১০ বছরে ব্যাংক খাতে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লোপাট
প্রকাশিত:
৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:৫৮
আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৩১

রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংকিং খাতে একধরনের দুরবস্থা বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন, ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন যোগ করলে খেলাপির প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা।
একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের দাবি এবং তা মেনে নিয়ে আবার সে সিদ্ধান্ত থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরে যাওয়ার পর এবার দেশের ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র চিহ্নিত করতে নাগরিক কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। জাতীয় নির্বাচনের পরই এ কমিটি গঠন করা হবে। এ নাগরিক কমিটি ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরবে।
শনিবার সকালে রাজধানীর খাজানা গার্ডেন রেস্টুরেন্টে ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে আমরা কী করব’ শীর্ষক এক সংলাপে এ তথ্য জানান সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি জানান, নাগরিক কমিশন ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে। ব্যাংক খাত নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা হবে। সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরবে এ কমিশন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যাংক খাত অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এ হৃৎপিণ্ড সচল রাখতে সবাইকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, অনেকে বলছেন কঠিন সময় যাচ্ছে। আসলে কঠিন সময়ে কঠিন সমাধান খুঁজতে হবে। ব্যাংকিং খাতে একসময় নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটত। এখন ব্যত্যয় থেকে বেরিয়ে অপরাধ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তার মতে, ব্যাংকিং খাতকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে নিষ্কৃতি দিতে হবে। সব রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতকে রাজনৈতিক প্রভাব বা হস্তক্ষেপমুক্ত রাখার ঘোষণা দিতে হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সংলাপে দেশের আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ, সাবেক অর্থমন্ত্রী, গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, ব্যাংকার ও আমলারা নানা সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের পরামর্শ দেন। তারা সবাই ব্যাংক খাত ঠিক রাখতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা আশা করেন। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা পায়, এমনকি তারা একের পর এক ব্যাংক অধিগ্রহণ করলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নীরব। একই চিত্র ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। যে অপরাধে একজন গ্রাহক শাস্তি পাচ্ছেন, একই অপরাধে অপর প্রভাবশালী গ্রাহক ছাড় পাচ্ছেন। এ ধরনের দ্বৈতনীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থাকতে পারে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সব গ্রাহকের মর্যাদা সমান। সংলাপে মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের সূত্র ধরে বলেন, গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলিয়ে ১৪টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব অর্থ খোয়া গেছে।
এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ অনুমোদন, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, ব্যাংকারদের পেশাদারিত্বের অভাবে চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় এখন দেশের ব্যাংকিং খাত। একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের যুক্ত করা, পরিচালকদের দুর্বৃত্তায়ন, দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও সবশেষে ঋণ দেয়ায় সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ভঙ্গুর হচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালীকরণ, নতুন ব্যাংক অনুমোদন না দেয়া, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিচারিক ব্যবস্থাসহ জরুরি ভিত্তিতে পাঁচটি ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: