পরিবারের দাবি, অভিনেতা তাপস পালকে হত্যা করা হয়েছে


প্রকাশিত:
৭ মার্চ ২০২০ ১৮:৪২

আপডেট:
৮ মার্চ ২০২০ ০২:২৯

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: গত ১৮ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের শক্তিমান অভিনেতা তাপস পাল। তাঁক এই অকাল প্রয়াণ মেনে নিতে পারেননি ভক্তরা। তাপসের মৃত্যু নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। অনেকে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছেন।

তাপসের মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পরে মুখ খুলেছেন তার স্ত্রী নন্দিনী পাল। তিনি অভিযোগ করেছেন তাপস পালের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবিতে বর্তমানে তিনি মুম্বাইয়ে অবস্থান করছেন।

‘আমার স্বামীকে ওই হাসপাতাল মেরে ফেলেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাইতে মুম্বাইয়ে এসেছি’- হাসপাতালের প্রতি অভিযোগের আঙুল এভাবেই তুললেন নন্দিনী।

তার দাবি, গত ১ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ তাপসকে তিনি বান্দ্রার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অভিযোগ, তাপসের অসুস্থতার সম্পর্কে বলতে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তা শুনতে রাজি হননি। উল্টে বলেন, রোগীর ‘পাস্ট হিস্ট্রি’ শুনতে তিনি উৎসাহী নন। অভিযোগ, অসুস্থ তাপস পালকে দেখে ওই চিকিৎসক নন্দিনীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কেন তাকে হাসপাতালে এনেছেন?’

এমনকি ৫০ হাজার টাকা জমা না করলে তাপসের চিকিৎসা শুরু করা হবে না বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয় বলে নন্দিনীর অভিযোগ। কিন্তু মাঝরাতে তার কাছে অত টাকা না থাকায় মেয়ের বাড়িওয়ালার সাহায্যে টাকার বন্দোবস্ত করে তাপসকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয় বলে দাবি নন্দিনীর!

নন্দিনী জানান, তাপসের অসুস্থতা সম্পর্কে সব কথা বিস্তারিতভাবে শুনতে চায়নি ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ভর্তি নিলেও অসুস্থ থাকা অবস্থাতেও খুলে নেওয়া হয় তাপস পালের ভেন্টিলেশন। ভেন্টিলেশন বন্ধ করে দিলেই স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। তখনও নিরব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাপস পালের আগের অসুস্থতার কথা জানতে না চেয়েই নাকি চিকিৎসকরা প্রশ্ন করেন কেন আনা হয়েছে তাকে হাসপাতালে। টাকা জমা রাখার জন্য জোর করা হয় এবং টাকা জমা না রাখলে চিকিৎসা শুরু না করার কথাও জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নন্দিনী জানান, এই পরিস্থিতিতেই তারা ঠিক করেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি তাপসকে নিয়ে কলকাতায় ফিরবেন। কিন্তু সেদিন রাতেই সব ওলটপালট হয়ে যায় বলে দাবি করেন তিনি। নন্দিনীর দাবি, ওই দিন হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয় তাপস পালের হিমোগ্লোবিন কমে ৩.৫ হয়ে গিয়েছে। তার কথায়, ‘ওই দিন সকালেই আমি দেখেছি তাপসের হিমোগ্লোবিন ৯। আশ্চর্যরকমভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওকে রক্ত না দিয়ে আমাদের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এর পর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। পর পর। তখনও সিনিয়র কোনও ডাক্তার নেই। একজন ট্রেনি আর অন্য এক ডাক্তার।’

গোটা ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন নন্দিনী। তিনি বলেন, ‘তাপসের সম্পর্কে এত অন্যায়, এত ভুল কথা শুনতে হয়েছে যে, মেয়ে এবং আমি আর পেরে উঠছি না। তবে এই মৃত্যুর বিচার আমি চাইবই। ছাড়ব না।’

নন্দিনীর অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের পিআরও কর্ণ দেলিমা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যা জানানোর জানাব।’

বাংলা সিনেমার দর্শকের অন্যরকম এক আবেগের নাম তাপস পাল। ১৯৮০ সালে প্রথম ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমাতে অভিনয় করেই বাঙালির মন জয় করে নেন ২২ বছরের তরুণ অভিনেতা তাপস পাল। এই ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন মহুয়া রায় চৌধুরী। কেদার চরিত্রে অভিনয় করে কোটি হৃদয়ে প্রেমের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ‘দাদার কীর্তি’র পর ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ নামের আরকটি ছবিতে দেবশ্রীর বিপরীতে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন তিনি।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top