশেনিক ক্লাবে কাউকে ভালো লাগলে তুমি এখনও তার সাথে সময় কাটাও ?

আবেদ হাসিমুখে বললো, হ্যা। তাকে নিয়ে ডান্সফ্লোরে যাই, একসাথে ড্রিংক করি ...

-এরপর তাকে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আলাদা হয়ে যাও ? ক্লাব থেকে নিজের এপার্টমেন্টে নিয়ে যাও ?
-হ্যা... আমার এপার্টমেন্ট এখনও সেখানেই ... আমি একাই থাকি। কাউকে সেখানে নিয়ে যেতে অসুবিধা কি ? তুমি কোথায় থাকো এখন ? বাংলাদেশে, না ইংল্যান্ডে ?
-কেন ? আমাকে আবার তোমার এপার্টমেন্টে নিয়ে যাবে ? আকাশ এখন অনেকটা পরিষ্কার। বৃষ্টি থেমে গেছে।

আবেদ মিষ্টি করে হাসলো। সানজিদার প্রশ্নের উত্তরে কিছু বললো না। সহজ স্মরে বললো,

-আমি তোমার নাম জানি না। এখনও জিজ্ঞেস করিনি .... সরি।
-হুম ... বললাম তো, তুমি এখনও বাচ্চাই আছো।
-তোমার নাম কি ?

সানজিদা এবারও নাম বললো না। রেশমাকে দেখা যাচ্ছে। ব্যাস্ত ভঙ্গিতে হেঁটে আসছে। দেখে মনে হচ্ছে সে সানজিদাকে দেখেনি। সানজিদা আবেদের দিকে তাকিয়ে হালকা স্বরে বললো, আমাকে যেতে হবে। আসি। ভালো থেকো।

-তোমাকে আমার মনে আছে কেন জানো ? ... কারণ তুমি খুব স্পেশাল। অথচ আমি তোমার নামও জানি না।

সানজিদা কিছু না বলে অল্প হাসলো। এরপর ঘুরে রেশমার দিকে হাঁটা শুরু করলো। ওকে দেখেই রেশমার চোখমুখ উত্তাল হয়ে গেছে। ভিড় ঠেলে প্রায় দৌড়ে এসে রেশমা ওকে জড়িয়ে ধরলো। এরপর আনন্দমাখা স্বরে বললো,

কি ভাবী ... শেষ পর্যন্ত ছাড়া পেলে তুমি !
-তুমি আছো ... ইংল্যান্ডে আমাকে কে আটকাবে ?

রেশমা পানি কেনার জন্য গিফ্ট শপে ঢুকলো। সে দুটা ছাতা এনেছে। আকাশ পরিষ্কার হলেও একটু আধটু বৃষ্টি হচ্ছে। সূর্যের কোনো দেখা নেই। সানজিদা দোকানের বাইরে ছাতা খুলে দাঁড়ালো। ও টেরও পায়নি কখন আবেদ ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। টের পেলো যখন আবেদ কথা বললো, খুব শান্ত আর সহজ স্বরে।

-তোমাকে একটা প্রশ্ন করার জন ̈ ফিরে এসেছি। তুমি প্রশ্নটার উত্তর দিলে চলে যাবো।

সানজিদা আড়চোখে দোকানের ভেতরে দেখলো। রেশমা ব্যস্ত, এদিকে তার নজর নেই। আবেদ আবার বললো,

-একটা প্রশ্ন ... আর কিছু না।
-করো। তবে আমি উত্তর দেবো কি না সেই প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না।

আবেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হালকা স্বরে বললো,

-সেই রাতে আমি পাঁচমিশালী ড্রিংক খেয়ে নেশার ঘোরে ছিলাম। কিছু ঘটনা মনে আছে, কিছু নেই। আমরা যখন ক্লাব থেকে আলাদা হয়ে আমার এপার্টমেন্টে গেলাম, সেখানে আমি কি তোমার সাথে খুব খারাপ কিছু করেছি ?

সানজিদা হাসলো। এরপর খুব সহজ স্বরে বললো, না। খারাপ কিছু করোনি। তুমি পারফেক্ট জেন্টেলম্যান ছিলে আবেদ।

রেশমা এসেছে। আবেদকে দেখে ইংরেজিতে বললো,

-কি ব্যাপার ? সব ঠিক আছে তো ?

আবেদের অভিনব ভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন হলো না। খুব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সে পকেট থেকে সানজিদার টিকেটটা বের করে ইংরেজিতে বললো,

-আপনার টিকেট ম্যাম। চেক করার পর আমার কাছে রয়ে গিয়েছিলো। দুঃখিত। এনজয় ইওর ডে ইন লন্ডন।

সানজিদার ধারণা একেবারেই ঠিক ছিলো। বেকার স্ট্রীট থেকে ওকে নিয়ে রেশমা বাসে উঠলো। খুব আনন্দিত কণ্ঠে বললো,

- ভাবী, আমরা এখন যাবো ভিক্টোরিয়াস সিক্রেটে। তোমাকে একদম নতুন লাইনের কিছু জিনিস দেখাবো....
-গ্রেট। চলো, আই এ্যাম ইন।
-আচ্ছা ভাবী ... টিউব স্টেশনের যেই লোকটা তোমাকে টিকেট দিয়ে গেলো, তাকে কেন যেন খুব চেনা লাগছে। তোমার কি তাকে চেনা লাগছে?
-নাহ ! ... আমি চিনবো কোথ্থেকে ? আমি কি এখানে থাকি ?

রেশমা আনমনে মাথা নাড়লো। সেই মাথা নাড়ানোতে কি ছিলো সানজিদা জানে না। রেশমা বুদ্ধিমতি মেয়ে। খুব চেনা কাউকে চিনে ফেললেও সে সেটা নিয়ে কথা বলবে না। সানজিদা সেরকম না। ও কথা বলে। কারণ ওর জীবনের বারো মাস তপনহীন তমসার আগ্রাসনে নিথর। আদনানকে এখানে রেখে ওকে সেই নিথর তমসার জীবনে ফেরত যেতে হবে। সেখানে কথা বলার মতো ওর এখন আর কেউ নেই।

 

কেতন শেখ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top