সিডনী রবিবার, ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ঠা ফাল্গুন ১৪৩১


৫২টি শুল্কমুক্ত গাড়ি কাস্টমসে, সুযোগে ছাড়িয়েছে সাবেক ৭ এমপি


প্রকাশিত:
৩০ আগস্ট ২০২৪ ১১:৩৬

আপডেট:
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৪

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ভেঙে দেয়া দ্বাদশ সংসদের বিদায়ী সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা অন্তত ৫২টি গাড়ি আটকে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অবশ্য জুলাই মাসেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সাকিব আল হাসান, ফেরদৌসসহ সাত সাবেক এমপি তাদের গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়েছেন। এ ধরণের আরও ৪টি গাড়ির জন্য ছাড়পত্র জমা পড়লেও কাস্টম ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় ডেলিভারি নিতে পারেনি। চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে পড়ে থাকা মূল্যবান এসব গাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডে সারিবদ্ধভাবে রাখা প্রতিটি গাড়ির শুল্কসহ বাজারমূল্য অন্তত ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। কিন্তু শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতেই এসব গাড়ি আমদানি করেছিলেন দ্বাদশ সংসদের সদস্যরা। অর্থাৎ শুল্ক না দিয়ে নামমাত্র মূল্যে আমদানি করে গাড়ির মালিক হওয়ার সুযোগ ছিল তাদের। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সংসদ সদস্য পদ চলে যাওয়ায় এসব গাড়ি আর ছাড় করছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
ছাত্র আন্দোলনের পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে গত জুলাই মাসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, অভিনেতা ফেরদৌস এবং ব্যারিস্টার সুমনসহ তৎকালীন সাত সংসদ সদস্য চট্টগ্রাম থেকে তাদের গাড়ি ছাড় করে নেন। এতে ৭৫ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আর হেনরী এবং মুজিবুর রহমান মঞ্জু সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও গাড়ি খালাস নিতে পারেনি। এছাড়া অনুপম শাহজাহান জয় ও এবিএম আনিসুজ্জামান নামে আরও দুই সাবেক এমপি গাড়ি ছাড় করাতে নথিপত্র জমা দিয়েছিলেন। এই চারটি গাড়িও এখন কাস্টমসের জিম্মায়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু সংসদটা ভেঙে গেছে। এখন শুল্কমুক্ত সুবিধা তারা পাবেন কি না সে বিষয়ে সরকারের দিকনির্দেশনার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠির জবাবে যে নির্দেশনা দেয়া হবে আলোকে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবো।’ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা মার্সিডিজ বেঞ্জ, রেঞ্জ রোভার এবং বিএম ডব্লিউর মতো মূল্যবান গাড়ি আপাতত বন্দরের বিভিন্ন শেডে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে জটিলতা এড়াতে ৩০ দিন পেরিয়ে গেলে নিয়ম মেনে নিলামে বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‌‘কাস্টমস কর্তৃক ডিউটি পেমেন্ট করার পরেই আমরা চার্জটা নিই এবং ডেলিভারি করি। কেউ যদি ডেলিভারি নিতে না আসে তাহলে ৩০ দিন পর নিলামের জন্য হস্তান্তর করে দিই। এর আগে পর্যটন সুবিধায় আনা শত কোটি টাকা মূল্যের ১০৮টি গাড়ি বারবার নিলাম আহবান করেও বিক্রি করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। স্ক্র্যাপ হিসাবেও এখন এসব গাড়ি কেউ কিনছে না। তাই শুল্ক মুক্ত অবস্থায় সংসদ সদস্যদের আনা গাড়ি নিলামে বিক্রির চেষ্টা না করে সরকারের জিম্মায় নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স এন্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘অতি দ্রুত এটা সরকারি কোনো সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে ওদের টাকাগুলো দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনোভাবেই যেনো গাড়িগুলো নিলামে না যায়। নিলামে গেলে গাড়িগুলো কোনোভাবেই ছাড় পাবে না।’ কাস্টমসের জিম্মায় থাকা এসব গাড়ির স্বাভাবিক নিয়মে সর্বনিম্ন শুল্কহার ৮ কোটি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত। অথচ এই তা পরিশোধ না করেই গাড়ির মালিক হওয়ার সুবিধা পেয়ে আসছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্যরা। আমদানি করা এ ধরনের গাড়ি নিয়ম বহির্ভূতভাবে অন্যজনের কাছে বিক্রির অভিযোগও অনেক সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top