চীনের উহান থেকে ফেরত ৩১৪ বাংলাদেশীর মধ্যে ৮ জন হাসপাতালে


প্রকাশিত:
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:১৩

আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ২৩:৫০

ছবি: সংগৃহীত

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের অবরুদ্ধ নগরী উহান থেকে দেশে ফেরা ৩১৪ জনের মধ্যে আটজনের শরীরে জ্বর থাকায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজনের চিকিৎসা চলছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। একজন অন্তঃসত্ত্বা নার্সের শরীরে জ্বর থাকায় তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আটজনেরই ১০০ ডিগ্রির ওপরে জ্বর থাকায় তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। অন্যদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। সেখানে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন তারা।

পর্যবেক্ষণের এই সময় তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য স্বজনরা যেন ব্যাকুল না হয়ে পড়েন সে জন্য তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানান, আশকোনা হজ ক্যাম্পে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। কারও মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থানান্তর করা হবে হাসপাতালে। আশকোনায় কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণের এই পুরো বিষয়টিতে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে সরকার।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শনিবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহারিয়ার সাজ্জাদ বলেন, জ্বর থাকায় আটজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের নেওয়া হয়েছে আশকোনা হজ ক্যাম্পে। আশকোনা হজ ক্যাম্পে রেখে ১৪ দিন তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, ফ্লাইটে ৩১৪ জন এসেছেন। আরও দুজনের আসার কথা থাকলেও শরীরে জ্বর থাকায় তারা চীনে রয়ে গেছেন। মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এ ভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায় এর লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো।

চীনের উহান থেকে ফেরা শিক্ষার্থীদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায় তাদের রাখা হয়েছে। হজ ক্যাম্পের একেকটি ফ্লোরের মেঝেতে তাদের অনেককে একসঙ্গে পাশাপাশি বিছানা দেওয়া হয়েছে। এমন ব্যবস্থাপনা দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেরত আসা শিক্ষার্থীরা।
উহান থেকে আসা এক বাংলাদেশি নাম প্রকাশ না করে বলেন, পুরো উহান শহর লকডাউন করা হয়েছে, যেন করোনাভাইরাস না ছড়ায়। আমরা চীনে এক রুমে ২-৩ জন থাকতাম। হজ ক্যাম্পে একটা খোলা ফ্লোরে একসঙ্গে ৫৫ জনকে রাখা হয়েছে। তাও আবার মেঝেতে বিছানা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে প্রচুর মশা। স্বাভাবিকভাবে বসতেও পারছি না।

দেশে এসে এমন পরিস্থিতি দেখতে হবে আশা করিনি। উহানেই তো ভালোই ছিলাম। এখানে ব্যবস্থাপনা দেখে আমরা হতাশ। এভাবে গণরুমে একসঙ্গে থেকে আমরা আরও বেশি ঝুঁকিতে। এত লোক একসঙ্গে পাশাপাশি থাকলে কারও যদি সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে বাকিরাও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কিছু স্বাস্থ্য বিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলা।

এ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গত ১১ দিন ধরে উহান শহর কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় অনেকের ঘরেই খাবারে টান পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সেখানে থাকা প্রায় চারশ বাংলাদেশির দিন কাটছিল আতঙ্কের মধ্যে। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কয়েকদিন আগেই। কিন্তু চীন সরকারের সবুজ সঙ্কেত না পাওয়ায় তা বিলম্বিত হয় বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। চীনের সম্মতি পাওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। এরপর এক দিনের মধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ পাঠানো হয় চীনে। উহানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শুক্রবার দুপুরে থেকেই নিয়ে যাওয়া হয় উহানের তিয়ানহি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে।

চীনের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ৯টায় তিয়ানহি বিমানবন্দরে পৌঁছায় বিমানের ওই উড়োজাহাজ। এরপর চলে যাত্রীদের দফায় দফায় পরীক্ষা ও আনুষ্ঠানিকতার পর্ব। রাতভর অপেক্ষার পর স্থানীয় সময় শনিবার ভোর পৌনে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৮টায়) তাদের নিয়ে দেশের পথে রওনা হয় বিমান। দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সবাইকে পরীক্ষা করা হয়। তার আগেই বাইরে প্রস্তুত রাখা হয় বিআরটিসির আটটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস এবং কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। তাদের মালামাল নেওয়ার জন্য রাখা হয় চারটি ট্রাক। পরীক্ষা শেষে আটজনকে হাসপাতালে এবং বাকিদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করছে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আশকোনার হজ ক্যাম্পে পর্যবেক্ষণ চলাকালে এই বাংলাদেশিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে সেনাবাহিনী। যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সমন্বিত সামরিক হাসপাতাল বা সিএমএইচ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top