সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করছে প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ : এ কে আজাদ
প্রকাশিত:
২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৩১
আপডেট:
২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৪৯
নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ বলেছেন, দেশে গত ১৬ বছর স্বৈরশাসন চলেছে। এ সময় গণতন্ত্র পদদলিত হয়েছে। সেই সঙ্গে সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চেপে ধরা হয়েছে। অসংখ্য শহিদ ও রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান হয়েছে, এর মূল আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যখন চাপহীন ও ভয়মুক্ত পরিবেশে কাজ করার কথা, তখন দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। দেশের কার্যকর গণথন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে আমাদের মধ্যে, সেটি বাস্তবায়নের বড় অনুষঙ্গ হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। আর এই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরই নির্ভর করছে প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
২৮ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘আক্রমণের মুখে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে নোয়াব। সেখানেই স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন এ কে আজাদ।
এ সময় নোয়াব সভাপতি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমগুলোর যখন কিনা চাপমুক্ত পরিবেশে কাজ করার কথা, অথচ তখন কিনা কোনো কোনো সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা এবং হুমকি অব্যাহত। এমনকি বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি মহল ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে যে ধরনের নানা কর্মসূচি ও বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে, তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর চরম হুমকি ছাড়া আর কিছু নয়। বিমানবন্দরে পুরনো স্বৈরাচারী আমলের মতোই দুই দফায় হয়রানির শিকার হয়েছেন নিউ এজ সম্পাদক। আবার ঢালাওবাবে সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডও বাতিল হয়েছে।
এ কে আজাদ বলেন, কর্মসূচির নামে পত্রিকা অফিস দুটি ঘেরাও, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পত্রিকা বিতরণে বাধা সৃষ্টির যে ঘটনা ঘটছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসবের মাধ্যমে যে ভয়ভীতি তৈরি করা হচ্ছে, তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য চরম হুমকি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, পত্রিকা দুটির বিরুদ্ধে যে ধরনের কর্মসূচি, প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা কোনো সাধারণ প্রতিবাদ কর্মসূচি বা মতপ্রকাশের বিষয় নয়। বরং হুমকি দেয়া হচ্ছে পত্রিকা দুটিকে। উসকানিমূলক কথা-বার্তা, বিদ্বেষ ছড়ানো, অফিসের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং সুযোগ পেলে হামলা করা হচ্ছে। ফলে সংবাদপত্র শিল্প আর্থিক ও ব্যবসায়িক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হৃমকি সৃষ্টিকারী তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের নিরাপত্তা যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে।
নোয়াব সভাপতি বলেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে আমরা দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। দেশের এই সংকটময় অবস্থায় আশা করছি, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে সোচ্চার থাকবেন তারা, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে দেশের সব সাংবাদিক সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই আমরা।
প্রসঙ্গত, সভায় নেয়াব সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আলতামাশ কবির ও ফিনান্সিয়াল এক্সেপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম ও প্রচার ও দাওয়াত বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম, এবি পার্টির আহ্বায়ক আবদুল ওহাব মিনার ও সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন ও যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাছির উদ্দীন পাটোয়ারী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমাদ ও বাসদের উপদেষ্টা খালেখুজ্জামান প্রমুখ।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: