সিডনিতে টার্গেট স্টোরের অভ্যন্তরে দুর্ঘটনায় চোখ হারাতে বসেছিল এক শিশু
প্রকাশিত:
৩ মে ২০১৯ ০৮:১৫
আপডেট:
৭ এপ্রিল ২০২৫ ২০:২০

সিডনির প্যারামাটা এলাকার টার্গেট স্টোরে এক দুর্ঘটনায় সাদ নামের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ঘটনা এতোটাই ভয়াবহ ছিলো যে দৃষ্টিশক্তি উদ্ধারের জন্য তার চোখে দুই ঘন্টার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
সাদের পিতামাতার মতে ভাগ্যবশত এবার তার একটি চোখ শেষপর্যন্ত বেঁচে গিয়েছে, তবে তারা একই সাথে এ সময় সংশ্লিষ্ট টার্গেট স্টোর কর্মচারীদের অসহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
শিশুটির পিতা আদনান জানান, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার তার স্ত্রী দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ওয়েস্টফিল্ড প্যারামাটা শপিং সেন্টারে যায়। সেন্টারে অবস্থিত টার্গেট স্টোরে কেনাকাটার সময় একটি কাপড়ের তাকের শেষপ্রান্তের ধাতব হুক তার পাঁচ বছর বয়সী সন্তান সাদের চোখের ভেতর ঢুকে যায়।
তিনি জানান, হাঁটার সময় সাদের হাতে থাকা একটি খেলনা মাটিতে পড়ে যায় এবং খেলনাটি উঠাতে গেলেই হুকটি তার চোখে বিদ্ধ হয়। এ সময় শিশুটির কষ্ট এবং চিৎকার দেখে তার মা হুকটি টান দিয়ে বের করে আনেন। তখন তার চোখ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে শুরু হয়।
আদনান বলেন, তার স্ত্রী এ সময় আতংকে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বমি করতে শুরু করেন। তিনি তার স্বামীকে সাহায্যের জন্য ফোন করলেও কথা বলতে পারছিলেন না। তখন তাদের সাত বছর বয়সী কন্যা সন্তান ফোনে তার বাবাকে এ দুর্ঘটনার কথা জানায়।
ঘটনার সময় তিনি কর্মসূত্রে সিডনি সিবিডিতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে ফোনে ইমার্জেন্সি নাম্বারে যোগাযোগ করে এম্বুলেন্স ডাকার কথা বললেও শিশুকন্যাটি তা বুঝতে পারছিলো না।
তখন বাচ্চাটি কাউন্টারে গিয়ে টার্গেট কর্মচারীদের কাছ থেকে সাহায্য চাইলেও তারা কোন সাহায্য করার পরিবর্তে বরং পরিবারটিকে তাদের দোকান থেকে বের করে দিতেই উদগ্রীব ছিলো। এসময় একজন কর্মচারী তাদের বলে ‘আপনারা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। এটা সামান্য একটা খোঁচা, তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেই হবে’।
সৌভাগ্যবশত অন্য একজন দয়ালু মহিলা নিজেই বাচ্চাটিকে নিকটবর্তী এক মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান। ঐ মেডিকেল সেন্টারের কর্মচারীরা প্রাথমিকভাবে রক্তপাত বন্ধ করতে সক্ষম হলেও দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে।
সিডনির শিশুদের চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল ওয়েস্টমিড চিলড্রেন হসপিটালে তাকে নিয়ে যাওয়া হলে তারা বিস্তারিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানায় সৌভাগ্যবশত সাদের চোখের মনি আঘাত থেকে রক্ষা পেলেও একটি ছিড়ে যাওয়া অশ্রনালী জোড়া দিতে অস্ত্রোপচার করতে হবে, অন্যথায় তার চোখটি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
শিশুটির পিতা জানান, পরদিন একজন সিনিয়র সার্জন দুইঘন্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখের অশ্রুনালীটি জোড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন এবং বর্তমানে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তারা মনে করেন, এ ধরণের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে সব পিতামাতারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন অন্যথায় অপ্রত্যাশিতভাবেই বাচ্চারা অনেক মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়তে পারে।
এ ঘটনার সাথে গত বছর জুলাই মাসে কফস হারবার এলাকায় একটি কেমার্ট স্টোরে আরেকটি বাচ্চার দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। সে সময় মাত্র বিশ মাস বয়সী আমাইয়া নামের একটি বাচ্চা মেয়ের চোখেও দোকানের একটি ধাতব হুকের আঘাতে প্রচুর রক্তপাত হয়েছিলো।
এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে টার্গেট অস্ট্রেলিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের প্রতিনিধি জানান তারা ঘটনাটি তদন্ত করছেন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে টার্গেট অস্ট্রেলিয়া ভোক্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে।
এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়ার জন্য কিভাবে ইমার্জেন্সি সেবার সাথে দ্রুত ট্রিপল যিরো নাম্বার যোগাযোগ করতে হয়, এ বিষয়ে পরিবারের শিশুসন্তানদেরকেও প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরী।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: