সিডনির ফেস্টিভ্যাল অব দি উইন্ডস যেন আকাশে রঙের মেলা : মোঃ ইয়াকুব আলী
প্রকাশিত:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০১:৩২
আপডেট:
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৭
ফেস্টিভ্যাল অব দি উইন্ডস এর যাত্রা শুরু সেই ১৯৭৮ সালে। বর্তমানে এটা বিশ্বের অন্যতম বড় এবং পছন্দনীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য এটা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ঘুড়ি উড়ানো'র উৎসব। ১৯৭৮ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জন সিল্ক এবং তার কয়েকজন বন্ধু মিলে সিডনির বন্ডাই সৈকতে ঘুড়ি উড়ানোর এই উৎসব শুরু করেন। বসন্ত কালের সেই সময়টা ছিলো ঘুড়ি উড়ানোর একেবারে উপযুক্ত সময়। সে বছর ১০ই সেপ্টেম্বর এই উৎসব শুরু হয়।
সিডনির ওয়েভারলি কাউন্সিলের মেয়র মিঃ আর্নি পেজ আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। সেই সাথে তিনি বন্ডাই সৈকতের আকাশ ঘুড়ি উড়ানোর জন্য মুক্ত ঘোষণা করেন। জন সিল্ক, তাঁর বন্ধুরা এবং আগ্রহীরা মিলে অস্ট্রেলিয়ান কাইটফ্লাইং সোসাইটি (এ কে এস) নামে একটা সংগঠন তৈরি করেন।
তখন থেকেই এই সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের ঘুড়ি উড়িয়ে আসছেন। এই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে রয়েছে খাবারের স্টল, ঘুড়ি বানানোর ওয়ার্কশপ, ঘুড়ি প্রদর্শণীসহ আরও অনেক কিছু।
ফেস্টিভ্যাল অব উন্ডস প্রতিবছর সবার জন্য আনন্দময় একটা দিন বয়ে আনে। এটা সকল বয়সী মানুষের উপযোগী একটা উৎসব। এই উৎসবে এসে ঘুড়ি বানানো, ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ নেয়া যায়। আর মূল মঞ্চে সারাদিনই চলে বিভিন্ন রকমের বিনোদনের আয়োজন। এটা সিডনির তথা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রঙিন এবং ঘুড়ি উড়ানোর বলে বিবেচিত।
করোনার আগে ২০১৯ শেষবার কেউ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। করোনার প্রকোপ কমে আসতে এই বছর থেকে আবার শুরু হয়েছে। এ বছর উৎসবের দিন বন্ডাই সৈকত লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। ১১ই সেপ্টেম্বর দিনটাও ছিলো উৎসবের উপযোগী।
রৌদ্রজ্জ্বল এবং বাতাসময় দিনে বন্ডাই সৈকতের আকাশে উড়তে থাকে রংবেরঙের হাজারো ঘুড়ি। কি নেই সেই ঘুড়ির আদলে। একেবারে সামুদ্রিক তিমি, হাঙ্গর, অক্টপাস থেকে শুরু করে কোবরা সাপ, টিয়াপাখি, বাজপাখি, পুতুল, ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার পতাকার আদলের ঘুড়িও ছিলো।
কাকতালীয়ভাবে সেদিন রানী ভিক্তোরিয়ার মৃত্যুর পর প্রিন্স চার্লসের রাজা হবার দিন। তাই সিডনির সকল পরিবহনে ভ্রমণ ছিলো পুরোপুরি ফ্রি। ফলে সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত এবং সারা অস্ট্রেলিয়া থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন সৈকতে। সকাল ১১টায় শুরু হয়ে এই উৎসব চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
পাশাপাশি মূল মঞ্চে চলে বিভিন্ন প্রকারের আয়োজন। বহু সংস্কৃতির দেশ অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই তার বৈচিত্র্য রক্ষায় উদ্যোগী। মঞ্চে চলে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের ঐতিহ্যবাহী সব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সেগুলোও দর্শকদের বাড়তি আনন্দ দেয়। আর খাবারের স্টলগুলোতে ছিলো বিভিন্ন দেশের সব ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসড়া।
এদিন যেন সিডনির বন্ডাই সৈকত প্রাণ ফিরে পায়। সৈকতে আছড়ে পড়ছে প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জলরাশি আর আকাশে উড়ছে বাহারি রঙের ঘুড়ি। অবস্থাদৃষ্টে মনেহয় যেন ঢেউয়েরাও ঘুড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে উড়তে চাইছে।
এদিন যেন মানুষের কল্পনা বাস্তব রূপ পায়। তাই তো গভীর সমুদ্রের নীল তিমি, হাঙ্গর, অক্টপাস যেমন আকাশে উড়ে তেমনি তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ে কোবরা সাপের দল। আর পুতুলেরাও বাদ পরে না তাদের উড়ার সাধ থেকে। পাশাপাশি টিয়াপাখি বাজপাখিতো আছেই। ফেস্টিভ্যাল অব দি উইন্ডস যেন সিডনির বন্ডাই সৈকতকে বাহারি রঙের রাঙিয়ে দেয়। সেইসাথে রাঙিয়ে দেয় সব বয়সী দর্শনার্থীর মনে। খুলে দেয় তাদের কল্পনার সবকটা জানালা।
মো: ইয়াকুব আলী
বিষয়: মোঃ ইয়াকুব আলী
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: