বিদ্যুৎ চাহিদার ওঠানামায় নির্ধারিত সূচির বাইরে লোডশেডিং
প্রকাশিত:
২৩ জুলাই ২০২২ ০০:৩৯
আপডেট:
১৬ মার্চ ২০২৫ ০০:০০

দেশে চলমান বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেক স্হানেই নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এক ঘণ্টার পরিবর্তে কোথাও দেড়-দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। আবার অনেক গ্রাম ও মফস্বল এলাকায় দিনে ৮-১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। দিনে কয়েক দফায় বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
জ্বালানি সংকটের কারণে গত মঙ্গলবার থেকে দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার ঘোষণা দেয় সরকার। লোডশেডের সময়সূচি আগেই নির্ধারণ করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ছাড়া বাকি পাঁচটি বিতরণ সংস্হা-কোম্পানি। গ্রাহক অভিজ্ঞতা বলছে, ঢাকা শহরে সূচি অনুযায়ী মোটামুটি লোডশেড হলেও রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোতে বিশেষ করে ময়মনসিংহ, সিলেট এবং রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে দিনে চার-পাঁচবার বিদু্যত্ যায় এবং এলাকাভেদে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে তীব্র গরম চলছে। এর মধ্যে গত দুই দিন হঠাৎ করে বৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। বিদ্যুৎ চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে বেশি চাহিদা গ্রাহক পর্যায়ে তৈরি হয়েছে। আবার দিনাজপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উত্পাদন কমে গেছে। চট্টগ্রামে কাপ্তাই কেন্দ্রে একটি ইউনিট পুনর্বাসনে পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রাহকদের চাহিদায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ওঠানামার কারণে এবং গ্যাস-তেল-কয়লা সংকটে উত্পাদন কমে যাওয়ায় গ্রিডে ভারসাম্য রাখার জন্য নির্ধারিত সময়সূচির বাইরে লোডশেড করতে হচ্ছে।
ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্হার মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি বিপাকে পড়েছে আরইবি। দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এই প্রতিষ্ঠান। উত্পাদন-সঞ্চালন-বিতরণ ব্যবস্হার মধ্যে সমন্বয় করতে না পারায় গতকাল পর্যন্ত সংস্হাটি কেন্দ্রীয়ভাবে লোডশেডের সময়সূচি জানাতে পারেনি। এর আওতাধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে কয়েকটি নিজ নিজ এলাকায় সময়সূচি ঘোষণা করলেও তা প্রতিশ্রুত সময়ের চেয়ে বেশি লোডশেড করতে হয়েছে।
পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন রিপোর্ট অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি চাহিদার সময় ১১ হাজার ৭৩৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদিত হয়। এ দিন সাবস্টেশন পর্যায়ে সর্বোচ্চ লোডশেড হয় ২ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট। তবে গ্রাহক পর্যায়ে এ লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরো বেশি। এছাড়া এদিন মেশিন শাটডাউনের কারণে ২ হাজার ৩৫৭ মেগাওয়াট এবং পানি, গ্যাস ও কয়লা ঘাটতির কারণে ৩ হাজার ৪৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন করা যায়নি।
গতকাল সারা দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উত্পাদন ধরা হয় ১২ হাজার ৫৭০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ গতকাল লোডশেডিং হওয়ার কথা ১ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট।
এদিকে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরবরাহের কারণে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতাধীন আটটি জেলা লোডশেডিংমুক্ত থাকছে। পায়রার বিদ্যুৎ পদ্মা পেরিয়ে ঢাকা অঞ্চলে আনা গেলে লোডশেড আরো কমানো যেত। লোডশেডমুক্ত জেলাগুলো হলো—বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর।
গত বুধবার বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে এসএমএসের মাধ্যমে লোডশেডের সূচি জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রাহকরা জানান, তারা সেরকম কোনো এসএমএস পাননি।
এ প্রসঙ্গে একটি বিতরণ সংস্হার ব্যবস্হাপনা পরিচালক বলেন, সব গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস পাঠানোর প্রস্ত্ততি চলছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়া গেলে গ্রাহক পর্যায়ে লোডশেড কমানো সম্ভব নয়। ফলে নির্ধারিত সময়সীমা ও সূচির বাইরে লোডশেড করতে হচ্ছে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: