সিডনী শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২২শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


মহামারিতে মুমিনের করণীয়


প্রকাশিত:
১৬ মার্চ ২০২০ ০০:৩০

আপডেট:
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪২

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে তাঁর বান্দাদের ভয়, মুসিবত ও বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এ ধরনের সময়ে মুমিনরা হা-হুতাশ করে না। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ ধরনের পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

যেকোনো বিপদাপদ কিংবা মহামারিই মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের জন্যই শঙ্কার কারণ হলেও উভয়ের শঙ্কা এক ধরনের নয়। অমুসলিমের জন্য মৃত্যু মানে সব কিছু হারিয়ে ফেলা। আর একজন মুমিন মুসলিমের কাছে মৃত্যু মানে সব কিছু হারানো নয়; পরজীবনে চিরকল্যাণ লাভের সুযোগ তৈরি হওয়া। আর মহামারিতে আক্রান্ত হওয়া মানে শহীদের মর্যাদা অর্জন করা।

মুমিনের জীবনে কোনো ভয় নেই, দুঃখ নেই। মুমিনের জীবন কল্যাণে ভরপুর। এ প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর! সকল কিছুই তার জন্য কল্যাণকর। আর এই বৈশিষ্ট্য কেবল মুমিনের। তারা সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে শুকর আদায় করে। আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারণ করে। প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।’ (মুসলিম : ২৯৯৯)। সুখ-দুঃখ উভয়ই মুমিনের জন্য কল্যাণের, বিষয়টি স্পষ্ট এ থেকেই। অপরদিকে অমুসলিম কাফেররা যেহেতু মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে আল্লাহর তরফ থেকে কোনো কল্যাণপ্রাপ্ত হবে না, সেহেতু মৃত্যু তাদের জন্য ভয়ের। আল্লাহ বলেন- ‘কাফেরদের জন্য আখেরাতে রয়েছে কেবলই জাহান্নামের আগুন!’ (সুরা হুদ : ১৬)।

মহামারি কেন হয়?
প্রথমত মনে রাখতে হবে, জমিনে যত ধরনের বিপদ ও সংকট দেখা দেয়, তার সবই মানুষের কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা (তাদের কৃতকর্ম থেকে) ফিরে আসে।’ (সুরা রুম : ৪১)। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের (মহামারির) প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ : ৪০১৯)।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর নবী (সা.) তাকে জানালেন- এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে নিজ শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারিত করে রেখেছেন, তা ব্যতীত আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না, তাহলে সেই বান্দা শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।’ (বুখারি : ৫৭৩৪)। অতএব, মহামারিতে অতি-আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ও আল্লাহর রহমত কামনার মাধ্যমে তা কাটিয়ে উঠা মুমিনের কর্তব্য।

মহামারিতে করণীয়
যেকোনো বিপদাপদে বান্দা তার পাপের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা ও শেষ আশ্রয় হিসেবে তারই দিকে ফিরে আসুক- এটাই মহান প্রতিপালকের প্রত্যাশা। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে বিপদে আল্লাহমুখী হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই মহামারির সময় মুমিনের প্রধান কাজ হলো নিজের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত হলো না এবং কাতর প্রার্থনাও করল না।’ (সুরা মুমিনুন : ৭৬)।

বেশির ভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) মহামারির সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন ঈমান ও আন্তরিকতার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (তিরমিজি : ১০৬৫)

মহামারিতে পড়ার দোয়া
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য নবী (সা.) পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়া মিন সাইয়্যিল আসকাম’, অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’ (আবু দাউদ : ১৫৫৪)

হাদিসে আরও এসেছে, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দোয়াটি সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করবে, সকাল পর্যন্ত সে কোনো আকস্মাৎ বিপদাক্রান্ত হবে না। আর যে তা সকালে তিনবার পাঠ করবে, সে কোনো আকস্মাৎ বিপদাক্রান্ত হবে না। দোয়াটি হলো- ‘বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি, ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম’। (আবু দাউদ : ৫০৮৮)

লেখক :মুফতি আব্দুল্লাহ আল হাদী
মুহাদ্দিস, সিরাজুল উলুম মহিলা মাদ্রাসা, সাভার



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top