সিডনী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


হ্যালোইন উৎসবে মাতোয়ারা অস্ট্রেলিয়া : মোঃ ইয়াকুব আলী


প্রকাশিত:
৩ নভেম্বর ২০২২ ০১:৪০

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ১৪:২৮

 

প্রতিবছরই অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে পালিত হয় হ্যালোইন উৎসব। দিনে দিনে এটা আরো বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। এ দিনটা শিশু কিশোর এমনকি বড়দের জন্য বাড়তি আনন্দের দিন। এদিন বিকেল থেকেই অস্ট্রেলিয়ার রাস্তাঘাটে বিভিন্ন বয়সের এবং বাহারি সাজের ভূতেদের দেখা মেলে। অস্ট্রেলিয়ায় কবে থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছিল আমাদের ঠিক জানা নেই কিন্তু প্রতি বছর বছর এটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিশেষকরে শিশু কিশোরদের মধ্যে। এমন একটা সুন্দর আনন্দের উপলক্ষ কে'ই বা হারাতে চায়?
এই দিনটিকে সামনে রেখে চেইনশপগুলোতে বিভিন্ন প্রকারের খেলনা রাখা হয় বিক্রির জন্য। সেখানে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সাজানোর জিনিসের পাশাপাশি থাকে বাচ্চাদের বিভিন্ন রকমের পোশাক এবং সাজ সরঞ্জাম। বাচ্চারা সেখান থেকে পছন্দ করে এসব কিনে প্রস্তুতি নিতে থাকে হ্যালোইন উৎসবের। কার চেয়ে কার সাজ বেশি ভয়ংকর (স্ক্যারি) হলো মনেমনে থাকে এমন একটা প্রতিযোগিতা। বাচ্চাদের সাথে তাল মিলিয়ে বাবামায়েরাও হ্যালোইনের জন্য বিভিন্ন রকমের সাজ পোশাক কিনে থাকেন।


এই দিনটাকে সামনে রেখে আমাদেরও প্রস্তুতি চলছিল পুরোদমে। প্রথমে চেইনশপ উলর্থে যেয়ে রায়ানের জন্য একটা ভুতের পোশাক কেনা হলো। এরপর সেই পোশাকের সাথে তাল মিলিয়ে কেনা হলো মেকআপের বাক্স। কিন্তু কোথাও সেই পোশাকের সাথে তাল মিলিয়ে ত্রিশুলের মতো একটা লাঠি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে সেটা চেইনশপ কেমার্টের একজনকে বলতেই তিনি বললেন এগুলো বাইরের কাউন্টারে রাখা আছে। সেখানে যেয়ে দেখি পুরো জায়গাটাতে শুধু হ্যালোইনের জিনিসপত্র দিয়ে ঠাসা। পরে রায়ান তার এক শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে এসে বললো সেই ত্রিশুলের নাম 'ডেভিল স্টিক'।
এরপর অপেক্ষা কবে আসবে ৩১শে অক্টোবর। প্রতিবেশীদের অনেকের বাসাতেই হ্যালোইনকে সামনে রেখে চমৎকার সব সাজসজ্জা করেছেন। বাসার বারান্দা, লন এমনকি বাসার সামনের গাছও বাদ পড়েনি সেটা থেকে। গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন রকমের ভুত। এগুলো দেখে আমাদের ছোটবেলায় দাদি নানীর কাছ থেকে শোনা ঠাকুরমার ঝুলির বিভিন্ন রকমের ভুতের কথা মনেপড়ে যায়।


এইবার হ্যালোইনের দিন ছিল সোমবার। সোমবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস তাই কাজের চাপ স্বভাবতঃই একটু বেশি থাকে। তবুও বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বেরিয়ে পড়লাম। বসকে হ্যালোইনের কথা বলতেই রাজি হয়ে গেলেন। বাসে এবং ট্রেনে দেখলাম বিভিন্ন বয়সী শিশু কিশোরেরা হ্যালোইনের সাজে ঘোরাফেরা করছে। স্টেশনে নেমে বাসা পর্যন্ত যেতে দেখা মিললো অনেকগুলো দলের। যারা ততক্ষণে বেরিয়ে পড়েছে।


বাচ্চাদুটোকে কেয়ার থেকে তুলে তাড়াতাড়ি বাসায় এসেই সাজসজ্জা শুরু করে দিলাম। রায়ান খুবই খুশি অবশেষে সে হ্যালোইনের পোশাক পরতে পারছে বলে। সে নিজে থেকেই পোশাকটা কোন আলমারিতে ছিল সেটা খুঁজে বের করলো। এরপর তাহিয়া তাকে মেকআপ দিতে গেলে আর রাজি হলো না। ইতোমধ্যে শুনি বাসার বাইরে মানুষের কোলাহল। তাড়াতাড়ি বাইরে এসে তাঁদেরকে বললাম, আমাদের বাসায় এসো। তাঁরা খুশিমনে আসলো। একটা পরিবারের দাদি থেকে শুরু করে বাবা মা ভাই বোন এমনকি একটা কোলের বাচ্চাকে পর্যন্ত চমৎকার করে সাজিয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। চকোলেট পেয়ে তাঁরা খুবই খুশি হলো। আমি বললাম, আমরাও বের হচ্ছি। এরপর হ্যাপি হ্যালোইন বলে শুভেচ্ছা জানিয়ে উনারা বিদায় নিলেন।
আমরা বাসা থেকে গলির মাথায় যেতেই আরও অনেকের সাথে দেখা হয়ে গেলো। চিৎকার করে সবাই সবাইকে হ্যালোইনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমরা ঘুরে পেছনের গলিটার মুখে যেতেই দেখা হয়ে গেলো প্রতিবেশী মিশু ভাইদের সাথে। উনাদের ছেলে ফারিজ, মেয়ে ইনাইরা এবং ছোট্ট আহিল আর আরেক প্রতিবেশীর বাচ্চা ইতোমধ্যেই বেরিয়ে পড়েছে। আমরা সেই দলটার সাথে জুটে গেলাম। এরপর সবাই মাইল উনাদের প্রতিবেশীদের বাসায় যেয়ে নক করলাম, 'ট্রিক ওর ট্রিট'। সবাই খুশিমনে দরজা খুলে বাচ্চাদের বিভিন্ন রকমের চকোলেট, ক্যান্ডি দিচ্ছিলো। এগুলো পাওয়ার সময় বাচ্চাদের মুখে জগৎজয়ের হাসি খেলা করছিলো। যেকোন উৎসবের ভালো দিকই হচ্ছে বাচ্চাদের আনন্দমাখা মুখচ্ছবি।
এভাবে আমরা পুরো পাড়াটা ঘুরে ফেললাম। হ্যালোইনের উছিলায় কত নতুন প্রতিবেশীর সাথে ভাবের আদান প্রদান হলো। এমনিতে হয়তোবা উনাদের সাথে তেমন সাক্ষাতের সুযোগ হয় না। হ্যালোইনের এই উৎসব সবাইকে এক করে ফেলেছে। আসলে উৎসব মানেইতো একতা এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। করোনা মহামারী পাড়ি দিয়ে পুরো বিশ্ব নতুন করে যেন জেগে উঠেছে এবং বিভিন্ন রকমের উৎসবের আলোয় আলোকিত হচ্ছে নতুন পৃথিবী।

 

মো: ইয়াকুব আলী

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top