সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১


এক অপূরণীয় ক্ষতি : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
২০ মে ২০২০ ১১:৪৮

আপডেট:
২০ মে ২০২০ ১১:৫০

 

" আমাদের পথচলা এক সময় থেমে যায়, জীবন থামে না। " - আনিসুজ্জামানের আত্মজীবনী "বিপুলা পৃথিবী " - এর শেষ কথা ছিল এটাই। কি অসাধারণ এক উক্তি! এর অর্থ নিহিত আছে জীবনের গভীরে।

গত ১৪ ই মে, বৃহস্পতিবার বিকেল বেলা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে, মারা গেলেন আনিসুজ্জামান। আনিসুজ্জামান ছিলেন বাংলাদেশের একজন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং জাতীয় অধ্যাপক।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়, গত ২৭ শে এপ্রিল, আনিসুজ্জামানকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। তিনি ছিলেন বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালানো করোনা ভাইরাসের শিকার।

আনিসুজ্জামান জন্মগ্রহণ করেছিলেন, ১৯৩৭ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারী, অবিভক্ত বাংলার বসিরহাটে। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল কোলকাতার পার্কসার্কাস হাইস্কুলে। পরবর্তীকালে, তাঁর পরিবার, তৎকালীন পূর্ববঙ্গে চলে এলে, তিনি ভর্তি হয়েছিলেন খুলনা জেলা স্কুলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলার ওপরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে, তিনি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন। তিনি সক্রিয় ভাবে যোগদান করেন ১৯৫২ সালের বিখ্যাত ভাষা আন্দোলনে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে, তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে, তিনি, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসাবে কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল
১৯৭১ সালে। ১৯৭২ সালে, তিনি, স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য হন।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করেছিলেন। তাঁর লেখনী মুগ্ধ করতো সবাইকে। তাঁর লেখায় শব্দচয়ন ও বৈচিত্র্য অসাধারণ। শিক্ষাক্ষেত্রে, তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ, ১৯৮৫ সালে, বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরষ্কার একুশের পদকে সন্মানিত করেছিল। এছাড়া, তাঁকে, ২০১৫ সালে, তাঁর সাহিত্যে অবদানের জন্য, দেওয়া হয়, সর্বোচ্চ অসামরিক সন্মান স্বাধীনতা পুরষ্কার।

এপার বাংলা ও ওপার বাংলা - দুই বাংলাতে, তাঁর গুণমুগ্ধের সংখ্যা রয়েছে অগণিত। মানুষ হিসাবে তিনি ছিলেন খুবই ভালো। তিনি দুইবার আনন্দ পুরষ্কার পেয়েছিলেন। যথা -
১. ১৯৯৩ সালে।
২. ২০১৭ সালে।

সাহিত্যে ও শিক্ষায় তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য, তিনি পেয়েছিলেন পদ্মভূষণ। এছাড়াও, তিনি সারাজীবনে অজস্র পুরষ্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি- লিট প্রভৃতি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
আনিসুজ্জামান সারাজীবন ধরে অনেকগুলি বই লিখেছিলেন। তার মধ্যে, মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র, স্বরূপের সন্ধানে, আঠারো শতকের বাংলা চিঠি, আমার একাত্তর, আমার চোখে, বিপুলা পৃথিবী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে, শোক প্রকাশ করেছেন , বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের সংসদের বিরোধী দলনেতা মাননীয় গোলাম মহম্মদ কাদের।

আনিসুজ্জামান বিশ্বাস করতেন হিন্দু - মুসলমান সম্প্রীতিতে। তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী। তাঁর মন ছিল উদারতায় ভরা। তিনি সারাজীবন ধরে লড়াই করেছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন একজন স্পষ্ট বক্তা। তাঁর মৃত্যুতে, এক বিশ্বস্ত সাথীকে হারালো কোলকাতার ইন্দো - বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেকুলার হিউম্যানিজম।

স্বাস্থ্য বিধি মেনে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হয় আনিসুজ্জামানকে। আজিমপুর কবরস্থানে, তাঁর বাবা - মায়ের কবরের পাশে তাঁকে করা হয় সমাহিত। আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হল এপার বাংলা ও ওপার বাংলা - দুই বাংলারই শিক্ষা ও সাহিত্য জগতে।



শিবব্রত গুহ
কোলকাতা 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top