গীতা (অনু গল্প) : রাজ


প্রকাশিত:
২১ নভেম্বর ২০২০ ২৩:৪৪

আপডেট:
২১ নভেম্বর ২০২০ ২৩:৪৫

 

গতমাসে রাতের ট্রেনযোগে  কমলাপুর রেলস্টেশন ঢাকা হতে দিনাজপুরে  আসচ্ছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে আমার সিট জানালার পাশে ছিল । ট্রেন ভ্রমণ আমার খুব পছন্দ। বাবাও তার ছোট মেয়ে সহ আমার পাশে একজন সিট পেয়েছিল । ছোট সেই মেয়েটি যা আবদার করছিল। তার বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে তাই আবদার পূরণ করার চেষ্টা  করছিল ।মেয়েটির বাবা তার প্রতি কথায় আম্মু আম্মু করে ডাকছিল। আমি মনে মনে খুব বিরক্ত বোধ করছিলাম। কখনো সেই মেয়েটি  জানালার পাশে বসবে, কখনো যেখানে ছিল সেখানে, কখনো দাড়িয়ে এভাবে আমাকে তার বাবা বারবার  অনুরোধ করে সরিয়ে দিচ্ছিল। আমিও মুখ বুঁজে সব সহ্য  করলাম। আর মনেমনে ভাগ্যকে দোষারোপ করলাম। এভাবে কখন ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতে পারিনি। হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় । তখনও দেখি সেই একই অবস্থা। আমি রাগ করে বললাম -" দাদা এখন একটু ঘুমান তো। "

তিনি বললেন - না, না দাদাআ মার গীতা মা-মনির সাথে খেলব। এরপরে উনার সাথে কথা বলে সব জানার পরে আমি অবাক হয়ে গেলাম। গীতার বয়স ১০ বছর।  গীতার ব্রেইন টিওমার। এখন সে পুরোপুরি অন্ধ। আপনি, আমি দেখলে কেউ বুঝতে পারবোনা -যে গীতা অন্ধ। ভারতের মাদ্রাজে অনেকদিন চিকিৎসা করেছেন। এখন অর্থ অভাবে আর পারচ্ছেন না। ঢাকা পিজি হাসপাতালে এসেছিলেন। গীতার অবস্থা ভালো না। আয়ু মাত্র আর কিছু দিন। গীতার বাবার ছলছল চোখ। পাশের সিটে গীতার মা ও ছোটভাইও ছিলেন । কিন্তু গীতা বাবাকে ছাড়া কোনকিছু বুঝে না। 

খুব সুন্দর করে ডাকে ---- বাবা ও বাবা! 

-কী আম্মু?  তোমার খারাপ লাগছে আম্মু? 

"না, বাবা - তোমার গালে চুমু দিবো, বাবা।"

ওর বাবা গাল এগিয়ে দেয় -

-বাবা, তোমার চোখে জল কেন?  তুমি কি কাঁদছ বাবা?

"না, আম্মু কেন কাঁদব? "

আমারও চোখে জল!  যাদেরকে পাশে দেখে বিরক্ত বোধ করেছিলাম। এখন তাদের বাবা মেয়ের অপরুপ দৃশ্য দেখে শ্রদ্ধায় মাথা অবনত হয়ে গেলো। হে ঈশ্বর! ইহা - স্বর্গীয় ভালোবাসা। 

গীতা বাঁচবে আর কিছু দিন মাত্র। ওর বাবা কি পারবে - গীতার মায়া ভুলতে? সন্তানের মৃত দেহের ভার  কি তিনি পারবেন বহন করতে? পার্বতীপুর রেল স্টেশন এ ভোর রাতে তারা নেমে গেলেন। ট্রেন চলছে ঝকঝকা ঝক ঝক -গীতার মৃত্যুতে নিশ্চয়ই তার বাবার কলিজায় এভাবে ঝকঝক করে ট্রেন চলবে। দুমড়ে মুচড়ে যাবেন তিনি- আমৃত্যু এ শোক যাবার নয়।

সারাজীবন উনার কানে এই ডাকটি ভেসে আসবে - বাবা ও বাবা!

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়: রাজ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top