জগেন বাবুর সরকারি অফিস : হুমায়ূন কবীর
প্রকাশিত:
২৯ আগস্ট ২০২০ ২৩:৪০
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ১৪:২০

ছবিটা জমা দেওয়ার আজকেই শেষদিন।
গ্রাম থেকে শহরে জগেন বাবুর সরকারি অফিসে ছুটে এসেছি ছবিটা জমা দিতে।আমার ফাইলটা জগেন বাবুর টেবিলে। ছবিটা তার কাছেই জমা দিতে হবে। দিতে পারছি না। সরকারি অফিস বলে কথা। তারউপর করোনা। বেশি কথা বললে করোনার দোহায় দিয়ে তাড়িয়ে দেবে। ভাগ্য ভালো জগেন বাবু অফিসে আছেন।
থাকলে কী হবে তার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং শেষই হচ্ছে না।আমি জানালার বাইরে দাড়িয়ে দেখছি তিনি একজন টাক মাথার লোকের সাথে খোশ গল্প করেই যাচ্ছেন। এটাই নাকি তার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং। তিনি আমাকে সময়ই দিচ্ছেন না। অথচ আমার ছবিটা জমা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
করোনা চলছে তাই অফিসে ঢোকা গেলো না।অথচ ঐ টাকটা দিব্যি ঢুকে আরামে বসে আছে। আমি অফিসের পেছনে জগেন বাবুর রুমের জানালা বরাবর একহাঁটু ঘাস আর জংগলের ভিতর দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। তিনি এই জানালা দিয়েই আমার সাথে কথা বলবেন।
ছবি হাতে আমি অল টাইম রেডি। জগেন বাবু আমার দিকে তাকাচ্ছেনই না। আকাশে ঘন মেঘ, শ্রাবণ মাস, যখনতখন হুটহাট বৃষ্টি নামছে। বৃষ্টি হলে ছবিটা ভিজে যেতে পারে। পকেটের মোবাইলে পানি ঢুকলে নষ্ট হয়ে যাবে তবু সরতে পারছি না। ঝুকি নিয়েই দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কখন জগেন বাবু আমার দিকে তাকাবেন। তাকিয়ে যদি আমাকে না পান। না পেলে শাস্তি স্বরূপ অপেক্ষার মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারেন। তার হাতে অনেক ক্ষমতা। তিনি সরকারি অফিসের বড়বাবু।
আমি জানালার বাইরে একহাঁটু বাগানের ভিতর দাড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছি। জগেন বাবু আমার দিকে পেছন ফিরে ফ্যানের নিচে বসে মনের সুখে পেয়ার খাচ্ছেন আর সামনে বসা টাক লোকটার সাথে খোশগল্প করছেন। সকালবেলা তাড়াহুড়ো করে আসতে যেয়ে আমার কিছুই খাওয়া হয়নি। টার্গেটে পৌছানোর উদ্বেগ উত্তেজনায় এতক্ষণ খিদেটা চাপা পড়েছিলো। জগেন বাবুর পেয়ারা খাওয়া দেখে চাপাপড়া খিদে আগুনের মতো হুহু করে জ্বলে উঠলো। পেটে জ্বলন্ত খিদের আগুন নিয়ে আমি জগেন বাবুর পেয়ারার প্লেটের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় আছি। কখনো হয়তো তার গল্প শেষ হবে, হয়তো তিনি আমার দিকে তাকাবেন, ছবিটা নিবেন তখন হয়তো আমি সরকারি অফিসের অপেক্ষার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াতে পারবো।
জগেন বাবুর সামনে চেয়ারে বসা টাক মাথার,ছোট কুতকুতে চোখের কালো লোকটা অনেকটা ছিঁচকে চোর টাইপের। হয়তো নেতা টেতা হবে। তার কদর দেখে তাই মনে হচ্ছে। লোকটার সামনেও ফুলের নকশা ওয়ালা সাদা ধবধবে পিরিচে এক পিরিচ ফালি ফালি করে লবণ দিয়ে যত্নকরে মাখানো পেয়ারা। ছিঁচকেটা আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত -মুখ খিচিয়ে কচকচ করে সেই পেয়ারা খাচ্ছে।
বোঝাই যাচ্ছে ঐ ছিঁচকেটাও জগেন বাবুর মতই অনেক ক্ষমতা ভোগ করে। ক্ষমতাবান না হলে এতো নির্লজ্জ, বেহায়া, অমানবিক হওয়া যায়না।
পেয়ারা খাওয়া শেষ হলো। আশায় আমার চোখ চকচক করে উঠলো। সাহস সঞ্চয় করে বললাম,স্যার,একটা কথা বলতাম।
জগেন বাবু চমকে আমার দিকে তাকালেন। একটু মুচকি হেসে বললেন,আপনি এখনো দাড়িয়ে আছেন?আচ্ছা,আরেকটু দাড়ান।
আমি দাড়িয়ে আছি। মশার কামড় হজম করছি। জগেন বাবুর টেবিলে পিয়ন এসে গরম গরম শিঙাড়া দিয়ে গেলো । ছিচকেটা আর জগেন বাবু ফু দিয়ে দিয়ে এখন শিঙাড়া খাচ্ছেন। আমি একহাঁটু জংগলের ভিতর দাড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছি।
শিঙাড়া শেষ হলো। আমি আবার বললাম,স্যার,আমার একটা কথা ছিলো।
জগেন বাবু আবারও বিস্মত হলেন। তারপর আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরালেন। ছিচকেটাও সিগারেট ধরালো। করোনার সময় অফিসে লোকজন কম। এখনিই তো অফিসে আয়েশ করে সিগারেট খাওয়ার সময়। এতো সুবর্ণ সময় চাকরি জীবনে আর আসেনি হয়তো আসবেও না।
জগেন বাবু আমার মুখের ভিতর একদলা ধোয়া ছুড়ে দিয়ে বললেন,আর একটু দাড়ান।
আমি নিরুপায়-দাড়িয়ে আছি। সিগারেট শেষ হলে পান এলো। আমি মনে করলাম পানের পর তো আর কিছু নেই।
পান শেষ হলে আমি বললাম,স্যার, আমার একটা কথা।
তিনি বললেন, ও হ্যা,হ্যা। আচ্ছা।
হয়তো আমার কাজটা হয়েই যেতো কিন্তু আচমকা জগেন বাবুর সুন্দরী শ্যালিকা এলো ।আর যায় কোথায়? আবার পিয়ারা,আবার শিঙাড়া, চা--------।
আমি দাড়িয়েই আছি, মশার কামড় খাচ্ছি।
বিষয়: হুমায়ূন কবীর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: