সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

মানুষের জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব : ওসমান গনি


প্রকাশিত:
১৯ জুলাই ২০২০ ২১:৫৯

আপডেট:
১৯ জুলাই ২০২০ ২২:৩১

ওসমান গনি

 

শিক্ষা হলো একজন মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার। এ পৃথিবীতে শিক্ষাকে ব্যাবস্থাকে পশ্চাতে রেখে শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর কোন জাতি বা জনগোষ্ঠী আজ পর্যন্ত সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। তাই পৃথিবীর সকল জাতিই সবার আগে সর্বাগ্রে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। একজন মানুষ এ পৃথিবীতে পরিপূর্ণ ভাবে বাচতে হলে ৫ টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে  সর্বাগ্রে প্রয়োজন তার শিক্ষা। শিক্ষাই পারে একজন মানুষকে একটি জাতি কে সভ্য, আদর্শ ও মানবিক করে তোলতে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিক কে শিক্ষার আওতায় আনার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দেশের প্রতিটি শিশু কে সু শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতকে  যুগোপযোগী করে তোলছে।

সঠিক শিক্ষা কাঠামো এবং যথাযথ শিক্ষা পদ্ধতি দেশের উন্নয়নের চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক। তাই শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধিকাংশ বিষয়ের মতো শিশুর শিক্ষার বিষয়টিও উপেক্ষিত থেকে গেছে। বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হলেও অনেক শিশু পড়ালেখা শেষ করছে না। প্রতিবছর বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী । আবার অনেক শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তিই হচ্ছে না। প্রতিবন্ধি, আদিবাসী, হাওর ও পাহাড়ী এলাকার অনেক শিশু এখনো বিদ্যালয়ে যাওয়ারই সুযোগ পাচ্ছে না। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ৯৯ শতাংশের বেশী শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও শিশুদের ঝরে পড়ার হার কমছে না।

আমরা সবাই জানি একজন শিশুকে আদর্শ ও সুচিন্তিত  নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সুশিক্ষার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে অনেক কারণেই ব্যাহত হচ্ছে সুশিক্ষা। বৈষম্য-এর মধ্যে অন্যতম কারণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের কথা বলতে সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও সুবিধা প্রাপ্ত শিশুদের কথা বুঝানো হয়েছে। অনেকে মনে করে থাকেন বস্তির শিশুদের আচার-আচারণ অন্যান্য শিশুর তুলনায় অনেকটা খারাপ হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে প্রতিটি শিশুকে সুশিক্ষা দিলে তাদের সাথে সুন্দর ও ভালো ব্যবহার করলে সকল শিশুর ব্যবহার ও আচরণে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব।

আন্তর্জাতিক শিশু সনদ এবং শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশুকে তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, শিশুতোষ বিনোদনের সর্বোত্তম ব্যবস্থাসহ শিশুদের সব ধরণের নির্যাতন ও বৈষম্যমুলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন ও হরতালের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসুচি চলাকালীন নিরাপত্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। আবার বিভিন্ন কর্মসুচিতে রাজধানী জুড়ে শুরু হয় অসহনীয় যানজট। তখন ছোট ছোট শিশুদের ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে বসে থাকতে হয়। এতে স্কুলে যেতে দেরি হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দেশের সুবিধাবঞ্চিত, স্কুল বহির্ভূত, ঝরে পড়া এবং শহরের কর্মজীবি দরিদ্র শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে সরকার বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে  কর্মজীবি শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের উন্নততর জীবন অনুসন্ধানে শিক্ষা, নিরাপত্তা ও উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম চলছে।

সরকার দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গিকারাবদ্ধ। এ কারনেই সরকার এখাতে অধিক হারে বরাদ্দ দিয়ে আসছে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির হার বাড়ানো, ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমাদের সকলের উচিৎ এই অর্জন ধরে রাখা।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top