সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের গল্প-০৯;  অজানা পাঁচ শহীদের গল্প : শাহান আরা জাকির পারুল


প্রকাশিত:
১৮ অক্টোবর ২০১৯ ২২:৩০

আপডেট:
৩ মে ২০২০ ১৯:৩৪

 

প্রায় ছয় বছর পর বাড়ি এলাম।  দেশেই থাকি। ঢাকায়।  বাড়ি পাবনা শালগাড়িয়ায়। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে যেমন ঢাকার পরিবর্তন দেখেছি স্বচক্ষে, তেমনি নিজ বাড়ির আশপাশের পরিবর্তনও লক্ষ্য করলাম। 
বাড়ির কাছ দিয়েই গাড়ি নিয়ে ঘুরেছি এক ঘন্টা। চিনতে পারি নাই। 
অনেক বড় বড় দালান কোঠা গড়ে উঠেছে। রাস্তা ঘাট এর উন্নতি বেশ চোখে পড়ার মত। 
গলিতে গলিতে রাস্তার নামের সাইনবোর্ড। বাড়ির হোল্ডিং নং সহ ঠিকানা, ইত্যাদি। 
আমাদের বাড়িটা একটা বিশাল পুকুরের উত্তর পর্ব পাড়ে। আর পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে চারজন বীর শহীদের সমাধি। অনেক পুকুরের পাশ দিয়ে ঘুরলাম। সমাধি পেলাম না খুঁজে। আবার পথ পরিবর্তন। 
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়লো একটা সাইনবোর্ড “হাজরা মালাকার রোড”। 
ড্রাইভারকে বললাম, এই রাস্তায় ঢোক, পেয়েছি। 
পুকুরের চারপাশেই বিশাল বিশাল বাড়ি। আগে ওখানে শূণ্য মাঠ ছিল। ঘাস আগাছায় ভরা। পুকুরের পাড়গুলোও বাঁধানো। রাস্তাটা অনেক প্রশস্ত ও পাকা। 
চারদিক তাকালাম। পুকুরের পশ্চিমকোণে চারজন শহীদের সমাধিটাও পাকা করে বাঁধানো। নামের ফলক খুজলাম। চোখে পড়লো না। আগাছায় ঢেকে আছে চারপাশ। নাম ফলকের লেখাটাও মুছে গেছে হয়তো। 
অনেক চেষ্টা করে আমার ছোট ভাই সুরুযের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম তাঁদের নাম-
১. আলতাফ হোসেন আলতু
২. রাণু
৩. লুটু ও 
৪. হেনা। 
আলতু ভাই ও রাণু ভাই দুজন আপন চাচাতো ভাই। আর দুজন বন্ধু। সবার বাড়ি-ই শালগাড়িয়াতে, আশে পাশে। 
সন্ধ্যার দিতে বিদ্যুৎ চলে গেল। 
প্রচন্ড গরম। 
একটু অন্ধকার হতেই জ্যোৎস্নার আলো ফুটে উঠলো। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম পুকুর পাড়ে। 
নির্জন এই সময়টা। 
দু’একজনের সাথে আমার কর্তা আলাপ বিনীময় করলেন। 
আমরা বসলাম পুকুর ঘাটের এক পাড়ে। 
স্মৃতির সাগরে ডুবে গেলাম। 
প্রায় তিন যুগ আগের অতীত। 
তখন ঐ চারজন শহীদ বেঁচে ছিলেন। 
ফ্রক পড়া শিশু বয়স আমার। 
এই পুকুরে পেটের নীচে মাটির কলস চেপে সাঁতার কাটতাম। যতক্ষণ খুশী, ইচ্ছেমত ঝাঁপাঝাপি। লম্বা চুল ছিল আমার। জট বেঁধে যেত। মা, বাবা, ভাই, বোন সবাই আমাকে, আম্মার খালাতো বোন-ফাতেমা খালাম্মার বাসায় রেখে চলে গেলেন। বাবার কর্মস্থল সিলেট সাতগাঁও চা বাগানে। 
আমাকে এতিমের মত রেখে তাদের অনুভূতির কথা জানি না। 
আমি জানি আমার কথা। 
যা খুশী তাই করতাম। 
বাধা দেয়ার, বা শাসন করবার মত তেমন কেউ ছিল না। 
চা বাগানে পড়ালেখার তেমন ভাল স্কুল ছিল না। লেবারদের ছেলে মেয়েও পড়তো বলে, আমার এই নির্বাসন। 
আমি স্বাধীন। 
ইচ্ছেমত পুকুরে গোসল, খেলাধুলা সবকিছু। খালাম্মাই আমার চুলের জট খুলতেন। উঁকুনে ভরা মাথা। যেন সুন্দরবনের অরণ্যে পোকার বাসা। কখনো আরাম লাগতো খালাম্মা যখন বিলী কাটতেন মাথায়। 
ঝিমুতাম ঘুমে। সহজ সরল এই খালাটিকে মনেপ্রাণে ভালবাসতাম আমি। মায়ের কথা মনে হত। সে যেন বুঝতে পারতেন। আদর করে মাথা নেড়ে দিতেন। 
বিকেল হলেই গোল্লাছুট, এক্কাদোক্কা, ওপান্টিবায়োস্কাপ কিংবা চিবুড়ি খেলা। কেউ পারতো না আমার সাথে। চোরাবুদ্ধিতে ছিলাম নাম্বার ওয়ান। চিবুড়ি খেলতে চিঁ... বলে এক নিঃশ্বাসে তিন চারজনকে ছুয়ে দিতাম। মাঝখানে যে কতবার নিঃশ্বাস ছাড়তাম, কেউ বুঝতে পারতো না। কেউ টের পেয়ে প্রতিবাদ করলে, আঞ্চলিক ভাষায় বলতাম- ও’ খুব কাঁই করে। ওকে বাদ দাও। গ্রুপের লীডার আমি। লীডার বলে কথা। তাকে বাদ দেয়া হত। 

এ ভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন ভালই। 
ঝড় বৃষ্টির দিন এলে তো কথাই নেই। আর যদি সে সময় থাকে, আম, জাম, লিচু, জামরুল। গাছে উঠতে খুব পারদর্শী ছিলাম। এমন কি নারকেল গাছের মাথায়ও উঠতে পারতাম।
ভাবতে ভাবতেই বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো। 
আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। 
আমি ফিরে গেলাম আমার হারানো শৈশবে। ফ্লাশ ব্যাকে দৃশ্যমান হলো একদিনের ঝড়ের ঘটনা। 
আমাদের বাসার পাশের বাড়িটাই আলতু, রানু ভাইদের। 
রানু একটু শান্ত প্রকৃতির ছিল। আর আলতু ভাই ছিল টগবগে মিশুক প্রকৃতির। আলতু ভাইদের বাড়ির সামনেই রাস্তা ঘেঁসে বিশাল জামরুল এর গাছ ছিল একটি। আম গাছ ও ছিল অনেক বড় বড়। 
সব গাছই ফলে ভরা। 
ঝড় শেষ হলে, সবাই গেল আম কুড়াতে। এই ফাঁকে একা আমি উঠলাম জামরুল গাছে। কোমড় বাঁকা গাছ। সহজেই ওঠা যায়। থোকা থোকা জামরুল। 
বৃষ্টি ধোয়া, পরিষ্কার। ছিঁড়ে ছিঁড়ে আগে খেলাম কয়েকটি। রসালো, মিষ্টি। কী অপূর্ব স্বাদ। এরপর কোঁচড় ভরে, ঝোপা ভেঙ্গে ভেঙ্গে পাড়তে লাগলাম। হঠাৎ দেখি, আলতু ভাই ছাতা মাথায় দিয়ে গাছের নিচে আসছে। নিচে অনেক পাকা পাকা জামরুল পড়ে আছে ব্যাগ নিয়ে কুড়াতে থাকলো। 
কী সর্বনাশ!
কি করি এখন?
কিছুতেই আলতু ভাই এর জামরুল কুড়ানো শেষ হয় না। একটা একটা করে খেতেও লাগলো। উপায়ন্ত না দেখে আস্তে আস্তে পেছন দিকের ডাল দিয়ে নামতে চেষ্টা করতেই, ডাল গেল মড়াৎ করে ভেঙ্গে। বাদুর ঝোলার মত ডাল ধরে ঝুলতে থাকলাম। 
কিডারে?
আলতু ভাই ঘুরে দেখেই দৌড়ে এল। 
পারুল নাকি রে? বৃষ্টির মধ্যে তুমার এই কাম। 
চুরা কারবার। 
আমি তো ঝুলছিই। 
চ্যাংদোলা করে ধরে আলতু ভাই আমাকে নামিয়ে দিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম। লজ্জাও লাগছিল। 
পাগল কুনকার। নে, আরও কয়ডা জামরুল নিয়্যা যা। সবাই ভাগঝোগ কর‌্যা খাইস। 
খুশী হয়ে বাসায় ফিলাম। সব বান্ধবীরা হিসেব করতে বসলাম-কে কয়টা ফল কুড়িয়েছে!
এখানেও আমি ফাষ্ট। বেশি ফল আমার ভাগে!
সেদিন বুঝি নাই। আজ বুঝি, মনে মনে ভাবি অনেক স্নেহপরায়ন ছিলেন আলতু ভাই। 
এরপর এক সময়। শুরু হোল অসহযোগ আন্দোলন। তারপর স্বাধীনতার যুদ্ধ। 
তারিখটা মনে নেই। 
মার্চ-এর কোন এক তারিখে, সম্ভবত শেষের দিকে পাকহানাদার পাবনা শহরে আক্রমন চালায়। প্রচন্ড গোলাগুলির মধ্যে আলতু ভাই ও তার সহযোগীরাই আমাদেরকে বাসা ছেড়ে গ্রামে যেতে বলেন। 
নানীমা অসুস্থ ছিলেন। ইতোমধ্যে আব্বা-আম্মা আমার সঙ্গে আরও তিন ভাইবোনকে রেখে গেছেন নানা বাড়ীর তত্ত্বাবধানে নতুন পরিকল্পনায়। 
যা হোক- নানীমাকে অসুস্থাবস্থায় সরিয়ে নেয়ার জন্য সহায়তা তারাই করেছিলেন। আশ্বাস দিলেন, বাড়ীঘরের পাহাড়া দেবার দায়িত্ব তাঁদের। 
পায়ে হেঁটে রাতের বেলায় সবাই রওয়ানা হলাম গ্রামে নানা বাড়ির দিকে। নানীমা মরণাপন্ন। কাপড় কাচা একটা বিশাল কাঠের পিড়ি ছিল বাসায়। 
সেটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দোলনাকারে নানীমাকে কাঁধে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলেন, আলতু ভাই ও ছোট মামা, মেজমামা সবাই। 
নানীমা সবার কষ্টের কথা ভেবে কিছুতেই যেতে রাজী হলেন না। যা হোক শেষমেষ বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমরা রওয়ানা হলাম। 
গুলির আওয়াজ বেড়ে গেল। 
আমার ছোট ভাই বোনেরা কান্নাকাটি শুরু করে দিল। অন্ধকারে ঝোপঝাড় পেরিয়ে আছার খেয়ে বারবার, কাঁদতে লাগলো গুড়িয়া (শিশু) রা। 
কিছু দূরে দূর সম্পর্কের এক নানুবাড়ি পাওয়া গেল। গুলির আওয়াজে, শহরের মানুষ গ্রামের দিকে ছুটছে। আর গ্রামের লোকেরা যে যেমনভাবে পারে সাহায্য সহযোগীতা করছে। 
অনেক রাত। 
ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। 
নানু অতরাতে মুরগী জবাই করে ভুনাখিচুড়ী ও মাংস রান্নার ব্যবস্থা করলেন। ঐ নানীমার হাতের সেই মজার রান্না গোগ্রাসে খেলাম সবাই। 
গুলির আওয়াজ একটু কম মনে হলো। নানু রাত্রি বেলায় তাদের বাড়িতে থেকে সকালে রওয়ানা হতে বললেন। একটা খাটে আট-দশ জন গাদাগাদি করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম সবাই। মশারী নেই। প্রচন্ড মশার কামড়। আবার গুড়িয়াদের কান্নাকাটি। এভাবে ঘুম আর হোল না। 
হঠাৎ আবার প্রচন্ড গোলাগুলির ঠ্যা ঠ্যা আওয়াজ বেড়ে গেল। সবাই জমির আল ধরে গ্রামের দিকে আবার রওয়ানা শুরু করলাম। পথে যাওয়ার সময় একটা হিন্দু পরিবার আমাদেরকে ডাকলেন করজোড়ে। আজো মনে পড়ে সেই বয়সের এই ঘটনাটি। 
গরীব পরিবার বোঝা যায়। তারা সেদিন ভুলে গেল জাতধর্মের কথা। আমাদেরকে ছাতুগুড়, পান্তা, মরিচ, মুড়ি খেতে দিলেন, তাদের পুজোর ঘরে রাধাকৃষ্ণমূর্তির পাশে। যেন কোন বিপদ না আসে। 
খুব মজা করে আমরা ছাতু-গুড় খেলাম। 
তারাই একটি গরুর গাড়ীর ব্যবস্থা করে দিলেন। বড়রা পায়ে হেঁটে আর আমরা গুড়িয়ারা ও নানীমা গরুরগাড়ীতে চড়ে রওয়ানা হলাম। পরবর্তীতে জেনেছিলাম, ঐ পুরো হিন্দু পরিবারকেই ব্রাশ ফায়ারে মেরে ফেলেছিল পাক আর্মীরা। 
যা হোক খুব মজা লাগলো তখন, এত বিপদের মধ্যেও। 

গাড়িয়াল ভাই গানের সুরে সুরে মাঝে মাঝে গরুর পাছায় খোঁছা দিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আমরা এই দৃশ্য দেখে হেসে কুটি কুটি। এ ওর গায়ের উপর লুটিয়ে পড়লাম হাসিতে। গাড়ীয়ালও মজা পেয়ে গরুর পাছায় বারবার খোঁচা দিতে থাকলো। 
এভাবেই সন্ধ্যের দিকে আমরা নানুবাড়ি পৌছালাম। এরপর ৯ এপ্রিল আমার প্রিয় নানীমা নিজ গ্রামের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহে.... রাজিউন)। 
দিন দিন দেশের অবস্থা খারাপ হতেই থাকলো। মাতৃ-পিতৃহারা এতিমদের মত আমরা ক’ভাই-বোন, নানুবাড়ি-দাদুবাড়ি চক্রাকারে বাস করতে লাগলাম। 
নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে একদিন স্বাধীন হলো দেশ। 
আমরা ফিরে এলাম আবার শালগাড়িয়ার বাসায়। বাসায় ঢোকার আগেই চোখ পড়লো পুকুর পাড়ে। নতুন বাঁশ দিয়ে ঘেরা দীর্ঘ একটি কবর। তাজা সাদা মাটি। 
এখানো শুকোয়নি। 
আশপাশ থেকে আমাদের দেখে সবাই দৌড়ে এল। 
ওকানে কার কবর? জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো সবাই। ঘটনা শোনার পর আমার চোখে ভেসে উঠলো- ওখানে দাঁড়িয়ে জামরুল হাতে মুচকি মুচকি হাসছে আলতু ভাই। বিনম্রভ্য মাথা নিচু করে পথ চলছে সাদা ধবধবে ছোট খাট গড়নের নাদুস নুদুস রানুভাই।
আরও একজন শহীদ হয়েছেন শুনলাম। আমার আর এক নিকটাত্নীয় প্রতিবেশী আজাদ মামা। তার লাশ খুজে পাওয়া যায়নি। শোনার পরই যেন কোনে ভেসে এল, একটি উর্দু গানের  সুর- “আজ ও খুশীছে দিল রাহা হ্যায়....“। 
পাগলাটি স্বভাবের আজাদ মামা অনেক রাতে পুকুর পাড় দিয়ে গান করতে করতে বাড়ি ফিরতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আলতু ভাইদের সাথে সেও পাড়ার বাড়ী পাহাড়া দিত। 
অনেক রাতে বাসায় যেত। এ অবস্থায়ই রাতে তাকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে মেরে, লাশ গুম করে দেয়। 
আলতু ভাই, রানু ভাই ও আরও দুই বন্ধু লুটু ও হেনাভাই, তারা সেদিন সারারাত বাড়ি পাহাড়া দিয়ে, দিনের বেলায় বৈঠকখানায় তাস খেলছিলেন। ঐ অবস্থাতেই, রাজাকারেরা গুলি করে মেরে রেখে যায় তাদের। 
ভিতর বাড়ি থেকে সবাই আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতে থাকে। 
আহারে, কারবা কি সব্বনাশ হলোরে!
রানু ভাই ও আলতু ভাইয়ের মা দৌড়ায়ে বৈঠকখানায় যায়, কাজের মেয়ের চিৎকারে। 
কত বছর আগের কথা। 
কৈশোরের স্বাধীনতার সময়ের এই পাঁচজন শহীদের কথা আমি জানি। যতটুকু জানি লিখলাম, আমার সাধারণ একটি বইয়ের পাতায়। 
এঁদের কথা কোন পত্রিকার পাতায় কিংবা শহীদ পরিবারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে এটুকু জানি, এই পাঁচজন শহীদের পরিবার কোনধরনের সরকারী সাহায্য পাননি। 
কি ভাবছ চুপচাপ? বাসায় যাবে না?
কর্তার ডাকে ফিরে এলাম এই জগতে। আকাশের মেঘ, বিদ্যুতের ঝলকানি কখন থেমে গেছে। 
শুভ্র, সুন্দর জ্যোৎস্নার আলো ফুটে উঠেছে। 
পুকুরের সিঁড়ি থেকে উঠে এলাম। 
আর একবার তাকালাম স্মৃতি বিজড়িত আগাছায় ঢাকা কবরটিতে। 
কর্তা ও আমি ঘরে ফিরলাম। 
আম্মা খাবার রেডি করে আমাদের অপেক্ষায় বসে আছেন। খেতে খেতে আবার ঐ কবরের কথা আলাপ হল আম্মার সাথে। 
স্বাধীনতার অনেক গল্প। হ্যা, গল্পই বলছি; কারণ যারা সেদিন বুকের রক্ত দিয়ে, অঙ্গ দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছেন, তাঁরা আজ শুধু গল্প ছাড়া আর কিছু নন। 
তাই যদি না হবে?
তবে কেন এই পাঁচ শহীদের কথা কোন পত্রিকার পাতায় বা কোন যুদ্ধোত্তর কাহিনীতে উঠে আসে নাই?
রাত্রি অনেক হয়ে গেছে।
নিজের মনেই প্রশ্ন রেখে ঘুমুতে গেলাম। 
খোলা জানালায় জ্যোৎস্নার আলো। 
মৃদুমন্দ মিষ্টি বাতাস, দু’চোখ ঘুম জুড়িয়ে দেয়। 
তন্দ্রার মধ্যে দিয়ে যেন শুনতে পাই,- শহীদ আজাদ মামা পুকুর পাড় দিয়ে গান গাইতে গাইতে বাড়ী ফিরেছেন- “আজও খুশীছে দিল রাহা হ্যায়, এক পরদেশী দিওয়ানা...!!” 

 

শাহান আরা জাকির পারুল
নাট্যকারলেখক  গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top