ডলারে দুর্বল হলেও রুপির বিপরীতে সবল টাকা
প্রকাশিত:
১৬ আগস্ট ২০১৮ ০০:৫১
আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৩৭

দেশে ডলারের বিপরীতে টাকা বেশ খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে ঠিকই। কিন্তু তার থেকে বেশি দুর্বল হয়েছে ভারতীয় রুপি। একই সময়ে ভারতীয় রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা কিছুটা চাঙ্গাও হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৩.৭০ শতাংশ। একই সময়ে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান কমেছে ৫.৬০ শতাংশ।
২০১৭ সালের জুন শেষে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮০.৫৯ টাকা। চলতি ২০১৮ সালের জুন শেষে প্রতি ডলারের দর দাঁড়ায় ৮৩.৭০ টাকা। অন্যদিকে ২০১৭ সালের জুন শেষে ভারতীয় রুপিতে ডলারের দর ছিল ৬৪.৭৩ রুপি। ২০১৮ সালের জুন শেষে এক ডলারের দর পড়ছে ৬৮.৫৭ রুপি।
তবে একই সময়ে রুপির বিপরীতে চাঙ্গা ছিল টাকা। ২০১৭ সালের জুন শেষে এক রুপি ক্রয় করতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১.২৪ টাকা খরচ হতো। গত অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুনে এক রুপির জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় খরচ করতে হচ্ছে ১.২২ টাকা।
বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনে নিয়োজিত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সহসভাপতি ও জনতা ব্যাংকের এমডি ও সিইও মো. আবদুছ ছালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, মূলত আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশে ডলারের চাপ অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। সে কারণে ডলারের দরও কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি (ট্রেড গ্যাপ) কমে আসছে বিধায় আমরা কিছুটা ভালো অবস্থানে আছি।
এদিকে দেশে সামগ্রিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে আমদানি এলসি খুলতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ডলার না পাওয়ায় বাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসির এলসি মূল্য পরিশোধেও নানা ধরনের জটিলতায় পড়েছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকলেও পর্যাপ্ত ডলার দিতে পারছে না সংস্থাটি। ফলে ডলারের দর ঊর্ধ্বমুখী ধারায়ই রয়ে যাচ্ছে।
বাফেদা সহসভাপতি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো সরকারের বড় বড় সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রকল্পের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার চায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে খুবই কার্পণ্য করা হচ্ছে। আমরা মনে করি বর্তমানে যেহেতু ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আছে, সেহেতু ব্যাংকগুলোকে তারা আরো কিছু বেশি ডলার দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেড় মাসে (১৩ আগস্ট পর্যন্ত) বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১১ কোটি ডলার বিক্রি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিক্রি করা হয়েছিল ২৩১ কোটি ডলার। এর পরও এক বছরে ডলারের দর ৩.৭০ শতাংশ বেড়েছে।
তা ছাড়া গত বছরের আগস্টে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তিন হাজার ৩০৫ কোটি ডলারের বেশি, সেখানে চলতি বছরের ৮ আগস্ট রিজার্ভ কমে তিন হাজার ২২০ কোটি ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মূলত আমদানি চাপ বেড়ে যাওয়ায় এই অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
তাঁর মতে শুধু ডলার বিক্রি করে চাপ কমানো একমাত্র সমাধান নয়। এ ক্ষেত্রে কিভাবে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়, আমদানি কমানো যায় সেসব বিষয়ে সঠিক কিছু কৌশল নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তুতকৃত বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য সারণি থেকে দেখা যায়, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৯৭৮ কোটি ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের তুলনায় ঘাটতি বেড়েছে ৭ গুণেরও বেশি। দেশের ইতিহাসে লেনদেন ভারসাম্যে এত বড় ঘাটতি আগে কখনো হয়নি।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের লেনদেন ভারসাম্যে ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থবছর শেষ করে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৪৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে তিন হাজার ৬২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর আগে কখনোই এক অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে এত বড় ঘাটতি হয়নি।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: