কী কারণে ইউরোপ জ্বলছে?
প্রকাশিত:
৩ জুলাই ২০১৯ ১৯:৫৯
আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:০৬

এশিয়া থেকে আমেরিকা, আফ্রিকা থেকে ইউরোপ, এ বছর তাপমাত্রা যেন ইতিহাসের সব অতীত রেকর্ড ভেঙে মানুষকে উত্তাপের তীব্রতা বুঝিয়ে দিচ্ছে হাড়েহাড়ে। মানব সভ্যতা গড়তে প্রকৃতিকে যেভাবে কাটাছেড়া করা হয়েছে, জলবায়ুর স্বাভাবিকতাকে যেভাবে বিনষ্ট করা হচ্ছে তাতে এমন পরিণতিই স্বাভাবিক। তবে, অস্বাভাবিকভাবে ইউরোপ জ্বলছে ক্রমবর্ধমান দাবদাহ, আবহাওয়াবিদদের মতে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চল থেকে উষ্ণ বায়ু ইউরোপে প্রবাহিত হচ্ছে, যা তাপপ্রবাহের অতীত রেকর্ড ভেঙে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে।
পশ্চিমা ইউরোপের রেকর্ড তাপমাত্রা বরণ করে নিচ্ছে ইউরোপিয়ানরা, চলতি সপ্তাহেই তাপমাত্রা এই মহাদেশের আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এই তাপপ্রবাহে শুক্রবার (২৮ জুন) ফ্রান্সের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ভেঙে যাবে।
বর্তমান রেকর্ড ৪৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ২০০৩ সালে এই রেকর্ড তাপমাত্রায় প্রায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এমন তাপপ্রবাহের প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সের জাতীয় আবহাওয়া সেবা চারটি অঞ্চলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।
এসব তো গেল ফ্রান্সের দক্ষিণের ঘটনা, কিন্তু দেশটির অধিকাংশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্তরের অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি রয়েছে। পুরো মহাদেশই চরম তাপ অনুভব করছে। জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্রে সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা জুনে রেকর্ড করেছে।
গত ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙে স্পেনের কাতালোনিও সবচেয়ে মারাত্মক দাবানলের শিকার হচ্ছে। দেশটির আটটি প্রদেশে রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে এবং বেশিরভাগ এলাকাতেই তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৬টি শহরে তাপমাত্রা জরুরি মাত্রায় রয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে।
ইউরোপের এই তাপপ্রবাহে অনেক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই স্পেনে দুজন মারা যাওয়ার কথা জানা গিয়েছে যাদের মধ্যে একজন ১৭ বছর বয়সী যুবক ও অন্যজন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। যুবকটি ক্ষেতে কাজের পর সুইমিং পুলে শীতল হলে গেলে সেখানেই এবং বৃদ্ধটি রাস্তায় প্রাণ হারায়।
যুক্তরাজ্যের গ্রেটার ম্যানচেস্টারের ইয়ারওয়েল নদীতে ১২ বছর বয়সী এক মেয়ে ডুবে যাওয়ার পর পুলিশ নদী ও হ্রদের মধ্যে ঠান্ডা হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে জনগণকে সতর্ক করে।
কেন এত গরম হচ্ছে?
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উত্তর আফ্রিকা থেকে উত্তপ্ত গরম বায়ু এজন্য দায়ী, যা কেন্দ্রীয় ইউরোপের ওপর উচ্চ চাপের সৃষ্টি করেছে এবং আটলান্টিকে ঝড়কে থামিয়ে রেখেছে।
দক্ষিণ ফ্রান্সে, গার্ড, ভৌকুয়েজ, হেরোল্ট এবং বুচ-দো-রোন এলাকায় শুক্রবার তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ তাপপ্রবাহের প্রভাবগুলোর মোকাবিলা করার জন্য ইতোমধ্যেই পানি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দেশটির ৪ হাজার স্কুল এখন বন্ধ রয়েছে বা মানুষকে স্বাগত জানানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
এক টিভি সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাগনেস বুজিন বলেন, দাবদাহের ফলে জরুরি পরিষেবা নম্বরগুলোতে কল বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বিগ্ন। জনসাধারণকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ উপেক্ষা করার আহ্বান জানান, যেমন গাড়ির মধ্যে বাচ্চাদের রেখে চলে যাওয়া কিংবা দিনের মাঝামাঝি বাইরে জগিং করার মতো 'ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ' এড়াতে আহ্বান জানান।
শুধু ইউরোপ নয়, তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ দক্ষিণ এশিয়াও, বিশেষ করে ভারত। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যেমন রেকর্ড তাপমাত্রার সঙ্গে লড়াই করছে, একইসঙ্গে পানিশূন্যতাও ভারতীয়দের ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুর কাছাকাছি। 'বিবিসি নিউজ'
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: