প্রিন্স মুসা সুইজারল্যান্ড থেকে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা আনতে সরকারের সাহায্য চাইলো
প্রকাশিত:
৯ মে ২০১৯ ০৩:০৭
আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৫৫

মুসা বিন শমসের ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা দেশে আনার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন’র সুইজারল্যান্ড শাখায় এই টাকা সংরক্ষিত আছে।
এই ২০ বিলিয়ন ইউরো তার আন্তর্জাতিক বাজারে অস্ত্র ব্যবসার মুনাফার অংশ। তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদার আদনান খাসোগির কাছ থেকে তিনি এ অর্থ পেয়েছেন। কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া তিনি বাংলাদেশে এই টাকা স্থানান্তরের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
সম্প্রতি বিষয়টি উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে একটি চিঠি দিয়েছেন মুসা বিন শমসের। ওই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, এ টাকা দেশে আনা হলে শুধু আমি ও আমার পরিবার উপকৃত হবে না, দেশও সুবিধাভোগী হবে। এজন্য টাকা দেশে আনার ব্যাপারে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তার ব্যবসায়িক পার্টনার আদনান খাসোগি এই অর্থ মুসা বিন শমসেরকে দেয়ার জন্য মৃত্যুর আগে একটি নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে। এতে তিনি বলেছেন, এই অর্থ স্থানান্তরের ব্যাপারে আমি (আদনান খাসোগি) সুইস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি সন্তোষজনক সমাধান দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
উল্লেখ্য, মুসা বিন শমসেরের এই অর্থ চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চেয়েও বেশি। বাংলাদেশের চলতি এডিপির আকার এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা।
এ বিষয় জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মুসা বিন শমসেরের টাকা দেশে আনার প্রস্তাবটি পাওয়া গেছে। কিন্তু বিষয়টি এখনও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। কারণ এটি দেশীয় মুদ্রায় অনেক টাকা। দেশে হঠাৎ করে এই টাকা প্রবেশ করলে মূল্যস্ফীতিতে সয়লাব হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আরও উপর থেকে হওয়া উচিত। এ প্রস্তাবটি মুসা বিন শমসের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিতে পারেন বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে মুসা বিন শমসের লিখেছেন, ‘ইতিপূর্বে সুইস ব্যাংক আমার ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ করেছে। এটি আপনি (অর্থমন্ত্রী) ও বিশ্ববাসী জানেন। আমি ফের সে পথে যেতে চাচ্ছি না।
বর্তমানে আমি বিদেশ থেকে আমার ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকার ফান্ডটি বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য আপনার সহযোগিতা চাই। তাই বিলম্ব না করে ফান্ড বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য আপনি একটি চিঠি ইস্যু করবেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে আমি আমার ব্যাংকে (কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন) নির্দেশনা দেব।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ড. মুসা বিন শমসেরের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ড. মুসা বিন শমসেরের টাকা স্থানান্তর বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে চাই। তবে শর্ত হচ্ছে এই অর্থ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে।
সূত্রে জানা গেছে, মুসা বিন শমসের বিখ্যাত অস্ত্রের ডিলার আদনান খাসোগির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ব্যবসা করেছেন। ২০১৭ সালের ৬ জুন খাসোগি মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য মৃত্যুর আগে তিনি এই মুনাফা দেয়ার ঘোষণা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দিয়ে গেছেন। তার মৃত্যুর পর এই মুনাফার অংশ লাভ করেছেন মুসা বিন শমসের।
সূত্রমতে, অর্থমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠিতে মুসা বিন শমসের বলেছেন, আমার ব্যবসার দীর্ঘদিনের অংশীদার আদনান খাসোগি। বর্তমানে সে মৃত। আমি তার সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছি। ব্যবসায়িক পাওনা হিসেবে সেখান থেকে আমি ২০ বিলিয়ন ইউরো বা দেশীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকার (১ ইউরো সমান ৯৬.৫৬ টাকা) পেমেন্ট গ্রহণ করেছি।
যদি উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায় তবে এ অর্থ বাংলাদেশে আমার নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করব। এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ টাকা স্থানান্তরের ব্যাপারে আমার ইউরোপিয়ান উপদেষ্টাও সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেছেন (ইউরোপিয়ান উপদেষ্টা) বৈধভাবে অর্জিত এই টাকা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া স্থানান্তর করা যাবে।
চিঠিতে মুসা বিন শমসের আরো লিখেছেন, এটা আমার বৈধ অর্থ। দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সঙ্গে আমার পার্টনার আদনান খাসোগির সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আদনান খাসোগি শুধু আমার ব্যবসায়িক পার্টনার নয়, সে আমার একজন ভালো বন্ধুও ছিলেন। আদনান হচ্ছেন বিশ্বের বিখ্যাত একজন সফল অস্ত্রের ডিলার। সে ২০১৭ সালের ৬ জুন মৃত্যুবরণ করেছে।
আমাদের অপর ব্যবসায়িক পার্টনার আদনান সারকিস সোগহালিয়ান। তিনিও এ ব্যবসায় অগণিত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এ ব্যবসায় আমাদের আয় হয়েছে। আদনান খাসোগি মৃত্যুর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে একটি স্টেটমেন্ট ইস্যু করে যায়। সে স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে আমি এ ফান্ড পেয়েছি।
চিঠিতে তিনি বলেন, এই ফান্ড আমি যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে চাই। এ ফান্ড শুধু আমি নিজে সুবিধাভোগী হব তা নয়, আমার পরিবারও হবে। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে বৃহত্তম পরিসরে বাংলাদেশও সুবিধাভোগী হবে।
বাংলাদেশে মুসা বিন শমসের নিজস্ব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডেটকো হাউস অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং অ্যান্ড কনট্রেটিংয়ের প্যাডে এই চিঠি দিয়েছেন। সেখানে এ অর্থের বৈধ উৎস হিসেবে আন্তর্জাতিক অস্ত্রের ডিলার আদনান খাসোগি মৃত্যুর আগে দেয়া একটি ঘোষণা পত্র সংযুক্ত করেছেন। আদনান খাসোগি এই অর্থ মুসা বিন শমসেরকে দেয়ার জন্য মৃত্যুর আগে একটি নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে।
এতে তিনি বলেছেন, এই অর্থ স্থানান্তরের ব্যাপারে আমি (আদনান খাসোগি) সুইস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি সন্তোষজনক সমাধান দিয়েছেন। নির্দেশনায় তিনি আরও বলেন, মুসা বিন শমসের দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে ব্যবসা করেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। আমার স্বচ্ছতা নিয়ে সে কোনো দিন প্রশ্ন তোলেনি।
আমি আমার ইউরোপিয়ান আইনজীবীকে এ ব্যাপারে অথরাইজ করে দিয়েছি। আমার মৃত্যুর পর এই টাকা মুসা বিন শমসেরের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। ওই নির্দেশনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে বেশ সুনাম করেছেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভাগ্যবান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জানা গেছে, মুসা বিন শমসের দুর্নীতি দমন কমিশনে এর আগে সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। সে হিসাব অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে)।
সম্পদ বিবরণীতে তিনি জানিয়েছেন, সুইস ব্যাংকে তার এ পরিমাণ অর্থ ‘ফ্রিজ’ (সাময়িক জব্দ) অবস্থা আছে। এ ছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯ কোটি ডলার দামের (বাংলাদেশি ৭৬৫ কোটি টাকা) অলংকার জমা আছে। দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দুটো বাড়ি সাভার ও গাজীপুরে ১২০০ বিঘা জমির কথাও বিবরণীতে তুলে ধরেছেন।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: