সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

হাওরপাড়ের জীবিকা, সমস্যা ও সম্ভাবনা : এস ডি সুব্রত


প্রকাশিত:
৯ জুলাই ২০২০ ২১:০৪

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২২:০৫

এস ডি সুব্রত

 

পঁচিশ বছর আগের হাওর অঞ্চল আর আজকের হাওর অঞ্চলের তুলনা মূলক চিত্রের মধ্যে বেশ ফারাক লক্ষ্য করা যায়। সে সময়কার তুলনায় হাওর অঞ্চলের জীবন জীবিকায় এসেছে প্রভূত পরিবর্তন। বেড়েছে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা, কমেছে বেকারত্বের হার। মানুষ ধাবিত হচ্ছে কর্মের দিকে । অলসতা ঝেড়ে ফেলে নড়ে চড়ে বসেছে। যদিও এ গতি আরো ত্বরান্বিত হতে পারতো।

পণ্ডিত গণ মনে করেন প্রায় চার হাজার পূর্বে এই হাওর অঞ্চল ছিল লৌহিত্য সাগর। এই লৌহিত্য সাগর পাড়ি দিয়ে চাঁদ সওদাগর বানিজ্য্যের জন্য চম্পক নগর থেকে উজানী নগরে যেতো। সাগর শব্দটি সংস্কৃত। সাগর শব্দের বিবর্তিত রুপ সায়র। কালক্রমে সায়র শব্দটি আরো বিবর্তিত হয়ে হাওর শব্দের উৎপত্তি। আক্ষরিক অর্থে হাওর হচ্ছে এক বিস্তৃত জলমগ্ন নিম্ন জলাভূমি। বর্ষাকালে হাওরে গ্রামগুলো দ্বীপের মতো ভেসে থাকে আর শুকনো মৌসুমে কখনো হাওর জুড়ে সবুজ ধানের সমারোহ আবার কখনো পাকা ধানের সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত হাওর জুড়ে।

ছবিঃ সুনামগঞ্জ হাওর

আবার ঐতিহাসিক সূত্র মতে সুনামগঞ্জ এর বিশাল ভূখণ্ড যে সাগর থেকে জেগে উঠেছিল সেটি কালিদহ সাগর নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সুদূর অতীতে এই কালিদহ সাগর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কোন কোন ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা মতে শেরপুর জেলার শ্রীবরদি উপজেলার গড়জড়িপায় যে জলাশয় টি লোকমুখে কালিদহ সাগর নামে পরিচিত, বহু আগে মনসা দেবীর অভিশাপে চাঁদ সওদাগর এর ডিঙ্গা ঐ কালিদহ সাগরে এখানেই ডুবেছিল।

ইতিহাস পর্যালোচনায় আরো দেখা যায় যে সুনামগঞ্জ সহ বিশাল হাওর অঞ্চল এক সময় যে সাগর ছিল তা কালিদহ সাগর। পলি সমৃদ্ধ নদী মাতৃক এই বাংলাদেশের অপরুপ ভূ বৈচিত্র্যের আরেক রুপ হচ্ছে হাওর । সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোর গঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি জেলা নিয়ে হাওর অঞ্চল গঠিত যার আয়তন দেশের মোট আয়তনের এক পঞ্চমাংশ। হাওরে অঞ্চলের মানুষ আবহমান কাল থেকে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে। হাওর অঞ্চলের সাতটি জেলা জুড়ে রয়েছে বড় আকারের ৩৭০ টি হাওর যার মধ্যে দেশের মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, সুনামগঞ্জ এর রামসার ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওর, শনির হাওর , দেখার হাওর, কিশোর গঞ্জের বড় হাওর অন্যতম।ছোট বড় মিলিয়ে হাওর অঞ্চলে প্রায় পাঁচ হাজার  হাওর বাওর বিল রয়েছে।

