শয়তান থেকে রক্ষা পেতে গুরুত্বপূর্ন কিছু আমল


প্রকাশিত:
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:০৩

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:২৪

ফাইল ছবি
প্রভাত ফেরী: শয়তান মানুষের ঈমান ও আমল নষ্ট করার জন্য সদাতৎপর। শয়তান নিজে যেমন চিরকালের জন্য অভিশপ্ত ও জাহান্নামি, তেমনি মানুষকেও অভিশপ্ত ও জাহান্নামে তার সঙ্গী বানানোর পাঁয়তারায় ব্যস্ত। শয়তানের কুমন্ত্রণা ভয়ঙ্কর একটি বিষয়। শয়তানের কুমন্ত্রণায় মানুষের ঈমান দূর্বল হয়ে যায়। শুধু তাই নয় অনেক সময় মুমিনের জীবনকে বিপন্ন করে তুলে শয়তানের কুমন্ত্রণা।সৃষ্টির শুরু থেকেই শয়তান মানুষকে নানাভাবে কুমন্ত্রণা দিয়ে আসছে। দুনিয়াতে একজন মুমিন অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় শয়তানের এ কাজ অবশিষ্ট থাকবে।
 
মানুষকে আল্লাহর অবাধ্য বানানোর জন্য যত প্রকার শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রয়োজন সে আল্লাহর কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে।তাই ঈমান-আমল যেন নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং শয়তানের হামলা থেকে বাঁচার আমল শিখিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনি বলুন- হে আমার রব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি শয়তানদের সব অমঙ্গল ও অনিষ্টতা থেকে।’ (সুরা মুমিনুন : ৯৭)। নবীজিও (সা.) সাহাবাদেরকে বিভিন্ন আমল শিখিয়েছেন। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো।
 
সুরা বাকারা পাঠ করা: ঘরে প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের আমল করা। বিশেষ করে সুরা বাকারা ও আয়াতুল কুরসি শয়তানের হামলা থেকে ঘর রক্ষা করার অন্যতম রক্ষাকবচ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের ঘর-বাড়িগুলো (আমলশূন্য রেখে) কবরে পরিণত কর না। অবশ্যই যে বাড়িতে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে।’ (মুসলিম : ৭৮০)
 
আয়াতুল কুরসি পাঠ: সমগ্র সুরা বাকারা শয়তানের হেফাজতের আমলের জন্য যথেষ্ট। এ সুরায় বিভিন্ন আয়াত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সুরা বাকারার ২৫৫নং আয়াত অন্যতম। এটাকে ‘আয়াতুল কুরসি’ বলা হয়। এই আয়াতও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শক্ত ভূমিকা রাখে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) জনগণ থেকে সংগৃহীত জাকাত ও ফিতরার সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। (সম্পদ জমাকৃত ঘরে পাহারার দায়িত্বে অবস্থানকালে) তিন রাতে আমি এক চোরকে আটক করলাম। বিভিন্ন অজুহাতে সে দুই রাতে ছুটে গেল। তৃতীয় রাতে সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, তোমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দেব, যা দ্বারা তোমার উপকার হবে। আমি বললাম, সেগুলো কী? সে বলল, যখন তুমি ঘুমাতে যাবে তখন ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করবে। তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত করা হবে। আর সকাল পর্যন্ত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। আমি ঘটনাটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা। তুমি কি জান সে কে? সে শয়তান ছিল!’ (বুখারি : ২৩১১)
 
নিয়মিত সদকা করা: শয়তান মানুষের অন্তরে সম্পদের লিপ্সা জাগ্রত করতে থাকে। বিশেষত ব্যবসা ও চাকরি-বাকরি থেকে যে সম্পদ উপার্জিত হয় সেখানে শয়তান উপস্থিত থাকে। তাই যে ব্যক্তি প্রতিদিন সম্পদ থেকে সদকা করবে, সে শয়তানের হাত থেকে মুক্ত থাকতে সক্ষম হবে। হজরত কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে ব্যবসায়ীরা! ব্যবসা ক্ষেত্রে শয়তান ও পাপ এসে উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমরা ব্যবসায় শয়তান ও পাপ মুক্ত করতে সদকা যুক্ত কর।’ (তিরমিজি : ১২০৮)
 
সকাল-সন্ধ্যা বিশেষ দোয়া: হজরত আবু বকর (রা.) রাসুলুল্লাহকে (সা.) বললেন, ‘আমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিন যেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমি পড়তে পারব। নবীজি বললেন, বলো, ‘আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরজি, আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ, রাব্বা কুল্লা শাইয়িন ওয়া মালিকিহি ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া শাররিশ শাইতানি ওয়া শিরকিহি’, অর্থাৎ হে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা! হে দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয়ের সর্বজ্ঞানী! হে সব জিনিসের প্রভু ও অধিপতি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার নফসের ও শয়তানের অনিষ্টতা ও শিরক থেকে।’ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এবং যখন বিছানায় শুইতে যাবে তখন এটি পাঠ করবে। তাহলে তুমি শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে।’ (তিরমিজি : ৩৩৯৩)
 
টয়লেটে প্রবেশে শয়তান থেকে আশ্রয়: বাথরুম-টয়লেটে শয়তান ওঁৎ পেতে থাকে। মানুষের মনে বিভিন্ন কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে। তাই বাথরুম-টয়লেটে প্রবেশের সময় দোয়া পড়ে ঢোকা। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এসব মল-মূত্র ত্যাগের স্থানে শয়তানের উপস্থিতি থাকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন মল-মূত্র ত্যাগের স্থানে প্রবেশের ইচ্ছা করে, তখন সে যেন বলে, ‘আউযুবিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবায়িস’, অর্থাৎ ‘আমি আল্লাহর নিকট নারী-পুরুষ উভয় শয়তানের খারাবি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ : ৬)
 
হাই রোধ করা: মানুষ যখন ইবাদত বা ভালো কাজে লিপ্ত হয় তখন শয়তান হাই তুলতে সহায়তা করে। তাই এ সময় হাই রোধ করা ও ইস্তেগফার পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হাই আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং কারও যখন হাই আসে, সে যেন তা প্রতিহত করতে চেষ্টা করে। কারণ কেউ যদি হাই তোলে ‘হা’ বলে তবে শয়তান তা দেখে হাসতে থাকে।’ (বুখারি : ৬২২৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কারও যদি হাই আসে তবে তার হাত দিয়ে যেন মুখ চেপে ধরে, কারণ শয়তান ভেতরে প্রবেশ করে।’ (মুসলিম : ২৯৯৫)
 
ঘরে প্রবেশকালে জিকির: ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করা। এতে শয়তান থেকে দূরে থাকা সহজ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে, তোমাদের রাত্রি যাপন ও রাতের আহারের কোনো ব্যবস্থা হলো না। কিন্তু কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহারের ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল।’ (মুসলিম : ২০১৮; আবু দাউদ : ৩৭৬৫)
 
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় জিকির: অনুরূপভাবে ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও আল্লাহর নাম নেওয়া। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আল্লাল্লাহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, তখন তাকে তখন বলা হয়, আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট, সব অনিষ্ট থেকে তুমি হেফাজত অবলম্বন করেছ। আর তার নিকট থেকে শয়তান দূরে সরে যায়।’ (তিরমিজি : ৩৪২৬)

বিষয়: শয়তান


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top