কক্সবাজারে লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ


প্রকাশিত:
২৬ আগস্ট ২০১৯ ২১:০৩

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২০:০২

কক্সবাজারে লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা ঢলের দুই বছর উপলক্ষে কক্সবাজারে ক্যাম্পের মাঠে সমাবেশ করেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সমাবেশে নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তাসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ করতে মিয়ানমার সরকারকে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। দাবি পূরণ ছাড়া একজনকেও ফেরত পাঠানো হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে প্রতিরোধের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নেতাদের আহ্বানে উচ্চ কণ্ঠে অঙ্গীকারও করেছে লাখো রোহিঙ্গা।



এ পর্যন্ত দু’বার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে জানিয়েছে। তাই সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী।



২৫ আগস্টকে ‘গণহত্যা দিবস’ উল্লেখ করে কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতন এবং জড়িত সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থি মগদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবিতে নিহত রোহিঙ্গাদের স্মরণে মহাসমাবেশে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত চলা এ সমাবেশে যোগ দিতে ভোর থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা কুতুপালং চলে আসেন। মাথায় টুপি, সাদা শার্ট ও লুঙ্গি পরা রোহিঙ্গাদের অনেককেই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা টিশার্ট গায়ে জড়ানো দেখতে পাওয়া যায়। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামের সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা পরবাস জীবন যাপন করছি। নিজ ভিটেমাটিতে এখনো ফিরতে পারিনি। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের দেখতে আসেন, সহানুভূতি জানান। কিন্তু কেউ আমাদের নিজ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নেননি। এতে মিয়ানমারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাসীও ব্যর্থ।’



২০১৭ সালের ৯ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি সেনাচৌকিতে হামলার অভিযোগ এনে স্থানীয় অধিবাসী রোহিঙ্গাদের ওপর চড়াও হতে শুরু করে সেনাবাহিনী।



এরপর ২৪ আগস্ট আনান কমিশনের রোহিঙ্গা বিষয়ক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর গভীর রাতে ৩০টির বেশি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে হামলার ঘটনায়ও রোহিঙ্গাদের দায়ী করে ২৫ তারিখ ভোর থেকেই তাদের ওপর পুরোদমে দমনপীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।রোহিঙ্গা-সমাবেশ



মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো ওই জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পাড়ি জমাতে থাকে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে ১১ লাখ ১৯ হাজারে দাঁড়িয়েছে।



বাংলাদেশে পাড়ি জমানোর দু’বছর পর এই দিনে রোববার কক্সবাজারে ক্যাম্পের মাঠে সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়েই নিজ দেশে ফিরতে চায় তারা। এ বিষয়ে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে।



রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে না পারলে এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হবে বলেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম।



রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানান চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক ঝেং তিয়ানজুহ।



কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড় কেটে বানানো ৩২টি ক্যাম্পে বর্তমানে ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গার বসতি।  স্থানীয়দের সাথে সমস্যায় জড়ানোসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে তারা। এবার জাতিসংঘ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের প্রত্যাশা সকলের।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top