হাওর পাড়ের অধিকাংশ মানুষের জীবিকার অন্যতম উপায় এক ফসলী বোরো জমি। এই একটা মাত্র ফসলকে ঘিরে হাওর পাড়ের অধিকাংশ মানুষের অন্ন বস্ত্রের সংস্থান, চিকিৎসা থেকে শুরু করে সন্তানদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়। বেশী দিন আগের কথা নয়, আজ থেকে পঁচিশ বছর আগের হাওর পাড়ের চিত্র খোঁজার চেষ্টা করলে আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে  ফি বছর আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার চিত্র। প্রায় ঘরে হাহাকার নামতে। নিম্নবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ তখন নিজের সামান্য জমি আবার কখনো নিজের বসত ভিটা টুকু বিক্রি অথবা বন্ধক রেখে সংসার চালাত। তখন কর্মসংস্থান সুযোগ যেমন সীমিত ছিল তেমনি মানুষের মাঝে কর্মের স্পৃহাও ছিল কম। যেন খারাপ অবস্থা টাকে ভাগ্য বলে মেনে নিত। এক ফসলী বোরো ধান তোলার পর বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে বর্ষায় অধিকাংশ মানুষ বেকার ও অলস জীবন যাপন করত। তাস খেলে আড্ডা দিয়ে কুটুম বাড়িতে বেড়িয়ে সময়  কাটাতো। আবার যে বছর ফসল ঘরে তুলতে পারতো সে বছর হাওর পাড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত।

গ্রামে গ্রামে চলত যাত্রা পালা,বাউল গান।পড়ত বিয়ে শাদীর ধূম। হাওর পাড়ের সহজ সরল মানুষ অল্প পেয়েই খুশি থাকত। সুনামগঞ্জ সহ  বিশাল হাওর অঞ্চল জুড়ে ছিল না কোন শিল্প কারখানা, ছিলনা কর্মের সংস্থান। সময়মতো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ হতো না ‌যেগুলি হতো সেগুলোও থাকত ত্রুটি পূর্ণ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদাসীনতার কারনে কৃষকরা প্রায় বছরই ফসল ঘরে তুলতে পারতো না।

তবে বর্তমানে এ চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে বর্তমান হাওরবান্ধব, কৃষক বান্ধব সরকার হাওর তথা কৃষক ও মৎস্যজীবীদের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হাওরের বাঁধ নির্মাণ,ফসল রক্ষা তথা হাওর পাড়ের উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার। আগাম বন্যার সতর্ক বার্তা প্রচারসহ নানা মুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার । বাঁধ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে সরকার। সার, বীজ সহ কৃষি পণ্য  সরবরাহ করছে  কৃষক কে । কখনো বিনামূল্যে, কখনো ভর্তুকি দিয়ে কম দামে।সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগও সরকারের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

তবুও কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে নৈতিকতার অভাবে সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞ পুরোপুরি আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না।

সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ সত্ত্বেও বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে রয়েছে নানা বিধ ত্রুটি বিচ্যুতি ও গাফিলতি। যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলো টেকসই করার ব্যাপারে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।যেমন ঠিকমতো স্লোপ দেয়া হচ্ছে না, ঘাস লাগানো হচ্ছে না ঠিক মতো নির্দেশনা ও বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ‌। আবার কখনো দেখা যাচ্ছে বাঁধের গোড়া থেকেই এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি উঠাচ্ছে যা নীতিমালা বহির্ভূত। বাঁধ গুলার উভয় পাশে ঠিক মতো স্লোপ দিয়ে ঘাস লাগানো হলে এবং হাওর উপযোগী বৃক্ষ রোপন করতে পারলে অধিক উপকৃত হবে হাওর পাড়ের মানুষ। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক উপজেলার সমবায় সমিতি গুলো কে কাজে লাগানো যেতে পারে।  হাওর অঞ্চলের প্রত্যেক উপজেলায় প্রায় প্রতিটি গ্রামে রয়েছে নিবন্ধিত সমবায় সমিতি। উপজেলা সমবায় অফিসের মাধ্যমে  সমবায় সমিতির সদস্যদের দ্বারা হাওর রক্ষা বাঁধ ও রাস্তায়  সমবায় ভিত্তিক বৃক্ষ রোপন প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে উপজেলা সমবায় কার্যালয় কে বরাদ্দ প্রদান করা যেতে পারে। বাঁধ ও রাস্তা র সুরক্ষায় পাশাপাশি গড়ে উঠবে সবুজ বেষ্টনী।

হাওর অঞ্চলের অধিকাংশ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কৃষক ফসল ঘরে তোলার পর পর অর্থাৎ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ ও সংসার ব্যয় নির্বাহ করে থাকে।

