শ্রমিকদের জীবন এত ধূসর কেন?
প্রকাশিত:
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:৩৪
আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৪৬

বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের গুণগত মানের বিশেষ সুনাম রয়েছে। সবার উচিত দেশের পক্ষে সেই অর্জনগুলো ইন্ডাস্ট্রির ভালো কাজগুলো বিশ্বের সামনে তুলে ধরা। সেইসঙ্গে শ্রমিকদের জীবন এত ধূসর কেন- এই প্রশ্নেরও উত্তর নিজেদের ভেতরেই খুঁজতে হবে। কারণ, শ্রমিকরাই ইন্ডাস্ট্রির মূল চালিকাশক্তি।
শনিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অডিটরিয়ামে ‘ডিসেন্ট ওয়ার্ক প্রাক্টিস ইন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সেটিংস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিকেএমই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্রীন ফ্যাক্টরি প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংশোধনের জন্য সেগুলোরও সমালোচনা হবে। কিন্তু অনেক সময় বেশি সমালোচনা করতে গিয়ে আমাদের উল্লেখ্যযোগ্য অর্জনগুলো আড়াল হয়ে যায়। সমন্বিত প্রচেষ্টা হলে সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্প সম্পর্ক ও শ্রম বিষয়ক একাডেমি শিক্ষার অগ্রগামী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআরএলএস প্রোগ্রাম গত বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় সেমিনার করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক পরিস্থিতি ও বাস্তবধর্মী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করতেই আমরা এই আয়োজন করে থাকি। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক বিষয়ে ধারণা লাভ করেন তেমনি তারা এই খাতের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগের সুযোগ পান।’
শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘বাংলাদেশে বিশ্বের শীর্ষ গ্রিন ফ্যাক্টরি আছে, এটি নিশ্চয়ই গর্বের বিষয়। কিন্তু শ্রমিকদের জীবন এতে ধূসর কেন? বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের চাকরির ওপর একটি জরিপ হয়েছিলো, সেখানে বেশিরভাগ শ্রমিকের গড় চাকরির বয়স সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। এর কারণ হচ্ছে শ্রম আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর চাকরি করলে ভালো পরিমাণে অর্থ পাওয়ার কথা। ফলে তাদের সেই সময়ের আগেই চাকরি থেকে চলে যেতে হয়। এটি খুবই দুঃখজনক।’
গার্মেন্টস শিল্পের মানোন্নয়নে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কন্নোয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশ সরকার, আইএলও, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ-সহ অন্যান্য রেগুলেটোরী সংস্থাসমূহের প্রদেয় মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমকল্যাণ নিশ্চিত করতে ও শ্রমিকবান্ধব শিল্প সমাজ গড়ে তুলতে সব মহলকে আহ্বান জানান।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিল্প ক্ষেত্রে যোগ্য সমাজকর্মী গড়ে তোলার জন্য বিশেষায়িত মাস্টার্স প্রোগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন্স অ্যান্ড লেবার স্টাডিজ প্রবর্তন করার জন্য ঢাকা বিশ্বববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বক্তারা।
উল্লেখ্য, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশে প্রথম এক বছর মেয়াদি বিশেষায়িত মাস্টার্স প্রোগ্রাম ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন্স অ্যান্ড লেবার স্টাডিজ’ প্রবর্তন করা হয়েছে। এই মাস্টার্স প্রোগ্রামের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের যেসব কোর্সের ওপর পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে তার মধ্যে শিল্প সম্পর্ক, ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রম আইন, শ্রম নীতি, শ্রম প্রশাসন, যৌথ দরকষাকষি ও শ্রমকল্যাণ অন্যতম।
এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিল্প ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক গবেষণাকর্ম পরিচালনা ও মাঠকর্মের মাধ্যমে শিল্প সমাজের সমস্যা নির্ণয় ও তা সমাধানের প্রচেষ্টা কী হতে পারে এ বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আইআরএলএস প্রোগ্রামের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা আখতার, গ্লোবাল সাসটেইনেবল সার্টিফিকেশন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোতালেব, সিজিং বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জালাল উদ্দিন তুহিন ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সমন্বয়কবৃন্দ, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: