রাজনীতির পর ফেডারেশনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হল শুভেন্দু অধিকারীকে


প্রকাশিত:
২০ আগস্ট ২০২০ ২২:১৩

আপডেট:
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৫৫

ফাইল ছবি

 

প্রভাত ফেরী: এক প্রকার নীরবেই তৃণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল শুভেন্দু অধিকারীকে। এর আগের রদবদলে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পদ বাতিল হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ফলে শুভেন্দুর গুরুত্ব অনেকটাই খর্ব হয়েছিল তখন। তার পরই ফেডারেশনের মাথা থেকেও তাঁর এই অপসারণ নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে ঘনিষ্ঠ মহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু স্বয়ং। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।

উল্লেখ্য, তৃণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের ৪১ জনের কমিটিতে শুভেন্দু ছিলেন চিফ মেন্টর। আহ্বায়ক পদে আরও তিনজন থাকলেও শুভেন্দুই ছিলেন প্রধান। দিব্যেন্দু রায় ছিলেন সাধারণ আহ্বায়ক। কিন্তু শুভেন্দুকে সরিয়ে এবার একক দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসি ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এক বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকে গরহাজির ছিলেন শুভেন্দু। তাই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ফের জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও তৃণমূল সূত্রে খবর, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবশ্য রাজনৈতিক মহলের একাংশ তাঁর এই অপসারণের পিছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছে।

প্রশ্ন হল, হঠাৎ শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি এত বিরূপ হয়ে উঠল কেন তৃণমূল? এক সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিকদের মধ্যে শুভেন্দু ছিলেন অত্যন্ত কাছের। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দুর সক্রিয়তা সকলেরই জানা। মূলত তাঁর জন্যই পূর্ব মেদিনীপুর ও জঙ্গল মহলে সিপিএমের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিতে পেরেছিল তৃণমূল। স্বভাবতই অনেকের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, সেই শুভেন্দু অধিকারীকে হঠাৎ কেন সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে তাঁর দল? এদিকে, শুভেন্দু বিজেপিতে চলে যেতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলে অনেকদিন ধরেই জল্পনা চলছে। তবে দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও রকম দুর্বলতা দেখাননি শুভেন্দু। বরং রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বিজেপির সমালোচনাই তিনি করছেন। তাই বিজেপিতে তিনি যেতে পারেন বলে যে জল্পনা চারদিকে চলছে, তা কতটা সত্য, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশই।

যদিও তৃণমূলের একটি অংশের মতে, ইদানীং ফেডারেশনের কাজে শুভেন্দুর মনোযোগের অভাব ধরা পড়ছিল। ফেডারেশনের বৈঠকগুলিতেও তিনি সে ভাবে উপস্থিত থাকছিলেন না। ফলে ক্ষতি হচ্ছিল ফেডারেশনের কাজকর্মে। কিন্তু দলের এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ তাঁর অনুগামীরা। শুভেন্দু বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুললেও তাঁর অনুগামীদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ গোপন রাখেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা ইতিমধ্যে সরবও হয়েছেন। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের যুব তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দু অনুগামী তথা ময়নার বিধায়ক সংগ্রাম দলুইকে সরিয়ে দিয়ে একেবারে নতুন পার্থ মাইতিকে বসানো হয়। তখনই ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সংগ্রাম। এ ছাড়া একুশের নির্বাচনকে পাখির চোখ করে তৃণমূল নেত্রী দলের রণকৌশলের যে নতুন পরিকাঠামো তৈরি করছেন, সেখানেও শুভেন্দুকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এমনকী, বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব থেকেও অপসারিত করে হয়েছে তাঁকে।

বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্যের পরিবহণ, সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দূরত্ব বাড়ছে। লকডাউনের সময় দলীয় কর্মসূচিতেও তাঁকে বিশেষ একটা দেখা যায়নি। এমনকী, সরকারি অনুষ্ঠানগুলিতেও তিনি থাকছেন না। বরং বিশেষ অনুষ্ঠানের দিনে সমান্তরাল জনসংযোগ করছেন। বিষয়টি যে তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহজ ভাবে নিচ্ছেন না, এই ঘটনাগুলি তারই প্রমাণ দিচ্ছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top