জনসমাগমস্থলে মুসলিম অস্ট্রেলিয়ানরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার


প্রকাশিত:
২৯ মে ২০১৯ ০৬:২৬

আপডেট:
৭ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১৫

জনসমাগমস্থলে মুসলিম অস্ট্রেলিয়ানরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার

অস্ট্রেলিয়া এবং বৃটেনের বিভিন্ন শহরে নানা ধর্মাবলম্বীদের উপর চালানো চার-বছর মেয়াদী এক গবেষণার সাম্প্রতিক ফলাফলে দেখা যায়, বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হওয়া মানুষদের মাঝে অস্ট্রেলিয়ার মুসলিমদের অভিজ্ঞতা তুলনামুলকভাবে খারাপ। সিডনি, এডিলেইড, ক্যানবেরা, মেলবোর্ন, লন্ডন এবং ম্যানচেষ্টারে বিভিন্ন ধর্মের ৩৬০ জন মানুষের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এ বিশ্লেষণের গবেষকরা জানিয়েছেন, সবগুলো শহরের মাঝে এডিলেইডের মুসলিম জনসংখ্যার অভিজ্ঞতাগুলো ছিলো সবচেয়ে বেশি দুঃখজনক। 

অস্ট্রেলিান রিসার্চ কাউন্সিলের অর্থায়নে ২০২০ সালে সমাপ্ত হতে যাওয়া চলমান এই গবেষণাকর্মটি আন্তঃধর্মীয় শিশুদের অভিজ্ঞতা যাচাই করছে। প্রায় শেষের দিকে থাকা এ প্রকল্পের অন্যতম গবেষক ও রয়েল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজির শিক্ষক প্রফেসর এনা হিকি-মুডি জানান, মুসলিম অস্ট্রেলিয়ানদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা নানা সময়ে জানতে পেরে তিনি এই প্রকল্প হাতে নেন। তবে পরবর্তীতে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা চালানোর সময় বাস্তব অবস্থার ভয়াবহতা অনুধাবন করে তিনি হতবাক হয়ে পড়েন। 

তিনি বলেন, গবেষণার জন্য যখন আমি এডিলেইডের একটি মসজিদে প্রতি সপ্তাহেই নিয়মিত যাচ্ছিলাম তখন দেখতাম শ্বেতাঙ্গ যুবকের দল একটি গাড়ি চালিয়ে মসজিদের চারপাশে ঘুরছে এবং গাড়ির জানালা নামিয়ে হাত দিয়ে গুলি করার ইশারা করছে। এমন কিছু দেখাটাও বেশ ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। 

প্রফেসর হিকি-মুডি জানান, বিভিন্ন শিশুদের পিতামাতাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের অভিজ্ঞতার কথা জেনে তিনি তাদের বাস্তব জীবনের কঠিন এ বিষয়টি উপলদ্ধি করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, আমি অসংখ্য ঘটনার কথা শুনেছি কিন্তু একটি বিশেষ ঘটনা যেন আমার মাথায় গেঁথে গেছে। একজন মুসলিম নারী ও তার বোন এডিলেইড শহরে রাস্তায় হাঁটার সময় দেখতে পেলেন, একজন বৃদ্ধা মহিলা তার হাঁটার লাঠি নিয়ে বেশ কষ্ট করছেন। তাদের মনে হলো বৃদ্ধা মহিলাটি সম্ভবত এভাবে রাস্তা পেরোতে পারবেন না তাই তারা তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গেলেন। যখন তারা তার কাছে গেলো তখন বৃদ্ধা মহিলাটি তাদের দিকে ঘৃণা ও রাগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, তোদের হাত সরিয়ে না। আমি আসলে তোদের কাছে আসছিলাম এটা বলার জন্য যে, তোরা যেখান থেকে এসেছিস সেখানে ফিরে যা! এ সময় তিনি তাদেরকে বিচেস বলে গালিও দেন। 

এ ধরণের নানা অভিজ্ঞতা ও ঘটনার ভিত্তিতে চলমান এ গবেষণাকর্মের উদ্দেশ্য হলো অস্ট্রেলিয়ার প্রাথমিক স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য এমন শিক্ষা-উপকরণ তৈরী করা যেন তারা আন্তঃধর্মীয় সহনশীলতা শিখতে পারে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মগুলোর মাঝে বর্ণবাদ ও ধর্মীয় বিভক্তি দূর হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্টেটের স্কুলগুলোতে বর্তমানে এ বিষয়ে কিছু কিছু শিক্ষা দেয়া হয়, তবে বর্তমান বাস্তবতার আলোকে এই প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয় এবং এর প্রভূত উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মতপ্রকাশ করেছেন। 

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top