আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদন, পর্যাপ্ত মজুরির কাজ পাচ্ছে না ৪৭ কোটি মানুষ


প্রকাশিত:
২২ জানুয়ারী ২০২০ ২৩:৩৩

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:০৯

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে ৪৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত মজুরির কাজ খুঁজে পেতে সংগ্রাম করছে। ফলে বাড়ছে ব্যক্তি পর্যায়ের দারিদ্র্য ও বৈষম্য। চলতি বছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বেকারত্বের তালিকায় যুক্ত হবে বলে সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের এই বিশেষায়িত সংস্থাটি।

সুইজারল্যান্ডের অবকাশ কেন্দ্র দাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক : ট্রেন্ড ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএলও। এতে বলা হয়, গত ৯ বছর বিশ্বব্যাপী বেকারত্ব মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও চলতি বছর বিশে্বর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হওয়ায় কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত হওয়া মানুষের জন্য পর্যাপ্ত চাকরি থাকবে না।

আইএলও বলছে, বর্তমানে বিশে্ব কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৫৭০ কোটি। এর মধ্যে ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চাকরি করলেও চাহিদা মেটানোর মতো বেতনের কাজ পাচ্ছে না। এ ছাড়া আরও ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ হয় চাকরি খোঁজা বাদ দিয়েছে না হয় কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। এসবের সঙ্গে সরাসরি বেকার মানুষ যুক্ত হয়ে বিশে্বর মোট ৪৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান সঙ্কটে ভুগছে।

সবধরনের বেতনভুক্ত কাজে পরিমিত মান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে আইএলও মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, কাজের মাধ্যমে আর একটু উন্নত জীবন গড়াটা কোটি কোটি সাধারণ মানুষের জন্য ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৯ বছরে বিশ্বব্যাপী বেকারত্ব মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হওয়ায় নতুন করে যারা শ্রমবাজারের জন্য তৈরি হচ্ছেন তাদের জন্য পর্যাপ্ত চাকরি থাকবে না। আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, ‘কোটি কোটি সাধারণ মানুষের জন্য কাজের মাধ্যমে একটু ভালো জীবন পাওয়াটা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।’ কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য ও চাকরিহীনতার কারণেই এসব মানুষ একটি মানসম্মত কাজ ও ভালো একটি ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ১৮ কোটি ৮০ লাখ বেকারের পাশাপাশি ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ কাজ করে পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। ১২ কোটি মানুষ হয় চাকরির আশা ছেড়ে দিয়েছেন বা হয়তো তাদের কাজ পাওয়ার সুযোগই নেই। সব মিলিয়ে ৪৭ কোটির বেশি মানুষ কর্মসংস্থানের সঙ্কটে ধুঁকছেন।
আইএলও বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আগের চেয়ে আয়বৈষম্য বেড়েছে। ২০০৪ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী জাতীয় আয়ে শ্রম খাতের অংশীদারিত্বও কমেছে, ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ৫১ শতাংশে নেমেছে। ইউরোপ, মধ্য এশিয়া ও আমেরিকাতে এই চিত্র দৃশ্যমাণ। আগে যা ধারণা করা হয়েছিল এটা তার চেয়েও বেশি।

ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বাধা ও সংকোচন নীতিও বেকারত্বের পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিবছরই মে দিবসের কর্মসূচিতে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য মজুরির দাবি তোলা হয়। প্রতিবছরই মে দিবসের কর্মসূচিতে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য মজুরির দাবি তোলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে যে হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মক্ষেত্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। তাই অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। তবেই এই আশঙ্কা কিছুটা কমবে।
আইএলও বলছে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দক্ষিণ এশিয়ার নিম্ন আয়ের দেশগুলোত মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরির অভাব, বাড়তি জনসংখ্যা এবং কর্মসংস্থানে সবার প্রবেশের সুযোগের ঘাটতিতে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পটিআইনেন বলেন, মানুষের সক্ষমতার উন্নয়ন, লৈঙ্গিক সমতা ও সামাজিক নিরাপত্তায় বিনিয়োগ খুব বেশি প্রয়োজন। ‘কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও মানসম্মত চাকরিতে পুরুষ ও নারীর সংখ্যার ব্যবধান নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই শুধু টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পথ তৈরি হবে।’


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top