 অন্ন বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা শিক্ষা সহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করে ধান বিক্রি করে।দেখা যায় ঐ সময়টাতে কৃষক রা ধানের ন্যায্যমূল্য পায়না। কৃষক বান্ধব শেখ হাসিনার সরকার এ বিষয়টি উপলব্ধি করে বেশ কয়েক বছর ধরে ন্যায় মূল্যে ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কিছু কিছু সুফল মিলেছে। কিন্তু নানাবিধ কারনে তা ভালো সুফল বয়ে আনতে পারছে না মাঠ সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্যক্তির অনৈতিকতার কারনে। নিম্নবিত্ত কৃষক এ প্রক্রিয়ায় ধান বিক্রি করতে পারছেনা। সরকারের এ উদ্যোগ সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে হাওর পাড়ের মানুষের ভাগ্য বদলে যেতো। বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করার কারনে হাওরের অনেক উন্নতি সাধন হচ্ছে নিঃসন্দেহে। এক্ষেত্রে ধান সংগ্রহ লক্ষমাত্রা বাড়াতে হবে। কৃষক যদি গোলা থেকে সরাসরি ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারত কৃষকের ভাগ্য বদলে যেতো।যেমন এবছর সরকার খাদ্য গুদামের মাধ্যমে তালিকা  করে ১০৪০/ মন ধরে ধান সংগ্রহ করছে। সরকার যদি প্রয়োজনে ধানের দাম আরো কিছু টা কমিয়ে অর্থাৎ ৯৪০/ বা ৮৪০/- টাকা ধরে সরাসরি প্রত্যেক কৃষকের ধান বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে পারতো তাহলে কৃষকের ভাগ্য সত্যি সত্যি ই বদলে যেতো ‌।হাওর অঞ্চলে দেশের মোট ফসলের শতকরা ১৮ ভাগ ধান উৎপাদন হয়। অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে হাওরের জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করে ফসল উৎপাদন ও রক্ষায়  হাওর উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে হাওর গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করা যেতে পারে যেখানে হাওর উপযোগী পানি সহিষ্ণু ধান আবিষ্কারের পাশাপাশি হাওরের অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।

বর্ষা মৌসুমে হাওর অঞ্চলের বেশীরভাগ হাওর ও ভূমি জলমগ্ন থাকে।তখন অনেকের জীবিকার একমাত্র উপায় মাছ ধরা ও বিক্রি করা। বর্তমান সরকার হাওরের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাওরে পোনা মাছ অবমুক্ত করন, মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও মৎস্যজীবীদের জীবন মান উন্নয়নে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।শেখ হাসিনার সরকার  দরিদ্র জেলেদের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় জলমহাল নীতিমালা' ২০০৯ প্রণয়ন করেছেন।এ নীতিমালা র মাধ্যমে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিবন্ধিত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি কে জলমহাল বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করেছেন । এ নীতিমালা হওয়ার পূর্বে কোন সমবায় সমিতি , সংগঠন বা একক ব্যক্তি জলমহাল লীজ নিতে পারতো। তখন দরিদ্র প্রকৃত মৎস্যজীবীরা জলমহাল লীজ নেয়ার কথা ভাবতে পারতো না খুব একটা। কিন্তু জলমহাল নীতিমালা হওয়ার পর মৎস্যজীবীদের মাধ্যমে সংগঠিত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিই কেবল জলমহাল লীজ নিতে পারছে। এখানে মৎস্যজীবী বা জেলেরা নানা বিধ কারনে অনেকাংশে সুফল না পেলেও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। নীতিমালা না হলে এটা সম্ভব ছিল না। এই নীতি মালা র কারনে প্রভাবশালী মহলকে মৎস্যজীবী দের কাছে আসতে হচ্ছে। তাদের মাধ্যমে জলমহাল ব্যবসা করতে হচ্ছে ‌। এখানে পুঁজি বা মূলধনের অভাবে এবং জলমহাল শাসনের অক্ষমতার কারণে বেশিরভাগ মুনাফা নিয়ে  যাচ্ছে প্রভাবশালী মহাজনরা। এক্ষেত্রে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে দরিদ্র জেলেদের নামমাত্র সুদে ঋণ প্রদান এবং স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জলমহাল শাসনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে পারলে হাওর পাড়ের মৎস্যজীবী গন আরো অধিক হারে উপকৃত হতো নিঃসন্দেহে। এছাড়া হাওরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পোনা মাছ অবমুক্ত করন, অভয়ারণ্য স্থাপন, মৎস্যজীবীদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে প্রজনন সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখা,ফুড প্রসেসিং জোন , কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন ও মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের জীবন মান উন্নয়নের পদক্ষেপ নিতে পারলে হাওর পাড়ের চেহারা দ্রুত পাল্টে যাবে।

হাওর অঞ্চলের মানুষ পূর্বের চেয়ে কর্ম মুখর হয়েছে অনেক টা। তবে হাওর অধ্যূষিত এলাকায় শিল্প কারখানা না থাকায় সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। ২০১৭ সালে হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় যখন হাওরের সমস্ত ফসল তলিয়ে যায় তখন হাওরে যে হাহাকার শুরু হয়েছিল তাতে অনেকেই দুর্ভিক্ষের শংকা করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার সময়োচিত ও পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী ও অর্থ সহায়তার কারনে তখন সে বিপর্যয় দারুনভাবে মোকাবেলা করা হয়েছিল। হাওরের মানূষ সেদিন বুঝতে পেরেছিল হাওর অঞ্চল তথা কৃষকের জন্য শেখ হাসিনা কতটা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। সে  সময়  হাওর অঞ্চলের নিম্নবিত্ত মানুষেরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছিল এবং পরবর্তীতে নিজেরা  ঢাকা গাজীপুর সহ দেশের শিল্প কারখানা সমূহে কাজ করে নিজো ভাগ্য উন্নয়নে সচেষ্ট  হয়েছিল এবং সফলতাও পেয়েছিল। তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় হাওর অঞ্চলে পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা গড়ে  তুলতে পারলে হাওর পাড়ের রুপ বদলে যেতো।

বজ্রপাত হাওর অঞ্চলের আরেক দূর্যোগের নাম। আমাদের দেশে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাত মৌসুম। তবে এপ্রিল ও মে মাসে হাওর অঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হয়। বজ্রপাতে হাওর অঞ্চলে দিন দিন মানুষ ও গবাদিপশুর মৃত্যু বেড়েই চলেছে। এক জরিপে দেখা সুনামগঞ্জ জেলা বাংলাদেশ এমনকি বিশ্বের মাঝে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত প্রবন এলাকা। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অনেক সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে। সচেতনতার পাশাপাশি সুনামগঞ্জ সহ হাওর অঞ্চলে লাইটেনিং সেন্সর স্থাপন এবং প্রতিটি হাওরের উন্মুক্ত স্থান গুলোতে বিদ্যুতায়িত ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে যেখানে জরুরি সময়ে হাওরে কৃষকরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। এছাড়াও মোবাইল টাওয়ার গুলো তে আর্থিং পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে সুফল  পাওয়া যেতে পারে। হাওরের উন্মুক্ত উপযুক্ত স্থানে তালের চারা রোপন অভিযান জোরদার করা যেতে পারে। বজ্রপাত নিরোধক লাইটেনিং এরেষ্টার বসানোর মাধ্যমে বজ্রপাত টেনে মাটিতে নামিয়ে এর প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

হাওর অঞ্চলে প্রয়োজনে র তুলনায় গাছপালা অনেক কম যায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। হাওর অঞ্চলে মিঠা পানির সহিষ্ণু গাছ যেমন  হিজল, করছ বট, কড়ি, মেড়া, আম, জাম, নলখাগরা, মটকা ইত্যাদি প্রজাতির বৃক্ষ রোপন করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা যায় এবং সেগো হাওরের জীবিকার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখতে পারে।

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন ব্যাবস্থাও হাওর অঞ্চলে নাজুক।এদিকূ নজর দিতে হবে আরও অধিক পরিমাণে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে হাওরে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যটন এ শিল্পের বিকাশের উদ্যোগ নিলে কর্ম সংস্থান এর পাশাপাশি হাওর অঞ্চলের জীবন জীবিকায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

পরিশেষে বলব হাওর উন্নয়ন বোর্ড কে গতিশীল করে, হাওর ইনষ্টিটিউট ও মৎস্য গবেষণা গার স্থাপন ও শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে হাওরের অর্থনীতি কে গতিশীল করার ব্যবস্থা  করতে পারলে হাওর হয়ে উঠবে শস্য শ্যামল সবুজ বাংলার নান্দনিক ও সুখের আবাসস্থল।

 

এস ডি সুব্রত
কবি ও প্রাবন্ধিক



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top