সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ পরবর্তী পটলাক মিলনমেলা : মু: মাহবুবুর রহমান


প্রকাশিত:
১১ মে ২০২৩ ২১:৪৪

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩২

 

বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে নিউজিল্যান্ড নামক ছোট্ট দ্বীপে জীবিকা ও পড়াশোনার প্রয়োজনে আমাদের ছুটে চলা। সময়ের অভাব, রান্নার আয়োজন ও কাজের ব্যস্ততা মিলিয়ে সব বাংলাদেশিকে এক সঙ্গে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়তো কারো একার পক্ষে একটু কষ্টসাধ্য। আর তাই সবার একত্রিত হবার আয়োজন পটলাক, যেখানে কম বেশি সবারই অংশগ্রহণ থাকে।
পটলাক পার্টি হলো এমন এক আয়োজন যেখানে সকল অংশগ্রহণকারী তার পছন্দমতো খাবার আইটেম নিয়ে হাজির হন। এ পার্টিতে খাবার আনা হয় পট (Pot) (পাত্র বা পাতিল) এ করে কিন্তু সেই খাবারের স্বাদ অজানা বলে অনেকটা ভাগ্য (লাক) (Luck) এর ওপর নির্ভর করে আপনার প্লেটে খাবারের স্বাদ। আর তাই পশ্চিমা ধাঁচের এ ধরণের আয়োজনকে পটলাক বলা হয়ে থাকে।


পটলাক আয়োজনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো যার যেটা পছন্দ, সেটা নিজে নিয়ে খেতে হবে। অধিকাংশ সময়ে খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা হয় ফয়েল পেপারের ট্রে তে, খাবার খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় কাগজের ওয়ান টাইম ব্যবহারের প্লেট, বাটি ও গ্লাস। ধোয়া-পরিষ্কারের কোনো পর্ব নেই এ আয়োজনে। আর তাই শত লোকের খাবার আয়োজন যেন কোনো ব্যাপারই না পটলাকে।


বাঙালি অতিথিপরায়ণ ও আড্ডা প্রিয় জাতি, এ কথা বিশ্ব বিদিত। আর তাই পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, আমরা খুঁজে ফিরি বাংলা ভাষা-ভাষী আরেকজন মানুষ, যাতে একটু জমিয়ে আড্ডা দেয়া যায়। সেই রকম আড্ডা ও অতিথিপরায়ণতার সুযোগ করে দেয় পটলাক।
নিউজিল্যান্ডের পামারস্টোন নর্থ শহরে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ-উল-ফিতর পরবর্তী পটলাক গেট টুগেদার বা মিলনমেলার আয়োজন করা হয় ২৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে। স্থানীয় একটি কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সবাই তাদের বাসায় তৈরি পছন্দের খাবার নিয়ে হাজির হন।
টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয় খাবার। সবজি, নানান ভর্তা, বিভিন্ন সালাদ, মাছ, গরুর মাংস, কালাভুনা, মুরগির মাংস, আর ভেড়ার মাংসের তরকারি দিয়ে সাজানো হয় টেবিল। একটু বলে রাখি নিউজিল্যান্ডে যেকোনো অনুষ্ঠানে ভেড়ার মাংস বা ল্যাম্ব কারি (Lamb curry) থাকবেই, কারণ এই দেশে যে মানুষের চেয়ে ভেড়ার সংখ্যা বেশি।
আয়োজনে ডেসার্ট আইটেমের কথা আর নাইবা বললাম। পিঠা-পুলি, ফিরনি-পায়েস, বিভিন্ন ডিসাইনের মিষ্টি, অতুলনীয় স্বাদের দই এবং দেশি মিষ্টান্ন আইটেমের সুঘ্রানে মনে হচ্ছিল আমরা বাংলাদেশের কোনো বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা কারো ছাদে ফিরে গিয়েছি আবার।
মূলখাবার এবং ডেসার্ট আইটেমপরিবেশনের ফাঁকে ছিল বাচ্চাদের মেমরিগেম, কালার করা প্রতিযোগিতা, ছিলপৃথকভাবে নারী ও পুরুষেরবালিশ ছোড়া প্রতিযোগিতা। ছিলকেরাম, কার্ড খেলা যেখানে অংশগ্রহনছিল ছেলে-বুড়ো সবার।অনুষ্ঠান শেষ হবার আগেবিজয়দের মাঝে পুরস্কার বিতরণএবং সব বাচ্চার জন্যগুডি ব্যাগ (goodie bags) গিফট যেন ঈদআনন্দকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো কয়েকগুন।
যেকোনোআয়োজনে তো সংগঠনকারী থাকতেহয় আর আমাদের এঈদ পরবর্তী পটলাক মিলনমেলার সংগঠক ছিলেন তনিমা হোসেন এবং মুনিরা নাজনীন।অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মানাওয়াতু মাল্টিকালটারাল কাউন্সিলের (Manawatu Multicultural Council-MMC) প্রেসিডেন্টনিনা কার্চবাউম (Nina Kirschbaum)। তবে সবারস্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া তো পটলাককিংবা কোনো আয়োজনই করাসম্ভব না। আর তাইপামারস্টোন নর্থ শহরের সববাংলাদেশির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঈদ আনন্দ যেনসব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো এদিন।
জয় হোক প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ-উল-ফিতর পরবর্তী পটলাক মিলন মেলার, অটুট থাকুক এ বন্ধন। আবারো সবাইকে ঈদ মোবারক।

 

মু: মাহবুবুর রহমান
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top