সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


আরশির সামনে আমি আর দাঁড়াই না : অমিতাভ ভট্টাচার্য্য


প্রকাশিত:
২ জানুয়ারী ২০২১ ২১:২৪

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪০

 

বেশ কিছুদিন হল আমাদের বড় আরশিটার সামনে
আমি আর দাঁড়াই না;   
বড় আরশিতে আমি নিজেকে আপাদমস্তক দেখতে পেতাম।     
তিয়াত্তর বছর আগে জন্মে ছিলাম বনেদী যৌথ পরিবারে;  
আমাদের যৌথ পরিবার সেই সময় একবার ভেঙ্গে যায়।  
তবে ওটাই শেষ ভাঙ্গা,তারপর আর ভাঙন ধরেনি;     
ঐ শেষ ভাঙনের রেশ নিয়ে আমি জন্মেছিলাম।

যৌথ পরিবারের আর পাঁচটা বাচ্চার মত
ধুলোয় গড়াগড়ি খেয়ে কেটে গেল আমার ছেলেবেলা;  
মাঝে মাঝে মনে হত মায়ের কথা।
কেমন স্পর্শ আমার মায়ের?কেমনই বা তাঁর গায়ের গন্ধ? 
বনেদী যৌথ পরিবারের মায়েরা নাকি
আতুর ঘরের অশৌচ কাটিয়ে আবার ফিরে যায় রান্নাঘরে।
আমার ‘মা’কে প্রথম দেখলাম শ্মশান ঘাটে,
মুখাগ্নি করার জন্য আমার ডাক পড়েছিল; 
আগুনের সাথেও তখন আমার প্রথম পরিচয় হয়।  

 আমাদের বনেদী যৌথ পরিবারের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ছিল
বিশ্ব মানের,আর তার কদরও ছিল বিশ্বের দরবারে।  
সময়ের অভাবেই সম্ভবত: শিক্ষা ও সংস্কৃতির বীজ
আমাদের যৌথ পরিবারে রোপণ করতে পারেন নি।     
আমি শুধু নাম সই করতে পারি মাতৃভাষায়,
এর বেশী লেখাপড়া শেখার প্রয়োজন আছে কি না কেউ বলেনি।  
পরিবারের কয়েকজন লেখাপড়া শিখেছিল,
সকলের জন্য অন্ন-বস্ত্র,আর আমাদের বাবুয়ানির জন্য
তারা জোয়াল টেনে যাচ্ছে আজও।   

বনেদিয়ানায় দিকপাল পূর্বজদের অনুসরণ করে,  
কোঁচানো ধুতির ওপর গিলে করা আদ্দির পাঞ্জাবীতে
কৈশোরের আমি দেখতে কেমন ছিলাম, 
বড় আরশিটা তা জানে।  
অন্ন-বস্ত্রের সংস্থানে টান পড়ল এক সময়,    
বাবুয়ানি করা আর হয়ে উঠল না;   
বনেদিয়ানার ধারকদের কাজ বেড়ে গেল।
দোষারোপের চাপান-উতোর চলতে থাকল কিছুদিন,  
দেখতে পেল না অন্ন-বস্ত্রের ভাঁড়ারে থাবা বসিয়ে রাখা,  
নিঃশব্দে আর দ্রুত গতিতে বেড়ে চলা সদস্য সংখ্যাকে।  
আগুনের সাথে আমার পরিচয় সেই ছেলেবেলা থেকে,
তাই কারণে অকারণে আগুন নিয়ে খেলতে ভয় পেতাম না;    
আমার এই খেলাতে পূর্বজরা তিরষ্কারের ছলে আশকারাই দিতেন। 
আনন্দেই কাটছিল জীবনটা। 
একদিন সেজেগুজে আরশির সামনে এসে
নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠলাম আমি।
আমার দামি পোশাকের প্রায় সব জায়গা ছেঁড়া,  
ছেঁড়া পোষাকের নিচে আমার শীর্ণ শরীর।
মনে পড়ল কার কাছে যেন শুনেছিলাম
“আয়না কখনো ভুল দেখায় না”।
ভয় পেয়ে আরশির সামনে থেকে সরে এলাম,
তারপর থেকে এই বড় আরশিটার সামনে আর দাঁড়াই না।

 

অমিতাভ ভট্টাচার্য্য
কোলকাতা, ভারত



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top