সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


করোনা: দুশ্চিন্তায় শ্রমিকরা, বিশ্ব শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা


প্রকাশিত:
১ মে ২০২০ ২০:৩৩

আপডেট:
১ মে ২০২০ ২০:৩৭

 

প্রভাত ফেরী: এই মূহুর্তে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করছে পুরো বিশ্ব। বাদ যায়নি বাংলাদেশেও। পুরো দেশে চলছে কার্যত লকডাউন। ভাইরাসটির সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশেই বিভিন্ন মাত্রার ‘লকডাউন’ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে বিশ্বের কমপক্ষে ৮২টি দেশে সম্পূর্ণ বা আংশিক লকডাউন কার্যকর রয়েছে।

লকডাউনের ফলে এসব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো থেকে শুরু করে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর মধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছে, সারা বিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের অনেক দেশে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কীভাবে এই শ্রমবাজারের ওপর প্রভাব ফেলছে?

লকডাউনের কারনে কোন চাকরী নেই : ওমান থেকে আবু জাফর নামের একজন বাংলাদেশি শ্রমিক বলছেন, লকডাউন শুরুর পরেই মালিক জানিয়ে দিয়েছে, তাদের আর লোক লাগবে না, আমাদের দেশে যেতে বলেছে। অনেক টাকা খরচ করে গতবছর মাত্র এই দেশে এসেছি। এখনো তো দেনাও শোধ হয়নি।এখন কি করবেন বুঝতে পারছেন না আবু জাফর।

সৌদি আরবে ফ্রি ভিসায় গিয়েছিলেন আবু হোসেন। তিনি জানাচ্ছেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই তার কোন কাজ নেই, তাই কোন আয়ও নেই। এই মাসে পরিবারের কাছে কোন টাকাপয়সা পাঠাতে পারেননি। এখানে অবস্থা খারাপ দেখতেছি। অনেক মানুষের কাজ নেই। অনেক কোম্পানি লোক ছাটাই করতেছে। এখন যে আমরা কিভাবে চলবো, তাই বুঝতে পারছি না।

শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়-ই না, ইটালি, ফ্রান্স, সাইপ্রাস, স্পেনের মতো ইউরোপের দেশগুলোয় থাকা অনেক অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছেন চলমান লকডাউনে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যাওয়া শ্রমিকরাও ছাটাইয়ের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাংলাদেশি সাংবাদিকরা।

ইতালির ভেনিসে একটি আবাসিক হোটেলের মালিক আবেগ আল মামুন, যার প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন বাংলাদেশি চাকরি করেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে তার প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

আবেগ আল মামুন বলছেন, এখানে সরকার কর্মীদের জন্য ৮০ শতাংশ বেতন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ মালিকের দেওয়ার কথা। অনেক মালিক সেটাও দিতে পারছেন না। যাদের সর্বশেষ কোন চাকরি ছিল না বা চুক্তিহীন, তারা এরকম কোন সুবিধা পাচ্ছেন না। ইটালিতে প্রায় একলাখ অবৈধ বাংলাদেশি আছে, যারা নানারকম ব্যবসা বাণিজ্য বা চাকরি করতো। লকডাউন শুরু হওয়ার পর তাদের কোনরকম কাজ নেই, আয় নেই। যারা ব্যবসা বাণিজ্য করেন, তাদের ব্যবসা নেই, ফলে তারাও অনেকে আর কর্মীদের রাখতে পারবেন না। ফলে বৈধ বাংলাদেশিরাও বেকার হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

মালয়েশিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক আহমেদুল কবির বলছেন, মালয়েশিয়ায় কয়েক লাখ অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে যারা নির্মাণ খাত, পর্যটন, ছোটখাটো ব্যবসাবাণিজ্যের সাথে যুক্ত। কিন্তু এখন তাদের কোন আয় নেই। সরকারি সহায়তার ওপর টিকে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বাংলাদেশি। বাকি যারা রয়েছেন, তাদের অবস্থাও সুবিধার নয়।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) একটি প্রতিবেদনে বলছে, কভিড-১৯ মহামারির কারণে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আগামী দু’ মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে। এতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চাকরি হারাতে যাচ্ছে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ।

শ্রমবাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দার আশঙ্কা : অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশি সংস্থা রামরুর চেয়ারপার্সন ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলছেন, বিভিন্ন দেশে আনুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করছেন, যাদের সংখ্যা সামান্য, তাদের হয়তো ততোটা সমস্যা হবে না। কিন্তু যারা ফ্রি ভিসায় গেছেন, ছোটখাটো ব্যবসা করেন, ছোট চাকরি করেন, অনিয়মিত শ্রমিক, তারা এখন চরম সংকটে রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় অনেক বাংলাদেশির কোন কাজ নেই। তাদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে, খালি হাতে দেশে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। এদের অনেকে মসজিদে গিয়ে থাকছেন, দাতব্য সংস্থার ওপর নির্ভর করে রয়েছেন।এদের ভেতর আবার অনেককে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।


বিষয়: করোনা


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top