সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

করোনার ঈদুল ফিতর : এস ডি সুব্রত


প্রকাশিত:
১১ মে ২০২১ ২১:১৫

আপডেট:
১২ মে ২০২১ ০১:০৩

 

২০১৯ এর মাঝামাঝি সময়ে চীনে উৎপত্তি হওয়া কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। ২০২০ সালের মার্চ মাসের ৮ তারিখ বাংলাদেশে‌ প্রথমে সনাক্ত হয় করোনা ভাইরাস। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থমকে যায়, থমকে যায় পৃথিবী। বাংলাদেশও করোনার থাবায় বিপর্যস্ত হয়। শেষে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। জনজীবনে কিছু টা স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখা দেয়। ২০২১ এ এসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়ে বিশ্বের বেশ কিছু দেশসহ বাংলাদেশে। ভারতের মতো ভয়াবহ না হলেও প্রথম বারের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে  বেশ শক্ত ভাবেই। আবার লকডাউন, ঘরবন্দি জীবন। প্রতিদিন মৃত্যুর খবর। মৃত্যু শতক ছাড়িয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ঈদকে নিয়ে শংকা বাড়ছে বিশেষজ্ঞ মহলে। সরকার জনস্বার্থে ঈদের জামাত  ঈদগাহে না গিয়ে মসজিদে পড়ার নির্দেশ জারি করেছে যা সময়োচিত পদক্ষেপ।  

ঈদুল ফিতরের ঈদে মুসলমান জাতি আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর  ঈদ উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করে থাকে। গোটা বিশ্বে মুসলিম জাতি আনন্দের সাথে এ দিনটি পালন করে থাকে। ঈদ অর্থ খুশি।ফিতর শব্দটি এসেছে ফিতরা থেকে। ফিতরা হল রমজান মাসে রোজার  ভুলত্রুটি দূর করার জন্য ঈদের দিন দুস্থদের অর্থ প্রদান করা।

আমাদের দেশে এই ঈদ উৎসবের পুংখানুপুংখু ইতিহাস আজো জানা যায় নি। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ইতিহাস মতে ১২০৪ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে আসার বেশ আগে থেকেই ঈদ উৎসবের প্রচলন হয়েছে। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী জাহেলী যুগ থেকে মদিনাবাসী শরতের পূর্ণিমায় 'নওরোজ' এবং বসন্তের পূর্ণিমায় 'মেহেরজান' নামে দুটি উৎসব পালন করতো যেটা ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন পবিত্র মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় যাচ্ছিলেন তখন তাদেরকে বৎসরে দুদিন আমোদ প্রমোদ ও খেলাধুলা করতে দেখে তাদের কে জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুদিন কিসের? সাহাবাগণ জবাবে বললেন জাহেলী যুগে এই দুদিন খেলাধুলা ও আনন্দ উল্লাস করতাম। তখন রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমালেন, আল্লাহ তায়ালা উক্ত দিন দুটির পরিবর্তে তা অপেক্ষা উত্তম দুটি দিন তোমাদের খুশি প্রকাশের জন্য দিয়েছেন। এর একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং আরেকটি হচ্ছে ঈদুল আজহা। তখন থেকেই ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী দুটি ঈদ পালিত হয়ে আসছে। বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলমানদের অধিকারে আসার বহু আগে থেকেই মধ্য পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফী দরবেশগন ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে ভারত হয়ে পূর্ব বাংলায় আসেন। আবার আরবীয় অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকেরা চট্টগ্রাম নৌ বন্দরের মাধ্যমে বাংলার সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবে মুসলিম পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে মুঘল আমলে ঈদের যে আনন্দ তা কিছু টা হলেও মুঘল ও বনেদি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তার সঙ্গে সাধারণ মুসলমানদের কিছু টা দূরত্ব ছিল।   

হিজরী বর্ষ পুঞ্জি অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের এক তারিখে ঈদুল ফিতর পালন করা হয়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তি তে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়।ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামের পরিভাষায় লাইলাতুল জাযজা যার অর্থ পুরস্কার রজনী এবং চলতি ভাষায় চাঁদরাত বলা হয়। শাওয়ালের মাসের এক ফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ হয় এই কথা থেকেই চাঁদরাত কথাটির উদ্ভব হয়। এদিন ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ।মুসলিম বিধান অনুযায়ী ঈদের নামাজ পড়তে যাবার আগে একটি খেজুর কিংবা কোরমা খেয়ে বের  হওয়া সওয়াবের কাজ। 

রোজা বা সিয়াম ইসলাম এর মুল পাঁচটি স্তম্ভের একটি।সুবেহ সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, কামাচার এবং যাবতীয় ভোগ বিলাস থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ যার অর্থ হলো আবশ্যক সারাদিন রোজা রাখার পর সূর্যাস্তের পর যে খাবার খাওয়া হয় তাই ইফতার। খেজুর খাবার মাধ্যমে ইফতার শুরু করার রেওয়াজ আছে। আবার কোথাও জল পান করে ইফতার শুরু করা হয়।

যাকাত আরবী শব্দ। যাকাত হলো যা পরিশুদ্ধ করে। ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভের একটি। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক স্বাধীন মুসলমান নরনারী কে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটা নির্দিষ্ট অংশ অর্থাৎ ইসলামী রীতি অনুযায়ী নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে এমন আয়ের অংশ গরীব দূস্থদের দান করাকে যাকাত বলে। 

‘ও মন  রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’--- এ গান হয়তো জনমনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না এবছর  করোনার কারনে। কালো মেঘের আড়ালে হয়তো দেখা যাবে এক টুকরো রূপালী চাঁদ। কিন্তু এ চাঁদ মানুষের মনে কতটুকূ খুশির জোয়ার বইয়ে দেবে জানা নেই। ঈদ মানে নাড়ীর টানে স্বজনের কাছে ছুটে যাওয়া, ঈদ মানে মানে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের মিলন মেলা। ঈদ মানে কোলাকুলি, কুশল বিনিময়। কিন্তু এবারের ঈদ অন্যরকম। নভেল করোনা মহামারীর  দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারনে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশও থমকে গেছে, বিঘ্নিত হয়েছে স্বাভাবিক জীবন যাপন।বন্ধ অধিকাংশ কলকারখানা, অর্থ নীতিতে পড়ছে বিরুপ প্রভাব। মৃত্যু হানা দিচ্ছে সারা পৃথিবীতে। এবার ঈদের জামাত হবে না খোলা ময়দানে, হবে না কোলাকুলি। আসুন সবাই মিলে মানবিক হই সবার সাধ্যমত। পাশের প্রতিবেশী, অসহায় দুস্থ মানুষের সাথে আরো বেশি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, প্রতিরোধ করি করোনা, ঈদ উদযাপন করি ঘরে থেকেই। একটা সুন্দর সুস্থ পৃথিবীর প্রার্থনা হোক এই ক্রান্তিকালে। চেনা পৃথিবীর প্রতিক্ষায় আমরা সকলে।

 

এস ডি সুব্রত
কবি ও প্রাবন্ধিক
সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top