সন্তান সহ অস্ট্রেলিয়ান খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারককে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার মদদদাতা সারেঙ্গি!
প্রকাশিত:
২ জুন ২০১৯ ০৫:৪১
আপডেট:
৭ এপ্রিল ২০২৫ ২০:২৩

শহুরের চাকচিক্য, বিলাসিতা ও উন্নাসিক জীবনের বাইরে গ্রামের সহজ সরল জীবনের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যেই তারিফ কুড়িয়েছেন প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গী। বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি।-খবর হাফিংটন পোস্টের
সামাজিক মাধ্যমে তার প্রশংসার ঝড়, এমনকি রাষ্ট্রপতি ভবনের শপথ অনুষ্ঠানে জড়ো হওয়া লোকজনও তুমুল হর্ষধ্বনিতে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ভারতের লোকসভা সদস্য হিসেবে উড়িষ্যার বালেশ্বর থেকে নির্বাচিত হয়েছেন প্রতাপ চন্দ্র শারেঙ্গি। বলা হয়, গাড়ি তো দূরের কথা, মোটরসাইকেলও নেই তার। কেবল দুই চাকার একটি সাইকেল তার সঙ্গী। কিন্তু ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, এক গভীর অন্ধকারে ঢাকা হিংস্রতার অতীত রয়েছে তারা।
শারেঙ্গির বিজয়ের পর, বিশেষ করে বৃহস্পতিবার তিনি মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তাকে একজন অকৃতদার হিসেবে উল্লেখ করেছে, যিনি একটি দরিদ্র কুটিরে সাধারণ জীবন যাপন করতেন।
কিন্তু অধিকাংশ প্রতিবেদনে বলা হয়নি যে ১৯৯৯ সালে তিনি বজরং দলের রাজ্য ইউনিটের প্রধান ছিলেন। সেই বছর ২২ জানুয়ারি রাতে কেন্দুঝরের মনোহরপুর গ্রামে দুই নাবালক সন্তানসহ গ্রাহাম স্টেইনস নামের এক অস্ট্রেলিয়ান খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারককে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে এই উগ্রপন্থী সংগঠনটি।
ওই অঞ্চলে হিন্দুদের জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে দুই শিশু সন্তানসহ স্টেনকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত শিশু দুটির মধ্যে টিমোথির ছয় ও ফিলিপের বয়স ছিল ১০ বছর। মনোহরপুরে তারা একটি ভ্যানের ভেতর শুয়ে ছিল।
এ ঘটনায় মামলায় প্রধান আসামি বজরং দলের সদস্য দারা সিং ও তার সহকারী মাহেন্দ্র হেমব্রামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু শারেঙ্গিকে কখনো এ ঘটনায় জেরা করা হয়নি।
২০০৩ সালে ফ্রন্টলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগ দেয়া কমিশন বজরং দলের ভূমিকা নিয়েও কোনো তদন্ত করেনি। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যে এটা কোনো অবৈধ সংগঠন না। কাজেই কোনো বৈধ সংগঠন এমন ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে না বলেই এতে আভাস দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি বলছে, এ হত্যাকাণ্ডে বজরং দলের কর্মীদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন শারেঙ্গি। এমনকি এ ক্ষেত্রে কোনো জেরাও করা হয়নি।
এছাড়া বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা ভিএইচপি’রও সদস্য শারেঙ্গি। ২০০২ সালে উড়িষ্যার বিধানসভায় হামলায়ও তিনি জড়িত ছিলেন। অগ্নিসংযোগ, দাঙ্গা ও সরকারি সম্পদের ধ্বংসের অভিযোগে আরও ৬৬ জনের সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন।
হলফনামা অনুসারে, তার বিরুদ্ধে ১০টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। যদিও এগুলোর কোনোটিতেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি।
পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, কুঁড়েঘরে বসবাস ও গ্রামের কূয়ায় গোসল করে সামাজিক মাধ্যমে তিনি আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছেন। দলীয় সদস্যদের ওপর তিনি নির্ভরশীল বলে খবরে জানা গেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে তিনি অটোরিকশা ব্যবহার করেছেন।
বালেশ্বর জেলার নীলগিরি আসন থেকে ২০০৪ ও ২০০৯ সালে দুইবার উড়িষ্যার বিধানসভা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বালেম্বর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি হেরে যান।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: