সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


২০১৯ সালে সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথের দুর্ঘটনায় ঝরলো ৮৫৪৩ প্রাণ


প্রকাশিত:
১২ জানুয়ারী ২০২০ ০৫:০৫

আপডেট:
১৬ মে ২০২৪ ২১:৩১

২০১৯ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের চিত্র

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: ২০১৯ সালে সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথের দুর্ঘটনায় মোট ৮ হাজার ৫৪৩ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৪ হাজার ৩১৮ জন যাত্রী। যার মধ্য শুধু সড়কেই ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরে ৭ হাজার ৮৫৫ জনের এবং আহত ১৩ হাজার ৩৩০ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার সকালে ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদনে উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন

মোজাম্মেল হক বলেন, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ ২০১৮ সালের সমান হলেও প্রাণহানী ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে শুধু সড়কেই প্রাণ ঝরেছে ৭ হাজার ৮৫৫ জনের। আহত হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩০ জন। রেলপথে নিহত হয়েছে ৪৬৯ জন, আহত হয়েছে ৭০৬ জন। একই সাথে নদীপথে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২১৯ জন, আহত হয়েছে ২৮২ জন এবং নদীতে নিখোঁজ হয়েছে ৩৭৫ জন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৯৮৯ জন চালক, ৮৪৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮০৯ শিক্ষার্থী, ১১৫ জন শিক্ষক, ২১৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৮৯৪ নারী, ৫৪৩ শিশু, ৩৬ জন সাংবাদিক, ২৬ জন চিকিৎসক, ১৬ জন আইনজীবী ও প্রকৌশলী এবং ১৫৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ২৪ জন সেনাসদস্য, ৫৩ জন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য, তিন বিজিবি সদস্য, একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী, একজন নৌ-বাহিনীর সদস্য, আটজন মুক্তিযোদ্ধা, ছয়জন সাংবাদিক, ৫৮২ নারী, ৪৪৭ শিশু, ৪৭৪ শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ৬৯১ চালক, ৩৫৭ জন পরিবহন শ্রমিক, নয়জন প্রকৌশলী, পাঁচজন আইনজীবি, ২৫ জন চিকিৎসক ও১১৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এসময়কালে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৭ হাজার ৩৫৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বাস, ২৯ দশমিক ৮১ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৫ দশমিক ২২ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২১ দশমিক ৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা। সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ খাদে পড়ে, ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০ দশমিক ৩৪ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে, এবছর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ১৪ জুলাই। ওইদিন দু’টি দুর্ঘটনায় দু’জন প্রাণ হারান। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন গত ৫ জুন। ওইদিন মোট ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহত এবং ৯৩ জন আহত হন। সবচেয়ে বেশি আহত হন ১৫ আগস্টে। ওইদিন ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত এবং ২২১ জন আহত হয়েছেন।

গত তিন বছরের সড়ক দূর্ঘটনার তুলনামূলক খন্ডচিত্র

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনো, বিপদজনক অভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং ছোট যানবাহন বৃদ্ধি হওয়াকে উল্লেখ করেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে সি সি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইনের বাস্তবায়ন, টিভি ও সংবাদপত্র সমূহে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা, দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়াসহ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্রাইভার ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুরুন্নবী শিমু, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবদুল হক, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান প্রমুখ।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top