বাণিজ্য মেলায় বন্ধ জানতেন না তারা
প্রকাশিত:
১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:২৬
আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ২৩:৫০

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: ঢাকা সিটি নির্বাচনের জন্য বাণিজ্য মেলা বন্ধ রাখা হলো টানা দুদিন। তাও আবার মেলার শেষ শুক্র ও শনিবার। যে দুদিন সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। শুক্রবার বন্ধ থাকলেও বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে হাজার হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিল। কারণ তারা জানতেন না বাণিজ্য মেলা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে এই দুদিন
কিন্তু মেলা বন্ধ থাকায় তাদের হতাশ হয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতার উপস্থিতি দেখা যায়। দুপুরের পর যেন ঢল নামে। মেলার চতুর্পাশের রাস্তা বিশেষ করে রোকেয়া স্মরণী, আগারগাঁও, খামারবাড়ি হয়ে বিজয় স্মরণী, মিরপুর রোডের কলেজগেট এলাকা হয়ে দলে দলে মানুষ মেলার দিকে যেতে দেখা যায়। এভাবে বিকাল ৩টার দিকে মেলার প্রধান ফটকসহ আশপাশ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। কিন্তু সবাকেই ফিরতে হয়েছে হতাশ হয়ে। কারণ মেলার সব প্রবেশ পথ ছিল বন্ধ এবং মেলার আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দর্শনার্থীদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরত যাওয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় অনেক দর্শনার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রাজধানীর মিরপুর থেকে দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণে এসেছিলেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, এতদিন সময় পাইনি মেলায় আসার। মেলার শেষ শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি মেলায় আসার পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। সে চিন্তা থেকেই আজ (গতকাল) মেলায় এসেছি, কিন্তু এসে তো দেখি বন্ধ। আগেই তো জানানো হয়েছিল, শুক্র ও শনিবার মেলা বন্ধ থাকবে, তারপরও কেন আসলেন, এর জবাবে তিনি বলেন, কখন-কীভাবে জানিয়েছে বিষয়টি, আমার নজরে আসেনি। হয়তো পত্র-পত্রিকায় এসেছে, কিন্তু সরকারের উচিত ছিল টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বন্ধের বিষয়টি বারবার প্রচার করা। সেটি না করায় আজ আমাদের ভুগতে হলো।
শুধু হাবিবুর রহমান নন, তার মতো হাজারো ক্রেতা-দর্শনার্থীকে শুক্রবার ভুগতে হয়েছে মেলায় এসে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে এসেছিলেন, খায়রুল ইসলাম পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে। তিনি বলেন, বন্ধের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। থাকলে তো আর আসতাম না। কিন্তু তিন-চার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে এসে দেখি মেলা বন্ধ, এখন খুব খারাপ লাগছে। বিশেষ করে পাঁচ বছরের ছেলে নাফিস এবং আট বছরের মেয়ে নাবিলার জন্য বেশি খারাপ লাগছে। কারণ মেলায় আসার কথা শুনে সকাল থেকেই তারা দুজনের আনন্দের সীমা ছিল না।
এসে যখন তারা দেখল মেলা বন্ধ, দুজনেই কান্না শুরু করে দিয়েছে। আসলে আমাদের যেমন ভুল হয়েছে খোঁজখবর না নিয়ে চলে আসা, তেমনি সরকারের বড় ভুল বিষয়টি সেভাবে প্রচার না করা।
এদিকে, কয়েক দফা বন্ধ থাকার কারণে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মেয়াদ ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এবার মেলা চলাকালীন ১০ জানুয়ারি মেলা বন্ধ ছিল। সেই সঙ্গে আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে শুক্রবার ও আজ শনিবার মেলা বন্ধ। এ কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা জানিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মেলার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে এক সপ্তাহ সময় বাড়ানোর দাবি ছিল।
উল্লেখ্য, এ বছর ২১ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাণিজ্য মেলা।
যার মধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন রাখা হয়েছে ৬৪টি। সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৩টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ৫৯টি, প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন ৪২টি। মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে দুটি রেস্তোরাঁ, সাতটি স্ন্যাকস বুথ। এ ছাড়াও রয়েছে ৮৪টি প্রিমিয়ার স্টল, ছয়টি সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন, আটটি সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন, ১০৭টি সাধারণ স্টল, ৩৫টি ফুড স্টল। বিদেশি প্যাভিলিয়ন রয়েছে ২৭টি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি ও বিদেশি প্রিমিয়াম স্টল ১৭টি। প্রবেশের জন্য প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকস যা গত বছর ছিল ৩০ টাকা। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের টিকেটের মূল্য আগের মতো ২০ টাকা রাখা হয়েছে। মেলা চলার কথা ছিল ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: